What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

আহা গ্রিনিচ! প্রিয় গ্রিনিচ! (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
qf31XHq.jpg


ক্যাম্পাস স্মৃতি প্রত্যেকের জীবনের অনন্য মণিকাঞ্চন। জীবনের নানা বাঁকে নস্টালজিয়ার প্রিয় উপচার। লেখকও এর বাইরে নন; বরং প্রিয় ক্যাম্পাসের সঙ্গে সোহাগা হয়েছে টেমস নদীর ঘাট থেকে নৌপথে লন্ডনের সৌন্দর্য উপভোগ, গ্রিনিচ পার্কে পাতাঝরা হেমন্তের রূপমাধুরী পরম মুগ্ধতায় অবলোকন, টেমসের মিষ্টি হাওয়া আর প্রাচীন জৌলুশময় রাজকীয় ভবনের অলিগলিতে বিছিয়ে থাকা ইতিহাসের ঐশ্বর্যে অবগাহনের অনিন্দ্য স্মৃতি।



সাল ২০০৬। ২০ সেপ্টেম্বর। বয়স তখন ২৪ ছুঁই ছুঁই। গণিতে সদ্য মাস্টার্স শেষ করা আমি এক শরৎ বিকেলের সোনারোদ মাড়িয়ে পরিবার, স্বজন, বন্ধু, আড্ডা, নাটকের মহড়া সব ফেলে নিঃসঙ্গ গাঙচিলের মতো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সস্তা কেবিনে উঠে পড়ি। গন্তব্য বন্ধুহীন শহর লন্ডন; উদ্দেশ্য উচ্চতর পড়াশোনা। পকেটে বাবার দেওয়া কিছু পাউন্ড, জীবনবোধ এবং একগাদা আত্মবিশ্বাস; আর বুকপকেটভর্তি মায়ের ভালোবাসা। ফ্লাইট যখন পশ্চিমের পানে ধাবমান, তখন বুকের মধ্যে বইতে থাকে তুমুল ঝড়; মনের মধ্যে অনুরণিত হতে থাকে অঞ্জন দত্তের গান...

'একটু ভালো করে বাঁচব বলে

আর একটু বেশি রোজগার

ছাড়লাম ঘর আমি ছাড়লাম ভালোবাসা

আমার নীলচে পাহাড়'

VEyPdTA.jpg


৩০০ বছরের প্রাচীন চ্যাপেলে লেখক



বছর তিনেক পর দেশে ফেরার পরিকল্পনা থাকলেও আর ঘরে ফেরা হলো না। সে গল্প না হয় হবে অন্য কোনো দিন, অন্য কোনোখানে। আপাতত লন্ডনে এসে সাময়িক আস্তানা পাতি পূর্ব লন্ডনের বাঙালি–অধুষ্যিত পাড়া শ্যাডওয়েলে। পরিবার-পরিজনহীন এই বিশাল শহরে আমি আকাশের মতো একা। ডেলো হাউসের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরোলেই বড় বড় সাইনবোর্ডে বাংলায় লেখা মাছবাজার, বন্দরবাজার ইত্যাদি ভ্যারাইটি স্টোরের সাইনবোর্ডগুলো দেখলে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। কাজ, পড়াশোনা আর সন্ধ্যায় সাইবার ক্যাফেতে বাংলা সংবাদপত্রে আট হাজার মাইলের ব্যবধান ঘুচিয়ে বাংলাদেশের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা।



কাজের সূত্রে আমাকে যেতে হতো দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের একটি এলাকায়, নাম লুইসাম। চালকবিহীন যে ট্রেনে করে যেতাম, তার নাম ডি-এল-আর ট্রেন। যাত্রাপথে ট্রেনটি মাটির নিচ দিয়ে টেমস নদী পাড়ি দিত। টেমস পাড়ি দেওয়ার পরই যে স্টেশন, তার নাম কাট্টিসার্ক। স্টেশনটির নামকরণ করা হয় ১৮৬৯ সালে কাট্টিসার্ক নামের তৎকালীন সব থেকে দ্রুতগামী একটি ব্রিটিশ ক্লিপার জাহাজের নামে। ছিপছিপে তন্বী এই জাহাজ মহাসাগর পেরিয়ে চীন থেকে চা আমদানির কাজে ব্যবহৃত হতো। সেই কাট্টিসার্ক স্টেশন থেকে বেরোলেই প্রায় দেড় শ বছরের পুরোনো ওল্ড রয়েল নেভাল স্কুল, যা পরবর্তী সময়ে রূপান্তরিত হয় গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয় নামে।

7p6MSR7.jpg


সেই পাল তোলা কাট্টি সার্ক জাহাজ, পরে জাদুঘরে কাট্টি সার্ক (মাঝে) ও এর রেপ্লিকা (ডানে), ছবি: উইকিপিডিয়া ও লেখক



ঠিকই ধরেছেন। নবম-দশম শ্রেণির ভূগোলে পড়া গ্রিনিচ মান সময়ের উৎপত্তিস্থলই হচ্ছে এই গ্রিনিচ; যে সময়ের পথ ধরে এই জরাগ্রস্ত পৃথিবী এগিয়ে চলেছে মহাকালের দিকে। যাওয়া-আসার পথে অনেক দূর থেকে দেখতাম গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শ বছরের পুরোনো দুটো চ্যাপলের গম্বুজ আর পুরোনো ভবনগুলো। কিন্তু কখনো গোটা এলাকাটা দেখা হয়নি। তারপর এক রৌদ্রোজ্জ্বল অগাস্টের দুপুরে ভাগ্যই আমায় ডেকে নিয়ে আসে গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ক্যাম্পাসে। কোনো ভ্রমণ বা খানিক সময়ের জন্য নয়। আরও আপন আর নিবিড় করে প্রাচীনতম রাজপ্রাসাদের মতো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য।

d0AaI2b.jpg


কুইন অ্যান ভবনের প্রবেশপথ

বিশাল রাজপ্রাসাদের মতো কুইন অ্যান এবং কিং উইলিয়াম ভবনে আমাদের ক্লাস হতো। ক্লাস আর লাইব্রেরির ফাঁকে ঘুরে বেড়াতাম প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদে ভরা গ্রিনিচের আনাচকানাচে। কখনো সঙ্গী হতো বাংলাদেশের আরেক বন্ধু আনিকা আলম আর দক্ষিণ ভারতের প্রশান্ত ভিরামনি; আবার কখনো লস অ্যাঞ্জেলেসের কাল দারিস আর নাইজেরিয়ান কেন আজোকো।



গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের প্রথম দিন বের হই ট্রেজার-হান্টে। শুরুতেই ক্যাম্পাসের চৌহদ্দি পেরিয়ে পাহাড় ডিঙিয়ে যে জায়গায় উঠি, তার নাম রয়্যাল অবজারভেটরি, যেখান থেকে শুরু হয় গ্রিনিচ মান সময়। ষোলো শতক বা তার আগে থেকে ইউরোপিয়ানরা সাগর ডিঙিয়ে ব্যবসা–বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোয় ছিল দক্ষ। যার অন্যতম উদাহরণ পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা বা ইতালিয়ান ক্রিস্টোফার কলম্বাস। কিন্তু নৌপথে বিশ্বকে ঘুরে দেখা এবং বাণিজ্যের প্রসারে পিছিয়ে ছিল ব্রিটিশরা। সংগত কারণে বিশ্বকে ঘুরে দেখার জন্য এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করার জন্য, দ্রাঘিমা পরিমাপ কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে কাজ করার জন্য ন্যাভিগেশন, কার্টোগ্রাফি এবং সময় রক্ষণ সহায়তা করার পর্যাপ্ত পরিমাণ এবং নির্ভুল জ্যোতির্বিজ্ঞানের তথ্য প্রয়োজন ছিল ব্রিটিশদের। সেই প্রয়োজনীয়তা থেকেই এই রয়্যাল অবজারভেটরি প্রতিষ্ঠার ভাবনা আসে কিং দ্বিতীয় চার্লসের মনে।

X1KC4SY.jpg


সাড়ে চার শ বছরের প্রাচীন মানমন্দিরের সামনে লেখক

অবশেষে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ের প্রফেসর ক্রিস্টোফার রেনের নেতৃত্বে সাড়ে চার শ বছর আগে ১৬৭৫ সালের মার্চ মাসে যাত্রা শুরু করে রয়্যাল অবজারভেটরি। সেই সঙ্গে জ্যোতির্বিদ্যা, সময় এবং নেভিগেশনের জন্য শুরু হলো এক নতুন যুগের। রয়্যাল অবজারভেটরি মিউজিয়ামের টাইম মেশিনে করে ছুঁয়ে এলাম বিশ্বজোড়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শিকড়ের গল্প আর সাড়ে চার শ বছরের প্রাচীন মানমন্দিরের ইতিহাস।



কিছু কিছু অনুভূতি আছে যা বলে বোঝানো যায় না। সরেজমিনে অনুভব করতে হয়। এমনই এক প্রকাশরহিত অনুভূতি নিয়ে রয়্যাল অবজারভেটরি মিউজিয়াম থেকে বেরিয়েই চোখ জুড়িয়ে গেল সর্বনাশা টেমস নদীর ঠান্ডা বাতাস আর নদীর ওপারে বিশ্বের সব থেকে বড় ফিন্যান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট ক্যানারি ওয়ার্ফের আকাশচুম্বী ভবনের মেলবন্ধন দেখে। আচ্ছা, টেমস নদীকে কি সর্বনাশা বলা যায়? মনে হয় না। কারণ, শুধু এই টেমস নদীকে ঘিরেই প্রতিদিন এই ব্রিটেনে চলে হাজার হাজার পাউন্ডের বিজনেস। তবে এই গ্রিনিচে এলেই মনে হয় প্রাচীন রাজপ্রাসাদ আর অত্যাধুনিক মেঘছোঁয়া স্থাপনাগুলোর সঙ্গে প্রকৃতি যেন মিলেমিশে একাকার।

lsSRt2l.jpg


বিশ্বের সব থেকে বড় ফিন্যান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট ক্যানারি ওয়ার্ফ, ছবি: উইকিপিডিয়া



রয়্যাল অবজারভেটরি থেকে নেমে এলেই ডান দিকে কুইন এন হাউস আর বাঁ দিকে মেরিটাইম মিউজিয়াম। ষোলো শতকে ব্রিটিশ রাজা ছিলেন প্রথম জেইমস; তাঁর স্ত্রী অ্যান অব ডেনমার্ক। জীবদ্দশায় কুইন এন তাঁর জন্য নির্মিত রাজভবনটি দেখে যেতে পারেননি। কিন্তু তাঁর নামে বানানো এই বিশাল রাজভবনের স্থাপত্যকীর্তি আর প্রাচীন চিত্রকলার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হননি, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। রাজভবন থেকে বেরিয়ে ঢুকলাম গ্রিনিচ ওপেন মার্কেটে।

vCfJMCs.jpg


গ্রিনিচ ওপেন মার্কেট, ছবি: উইকিপিডিয়া

যেখানে সারি সারি খাবারের টংদোকানে রান্না হচ্ছে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যের নানা পদ। খাবারের ঘ্রাণেই মাতোয়ারা হওয়ার জোগাড়। সেই খাবারের মহাযজ্ঞে বসেই তারিয়ে হলো মধ্যাহ্নভোজ। এরপর ভরপেটে ঢুলতে ঢুলতে ঢুকলাম মেরিটাইম মিউজিয়ামে, যেখানে কাট্টিসার্ক নামের শ্যামাঙ্গী জাহাজটি রয়েছে সংরক্ষিত। রয়েছে কাট্টিসার্কের অদূরে ইস্ট ইন্ডিয়া বন্দর থেকে শুরু করে গোটা বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্যের জীবন্ত উদাহরণ আর গল্পগাথা।



গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসটি একেবারেই টেমস নদীর তীর ঘেঁষে। পাশেই রয়েছে সুড়ঙ্গপথ। এই সুড়ঙ্গপথ দিয়ে হেঁটে হেঁটেই পাড়ি দেওয়া যায় টেমস নদী। ব্রিটিশ হেরিটেজ ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, এই সুড়ঙ্গ একটি ব্রিটিশ হন্টেড সাইট বা ভুতুড়ে জায়গা নামে পরিচিত।

DOipxJ5.jpg


এই সেই টেমসের সুড়ঙ্গপথ; সেখানে বন্ধু ইরা ও পীযূষ

তবে টাইমস ম্যাগাজিন–এর হায়ার এডুকেশন ওয়েবসাইট বলছে, ব্রিটেনের অষ্টম সৌন্দর্যমণ্ডিত ইউনেসকো হেরিটেজের আওতাধীন গ্রিনিচ ক্যাম্পাসটি যে কারও মন ভালো করে দিতে পারে এক লহমায়। ঢুকতেই ট্রিনিটি মিউজিক স্কুল; এর পরই একে একে কুইন অ্যান কোর্ট, কুইন মেরি কোর্ট, কিং উইলিয়াম কোর্ট এবং ড্রেডনোট বিল্ডিং।

OSOEYMf.jpg


পেইন্টেড চ্যাপলের সিলিং ও প্রাচীরের অবিশ্বাস্য চিত্রকর্ম

আর সামনে মাথার ওপর বিশাল দুটো গম্বুজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিন শ বছরের পুরোনো দুটো চ্যাপল; একটির নাম পেইন্টেড হল। এই পেইন্টেড হলকে বলা হয় ব্রিটেনের সিস্টিন চ্যাপল। ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন ও দর্শনীয় এই পেইন্টেড চ্যাপলের অবিশ্বাস্য সিলিং এবং প্রাচীরের চিত্রকর্ম কল্পনা ও সম্পাদনা করেছিলেন ব্রিটিশ চিত্রশিল্পী স্যার জেমস থর্নহিল। উনিশ বছরের নিরলস সৃজনসাধনার পর সতের শ পঁচিশ সালে শেষ হয় গোটা চিত্রায়ণযজ্ঞ। এই দুই প্রাচীন হলেই রাজকীয় আয়োজনে উদযাপিত হয় গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান, ফলত গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে আমিও হতে পেরেছিলাম এই ইতিহাসের অংশ।

j2LHg5p.jpg


২০১০ সালে সমাবর্তনে লেখক

অনেকটাই ব্রিটিশ মনার্কের রাজ্যাভিষেকের মতো পালিত হয় গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান। শুরুতেই প্রাচীন চ্যাপেলের ঘণ্টাধ্বনি আর অর্কেস্ট্রা বেজে ওঠে। সেই সঙ্গে স্বর্ণখচিত রাজদণ্ডসহ একে একে চ্যাপলে প্রবেশ করেন উপাচার্য এবং শিক্ষাগুরু; সেই সঙ্গে দুই পাশে সারি বেঁধে নতুন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা। মনে হয় যেন স্যাক্সন সম্রাট আলফ্রেড দ্য গ্রেট তাঁর অভিষেকের দিনে প্রবেশ করছেন উইসেক্সের উইনচেস্টার ক্যাসলে। সমাবর্তন শেষে ওপাশের পেইন্টেড চ্যাপলে মোমের আলোয় শ্যাম্পেনের গ্লাসে টুংটাং আওয়াজ তুলে নতুন শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনাময় আগামীর জন্য জানানো হয় শুভকামনা।



শুধু নির্মাণশৈলী আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, কুইন অ্যান হাউস আর গ্রিনিচ পার্ক স্থান করে নিয়েছে বিশ্বখ্যাত ফিল্মের লোকেশন হিসেবে; পাইরেটস অব ক্যারিবিয়ান: অন স্ট্রেঞ্জার টাইডস, শার্লকস হোমস, স্কাই ফল, দ্য মামিস রিটার্ন, দ্য কিংস স্পিচ থেকে শুরু করে থর, অ্যাভেঞ্জার এবং হালের জনপ্রিয় সিরিয়াল ক্রাউনসহ তালিকাটা অনেক লম্বা। শুটিংয়ের সেট তৈরির জন্য ক্যাম্পাসকে এতই পরিবর্তন করতো ফিল্ম কোম্পানিগুলো যে মাঝেমধ্যে নিজের ক্যাম্পাসকে নিজেরাই চিনতে পারতাম না।

vqxqKG8.jpg


স্মৃতির ক্যাম্পাসে স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে লেখক

১০

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে প্রচুর নতুন বন্ধু হয়। আমারও হয়েছে। এর মধ্যে আনিকা আলম, খাল দারিস,আভনি, কেন আজোকোসহ কয়েকজন ভোজনরসিক কী করে যে একজোট হলাম, তা মনে করতে না পারলেও মধ্যাহ্নবিরতিতে ঘুরে ঘুরে গ্রিনিচের সব কুইজিন আস্বাদনের কথা ভুলতে চাইলেও ভোলা সম্ভব নয়। সারা দিন প্রচুর পড়াশোনা শেষে আমরা একেক দিন একেক দেশের রেস্তোরাঁয় যেতাম মধ্যাহ্নভোজনে। ভিয়েতনামিজ, চায়নিজ, ইন্ডিয়ান, মেক্সিকান—কী নেই গ্রিনিচে। একবার মনে আছে মোগল ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে বুফে খেয়ে ভরদুপুরে সবাই মিলে লাইব্রেরির নীরবে পড়াশোনা করার জায়গায় নিভৃতে ভাতঘুম দিয়েছিলাম। ক্যাফে সল নামের রেস্টুরেন্টের নাচোস আর বুরিটোস গলাধঃকরণে স্মৃতি কি ভুলতে চাইলেই ভোলা যায়?

১১

সেই ২০০৯ সাল থেকে কতবার গ্রিনিচে গিয়েছি, তা গুনে শেষ করার মতো নয়। মন খারাপ হলেই ধুম করে ট্রেনে চেপে চলে যেতাম গ্রিনিচের মায়াময় ক্যাম্পাসে। গ্রিনিচ কোনো দিন নিরাশ করেনি। মায়ের স্নেহের তুলনা হয় না, তবু কোথাও যেন গ্রিনিচ আমাকে আট হাজার মাইল দূরেও মায়ের আঁচলের ছায়ার মতো শান্ত করেছে জীবনের নানা অশান্ত সময়গুলোতে।

kWuWfuu.jpg


টেমসের অন্য পার থেকে ক্যাম্পাস

টেমস নদীর ঘাট থেকে নৌপথে লন্ডনের সৌন্দর্য উপভোগ, গ্রিনিচ পার্কে পাতাঝরা হেমন্তের রূপমাধুরী পরম মুগ্ধতায় অবলোকন, টেমসের মিষ্টি হাওয়া আর প্রাচীন জৌলুশময় রাজকীয় ভবনের গলিঘুপচিতে ইতিহাসের ঐশ্বর্যে অবগাহন—গ্রিনিচ প্রতিদিনই আকাশের মতো নতুন।

লেখক: অসীম চক্রবর্তী | পিএইচডি গবেষক ও প্রভাষক, ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, এংলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটি, কেমব্রিজ
 

Users who are viewing this thread

Back
Top