ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে আয়ারল্যান্ড। রাত পোহালেই শুক্রবার নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলতে নামছে আইসিসির নবীন সদস্য দেশটি। এশিয়ার দেশ আফগানিস্তান একই সময়ে টেস্ট মর্যাদা পেলেও ১১তম টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে আগেভাগেই ইতিহাসে প্রবেশ করছে আইরিশরা। ঘরের মাঠ ডাবলিনে অভিষেক টেস্টে তাদের প্রতিপক্ষ এশিয়ার অন্যতম ক্রিকেট শক্তি পাকিস্তান। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
১৭৩১ সাল থেকে ক্রিকেট খেলছে আয়ারল্যান্ড। ১৯৯৩ সালে ক্রিকেটে প্রধান সংস্থা ইন্টারন্যাশাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সহযোগি সদস্য হয় তারা। এরপর ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায় ২০০৭ সালে। ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার ১০ বছর পর টেস্ট মর্যাদা লাভ করে আইরিশরা। আগামীকালই প্রথম টেস্ট মর্যাদার পরীক্ষা দেবে আয়ারল্যান্ড। ক্রিকেট জগতে প্রবেশের পর প্রায় ৩০০ বছর পর টেস্ট ফরম্যাটে খেলতে নামবে আইরিশরা।
১৯৩১ সালে ডাবলিনের ফনিক্স ক্রিকেট ক্লাবে ব্যাট-বল হাতে পথ চলা শুরু আয়ারল্যান্ডের। সেই পথ ধরে ইতোমধ্যে ক্রিকেট জগতে সুনাম কুড়িয়েছে আইরিশরা। ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার বছরই প্রথমবারের মতো ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলে তারা। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের সাথে টাই করে আয়ারল্যান্ড। এরপর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে ১৩২ রানে গুটিয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটে জয় পায়। এতেই বিশ্বকাপে নিজেদের অভিষেক আসরে সুপার এইটে নাম লেখায় আইরিশরা।
সুপার এইটে ৬ ম্যাচে অংশ নিয়ে মাত্র একটিতে জিতে তারা। ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কার কাছে হারলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭৪ রানে জয় তুলে নেয় ট্রেন্ট জনসনের দলটি। প্রথম আসরে সুপার এইটে উঠতে পারলেও ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপ আসরের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় আয়ারল্যান্ড। তবে দুটি আসরেই নিজেদের পারফরমেন্সে উজ্জ্বল ছিল আইরিশরা।
২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় চমক ছিল ইংল্যান্ড বধ। ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে ইংল্যান্ডের ছুঁড়ে দেয়া ৩২৮ রানের বিশাল টার্গেট ৩ উইকেট হাতে রেখেই স্পর্শ করে ফেলে আয়ারল্যান্ড। পরের বিশ্বকাপে শুরুতে ক্রিকেট বিশ্বকে আবারো চমকে দেয় আয়ারল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের নেলসনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ৩০৪ রান ৬ উইকেট খরচ করে ৩০৭ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় আইরিশরা। শুধুমাত্র বিশ্বকাপের বড় মঞ্চেই নয়, দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজগুলোতেও দুর্দান্ত সব জয়কে সঙ্গী করেছে আয়ারল্যান্ড।
নিজেদের প্রথম টেস্টকে বড় উপলক্ষ্য হিসেবে অভিহিত করেছেন আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড। তিনি বলেন, 'আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটের সাথে জড়িত সকলের জন্য এটি অনেক বড় উপলক্ষ।'
নিজেদের অবিস্মরণীয় টেস্টে সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়দের অবদান অস্বীকার্য বলে জানান পোর্টারফিল্ড, 'অতীতে আমরা অনেক খেলোয়াড় পেয়েছি। কিছু খেলোয়াড় এখানেও আছে, আবার কিছু নেই। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে এবং স্বীকৃতি দিতে হবে এ পর্যায়ে আসতে তারা কি করেছেন। তাদের অবদান না থাকলে আমরা শুক্রবারের ম্যাচের জন্য ভাগ্যবান নাও হতে পারতাম।'
আয়ারল্যান্ডের এমন ঐতিহাসিক ম্যাচের অংশ হতে পেরে বেশ খুশি পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদও। তিনি বলেন, 'এমন ঐতিহাসিক টেস্টে অংশ হতে পারাটা বিশেষ কিছু।'
অস্ট্রেলিয়া বাদে ক্রিকেট ইতিহাসে নিজেদের অভিষেক টেস্ট এখনও কোন দল জিততে পারেনি। ১৮৭৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের অভিষেক টেস্টে জয়ের স্বাদ পেয়েছিল অসিরা। আয়ারল্যান্ডের বেলায় এমন কিছু ঘটে কি-না সেটিই এখন দেখার বিষয়।