প্রশ্নটির জন্য ধন্যবাদ। প্রথমেই আসি সঙ্গীতের সংজ্ঞায়। গীত, বাদ্য ও নৃত্যর সমষ্টিকে শাস্ত্রমতে সঙ্গীত বলা হয়। তবে বিভিন্ন সময়ে এই সংজ্ঞা নিয়ে মতভেদ আছে যেটি বিশ্লেষণ করলে অন্যভাবে বলা যায় যন্ত্রে বা কন্ঠে পরিবেশনের জন্য ধ্বনি দ্বারা নির্মিত শিল্পকে সঙ্গীত বলে। সঙ্গীত সাধারণত দুই প্রকার, উচ্চাঙ্গ বা মার্গ সংগীত ও লঘু সঙ্গীত। রাগ, খেয়াল, তান, ধুন ইত্যাদিকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের পর্যায়ে পড়ে। অপরদিকে হালকা অঙ্গের গান যেমন আধুনিক,পল্লিগীতি, ভাটিয়ালী ইত্যাদি লঘু সঙ্গীতের অন্তর্গত।
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত হল শাস্ত্রের নিয়মাদি মেনে চলা সঙ্গীত। সঙ্গীতকে যে সব নির্দিষ্ট নিয়মের ভেতর দিয়ে চলতে হয় সেই নিয়মগুলি শাস্ত্রে উল্লিখিত রয়েছে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ইতিহাস বহু পুরানো। বৈদিক যুগ থেকে এই সঙ্গীতের চর্চা চললেও প্রায় দুই হাজার বছর আগে থেকে মন্দিরে সুরের মাধ্যমে স্তোত্র পাঠ করা হত। ধারণা করা হয়, সেই স্তোত্রের সুর থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিকাশ। বৌদ্ধযুগের প্রসঙ্গে বলতে গেলে সেইসময় চর্যাপদ একটি বিশেষ জায়গা দখল করে ছিল। এই চর্যাপদগুলি বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারকেরা গানের সুরে উচ্চারণ করতেন। একাদশ শতাব্দীতে বৌদ্ধ শাসনামলে গড়ে উঠা প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় ও সমাজ ব্যবস্থায়ও সঙ্গীতের ছাপ সুস্পষ্ট। সম্রাট সমুদ্রগুপ্তকেও তাঁর আমলের স্বর্ণমুদ্রায় বীণা হাতে দেখা যায়।
সন্ধ্যা ভাষায় রচিত চর্যাগীতিগুলি মুখ্যত বৌদ্ধ সহজিয়াদের সাধনপদ্ধতিমূলক গান। বৌদ্ধধর্মাবলম্বী পালরাজাদের সময় চর্যাগীতি বাংলায় বিস্তার লাভ করে। বর্তমানকালের বাংলা গানের স্থায়ী, অন্তরা, সঞ্চারী ও আভোগ এই চার কলির পরিবর্তে সেকালে ছিল উদ্গ্রাহ, মেলাপক, ধ্রুব ও আভোগ। এগুলিকে বলা হতো ধাতু। এই চারটি ধাতুর মধ্যে উদ্গ্রাহ ও ধ্রুব সব গানেই থাকত, অন্য দুটি বাধ্যতামূলক ছিল না। তাই একটি ধাতু বর্জিত হলে সেই গানকে বলা হতো ত্রিধাতুক, আর দুটি বর্জিত হলে দ্বিধাতুক। সাধারণভাবে সঙ্গীতকে তখন প্রবন্ধগীত বলা হতো। চর্যাগীতি বাংলাভাষায় রচিত প্রথম তাল ও মান যুক্ত অভিজাত রাগসঙ্গীত। এই সঙ্গীতের সাথেই বিস্তার লাভ করতে থাকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত।[1]
বৌদ্ধযুগে প্রচলিত চর্যাগীতির পুঁথিতে উনিশটি রাগের নাম পাওয়া যায় --পটমঞ্জরী, গউড়া, গবড়া, অরু, গুঞ্জরী, দেবক্রী, দেশাখ, ভৈরবী, কামোদ, ধনসী, রামক্রী, বরাড়ি, শীবরী, বলাড্ডি, মল্লারী, মালশী, কহ্নুগুঞ্জরী, বঙ্গাল, শবরী ইত্যাদি। 'চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয়' গ্রন্থটিতে মাত্র একান্নটি চর্যাগানের সন্ধান পাওয়া গেলেও এইজাতীয় বৌদ্ধগীতি দ্বারা এক বিরাট সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছিল যার সাথে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এক নিবিড় যোগাযোগ ছিল। তবে শুধুমাত্র বৌদ্ধযুগই নয়, সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত প্রভাবিত ও সমৃদ্ধ হয়েছে নানাভাবে।
ছবি:গুগল
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত হল শাস্ত্রের নিয়মাদি মেনে চলা সঙ্গীত। সঙ্গীতকে যে সব নির্দিষ্ট নিয়মের ভেতর দিয়ে চলতে হয় সেই নিয়মগুলি শাস্ত্রে উল্লিখিত রয়েছে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ইতিহাস বহু পুরানো। বৈদিক যুগ থেকে এই সঙ্গীতের চর্চা চললেও প্রায় দুই হাজার বছর আগে থেকে মন্দিরে সুরের মাধ্যমে স্তোত্র পাঠ করা হত। ধারণা করা হয়, সেই স্তোত্রের সুর থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিকাশ। বৌদ্ধযুগের প্রসঙ্গে বলতে গেলে সেইসময় চর্যাপদ একটি বিশেষ জায়গা দখল করে ছিল। এই চর্যাপদগুলি বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারকেরা গানের সুরে উচ্চারণ করতেন। একাদশ শতাব্দীতে বৌদ্ধ শাসনামলে গড়ে উঠা প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় ও সমাজ ব্যবস্থায়ও সঙ্গীতের ছাপ সুস্পষ্ট। সম্রাট সমুদ্রগুপ্তকেও তাঁর আমলের স্বর্ণমুদ্রায় বীণা হাতে দেখা যায়।
সন্ধ্যা ভাষায় রচিত চর্যাগীতিগুলি মুখ্যত বৌদ্ধ সহজিয়াদের সাধনপদ্ধতিমূলক গান। বৌদ্ধধর্মাবলম্বী পালরাজাদের সময় চর্যাগীতি বাংলায় বিস্তার লাভ করে। বর্তমানকালের বাংলা গানের স্থায়ী, অন্তরা, সঞ্চারী ও আভোগ এই চার কলির পরিবর্তে সেকালে ছিল উদ্গ্রাহ, মেলাপক, ধ্রুব ও আভোগ। এগুলিকে বলা হতো ধাতু। এই চারটি ধাতুর মধ্যে উদ্গ্রাহ ও ধ্রুব সব গানেই থাকত, অন্য দুটি বাধ্যতামূলক ছিল না। তাই একটি ধাতু বর্জিত হলে সেই গানকে বলা হতো ত্রিধাতুক, আর দুটি বর্জিত হলে দ্বিধাতুক। সাধারণভাবে সঙ্গীতকে তখন প্রবন্ধগীত বলা হতো। চর্যাগীতি বাংলাভাষায় রচিত প্রথম তাল ও মান যুক্ত অভিজাত রাগসঙ্গীত। এই সঙ্গীতের সাথেই বিস্তার লাভ করতে থাকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত।[1]
বৌদ্ধযুগে প্রচলিত চর্যাগীতির পুঁথিতে উনিশটি রাগের নাম পাওয়া যায় --পটমঞ্জরী, গউড়া, গবড়া, অরু, গুঞ্জরী, দেবক্রী, দেশাখ, ভৈরবী, কামোদ, ধনসী, রামক্রী, বরাড়ি, শীবরী, বলাড্ডি, মল্লারী, মালশী, কহ্নুগুঞ্জরী, বঙ্গাল, শবরী ইত্যাদি। 'চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয়' গ্রন্থটিতে মাত্র একান্নটি চর্যাগানের সন্ধান পাওয়া গেলেও এইজাতীয় বৌদ্ধগীতি দ্বারা এক বিরাট সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছিল যার সাথে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এক নিবিড় যোগাযোগ ছিল। তবে শুধুমাত্র বৌদ্ধযুগই নয়, সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত প্রভাবিত ও সমৃদ্ধ হয়েছে নানাভাবে।
ছবি:গুগল