What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

নয়নাভিরাম নিসর্গের শহর (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
মনোহর শহর। প্রকৃতি এখানে অপার। প্রবহমান রাইন নিসর্গের সৌন্দর্যকে মাত্রা দিয়েছে। আছে মানুষ ভূমিপুত্ররা যেমন, তেমনি পরিযায়ী। বন্দোবস্ত রয়েছে জীবনের বহুমাত্রিক উদযাপনের। উদ্দেশ্যহীন পরিব্রাজনে দৃষ্টিগোচর হয় চলচ্ছবির মতো সরে সরে যাওয়া ঘটনাময় চিত্রাবলি।

jFAJoxi.jpg


রডোডেনড্রন, টিউলিপ, জিনিয়া হাতড়ে হলুদ প্লাস্টার করা বাড়ির থাম বসানো প্রশস্ত বারান্দাটিতে এসে দাঁড়াতেই পদশব্দে সচকিত হয়ে গৃহকর্তা মানুয়াল মাথেউস সদর দরজার কপাট খুলে দিয়েছেন। প্রাতরাশ পর্ব অধিকাংশ জার্মান চা বা কফি দিয়েই সূচনা করেন। তারপর ব্রেড বা রোলের সঙ্গে মাখন, মধু, পনির, জেলির সমাহার, সঙ্গে কলা, আপেলসহ বিবিধ ফল তো থাকেই। পেশায় আইনজীবী মাথেউসের বাড়িটি বেশ সুন্দর। ঘোমটার মতো ঢেকে আছে ছাদ। দেয়ালে গোথিক যুগের অয়েল পেইন্টিং। বসার ঘরে সবুজ আর লালের মিশ্রণে তৈরি কার্পেট। এর মধ্যেই পর্দা তুলে বানানো ডাইনিং রুম। প্রগলভ মুহূর্তের মধ্যেই চিরকুমার মাথেউসের বাড়িতে পূর্বনির্ধারিত প্রাতরাশ সুসম্পন্ন হলো।

GyCJaGo.jpg


প্রকৃতি এখানে অপার

সদালাপী মাথেউস মুচকি হেসে জানতে চান, 'ভি জিনিয়েট ডু দাস ডয়চে লান্ড? (জার্মান দেশটা কেমন উপভোগ করছ?)
—বলি, 'সেহর স্কান। ইছ বিন ফসজিনিয়াট ফন সিনেমে আউশেন' (খুবই সুন্দর। বলা যায় আমি এর রূপে মুগ্ধ)।
—'বীর সেহেন উন্স ওয়েডের' (পুনরায় দেখা হবে)।

এই নিশ্চয়তা দিয়ে বাড়ির চৌকাঠ পেরোই। দেখলাম, বাড়ির দুপাশ থেকে শুরু করে প্রধান দরোজা পর্যন্ত দীর্ঘ ঋজু ওকগাছের সারি। এদের ঘন পল্লবিত, সুদূর প্রসারিত শাখা-প্রশাখা দেখতে ভীতিকর; বাংলাদেশিদের কাছে মনে হতে পারে কিছুটা ভৌতিক! জনবিচ্ছিন্ন ছায়াচ্ছন্নতা আসলে কী জিনিস, সেটা এখানে ঢোকার মুহূর্তেই টের পেয়েছি।

অবাক বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশের মতো এখানে কোনো আইনজীবীর চেম্বারই বইপত্রে ঠাসা দেখিনি। সবার সামনেই একেকটা ল্যাপটপ। আইনজীবীরা দেখলাম শুধু মোয়াক্কেলের কাছ থেকে বিস্তারিত বিষয় বুঝে নিয়ে নোট নিয়েই ক্ষান্ত হন না; সমাধানের পদ্ধতিও বাতলে দেন। বাকি কাজটুকু করেন তাঁদের জুনিয়র বা সহকারীরা।
মাথেউসের বাড়ির মতোই এ রকম একচালা বাড়ি পুরো জার্মানিতে প্রচলিত। জায়গার নাম ড্যারেনডার্ফ; ডুসেলডর্ফের অন্তর্গত ছোট শহর। উত্তর রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের রাজধানী শহর হচ্ছে ডুসেলডর্ফ। বড় নদী রাইন এবং ছোট নদী ডাসেলের সঙ্গম আর ছয় লাখ মানুষের পদস্পর্শে মুখরিত মনোলোভা ডুসেলডর্ফ। এই শহরের মনোমুগ্ধকর রূপে মজেছিলেন স্বয়ং নেপোলিয়ন। রাইন নদীর বুকের ওপর দাঁড়িয়ে শহরটিকে ভূষিত করেছিলেন 'লিটল প্যারিস' অভিধায়। এ শহরের অনেক ঐতিহাসিক বাড়ি ইট দিয়ে তৈরি হলেও অর্ধ-কাঠযুক্ত এবং সম্পূর্ণ কাঠযুক্ত বাড়ি দেখা যায় প্রচুর; তবে তা বেশির ভাগই গ্রামাঞ্চলে। ডুসেলডর্ফের আধুনিক বাড়িগুলো প্রায়ই বালু এবং চুনাপাথরের তৈরি গোথিক স্টাইল, রোমানেস্ক স্থাপত্যে সমৃদ্ধ।

UZgFpVT.jpg


ডুসেলডর্ফের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন, ছবি: উইকিপিডিয়া

ড্যারেনডার্ফ থেকে উঠেছি উবানে। নামব ডুসেলডর্ফ হপ্ট বানুফে। হপ্ট বানুফ মানে এখানকার প্রধান রেলওয়ে স্টেশন। নেতিয়ে পড়া গাছে জল ঢেলে দিলে যেমন তাতে তারা প্রাণ ফিরে পায়, এখানকার বৃদ্ধ মানুষগুলোকে দেখলে আমার তা-ই মনে হয়। এই জল ঢালার কাজটি কিন্তু নিয়মিত করে যাচ্ছে রাষ্ট্র। ট্রেনে দেখা হলো এক অশীতিপর বৃদ্ধার সঙ্গে। চামড়া কুঁচকে গেছে হয়তো কিন্তু ধবধবে ফরসা শরীরে এক সুখী মানুষের প্রতিবিম্ব যেন। বিরক্তির লেশমাত্র নেই বৃদ্ধার চোখে-মুখে। গুটেন মর্গেন সম্ভাষণে মৃদু হাসিতে নিজের কুকুরটিকে দূরে সরিয়ে আমাকে বসার বন্দোবস্ত করে দিলেন। ট্রেন ছুটছে…আর আমি দেখছি বৃদ্ধার ড্যাবড্যাবে চোখে সারা পৃথিবীর সৌন্দর্য। তিনি আছেন আপন ধ্যানে, কথা বলছেন বাতাসের গায়ে আঁকিবুঁকি কেটে। এর মধ্যেই পিঠের ঝুলি খুলে ঢক ঢক করে সাবাড় করে দিলেন তিন তিনটি বেক'স ব্র্যান্ডের বিয়ার।

উত্তেজনা সামলাতে না পেরে উল্টোপাশে বসে থাকা নীল চোখের তরুণীটি; চুমোতে চুমোতে অধর রাঙিয়ে দিলেন কৃষ্ণাঙ্গ ছেলেটির। ভাবছি, শারীরিক গঠনে ছেলেটি বডিবিল্ডার হলে মেয়েটিও কিন্তু কম যান না। একেবারে মেদহীন পেলব দেহের দ্যোতনা। ঊর্ধ্বগামী সিঁড়ি বেয়ে যখন ওপরে উঠছি, কোনো রকম সংকোচ ছাড়াই রোমানিয়ান মেয়েটি ১০ ইউরো চেয়ে বসল। আঙ্গেলা ম্যার্কেল আশ্রয় দিয়েছেন। জীবনের মৌলিক সমস্যার সমাধানও করেছেন, তারপরও কেন যে ওরা ভিক্ষাজীবীই রয়ে গেল। আফসোস!

u3i9U9w.jpg


ডুসেলডর্ফ শহরের পুরনো এলাকা, ছবি: উইকিভয়েজ

ডুসেলডর্ফ জার্মানির ধনী শহর আর সাম্প্রতিক মার্সার জরিপে জীবনযাত্রার মানের দিক দিয়ে পৃথিবীর সেরা ১০টি শহরের একটি হলেও এখানে একাকিত্বে ভোগা, নিঃসঙ্গ মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ডুসেলডর্ফে তাই একটি বিকেল নিঃসঙ্গতার ঢেউ থেকে দূরে থাকার জন্য আলস্টাডের রিভারফ্রন্ট অন্যতম সেরা জায়গা। কয়েক শ মাইল দীর্ঘ প্রসারিত সড়কটি ওল্ড টাউনকে সমসাময়িক মেডিয়ানহ্যাফেনের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। ওপরের স্তরটিতে যেন ছবির মতোই সাজিয়ে রাখা অসংখ্য গাছ, ক্যাফে, বার। সারা দুনিয়া থেকে দর্শনার্থী এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন এখানকার প্রাণবন্ত নাইট লাইফ এবং দুর্দান্ত সব রেস্তোরাঁয়। বরাবর হাঁটার জন্য পথটি অবশ্য রেখাঙ্কিত।

বার্গপ্লাৎজ পিয়ার থেকে আপনি রিভার ক্রুজে ঘুরে দেখতে পারেন বা সূর্যাস্তের মুহূর্তগুলো নদীতীরের দক্ষিণ প্রান্তের তীরবর্তী তীর থেকে দৃশ্যটি ফ্রেমবন্দী করে রাখতে পারেন। ইউরোপে রিভার ক্রুজ শিল্প দ্রুততম বর্ধমান সেগমেন্ট। একটি ছোট জাহাজে সমস্ত শহর চষে বেড়ানো বা দূরর্বর্তী শহরে দল বেঁধে আনন্দ-ফুর্তির জোয়ারে ভেসে বেড়ানো। জাহাজের ভেতরেই রয়েছে খাবারদাবারের সুব্যবস্থা। টিপিক্যাল ডুসেলডর্ফের খাবারের মেন্যু হিসেবে 'হিমেল ও এর্ড' খুব জনপ্রিয়। কালো পুডিং, আলু আর আপেল স্যুপ ছাড়াও 'রাইনিশার ড্যাবকোওচে' নামে একটি থালা, যা আলুর কেকের সঙ্গে ডুসেলডর্ফের জার্মানরা গ্রহণ করে থাকেন।

Jgxj7wE.jpg


জীবনের উদযাপন

নয়নাভিরাম রূপের সুড়ঙ্গ আছে, আছে অন্ধ গলি, তারই ফাঁকে ফাঁকে যেন উপচে পড়ে হরিণ রোদ্দুর। দুপুরের তেজোদীপ্ততায় টার্কিস ডোনার দেখলেই জিবে জল এসে যায়! মাত্র চার ইউরোতে এত লোভনীয় ফুড আইটেম। তৃপ্তিদায়ক লাঞ্চ শেষে ডেজার্ট হিসেবে আইসক্রিম খারাপ না। হাতের বাঁ দিকেই রেড লাইট স্ট্রিট। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় চোখ ঘুরিয়ে দেখলাম। এখানে যন্ত্রদানবেরা টাকা দিয়ে কিনে নিচ্ছে যৌন বিলাসিতা। টাকায় উড়ছে সম্পর্কের আনন্দ বেলুন! যেখানে সেজেগুজে খদ্দেরের জন্য অপেক্ষারত বহুজাতিক দেহপসারিণীরা। গান বাজছিল। কাচে ঘেরা একেকটা ছোট ছোট ঘর থেকে তাঁরা ডাকছেন। দরদাম শেষে বিড়ালের মতো সরু পদক্ষেপে ওই ভবনে সেঁধিয়ে যাচ্ছেন যৌনতার পাঠ নিতে আগ্রহী সুপুরুষেরা।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। রাইনের তীর ধরে উদ্দেশ্যবিহীন হাঁটতে থাকি। ব্রিজ থেকে জলের গভীরে ভালো করে তাকাই। শীতকাল, তবু দিনটা কি উষ্ণ! কী একটা পাখি, ফ্লেমিঙ্গো পাখিই হবে হয়তো, লাফিয়ে উঠল রাইনের পাগলপারা স্রোতের ওপর। মনে হলো, কিছু মাছের মতো প্রাণভরে শ্বাস নিয়ে আমিও যদি ডুবসাঁতারে জলের অতলে তলিয়ে যেতে পারতাম! ফ্লেমিঙ্গো পাখিটা লাফিয়ে ওঠার সময় বড় জাহাজটা সরে গেল দ্রুত, পেছনে তৈরি হওয়া ঘোলাটে জলের রেখাটিও মিলিয়ে গেল ধীরে ধীরে। নদীর পাড়ে সপ্তাহান্তের পার্টি, গান-বাজনা জমে উঠেছে।

Stu0SUD.jpg


রাইনের তীরে লেখক, ছবি: লেখক

সঙ্গে বিয়ার, হুইস্কি, ভদকার অফুরান জোগান। মনে মনে ভাবলাম, এখানেই যদি তাঁবু খাটিয়ে রাতটা থাকা যেত? সিগারেট ধরাতে গিয়ে গিয়ে দেখি, লাইটার নেই পকেটে। অগত্যা গিটার হাতে কিন্তু গান না করা যে উচ্ছল তরুণী; তাঁর দিকেই মনোযোগ গেল। 'মে আই হ্যাভ ইউর লাইটার? 'অবকোর্স' বলে তরুণী নিজেই কাছে এসে সিগারেটটিকে দীপ্তিময় করে দিল। জানাল তার নাম সিলভিয়া নাইড। সে ডুসেলডর্ফের লাগোয়া বিল্কে থাকে। মগ্নতার সঙ্গে সংগীতের ভেতর প্রবেশে সে আমাকে উদ্বুদ্ধ করল। তরুণ দলটির ভোকাল বেশ চেঁচিয়ে গান করছিল। একটি গানের লিরিক যে কারও মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
He's living in a universe
A heart away
Inside of him there's no one else
Just a heart away
The time will come to be blessed
A heart away
To celebrate his loneliness
Wir sind allein
Allein allein
Allein allein

পিঠের ওপর অনুভব করি একটা ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করেছে। সিলভিয়ার পনিটেইল খুলে ছড়িয়ে দেওয়া চুলগুলো হাওয়ায় এলোমেলো হচ্ছিল বারবার। এরই মধ্যে ওর বয়ফ্রেন্ড পিটার এসে কয়েক গ্রাম গাঁজা হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেল। জার্মানিতে গাঁজা নিষিদ্ধ হলেও তারুণ্যের প্রিয় মাদক। স্টেশন, পার্কে, চুপিচুপি আফ্রিকান আর এশিয়ান অবৈধ অভিবাসীরা ১০ ইউরোতে এক পুঁটলি করে গাঁজা বিক্রি করে। এগুলোর জোগান আসে মূলত নেদারল্যান্ডস থেকে।

zcEu6In.jpg


রাইনের তীরে, ছবি: উইকিপিডিয়া

ওখানে গাঁজা নিষিদ্ধ নয়। গাঁজা পাবার মৃদু হাসিতে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি ঝকমকে দাঁতগুলোও যখন বেরিয়ে পড়ল, তখন তার সুহাসিনী রূপটিও যেন বিদ্যুৎ চমকের মতো উছলে পড়ল। সবুজ জ্যাকেটের সঙ্গে রিপড জিনস আর সাদা স্নিকার সিলভিয়াকে দারুণ আবেদনময়ী করে তুলেছে। ব্যাকপ্যাক হাতড়ে কাঁচি দিয়ে কেটে কী নিপুণ ভঙ্গিমায় সিগারেটের প্রতিটি শলাকায় ভরতে লাগল গাঁজা। তৈরি সেরে দিগ্‌বিজয়ী এক সুখটান!

ডুসেলডর্ফে জন্ম নেওয়া বিখ্যাত জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের একটি বিখ্যাত কবিতা, অনুবাদে যার নাম হয়েছে 'শতদল'। এর কয়েকটি পঙ্‌ক্তি আওড়াতে ইচ্ছে হলো—

qCcSylz.jpg


মরিৎজ ড্যানিয়েল ওপেনহাইমের আঁকা হাইনরিখ হাইনের প্রতিকৃতি, ছবি: উইকিপিডিয়া

কোমল পদ্ম ত্রাসে কম্পিতা
সূর্যালোকের কঠিন ছোঁয়ায়,
নিমীলিত চোখে স্বপ্ন দ্যাখে সে,
স্নিগ্ধ রাত্রি একান্তে চায়।
হিমাংশু তার প্রেমিকপ্রবর
ডেকে তোলে তাকে রুপালি আভায়;
অবগুণ্ঠন খুলে ফেলে ফুল
প্রেমিকাসুলভ মুখ তুলে চায়'

আলোর জৌলুশ কমে যেতে শুরু করেছে। বাতাসের তাপমাত্রায় হিম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবঘুরে সম্প্রদায়কেও আশ্রয়ের সন্ধানে সরে যেতে দেখি। রাতে টহলদারি করা ব্যতিক্রমী ভুবনের মানুষ আর্সেলান। প্রতিদিনই মনে হতো জীবন থেকে মুক্তির জন্য নয় বরং অপার্থিব কিছু পেতেই বোধ হয় সে নিশাচর। ডেরা বা ঝুপড়িতে ফিরে যাওয়ার তাগিদ নেই কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সে বরাবরই আমার কাছে নির্বিকার ছিল। নিজেকে বরং চোঙাকৃতি একটি বাক্সের পেছনে লুকিয়ে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত।

z1GeK4x.jpg


মেসে ডুসেলডর্ফ; এখানে অনুষ্ঠিত হয় গ্লাসটেক এক্সপো, ছবি: উইকিপিডিয়া

পুঁজির দৌড়ে এগিয়ে থাকা জার্মানদের চলমান জীবনের স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক কোনো রকম ফলাফলেই সে আজ আর বিচলিত নয়। সে জানতে মোটেও আগ্রহী নয়, তার শহরে যে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গ্লাস উৎপাদিত হয়, সে বিষয়টি। গ্লাস ইঞ্জিনিয়ারিং, গ্লাস শিল্প, গ্লাজিয়ার ক্রাফটের জন্য প্রতি দুবছর অন্তে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য মেলাটি নিয়ে পুরো ডুসেলডর্ফ যখন মাতোয়ারা, তখনো সে নিরুত্তাপ, নিস্তরঙ্গ! সুলুক-সন্ধানে জানলাম, এই ধরনের ভবঘুরেরা সিন্টি এবং রোমা নামে পরিচিত। জার্মানির এই আদিম, স্বাধীন, রোমান্টিক যাযাবরদের বিরুদ্ধে নব্য নাৎসি থেকে শুরু করে জার্মান মিডিয়া সবাই অপকর্মের দায় চাপিয়ে দিতে পারলেই বুঝি হাঁপ ছেড়ে বাঁচে!

সন্ধ্যার শেষ লগ্ন। পর্যটক চলে যাওয়ায় সুনসান সড়ক। প্রার্থনা শেষে গোথিক সেন্ট ল্যাম্বার্টাস গির্জার একটি বাঁকানো টাওয়ার থেকে একে থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন পাদরিরা। ওই দিকে জ্যান ওয়েলেমের রাইডার স্ট্যাচুটির মুখে হাসি লেগেই আছে। পাগড়ির মতো প্যাঁচানো টুপি পরা ভারতীয় শিখ বাবাজি যখন গ্রোসারি শপ বন্ধে ব্যস্ত, ততক্ষণে দীর্ঘ রেশম বাদামি চুলের উগান্ডার মেয়েটি, একা পেয়ে এক সাদা পর্যটককে দিয়ে দিল অস্বস্তিকর ইঙ্গিত। তিনি বুঝেও না বোঝার ভান করে আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বর্গীয় আনন্দ উপভোগ করলেন!

9OZYYjF.jpg


ডুসেলডর্ফের সেন্ট ল্যাম্বার্টাস গির্জা, ছবি: উইকিভয়েজ

ফেরিওয়ালার মতো ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। দেখছি, রাইনের নীল জলে উত্তুঙ্গ ঢেউয়ের প্রতিযোগিতা। একেকটা অসম্ভব সুন্দর আর শক্তিমান জাহাজের কলকবজাকেও আজ বিকল করে দিতে চায় ফেনায়িত শুভ্রতার তরঙ্গ। জাহাজগুলো ডানে-বামে দুলছে আর আমার বুকেও নিঃসঙ্গতার পর নিঃসঙ্গতার ঢেউ বয়ে যাচ্ছে…অনেকটা ঝড়ের মতো! এর ভেতরেও ভালোবাসার কুহক থেকে আমি যে আনন্দ লুটে নিচ্ছি; সত্যিই অসাধারণ! ধন্যবাদ ঈশ্বর!

* লেখক: মোস্তফা মহসীন
 

Users who are viewing this thread

Back
Top