What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other কোথায় হারিয়ে গেল ‘জাউয়াবাজারি ক্যাসেট (1 Viewer)

XPCi473.jpg


তিন দশক আগেও গ্রামীণ জনপদে টেলিভিশন তো নয়ই, রেডিও-টেপেরও খুব একটা প্রচলন ছিল না। দেখা গেল, গ্রামের কোনো এক বাড়িতে টেপে অডিও ক্যাসেট ঢুকিয়ে বাজানো হচ্ছে বাউলগান, যাত্রাগান, মালজোড়াগান অথবা কেচ্ছাকাহিনি। তো এটিকে কেন্দ্র করে জড়ো হতেন আশপাশের পাড়া-মহল্লার অসংখ্য শ্রোতা। বিশেষ করে কাজ শেষে সন্ধ্যার পর কিংবা বর্ষার অলস দুপুরে পানিবন্দী হাওরবাসীর কাছে এই টেপই ছিল বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। আর তাই যে গ্রামে টেপ অর্থাৎ ক্যাসেট প্লেয়ার রয়েছে, তাঁদের অলস সময়টুকু কাটত সেটির সাহায্যে গান, কেচ্ছা কিংবা লোকনাট্য শুনে শুনে। অনানুষ্ঠানিক উৎসব ছাড়াও গ্রামীণ বিয়ে কিংবা যাত্রীবাহী নৌকায় মাইকসহযোগে টেপরেকর্ডারের সাহায্যে এসব ক্যাসেট বাজানো হতো।

কয়েক দশকের ব্যবধানে সে চিত্র এখন ধূসর, অতীত। মুঠোফোন-অন্তর্জাল-ডিশ সংযোগ গ্রামীণ জনপদে ঢুকে পড়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে বিনোদন জগতের সর্বশেষ হালহকিকত। ক্যাসেট প্লেয়ার তাই হারিয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য। অথচ একটা সময় সিলেটের গ্রামীণ মানুষ আগ্রহ নিয়েই ক্যাসেট প্লেয়ারে বাজাতেন সে সময়কার লোকশিল্পীদের নানা গান-কেচ্ছা-নাটক পরিবেশনা। আর এসব পরিবেশনা মূলত অডিও ক্যাসেট আকারে প্রকাশ করত সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজারের 'শাহজালাল রেকর্ডিং হাউজ'। পুরো সিলেট তথা হাওরাঞ্চলে এসব 'জাউয়াবাজারি ক্যাসেট' হিসেবেই একনামে পরিচিতি পেয়েছিল। যেমনটা দুই ঈদের আগে সিনেমা হলগুলোতে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পেত, তেমনি জনপ্রিয় শিল্পীদের নতুন গাওয়া গান রেকর্ড করে অডিও ক্যাসেট তৈরি করে শাহজালাল রেকর্ডিং হাউজ প্রকাশ করত।

শুরুর ইতিহাস

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার লক্ষ্মণসোম গ্রামের সুরত আলী সরদ মিয়ার দুই ছেলে মো. গিয়াস উদ্দিন ও মো. আলাউদ্দিন হোসেন শাহের হাত ধরে স্থানীয় জাউয়াবাজার এলাকায় ১৯৭৮ সালে যাত্রা শুরু করে শাহজালাল রেকর্ডিং হাউজ। শুরুর দিকে বিয়ে, উৎসব কিংবা রাজনৈতিক সমাবেশে মাইক সরবরাহের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা থেকে আসা অডিও ক্যাসেট বিক্রি করত। তবে ১৯৮০ সালে ওই উপজেলার গোবিন্দগঞ্জের বাসিন্দা বাউলশিল্পী আইরুনন্নেছার বিচ্ছেদ গান-১ অ্যালবাম প্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ক্যাসেট প্রকাশনার জগতে প্রবেশ করে। শুরুর ক্যাসেটটি শ্রোতারা দারুণভাবে গ্রহণ করে। এক বছরেই শেষ হয়ে যায় অ্যালবামটির অন্তত পাঁচ হাজার কপি। এরপর আর প্রতিষ্ঠানটিকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক প্রকাশিত হতে থাকে অ্যালবাম। দেড় সহস্রাধিক অডিও ক্যাসেট প্রকাশ করেছিল শাহজালাল রেকর্ডিং হাউজ। তবে এসব অ্যালবাম পরিচিতি পায় 'জাউয়াবাজারি ক্যাসেট' হিসেবেই। জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, তখন প্রতিষ্ঠানটি সিলেট শহরের তালতলা এলাকায় ১৯৯৫ সালে একটি শাখা খোলে। সেখান থেকেও বিক্রি হতে থাকে জাউয়াবাজারি ক্যাসেট। এই শাহজালাল রেকর্ডিং হাউজের একচেটিয়া সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে জাউয়াবাজারে আরও ১৫ থেকে ২০টি অডিও রেকর্ডিং ও ক্যাসেটের দোকান চালু হয়।

mVfMCHb.jpg


বাঁ থেকে কফিলউদ্দিন সরকার, রোহী ঠাকুর, কারি আমীর উদ্দিন আহমদ

যেভাবে প্রকাশ পেত অ্যালবাম

শাহজালাল রেকর্ডিং হাউজে একটি রেকর্ডিং কক্ষ ছিল। সেখানে শিল্পীদের বসিয়ে একটি ক্যাসেটে তাঁদের গান রেকর্ড করে ফিতেবন্দী করা হতো। এটিকে বলা হতো 'মাস্টার রেকর্ড'। পরে সেই মাস্টার রেকর্ড থেকে টেপরেকর্ডারের সাহায্যে তৈরি করা হতো অডিও ক্যাসেট। সেসব ক্যাসেট প্রস্তুত শেষে বাজারে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করা হতো। এসব ক্যাসেট রেকর্ড করার সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন জানিয়েছেন, শুরুতে একেকটি ক্যাসেট রেকর্ডার থেকে রেকর্ড করতে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগত। পরে হাইস্পিডের টেপরেকর্ডার আসার পর ঘণ্টায় দুটি থেকে তিনটি ক্যাসেট প্রস্তুত করা যেত। এ রকম ১৫ থেকে ২০টি টেপরেকর্ডারের সাহায্যে অডিও ক্যাসেট তৈরি করে বাজারে ছাড়া হতো। দিনরাত ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা চলত ক্যাসেট প্রস্তুতের কাজ। এর বাইরে শিল্পীদের অনুমতি নিয়ে যাত্রা, মালজোড়া কিংবা পালাগানের আসর থেকে গান রেকর্ড করেও অ্যালবাম আকারে প্রকাশ করা হতো। এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন চার থেকে পাঁচজন কর্মচারী।

যেসব শিল্পীর গান রেকর্ড করে অ্যালবাম আকারে প্রকাশ করা হতো, তাঁদের যথাযথ সম্মানীও দেওয়া হতো। আশির দশকে সেই সম্মানী ছিল ৩০০ থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি সম্মানী দেওয়া হতো বাউল কারি আমীর উদ্দিন আহমদ এবং কেচ্ছাশিল্পী সুরুজ আলীকে। কারণ, এঁদের অ্যালবাম প্রকাশ করলে বছরে ১৫ থেকে ২০ হাজার কপি বিক্রি করা যেত। অন্যান্য শিল্পীর জনপ্রিয়তাভেদে ৫০০ থেকে ৫ হাজার কপি বিক্রি হতো। একেকটা অ্যালবাম পাইকারি দরে ২০ থেকে ২২ টাকা এবং খুচরা দরে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি করা হতো। সব মিলিয়ে বছরে ৩০ থেকে ৫০ হাজার কপি অ্যালবাম বিক্রি হতো। ক্যাসেট বিক্রির চাহিদা অনুযায়ী বিক্রেতারা শিল্পীদের ক্যাটাগরিও নির্ধারণ করতেন। দেখা যেত, ক্যাসেটের গায়ে হাতে লেখা থাকত 'সুপার হিট', 'সুপার ডুপার হিট' কিংবা 'সুপার ডুপার বাম্পার হিট'।

ZSkfkVn.jpg


বাঁ থেকে রণেশ ঠাকুর, বাউলশিল্পী রেহানা বেগম, মকদ্দস আলম উদাসী

কারা ছিলেন শিল্পী

ক্যাসেটগুলো ছিল মূলত বাউলগান, কেচ্ছাকাহিনি, মালজোড়া, বিয়ের গীত, কীর্তন, ধামাইল, পালাগান, ওয়াজ, ইসলামি গান, হামদ, নাত, কাওয়ালি, কমেডি, আঞ্চলিক গান ও নাটক, কৌতুক, যাত্রাগান, মাইজভান্ডারি, কাওয়ালি, সারিগান, ভাটিয়ালি পর্যায়ের। বৃহত্তর সিলেটসহ নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের পাশাপাশি অনেক নবীন শিল্পীর ক্যাসেটও এখান থেকে প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে আলী হোসেন সরকার, কারি আমীর উদ্দিন আহমদ, সুরুজ আলী, অমিয় ঠাকুর, আবেদ আলী, চান মিয়া, মো. শফিকুন্নুর, অন্নদারঞ্জন, কফিলউদ্দিন সরকার, রোহী ঠাকুর, রণেশ ঠাকুর, মকদ্দস আলম উদাসী, মুজিব সরকার, অন্ধ সিরাজ, সিরাজ উদ্দিন, বশিরউদ্দিন সরকার, পাগল কালা, বিরহী কালা মিয়া, রেহানা বেগম, শাহানা আক্তার, হেপি রানী, নিউ শাহানা, আদরিনী বেগম, মিনারা উল্লেখযোগ্য। এসব শিল্পীর অনেকেই এখন প্রয়াত। আড়াই শ থেকে তিন শ শিল্পীর অ্যালবাম প্রতিষ্ঠানটি বের করেছে। এসব শিল্পী প্রাচীন গানের পাশাপাশি শিতালং শাহ, সৈয়দ শাহনূর, ইয়াসিন শাহ, আছিম শাহ, রাধারমণ, শাহ আবদুল করিম, দুর্বিন শাহ, কারি আমীর উদ্দিন আহমদসহ হালের জনপ্রিয় অনেক গীতিকারের লেখা গান গাইতেন। আবার বাগ্মী সব রাজনৈতিক নেতার বিভিন্ন জনসভায় প্রদান করা ভাষণের রেকর্ডকৃত অডিও ক্যাসেটের আবেদনও ছিল উল্লেখ করার মতো।

জাউয়াবাজারি ক্যাসেটের বিশ্বজয়

জাউয়াবাজারি ক্যাসেটের সমাদর সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনার খালিয়াজুরি, কেন্দুয়া ও মদন উপজেলা এবং ময়মনসিংহ জেলাতেও ছিল। এসব জেলা-উপজেলায় পাইকারি ও খুচরা দরে এসব ক্যাসেট বিক্রি হতো। তবে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও এসব ক্যাসেট নিয়মিতভাবে যেত। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ যেসব দেশে বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের মানুষ বসবাস করতেন, তাঁদের অনেকেরই আগ্রহ ছিল এসব অডিও ক্যাসেটের প্রতি। তাঁরা নিয়মিতভাবে এসব ক্যাসেট সংগ্রহ করতেন। প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ হাজার অডিও অ্যালবাম বিদেশেই বিক্রি হতো।

এসব ক্যাসেটের মধ্যে বাউলগানের পাশাপাশি মালজোড়া ও কেচ্ছাগানের দিকেই শ্রোতাদের আগ্রহ ছিল বেশি। বিক্রির তালিকার শীর্ষে থাকত কারি আমীর উদ্দিন আহমদের বাউলগান, কেচ্ছা ও মালজোড়াগান এবং সুরুজ আলীর কেচ্ছাগানের অ্যালবাম। এর বাইরে মো. শফিকুন্নুর, রোহী ঠাকুর, মুজিব সরকার, রণেশ ঠাকুর, শাহানা আক্তার, নিউ শাহানার অ্যালবামও প্রচুর বিক্রি হতো। বিক্রির শীর্ষে থাকা ক্যাসেটের মধ্যে কারি আমীর উদ্দিন আহমদের ফাতেমা কুলসুমা, দুর্বিন শাহের গান; সুরুজ আলীর কমলারানী, মধুমালা মদনকুমার; নিউ শাহানার বন্ধু আমার লন্ডন, কালা কালা চশমা; রণেশ ঠাকুরের ভব সাগরের নাইয়া উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া কারি আমীর উদ্দিন আহমদ বনাম মুজিব সরকারের মালজোড়াগানের অ্যালবামও দেশ-বিদেশে জনপ্রিয় ছিল। এর বাইরে সোহরাব-রোস্তম, রহিম বাদশা ও রূপবান পালা, এক পয়সার প্রেম, অচল পয়সা, সিরাজ-উদ্-দৌলাসহ নানা ধরনের যাত্রাপালারও আবেদন ছিল। আর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে যাঁদের ভাষণসংবলিত ক্যাসেটের আবেদন ছিল ব্যাপক, তাঁদের মধ্যে আবদুস সামাদ আজাদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, কাদের সিদ্দিকী প্রমুখ রয়েছেন।

স্মৃতিতে-শ্রুতিতে

তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে অডিও ক্যাসেট হারিয়েছে তার দাপট। সেই স্বর্ণযুগের স্মৃতি হাতড়ে বেঁচে আছেন শাহজালাল রেকর্ডিং হাউজের অন্যতম স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিন হোসেন শাহ (৫৮)। যৌবনে দুই ভাই মিলে যখন শাহজালাল রেকর্ডিং হাউজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তখন স্বপ্নেও ভাবেননি ভবিষ্যতে এমন ধূসর চিত্র তাঁদের দেখতে হবে। প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে তাঁরা ২০০৯ সালের দিকে রেকর্ডিং ব্যবসাও গুটিয়ে নিয়েছিলেন। এক দুর্ঘটনায় ডান পা হারিয়ে আলাউদ্দিন এখন অনেকটাই শয্যাশায়ী, বড় ভাই গিয়াস উদ্দিনও মারা গেছেন বছর কয়েক আগে। শ্রোতাদের হৃদয়ে বহু ঝড় তোলা সহস্রাধিক অ্যালবামের 'মাস্টার রেকর্ড' এখনো ঢেউহীন-শব্দহীন হয়ে সংরক্ষিত আছে গিয়াসউদ্দিনের বড় ছেলে ফয়সল আহমদের কাছে। ফয়সল এসব মাস্টার অ্যালবাম তাঁর সিলেট নগরের বাসার একটি কক্ষে সযত্নেœরেখে দিয়েছেন। কোনো একদিন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো এসব ক্যাসেট ঘেঁটে তৈরি করবেন হাওরাঞ্চলের সমৃদ্ধ গানের ইতিহাস, সে ভাবনা আলাউদ্দিনের।

অতীতের স্মৃতি ঘেঁটে আলাউদ্দিন বলেন, 'আহা, কী সময় ছিল তখন! সারা রাত আমরা কর্মীদের নিয়ে রেকর্ডার দিয়ে ক্যাসেট প্রস্তুত করতাম। দিনে শ্রোতারা কিংবা পাইকারি ক্রেতারা এসে দেদারসে কিনে নিতেন। রেকর্ড করতে করতে আমরা প্রায় সময়ই কুলাতে পারতাম না। আর এখন এসব দিনের পর দিন বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে আছে। হয়তো জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারব না, তবে কোনো দিন হয়তো নতুন প্রজন্মের হাতে পড়ে ধুলায় ধূসর হওয়া ফিতেগুলো পুনরায় বেজে উঠবে। আবার হয়তো প্রাণ ফিরে পাবে অ্যালবামগুলো।'

জাউয়াবাজারে এখন যেখানটাতে শাহজালাল ভিসিডি সেন্টার, সেখানটাতেই ছিল শাহজালাল রেকর্ডিং হাউজ। কয়েক বছর আগে সেই শাহজালাল ভিসিডি সেন্টারে গিয়ে আরমান হোসেন নামের ১৬ বছর বয়সের এক যুবককে বসে থাকতে দেখা যায়। আরমান জানিয়েছিল, তার শৈশবেই রেকর্ডিং সেন্টারের ব্যবসা গুটিয়ে পুরোনো মালিক স্থান ত্যাগ করেছেন। এরপর থেকে তার বাবা সেখানে সিডি-ক্যাসেটের ব্যবসা করছেন।

আরমানের ঠিক পাশেই বসা ছিলেন রেজাউল করিম নামের ১৮ বছর বয়সী এক যুবক। তিনি একনিষ্ঠভাবে কম্পিউটার থেকে গ্রাহকদের মুঠোফোনের মেমোরি কার্ডে গান লোড করে দিচ্ছিলেন। তাঁর পেছনেই কয়েকটি কাঠের পাটাতনজাতীয় তাকে ইসলামি গজল, হামদ ও নাত; সালাম সরকারের গান এবং বাংলা ছায়াছবির সিডি-ডিভিডি রয়েছে। আরও রয়েছে বেশ কিছু পুরোনো আধুনিক বাংলা গানের অডিও ক্যাসেট। তাঁকে এসব পুরোনো অডিও ক্যাসেটের কথা বলতেই তিনি বললেন, 'এইখানে ক্যাসেটের দোকানটা ছিল। সেই দোকান যাওয়ার সময় কিছু কিছু ক্যাসেটও আমাদের কাছে রয়ে গেছিল। কিন্তু এখন আর এইগুলা নাই!'

রেজাউলের সঙ্গে কথা শেষ হলে আশপাশের কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হয়। তাঁরা জানালেন, অডিও ক্যাসেটের দোকানগুলো ক্রেতার অভাবে ধীরে ধীরে নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। গোটানোর মুহূর্তে কেউ কেউ তাদের সংরক্ষিত ক্যাসেটগুলো ফিতে টেনে বের করে নষ্ট করে ফেলে দিয়েছেন নতুবা ভাঙারি ব্যবসায়ীদের কাছে প্রায় সস্তায় বেচে দিয়েছেন। ঐতিহাসিকতার বিষয়টি কারও মাথায় তখন আসেনি। তবে গ্রামের প্রাচীন মানুষ কিংবা কোনো কোনো শৌখিন ব্যক্তির বাড়িতে এসব ক্যাসেটের অস্তিত্ব পাওয়া যেতে পারে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top