দাওয়াত বা নিমন্ত্রণ আমাদের সামাজিকতার একটা অংশ। একে এড়িয়ে চলা মানেই সমাজ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া। দাওয়াতে যেতে হবে, তবে খেতে হবে পরিমিত। এই মনোভাব থাকলে নিজে সুস্থ থাকা যাবে। কিন্তু দাওয়াতে গিয়ে বা নিজের বাড়িতে বেশি খেয়ে ফেলার ফলে অনেকেই বিপদে পড়ে যান। বেশি খেয়ে ফেলা অনেক সময় ডায়রিয়া, বদহজম, বমি বা বমিভাব, গ্যাসট্রাইটিস, বুক জ্বলা, রক্তচাপ বেড়ে যাওযা, পেটে ব্যথা বা মাথার যন্ত্রণার কারণ হতে পারে। যাঁদের হৃদ্রোগ বা কিডনির সমস্যা আছে, তাঁদের অবস্থা আরও মারাত্মক হতে পারে। কারণ, দাওয়াতের খাবার মানেই গুরুপাক। বেশি বেশি তেল, ঘি, চিনি, লবণ আর মসলার সমাহার।
নিজেকে সামলাতে এ ক্ষেত্রে স্ব নিয়ন্ত্রণ বা সেলফ কন্ট্রোল জরুরি। এমনও দেখা যায়, রাতে বিয়েবাড়িতে খেয়ে এসে গভীর রাতে আবার হাসপাতালে ছুটছেন। খাবারে চিনির মাত্রা বেশি থাকলে তখন খেতে ভালো লাগলেও পরে শরীরে ক্লান্তির ঢল নামে। এ ছাড়া খাবারে দুধ, মুরগির মাংস, কলা, মাছ ইত্যাদি বেশি থাকলে ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে। এসব এড়াতে হলে জেনেবুঝে খাবার খেতে হবে। বদহজম এড়ানোর জন্য না চিবিয়ে দ্রুত বেশি খাবার খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত টক, ঝাল, মসলা, চিনি খাওয়া বাদ দিতে হবে। দুধ, পনির, চকলেট, আইসক্রিম, গমের আটা, কফি, অ্যালকোহল, সোডা বেশি বেশি খেলে আইবিএসের (ইরিটেবল বাওল সিনড্রোম) সমস্যা বেড়ে যায়।
যদি বেশি খাওযা হয়েই যায়, তাহলে কিছুটা হাঁটাহাঁটি করুণ। একবেলা বেশি খাওয়া হলে, পরবর্তী বেলায় উপোস দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যদি একান্তই খেতে হয়, তবে খেতে পারেন টক দই বা ভিনেগার ও গোলমরিচ মেশানো সালাদ। সবজি স্যুপ, গ্রিন টি, কম শর্করাযুক্ত ফলও খেতে পারেন।
বেশি খেয়ে ফেললে আদা-দারুচিনিতে সেদ্ধ পানি, পুদিনা চা, ভিনেগার–লবণমিশ্রিত পানি অথবা জৈন ভেজানো পানি খেলে আরাম পাবেন। কাঁচা পেঁপের সালাদ খেলেও উপকার হবে। অনেকে হজমের জন্য কোমল পানীয় পান করেন। আসলে কোমল পানীয় হজমকারক পানীয় নয়। এটি তৈরি হয় নানা রকম অ্যাসিড দিয়ে। যেমন ফসফরিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড বা টারটারিক অ্যাসিড। এসব অ্যাসিডের প্রভাবে অ্যাসিডিটি আরও বেড়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে কার্বোনেটেড পানীয় খেলে বড় বড় ঢেকুর ওঠে। এতে পেট থেকে কিছুটা বাতাস বেরিয়ে যায় বলে পেট হালকা বোধ হয়। কিন্তু এই পানীয়র সঙ্গে হজমের কোনো সম্পর্ক নেই। খাবার শুরু করার পর যখন মনে হবে, আরও খানিকটা খাওয়া যাবে, তখনই খাওয়া বন্ধ করে দিন। হিসাব না করে বেশি খেয়ে ফেলার কারণে প্রথমে অস্বস্তি, তারপর হজমের বড়ি খাওয়া কোনো কাজের কথা না। এ ধরনের সমস্যা থেকে বের হতে হলে সঠিক সময়ে সঠিক খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো।
* আখতারুন নাহার আলো, পুষ্টিবিদ