প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং হাল প্রজন্মের নতুন ট্রেন্ড; গাছের সঙ্গে গড়ে তুলছে তারা নতুন সম্পর্ক। এতে করে সময় কাটানোর পাশাপাশি তারা কিছুটা সময় থাকতে পারছে সবুজের বাতাবরণে। তাদের এই প্রয়াস আরও ছড়িয়ে যাক। নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠুক গাছ ও মানুষের। সবার ঘরেই থাকুক একটু বিশুদ্ধ বাতাস, এক টুকরো প্রকৃতি।
'প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং' শব্দটি যদিও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নতুন এক উন্মাদনা, তবে বিষয়টি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। হয়তো ভিন্ন নামে, ভিন্নভাবে; কিন্তু মূল বিষয় সেই একই। বাড়ির গাছের যত্ন নেওয়া, ঠিক নিজের সন্তান বা পোষা প্রাণীকে যে মমতায় লালন করা হয়, একই আদরে গাছের পরিচর্যা করা।
নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মানুষকে আবার প্রকৃতিমুখী করতে প্ল্যান্ট প্যারেন্টিংয়ের ভূমিকা সত্যিকার অর্থেই প্রশংসনীয়। আগের প্রজন্মের যেমন সুযোগ হয়েছে বাগান করার, প্রকৃতি ও সবুজের সঙ্গে সময় কাটানোর, তেমন সুযোগ অথবা পরিবেশ—কোনোটাই এখন আর নেই। কিন্তু সেই বাগান করার ধারণারই অনেকটা পরিমার্জিত এবং এই প্রজন্ম উপযোগী হলো এই প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং। নিজের বাসার বারান্দায়, কিংবা আরও ছোট্ট পরিসরে জানালার ধারেই হতে পারে এই বিষয়ের সূচনা।
কীভাবে শুরু করব
বারান্দা বাগানের গাছগুলো দিয়েই হোক শুরু
বারান্দা বাগানের গাছগুলো দিয়েই হতে পারে প্ল্যান্ট প্যারেন্ট হওয়ার সূচনা। মায়ের বারান্দার যেকোনো একটি গাছকে যত্ন করার মধ্য দিয়েই শুরু হতে পারে আপনার গাছের অভিভাবক হওয়া। নতুন সম্পর্কের সূচনা।
সাধারণত অর্কিড, মানিপ্ল্যান্ট, নয়নতারা, বেলি কিংবা ক্যাকটাস—এই ধরনের গাছ দিয়েই শুরু করা হয় এই প্যারেন্টিং। এর কারণ মূলত জায়গা, পরিবেশ ও যত্ন নেওয়ার সুবিধা। গাছের ধরন অনুযায়ী নিয়মিত পানি দেওয়া, প্রয়োজন বুঝে গাছের রোদ, জল বা অন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা বুঝতে হবে। একদিনে যদিও দক্ষ হয়ে ওঠা যাবে না, তবে শিখে নিতে চাইলে আছে অনেক সুযোগ।
গাছ নিয়ে মেতে থাকা তরুণ ডেরিল চ্যাঙ, ছবি: ডেরিল চ্যাঙের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল
ইন্টারনেটে খুঁজলে পেয়ে যাবেন বই, সময়োপযোগী প্রবন্ধ; যেগুলো ভীষণ কাজে আসবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ফোরামে প্রশ্ন করে উত্তর পাওয়ার সুযোগ তো আছেই। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ট্রেন্ডে থাকা প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং নিয়ে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন প্রচুর তথ্য, ছবি, আইডিয়া। ডেরিল চ্যাঙ নামক এক যুবকের ইনস্টাগ্রাম পেজ 'হাউসপ্ল্যান্ট জার্নাল' থেকে দেখে নিতে পারেন তাঁর ঘরের গাছের গল্প ও ছবি। এ ছাড়া প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং হ্যাশট্যাগ এখন সোশ্যাল মিডিয়ার সর্বত্রই। তাই তথ্য ও সাহায্য খুঁজে পাওয়া এখন খুবই সহজ।
প্ল্যান্ট প্যারেন্টিংয়ের উপকারিতা
গাছ ঠিক কতটা দরকারি, তা তো আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু শহুরে জীবনে নাগরিক ব্যস্ততার এই সময়ে প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং খুবই সুন্দর ও প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। প্ল্যান্ট প্যারেন্ট হওয়ার কারণে প্রতিদিন কিছুটা সময় সবুজের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ হয়। একই সঙ্গে নিজের মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরির ব্যাপারটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ প্রজন্মকে তাদের নিজেদের জীবন ও ভবিষ্যতের জন্য দায়িত্বশীল করার ব্যাপারে প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং হতে পারে প্রথম পদক্ষেপ।
প্ল্যান্ট প্যারেন্ট হয়ে কিছুটা কাটানো যাবে সবুজের সঙ্গে
এ ছাড়া আছে নিয়মমাফিক কাজ করার অভ্যাস ও স্বাস্থ্যগত গুরুত্বের বিষয়টি। অনেকে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বেছে নেন প্ল্যান্ট প্যারেন্টিংকে। এতে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা, নিজেকে শান্ত করার মতো অনেকগুলো উপকার পাওয়া যায়। অনেকে বিষণ্নতা কাটাতেও সময় ব্যয় করেন গাছেদের সঙ্গে সবুজের কাছাকাছি। নিজের গাছ ফুল, এর বৃদ্ধি—এগুলো মানসিকভাবে যে কাউকেই দেবে স্বস্তি, তাই প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং সত্যিকার অর্থেই এক অসাধারণ বিষয়।
বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনে প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং অনেক মানুষের জন্যই এক স্বস্তি ও ভালো লাগার ব্যাপার। তাই মহামারি পরিস্থিতিতে আরও বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিষয়টি। এর একটি কারণ একাকিত্ব ও অবসাদ কাটানো। যেহেতু দীর্ঘ সময় ঘরে থাকতে হচ্ছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই বিরক্তি চলে আসে মনের মধ্যে। তাই মনকে ব্যস্ত রাখা, নিজেকে একটু সবুজের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়ার চিন্তা থেকেই এই প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে প্ল্যান্ট প্যারেন্টিংয়ের চর্চা।
এই প্রজন্মের মধ্যে জনপ্র্র্রিয় হচ্ছে প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং, ছবি: ডেরিল চ্যাঙের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল
অনেককেই পরিবার থেকে দূরে একা কাটাতে হচ্ছে এই দীর্ঘ লকডাউনের জন্য। তাদের কাছে ঘরের কোণের ছোট্ট গাছটাই তাদের আপনজন। অনলাইন ক্লাস, হোম অফিসের জাঁতাকলে যখন একটু হাঁপ ছেড়ে বাঁচা দায়, তখন কাজের ফাঁকে টেবিলের পাশে নিজের যত্নে লালিত সবুজ পাতার গাছ মনকে সত্যিই আনন্দ দেয়। আর এইভাবেই যান্ত্রিকতার মাঝে এই প্রাকৃতিক ছোঁয়া সবাইকে আরও উৎসাহিত করেছে এদিকে ঝুঁকতে। স্ক্রিনের থেকে চোখ সরিয়ে সবুজের প্রশান্তিকে আলিঙ্গন করতে শিখছে ইন্টারনেটের এই প্রজন্ম।
হয়তো ইনস্টাগ্রামের হ্যাশট্যাগ, ফেসবুকের আপলোডের লক্ষ্যেই অনেকে শুরু করছে গাছের অভিভাবকত্ব। কিন্তু দিন শেষে সুন্দর একটা ফলাফল তো মিলছে; আমরা সেদিকটাতেই আলোকপাত করতে চাই। এভাবেই আরও ছড়িয়ে যাক প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং। নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠুক গাছ ও মানুষের। সবার ঘরেই থাকুক একটু বিশুদ্ধ বাতাস, এক টুকরো প্রকৃতি।
লেখক: মাহজাবিন রশীদ লামিশা | ছাত্রী, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
'প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং' শব্দটি যদিও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নতুন এক উন্মাদনা, তবে বিষয়টি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। হয়তো ভিন্ন নামে, ভিন্নভাবে; কিন্তু মূল বিষয় সেই একই। বাড়ির গাছের যত্ন নেওয়া, ঠিক নিজের সন্তান বা পোষা প্রাণীকে যে মমতায় লালন করা হয়, একই আদরে গাছের পরিচর্যা করা।
নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মানুষকে আবার প্রকৃতিমুখী করতে প্ল্যান্ট প্যারেন্টিংয়ের ভূমিকা সত্যিকার অর্থেই প্রশংসনীয়। আগের প্রজন্মের যেমন সুযোগ হয়েছে বাগান করার, প্রকৃতি ও সবুজের সঙ্গে সময় কাটানোর, তেমন সুযোগ অথবা পরিবেশ—কোনোটাই এখন আর নেই। কিন্তু সেই বাগান করার ধারণারই অনেকটা পরিমার্জিত এবং এই প্রজন্ম উপযোগী হলো এই প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং। নিজের বাসার বারান্দায়, কিংবা আরও ছোট্ট পরিসরে জানালার ধারেই হতে পারে এই বিষয়ের সূচনা।
কীভাবে শুরু করব
বারান্দা বাগানের গাছগুলো দিয়েই হোক শুরু
বারান্দা বাগানের গাছগুলো দিয়েই হতে পারে প্ল্যান্ট প্যারেন্ট হওয়ার সূচনা। মায়ের বারান্দার যেকোনো একটি গাছকে যত্ন করার মধ্য দিয়েই শুরু হতে পারে আপনার গাছের অভিভাবক হওয়া। নতুন সম্পর্কের সূচনা।
সাধারণত অর্কিড, মানিপ্ল্যান্ট, নয়নতারা, বেলি কিংবা ক্যাকটাস—এই ধরনের গাছ দিয়েই শুরু করা হয় এই প্যারেন্টিং। এর কারণ মূলত জায়গা, পরিবেশ ও যত্ন নেওয়ার সুবিধা। গাছের ধরন অনুযায়ী নিয়মিত পানি দেওয়া, প্রয়োজন বুঝে গাছের রোদ, জল বা অন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা বুঝতে হবে। একদিনে যদিও দক্ষ হয়ে ওঠা যাবে না, তবে শিখে নিতে চাইলে আছে অনেক সুযোগ।
গাছ নিয়ে মেতে থাকা তরুণ ডেরিল চ্যাঙ, ছবি: ডেরিল চ্যাঙের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল
ইন্টারনেটে খুঁজলে পেয়ে যাবেন বই, সময়োপযোগী প্রবন্ধ; যেগুলো ভীষণ কাজে আসবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ফোরামে প্রশ্ন করে উত্তর পাওয়ার সুযোগ তো আছেই। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ট্রেন্ডে থাকা প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং নিয়ে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন প্রচুর তথ্য, ছবি, আইডিয়া। ডেরিল চ্যাঙ নামক এক যুবকের ইনস্টাগ্রাম পেজ 'হাউসপ্ল্যান্ট জার্নাল' থেকে দেখে নিতে পারেন তাঁর ঘরের গাছের গল্প ও ছবি। এ ছাড়া প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং হ্যাশট্যাগ এখন সোশ্যাল মিডিয়ার সর্বত্রই। তাই তথ্য ও সাহায্য খুঁজে পাওয়া এখন খুবই সহজ।
প্ল্যান্ট প্যারেন্টিংয়ের উপকারিতা
গাছ ঠিক কতটা দরকারি, তা তো আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু শহুরে জীবনে নাগরিক ব্যস্ততার এই সময়ে প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং খুবই সুন্দর ও প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। প্ল্যান্ট প্যারেন্ট হওয়ার কারণে প্রতিদিন কিছুটা সময় সবুজের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ হয়। একই সঙ্গে নিজের মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরির ব্যাপারটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ প্রজন্মকে তাদের নিজেদের জীবন ও ভবিষ্যতের জন্য দায়িত্বশীল করার ব্যাপারে প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং হতে পারে প্রথম পদক্ষেপ।
প্ল্যান্ট প্যারেন্ট হয়ে কিছুটা কাটানো যাবে সবুজের সঙ্গে
এ ছাড়া আছে নিয়মমাফিক কাজ করার অভ্যাস ও স্বাস্থ্যগত গুরুত্বের বিষয়টি। অনেকে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বেছে নেন প্ল্যান্ট প্যারেন্টিংকে। এতে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা, নিজেকে শান্ত করার মতো অনেকগুলো উপকার পাওয়া যায়। অনেকে বিষণ্নতা কাটাতেও সময় ব্যয় করেন গাছেদের সঙ্গে সবুজের কাছাকাছি। নিজের গাছ ফুল, এর বৃদ্ধি—এগুলো মানসিকভাবে যে কাউকেই দেবে স্বস্তি, তাই প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং সত্যিকার অর্থেই এক অসাধারণ বিষয়।
বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনে প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং অনেক মানুষের জন্যই এক স্বস্তি ও ভালো লাগার ব্যাপার। তাই মহামারি পরিস্থিতিতে আরও বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিষয়টি। এর একটি কারণ একাকিত্ব ও অবসাদ কাটানো। যেহেতু দীর্ঘ সময় ঘরে থাকতে হচ্ছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই বিরক্তি চলে আসে মনের মধ্যে। তাই মনকে ব্যস্ত রাখা, নিজেকে একটু সবুজের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়ার চিন্তা থেকেই এই প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে প্ল্যান্ট প্যারেন্টিংয়ের চর্চা।
এই প্রজন্মের মধ্যে জনপ্র্র্রিয় হচ্ছে প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং, ছবি: ডেরিল চ্যাঙের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল
অনেককেই পরিবার থেকে দূরে একা কাটাতে হচ্ছে এই দীর্ঘ লকডাউনের জন্য। তাদের কাছে ঘরের কোণের ছোট্ট গাছটাই তাদের আপনজন। অনলাইন ক্লাস, হোম অফিসের জাঁতাকলে যখন একটু হাঁপ ছেড়ে বাঁচা দায়, তখন কাজের ফাঁকে টেবিলের পাশে নিজের যত্নে লালিত সবুজ পাতার গাছ মনকে সত্যিই আনন্দ দেয়। আর এইভাবেই যান্ত্রিকতার মাঝে এই প্রাকৃতিক ছোঁয়া সবাইকে আরও উৎসাহিত করেছে এদিকে ঝুঁকতে। স্ক্রিনের থেকে চোখ সরিয়ে সবুজের প্রশান্তিকে আলিঙ্গন করতে শিখছে ইন্টারনেটের এই প্রজন্ম।
হয়তো ইনস্টাগ্রামের হ্যাশট্যাগ, ফেসবুকের আপলোডের লক্ষ্যেই অনেকে শুরু করছে গাছের অভিভাবকত্ব। কিন্তু দিন শেষে সুন্দর একটা ফলাফল তো মিলছে; আমরা সেদিকটাতেই আলোকপাত করতে চাই। এভাবেই আরও ছড়িয়ে যাক প্ল্যান্ট প্যারেন্টিং। নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠুক গাছ ও মানুষের। সবার ঘরেই থাকুক একটু বিশুদ্ধ বাতাস, এক টুকরো প্রকৃতি।
লেখক: মাহজাবিন রশীদ লামিশা | ছাত্রী, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়