What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

শিশু-কিশোরদেরও আছে করোনার ঝুঁকি (1 Viewer)

sIINalS.jpg


দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। যাকে বলা হচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। দ্বিতীয় ঢেউয়ের এই সংক্রমণে বয়স্কদের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত তরুণেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন, এমনকি শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না। শুধু তা–ই নয়, সম্প্রতি আলোচিত নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের আক্রমণের চরিত্র, সংক্রমণের মাত্রা, রোগের লক্ষণ, ফুসফুসের ক্ষতির ব্যাপকতা ইত্যাদি চিকিৎসকদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

করোনা হলে বয়স্কদের সংক্রমণের লক্ষণ, কী করণীয় বা তাঁদের চিকিৎসাব্যবস্থা কী ইত্যাদি বিষয়ে মোটামুটি সবাই যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। কিন্তু শিশু–কিশোরেরা দ্বিতীয় ঢেউয়ের এই করোনা সংক্রমণে কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ, কীভাবে এ ভাইরাসের ছোবল থেকে তাদের রক্ষা করা যাবে, অভিভাবকের কী করা উচিত, রোগের লক্ষণই–বা কী আর সংক্রমণ যদি হয়েই যায়, তাহলে তার চিকিৎসা কোথায়, কীভাবে ইত্যাদি নিয়ে এখনো অনেকেই অন্ধকারে। তা ছাড়া বিশেষ পেশা ছাড়া দেশে ৪০ বছরের কম বয়সী মানুষ করোনার টিকার আওতায় এখনো আসেনি, তাই এই বয়সীরা করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে আছে।

নতুন ধরন

করোনাভাইরাসের পুরোনো ধরনগুলোর পাশাপাশি কোভিড-১৯ যুক্তরাজ্য স্ট্রেইন গত জানুয়ারি থেকে এ দেশে দেখা দেয়। ৭ এপ্রিল প্রকাশিত আইসিডিডিআরবির জরিপে নতুন করে জানা যায় যে বর্তমানে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকা স্ট্রেইনে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের আক্রমণ ক্ষমতা, ফুসফুস এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতির ব্যাপ্তি, জটিলতা ইত্যাদি আগের ধরনগুলোর চেয়ে বেশি।

শিশু আক্রান্তের চিত্র

এ বছর ভাইরাসের নতুন ধরন আসায় অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি শিশুমৃত্যুর ঘটনাও কম ঘটছে না। আইইডিসিআর–এর হিসাবেই এ পর্যন্ত শতাধিক শিশু-কিশোর করোনাসংক্রান্ত জটিলতায় মারা গেছে। তাই শিশুদের কিছু হবে না, কোনো ঝুঁকি নেই, এমনটা ভাবা বাতুলতা।

লক্ষণ

  • আক্রান্ত শিশুদের অনেকেরই (প্রায় ৮০ শতাংশ) তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। রোগের তীব্রতাও বেশি থাকে না। তারা সাধারণত জ্বর, কখনো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ, ক্ষুধামান্দ্য, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি নিয়েই চিকিৎসকের কাছে আসে। এ ছাড়া আক্রান্ত শিশুদের অনেকেরই ক্লান্তি, দুর্বলতা, শরীরে ব্যথা, বমি বমি ভাব, খাবারে স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ থাকে। তবে আশার কথা, বেশির ভাগ আক্রান্ত শিশু এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
  • কিন্তু যেসব শিশু আগে থেকেই নানা রকম অসুস্থতায় ভুগছে, যেমন মোটা বা স্থূলকায়, যাদের ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হৃৎপিণ্ডের জন্মগত ত্রুটি, শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থায় ঘাটতিসহ অন্যান্য সমস্যা যাদের আছে, তাদের করোনা হলে তা মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
  • এ ছাড়া কোভিডে আক্রান্ত শিশুরা অনেক সময় এমআইএস-সি নামের মারাত্মক এক জটিলতায় পড়ে যায়, যা জীবন সংশয় সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যায় কোভিডে আক্রান্ত শিশুর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ আক্রান্ত হয়। জ্বর সময়ের সঙ্গে কমে না বরং তা আরও বেড়ে যায়। সঙ্গে শরীরে ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ আসে, চোখ, ঠোঁট, জিহ্বা, হাত-পা অস্বাভাবিকভাবে লাল হয়ে যায়, কখনো কখনো হাত বা পায়ের পাতা ফুলে যায়, পাতলা পায়খানার সঙ্গে অনেকের পেটে ব্যথা হয় এবং শিশু অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় রক্তচাপ কমে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়, মাড়ি, নাক দিয়ে রক্তপাত হয়।

শিশুর করোনায় করণীয়

যদি কোনো শিশু কোভিডে আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে আসে, তাকে কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে তার কোভিডের কোনো লক্ষণ দেখা দেয় কি না। কোনো শিশু যদি এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়ে যায় বা জ্বর, কাশিতে ভুগতে থাকে, তাহলে তাকে নজরদারির পাশাপাশি বিশেষ যত্ন নিতে হবে।

  • খাবার আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি পুষ্টিকর, প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং মুখরোচক করার চেষ্টা করুন।
  • পানি বা তরল খাবার, আগের চেয়ে একটু বেশি দিন। পানিশূন্যতা হচ্ছে কি না, তা বুঝতে শিশুর প্রস্রাবের পরিমাণ খেয়াল রাখতে হবে।
  • ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ খাবার যেমন ফলমূল বা কমলালেবু, কাঁচা আমের রস ইত্যাদি দিন।
  • জ্বরের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে প্যারাসিটামল দিতে হবে। কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন বা অন্য কোনো এনএসএআইডি (ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস) জাতীয় ওষুধ দেওয়া যাবে না।
  • পালস অক্সিমিটার দিয়ে শিশুর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫-এর ওপরে আছে কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে।
  • জ্বর বেশি হলে কুসুম গরম পানিতে মাথাসহ পুরো শরীর মুছিয়ে দিতে হবে।
  • বাচ্চাকে কুসুম গরম পানিতে নিয়মিত গোসল করিয়ে দিতে হবে।
  • জ্বর পরপর তিন দিন অব্যাহত থাকলে, দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় রক্ত, বুকের এক্স-রে এবং কোভিডের নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে এবং রোগের মাত্রানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • প্রতিনিয়তই খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর শরীরে কোনো র‍্যাশ উঠছে কি না, চোখ, ঠোঁট, জিহ্বা অস্বাভাবিক লাল হচ্ছে কি না, প্রস্রাব ঠিক আছে কিনা বা পেটে ব্যথা হচ্ছে কি না। শিশুর পালস রেট বা বুক ধড়ফড়ানি লক্ষ করুন, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি না বা মাড়ি, নাক দিয়ে রক্ত আসছে কি না দেখুন। এ ধরনের কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই জরুরিভাবে হাসপাতালে ভর্তি করে যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে।

প্রতিরোধ

  • করোনা প্রতিরোধের মূলমন্ত্র স্বাস্থ্যবিধি মানা। মাস্ক পরতে হবে, পরস্পরের দূরত্ব কমপক্ষে দুই হাত বজায় রাখতে হবে, নিয়মিতভাবে সাবানপানিতে হাত ধুতে হবে এবং কনুইয়ের ভাঁজে হাঁচি-কাশি দিতে হবে।
  • বড়দের এগুলো গুরুত্বের সঙ্গে চর্চা করতে হবে, তাহলে শিশুরাও শিখবে। এ সময়ে ঘরবন্দী শিশুদেরও শেখাতে হবে কীভাবে হাত ধুতে হয়, মাস্ক পরতে হয় ইত্যাদি। মা-বাবা করোনা প্রতিরোধে এগুলোর গুরুত্ব নিয়মিতভাবে শিশুদের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং যারা নিয়মিতভাবে এগুলো করবে, তাদের পুরস্কার দিন।
  • এ সময় ঘরের ভেতরে শিশুদের অবস্থান আনন্দময় করার জন্য বাড়ির বড়রা ছবি আঁকা, হালকা ব্যায়াম, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন আয়োজন করবেন, যাতে শিশুরা লকডাউনে বন্দিজীবনে বিরক্ত না হয়ে যায়।
  • জ্বরে আক্রান্ত বা অসুস্থ যেকোনো মানুষ থেকে শিশুদের দূরে রাখা জরুরি। শিশুর উপসর্গ না থাকলেও সে পরিবারে একজন গুরুত্বপূর্ণ বাহকে পরিণত হতে পারে। বয়স্কদের কাছ থেকে এ সময় তাকে দূরে রাখুন।
  • বিপণিবিতান বা কোনো জনসমাগমের স্থানে শিশুদের কোনোভাবেই নিয়ে যাওয়া যাবে না। এ সময় বাইরের অতিথি না এলেই ভালো।
  • বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ বাইরে গেলে বাসায় ঢোকার আগে সাবানপানিতে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেবেন, পা ধুয়ে ঘরে ঢুকবেন এবং তারপর সরাসরি গোসল করে শিশুর সংস্পর্শে আসবেন।
  • ঘরের যেসব জায়গায় আমাদের বারবার ব্যবহার বা স্পর্শ করা লাগে, সেগুলো দৈনিক পরিষ্কার করতে হবে।
  • জরুরি স্বাস্থ্যসেবা যেমন টিকা দেওয়া বা অন্য কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে শিশুকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়ার দরকার হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, ভিড় এড়িয়েই তা করতে হবে।

কখন শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নেবেন

১. শিশুর হাত-পা ও শরীর তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা মনে হলে, ফ্যাকাশে মনে হলে, ত্বকে ছোপ ছোপ দেখা গেলে।

২. শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি অস্বাভাবিক বা শ্বাসকষ্ট হলে বা শ্বাস বন্ধ মনে হলে বা শ্বাস নেওয়ার সময় কাতরানির আওয়াজ শোনা গেলে। শ্বাসকষ্টের কারণে শিশু ঝিম মারা বা উত্তেজিত অস্থির হয়ে থাকলে।

৩. ঠোঁট ও মুখের আশপাশের রং নীলাভ মনে হলে।

৪. খিঁচুনি হলে।

৫. শিশুর কান্না কোনোভাবেই থামছে না, এমন পরিস্থিতিতে।

৬. নিস্তেজ, ঘুম ঘুম ভাব, কোনোভাবে ওঠানো যাচ্ছে না বা সাড়া দিচ্ছে না।

৭. শরীরে র‍্যাশ, যা আঙুল দিয়ে চাপ দিলে চলে যায় না।

৮. ক্রমাগত বমি।

সূত্র: রয়েল কলেজ অব পেডিয়াট্রিকস অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ

* অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা | শিশু বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top