What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other জাভেদ: গুজরাটের ঘর ছেড়ে ঢাকার হিট নায়ক (1 Viewer)

54RAjXi.jpg


ইলিয়াস জাভেদ, যাকে আমরা সবাই একজন চিত্রনায়ক হিসেবেই চিনি, অথচ তিনি যে একজন সফল নৃত্য পরিচালকও ছিলেন তা হয়তো বর্তমান সময়ের দর্শকদের কাছে অজানাই রয়ে গেছে।

নিজের অভিনীত চলচ্চিত্র ছাড়াও অন্যান্য আরো বহু চলচ্চিত্রের নৃত্য পরিচালক ছিলেন তিনি, 'সওদাগর' ছবির 'মনেরই ছোট্র ঘরে, আগুন লেগেছে হায়রে', 'আবেহায়াত' ছবির 'চাকবুম চাকবুম চাঁদনি রাতে', 'নরম গরম' ছবির 'ওরে ও বাঁশীওয়ালা আমার এই মনের জ্বালা সইতে আর পারিনা', একই ছবির 'এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেওনা', 'মর্জিনা' ছবির 'একটি রাতের গল্প তুমি হাজার রাতের স্বপ্ন', 'মালকা বানু' ছবির 'মালকা বানুর দেশে রে', 'নাচো গো অঞ্জনা নাচো গো খঞ্জনা নাচো কোমর দুলাইয়া'র মতো সুপার হিট গানসহ আরো বহু হিট ছবির হিট গানের নৃত্য পরিচালনা করেন তিনি।

IZUV2af.jpg


জাভেদের জন্ম ১৯৪৬ সালে ভারতের গুজরাটে, পড়াশোনার পাশাপাশি জাভেদ নৃত্যচর্চার ওপর উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা জাভেদ শৈশব থেকেই অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন, বেশির ভাগ সময়ই তিনি সিনেমা দেখা আর গান শোনা নিয়েই মগ্ন থাকতেন। আর এসব নিয়ে পরিবারের সাথে মনমালিন্য হতে থাকলে তিনি তার বাবা-মাকে না বলেই জন্মস্থান গুজরাট ছেড়ে চলে আসেন সে-সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) ঢাকায়।

সেটা ছিল ১৯৬৩ সালের কথা, ঢাকায় তখন বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি নিয়মিত উর্দু ছবিও নির্মিত হতো, কিন্তু প্রথমদিকে অভিনয়ে সুযোগ না পেয়ে জাভেদ চলচ্চিত্রে নৃত্য পরিচালনার কাজ শুরু করেন। তার চলচ্চিত্রে প্রথম নৃত্য-পরিচালনা ছিলো ১৯৬৪ সালে কায়সার পাশার পরিচালনায় উর্দু ছবি 'মালান'। এর প্রায় তিন বছর পর ১৯৬৭ সালে 'পুনম কি রাত' উর্দু ছবিতে আবার নৃত্য পরিচালনা করেন তিনি। তবে এরপর আর থেমে থাকেননি, সত্তর থেকে আশির দশক পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ছবিতে নিয়মিত নৃত্য পরিচালনা করেন। সেক্ষেত্রে তিনি তখন ইলিয়াস নামেই নৃত্য পরিচালনা করতেন।

jo5iv7M.jpg


যাই হোক…জাভেদ অভিনয়ে প্রথম সুযোগ পান ১৯৬৬ সালে নুরুল আলম পরিচালিত 'ইস ধরতি পর' ছবিতে, কিন্তু ছবিটিতে নায়ক হিসেবে সুযোগ পাননি, তবে ঐ একই বছরের 'নয়ি জিন্দেগি' নামের আরেক উর্দু ছবিতে জাভেদ নায়ক হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ পান, তবে দুর্ভাগ্যবশত ছবিটি আর আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে মুস্তাফিজ পরিচালিত উর্দু ছবি 'পায়েল'-এ নায়ক হিসেবে প্রথম পর্দায় আসেন জাভেদ। প্রথম ছবি হিসেবে 'পায়েল' দারুণ সাফল্য পেলে জাভেদকে সবাই চিনতে শুরু করেন, ছবিটিতে তার সহ-অভিনেত্রী হিসেবে ছিলেন আজকের শাবানা। এতে অভিনয়ের পাশাপাশি নৃত্য জানা জাভেদ সে-সময়ের দর্শকদের মন রাঙ্গিয়ে দিয়েছিলেন।

অবশ্য এরপর জাভেদকে তেমনভাবে আর কোন ছবিতে দেখা না গেলেও নৃত্য পরিচালনা করতে থাকেন নিয়মিত। ১৯৭৪ সালের পর থেকে তিনি আবার ব্যস্ত হয়ে ওঠেন বাংলা চলচ্চিত্রে, একে একে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন 'মালকা বানু', 'শাহজাদা, 'চন্দ্রবান', 'অনেক দিন আগে', 'বিজলী', 'রাজকুমারী চন্দ্রবান', 'কাজল রেখা', 'মর্জিনা', 'সুলতানা ডাকু, 'আজো ভুলিনি', 'সাহেব বিবি গোলাম', 'বিজয়িনী সোনাভান', 'শিষ মহল', 'রূপের রানী চোরের রাজা', 'তাজ ও তলোয়ার', 'তিন বাহাদুর', 'নরমগরম', 'জালিম', 'চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা', 'সতি কমলা', 'রাজিয়া সুলতানা', 'বাহারাম বাদশা', 'আলাদিন আলী বাবা সিন্দাবাদ' ও 'নিশান'-এর মতো হিটি সুপার হিট চলচ্চিত্রে। অভিনয়ের পাশাপাশি এসব ছবির নৃত্যপরিচালনাও করেন।

1YV3Goe.jpg


১৯৭৩-৭৪ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রের নায়কদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি নিজে নাচতেন আবার নায়িকাদেরও নাচিয়ে পর্দা কাঁপিয়ে তুলতেন, শাবানা থেকে ববিতা, অঞ্জু, অঞ্জনা, রোজিনা, সুচরিতাসহ আরো অনেকেই নেচেছেন জাভেদের নৃত্য পরিচালনায়। একটা সময় জাভেদ মানেই যেন ছিলো ঘোড়ায় দুরন্তভাবে ছুটে চলার সাথে তলোয়ারের ঝনঝনানি, শাহজাদার পোশাক। আসলে তার বেশিরভাগ ছবিই ফোক-ফ্যান্টাসি ধাঁচের হওয়ার কারণে এমনটা ভাবা হতো।

যাই হোক…জাভেদের অভিনীত ছবিগুলো নিয়ে একটি কথা না বললেই নয়। তা হলো… গুণী পরিচালক ইবনে মিজানের 'নিশান' ছবিটির কথা। দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করা জাভেদের নায়িকা ছিলেন অভিনেত্রী ববিতা। জাভেদ দ্বৈত চরিত্রের একটি কালু খাঁর চরিত্রে অভিনয় করে সে সময়ে সিনে দর্শকদের মাঝে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন, ভয়ংকর সেই চরিত্রটিকে তিনি এতোটাই ফুটিয়ে তুলেছিলেন যে মনে হতো যেন বাস্তবের কেউ। 'নিশান' ছবিতে সেই অসাধারণ দ্বৈত চরিত্রে অভিনয়ের গুণে সে বছরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তার নাম আসলেও শুধুমাত্র ছবিটি নকলের অভিযোগে তাকে আর সে সন্মানে সন্মানীত করা হয়নি। যা আসলেই খুবই দুঃখজনক ছিলো এবং একজন শিল্পীর জন্য যা অপমানজনকও বটে।

ছবিটির ব্যাপারে আরেকটু যোগ না করলেই নয়, তা হলো… বাম্পারহিট এই ছবিটি মাসের পর মাস সিনেমা হলে চলেছে। এমনও হয়েছে সৈয়দপুরের একটি সিনেমা হলে ছবিটি টানা দেড় বছর চলেছে, যা এ যাবতকালের একটি রের্কড।

ঢাকার উত্তরায় বসবাসরত বাংলা চলচ্চিত্রের অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করা জাভেদ পেয়েছিলেন দর্শকদের সীমাহীন ভালোবাসা, পেয়েছিলেন চলচ্চিত্রের 'রাজকুমার' খেতাবও। ব্যক্তি জীবনে অভিনেত্রী ডলি চৌধুরীকে বিয়ে করেন, জাভেদ বর্তমানে অভিনয় থেকে দুরে আছেন৷

q7fFTyQ.jpg


জাভেদ অভিনীত ছবির মধ্যে মালকা বানু, পায়েল (উর্দু) বিজলী, বাঘিনী, অনেক দিন আগে, জোশ, বসন্ত মালতী, সওদাগর, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, রাজবধু, শিষ মহল, রক্তের বন্দী,মর্জিনা, মহুয়া সুন্দরী, কাল নাগিনী, সতী নারী, ওয়ারীশ, রাজিয়া সুলতানা, আলীবাবা ৪০ চোর, মধু মালতী অন্যতম৷

জাভেদ অভিনীত উল্লেখ্যযোগ্য কিছু গানের মধ্যে: মালকা বানুর দেশেরে (মালকা বানু), আমি এক মাস্তানা (বিজলী), চুপি চুপি বলো কেউ জেনে যাবে (নিশান), ওরে ও বাঁশীওয়ালা (নরম গরম), এই নিশি রাইতে (নরম গরম), একটি রাতের গল্প তুমি (মর্জিনা), আমি তো প্রেমে পড়েছি (শিষ মহল), আমি তিসমার খান (অনেক দিন আগে), ও আমার মরমীয়া সওদাগর), নূপুর বাজে না ছমছম (মহুয়া সুন্দরী), তুমি আমার প্রেমের মাস্টার (বসন্ত মালতী), ও বন্ধুরে ও প্রাণ বন্ধুরে (বসন্ত মালতী), সাক্ষী থেকো বাঁকা চাঁদ (মহুয়া সুন্দরী), বে দরদী বুঝলিনারে (জোশ) ও সোহাগ চাঁদ বদনী( চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা)।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top