What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পাখির রাজ্যে ৮ ঘণ্টা (1 Viewer)

8XIMnrd.jpg


ফেব্রুয়ারিতে পরপর দুই দিন গিয়েছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুই দিনে আট ঘণ্টায় পুরো ক্যাম্পাস ঘুরেছি। অতিমারির কারণে ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মানুষের উপস্থিতি কম, রিকশা চলাচল বন্ধ। জঙ্গলের পাশে আগে শিক্ষার্থীদের যে আড্ডা হতো, সেসবও আর নেই। ফলে জঙ্গলগুলো এখন ভুতুড়ে। দিনদুপুরেও গা ছমছম করে যেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যাঁদের পা পড়েনি, তাঁরাও জানেন, প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের ভেতর দিয়ে চলে এখানে পাঠদান, পাঠ গ্রহণ। এই ক্যাম্পাস পাখির জন্যও অভয়াশ্রম। কয়েক ঘণ্টায় ক্যাম্পাসে চোখে পড়ল বিচিত্র প্রজাতির পাখি। ক্যামেরা সঙ্গে থাকায় বেশ কিছু পাখির ছবি তোলা সম্ভব হলো।

mMGHGK3.jpg


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়ে পাতিসরালি

ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে উপাচার্যের বাসভবনের পাশের পুকুরেই দেখলাম ডাহুক খাবারের সন্ধান করছে। আরেকটু সামনে এগোতেই লেক। পাতিসরালির কলকাকলিতে মুখর। পাশেই একটি ন্যাড়া গাছজুড়ে শামুকখোল পাখি। তার পাশেই আরেকটি গাছে অনেকগুলো দেশি পানকৌড়ি। সমস্ত ক্যাম্পাসে যেখানেই জলাশয়, সেখানেই জলপিপি। কতজন জলপিপি খুঁজে বেড়ান। অথচ এ ক্যাম্পাসে জলপিপি যেন দোয়েল-শালিকের মতোই দেখা মেলে।

তানভীর তুষার এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছে অল্প দিন আগে। ক্যাম্পাসের ঝাড়-জঙ্গল-জলাশয় সম্পর্কে তার বিস্তর ধারণা। কোথায় পাখি, কোথায় কচ্ছপ, কোথায় জলপিপির বাসা, কোথায় ভোঁদড় থাকে—এগুলো তার জানা। তুষারই আমাকে জনশূন্য ক্যাম্পাসের জঙ্গল আর জলাশয়গুলো ঘুরে ঘুরে দেখায়। ওয়াইল্ড রেসকিউ সেন্টারের সামনে একটি জলাশয়। তার পাশেই আছে একটি ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গল ধরে হেঁটে হেঁটে জলাশয়ে পাখির সন্ধান করতে থাকি। প্রথমেই সেখানে পেলাম জলমোরগ। দূর থেকে ডাহুক কিংবা জলপিপির মতো মনে হলেও ছবি তুলে দেখলাম সেগুলো জলমোরগ। একটু সামনে যেতেই ছোট ডুবুরি চোখে পড়ল। বনচড়ুই, ছোট সাহেলি, ফটিকজল, পাকড়া বসন্তবউরি, নীলগলা বসন্তবউরি, তাইগা আর বড় কাবাসি নিজের মতো খাবার সন্ধান করছে। সেখানেই দেখা মিলল হলদে পা হরিয়ালেরও।

STXDw2A.jpg


পরিস্থিতি বুঝে নিতে চাইল হলদে পা হরিয়াল

ওয়াইল্ড রেসকিউ সেন্টারের ভেতরে প্রবেশ করার জন্য এর পরিচালকের অনুমিত প্রয়োজন হলো। ক্যাম্পাস পরিদর্শনের সময় সঙ্গে ছিলেন পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল আলম। তিনি অনুমতির ব্যবস্থা করে দেন। ওয়াইল্ড রেসকিউ সেন্টারের দরজা খুলতেই একটি সাদা-কালো পাখি উড়ে গিয়ে জঙ্গলের ভেতরে পড়ে। ওই পাখির পিছু নিয়ে সাহস করে জঙ্গলের ভেতরে গেলেও সেই পাখির দেখা আর মেলেনি। কিন্তু ফেরার সময়ে চোখে পড়ল বাদামি মেছো প্যাঁচা। বেশ বড় আকৃতির। আমি যতটাই বিস্ময় নিয়ে তার দিকে তাকাই, সে যেন আরও বিস্ময় নিয়ে তাকায় আমার দিকে। চোখাচোখির ফাঁকে সম্পন্ন হয় ছবি তোলাও। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান জানালেন, এই প্যাঁচা এক জোড়া ক্যাম্পাসেই বাসা করে, এরা এ ক্যাম্পাসের আবাসিক পাখি।

v5A7UfD.jpg


শামুকখোলদের অবসরযাপন

ওয়াইল্ড রেসকিউ সেন্টারের ভেতরেই থাকেন সানোয়ার হোসেন। তিনি দিনরাত এই সেন্টার দেখাশোনার কাজ করেন। তাঁর সঙ্গে যখন ভেতরে ঢুকছিলাম, তিনি শোনাচ্ছিলেন, সেখানে বিরাট বিরাট সাপ দেখা যায়। এমনকি সেখানে গোখরো সাপও প্রচুর। এসব শুনে গা ছমছম করছিল। তারপরও ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরেই জলাশয়ের সঙ্গে লাগোয়া লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ সেন্টার। জলাশয়ে কয়েক হাজার পাতিসরালি। ওই জলাশয়ের পাড়েই বেতের গাছে অনেকগুলো সাদা বক দেখা যাচ্ছিল। পাশেই একটি গাছে অনেকগুলো নিশিবক। সাধারণ চিল ও মাছমুরাল যখন আকাশে উড়ছিল, তখন পাতিসরালি পাখি ও নিশিবক নিজেদের জায়গাতেই ছিল। কিন্তু যখনই একটি শঙ্খচিল উড়ে এল, তখনই পাতিসরালি আর নিশিবক একসঙ্গে ওড়াউড়ি শুরু করে। একটি ছোট নাম না জানা পাখি দেখলাম দ্রুতই উড়ে গেল। পাতি, ধলাবুক, পাকড়া ও মেঘহও মাছরাঙা—এই চার রকম মাছরাঙা দেখলাম।

knPb609.jpg


নিশিবকদেরও দেখা মিলল

পরিসংখ্যান বিভাগের পেছনের জঙ্গলে দেখলাম তুর্কি বাজ, কমলা দামা পাখি। একটি মধুবাজও আকাশে উড়ছিল। চৌরাস্তার মোড়ের লেকের পাশে একটি উঁচু গাছে দুটি কুড়া ইগল চোখে পড়ল। এ বছর লেকে বেশ কয়েক রকম হাঁস দেখা গেছে শুনেছি। যদিও আমি কোনো হাঁসই দেখতে পেলাম না। বড়কুবো, ছোট ডুবুরিসহ অনেক পাখি দেখা গেল।

অধ্যাপক মনিরুল খান বলেন, 'এ পর্যন্ত দুই শতাধিক প্রজাতির পাখি দেখেছি এ ক্যাম্পাসে। পাখিমেলায় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতায় এক ঘণ্টায় ৬০টির বেশি পাখি দেখার নজির আছে।'

9LPyb6D.jpg


লম্বা পায়ের জলপিপি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে পাখির জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে, সেটি নিঃসন্দেহে একটি অনন্য কাজ। পাখিরা নির্ভয়ে ক্যাম্পাসে বিচরণ করছে। একই সঙ্গে অনেক প্রজাতির পাখি আর মানুষের বিচরণ বিরল ঘটনা। এ যেন জল-জঙ্গল-পাখির কাব্য।

লেখক: তুহিন ওয়াদুদ | শিক্ষক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top