What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পঞ্চাশে ফ্যাশনধারা (1 Viewer)

5iVsJBp.jpg


স্বাধীনতার পর থেকে একটু একটু করে যাত্রা শুরু হয় দেশীয় ফ্যাশনের। নব্বইয়ের দশকে এবং এই শতকের শুরু থেকে পোশাকে দেখা যায় নতুনত্ব। আর এখন উপকরণ, অলংকরণ ও মাধ্যমে দেশজ ধাঁচ ও প্রভাব এগিয়ে। চলছে নিত্যনতুন পরীক্ষা–নিরীক্ষা।

2ZQJuHu.jpg


পাঞ্জাবিতে টানা নকশিকাঁথার ফোঁড়, রংবাজ স্টাইলের কটি, জামদানি শাড়ি—এ সবই দেশে ও বিদেশে আমাদের ঐতিহ্য তুলে ধরেছে সব সময়। পাঞ্জাবি: অরণ্য, কটি: যাত্রা, শাড়ি: টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, গয়না: সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরি।

জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া ছবির অমর একুশের প্রভাতফেরির দৃশ্যটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের নিশ্চয়ই মনে আছে সেখানে অংশগ্রহণকারীদের পোশাকের কথা। বেশির ভাগ পুরুষের পরনে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা, বুকে কালো ব্যাজ। মেয়েদের পরনে সাদা শাড়ি কালো পাড়, কালো ব্লাউজ। এই সময়ে এসেও একুশে ফেব্রুয়ারিতে দেখা যায় সাদা–কালো পোশাক। তবে পোশাকের নকশায় যুক্ত হয়েছে বর্ণমালা, শহীদ মিনারসহ আরও নানা অনুষঙ্গ। একুশের চেতনা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ভাবধারা।

পয়লা বৈশাখের সঙ্গে লাল-সাদা পোশাকের তেমন কোনো যোগসূত্র জোরালোভাবে পাওয়া যায় না। তারপরও লাল-সাদা পোশাক বেশি দেখা যায়। যদিও উৎসবধর্মী আরও রং এখন থাকে বৈশাখ বসনে।

এই তো সামনেই ২৬ মার্চ, আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এবারের ২৬ মার্চ সম্পূর্ণই আলাদা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এ বছর। এদিনের পোশাক-আশাকে লাল-সবুজের ছোঁয়া থাকবে, এখন এটাই যেন ধ্রুব।

দিবস ধরে বিশেষ পোশাক পরার বিষয়টি নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক আর এই শতকের গোড়ার সময় থেকে ধীরে ধীরে বিরাট ব্যাপ্তি পেয়েছে। বললে ভুল হবে না, সেই সময়টা তখন, যখন থেকে দেশে ফ্যাশন হাউস, ডিজাইনারদের পোশাক ক্রেতাদের টানতে থাকে। ফ্যাশন ডিজাইনার আর উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের ফ্যাশনে দেশি উপাদান, উপকরণ, নকশা, নকশার মাধ্যমে লোকজ উপাদানের উপস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যাপকভাবেই।

mhL57je.jpg


রিকশাচিত্র ও গামছা প্রিন্ট সব ধরনের পোশাকে নিয়ে আসে ভিন্নতা। দেয় লোকজ আমেজ। টপ, প্যান্ট ও গয়না: যাত্রা, পাঞ্জাবি: দেশাল

দেশের পোশাকে দেশি কাপড়

ik1weYm.jpg


অ্যান্ডি সিল্কের সালোয়ার-কামিজ, কটির ওপর নকশিকাঁথার কাজ সঙ্গে সিল্কের ওড়না। পোশাক ও ওড়নায় আছে প্রাকৃতিক রং। পোশাক: অরণ্য

তাঁতের কাপড়, এটা আমাদের। স্বাধীনতার আগে এবং এর পরপর ছিল ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ি। মোটা কাপড়, দৈর্ঘ্যে ১০-১১ হাত। প্রতিবেশী দেশের শাড়িরও দাপট ছিল। দেশের যন্ত্র তাঁতে তৈরি পাকিজা, জনী, পরে প্রাইড টেক্সটাইলের ছাপা শাড়ির জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। এদিকে হাত তাঁতে তৈরি কাপড়ে গুণগত ও নকশাগত উন্নয়নের শুরুটা সত্তর দশকের শেষ আর আশির দশকের শুরু থেকে। আড়ং, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, কুমুদিনীর মতো প্রতিষ্ঠান এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। তাঁতের শাড়ি হয়ে ওঠে আরও মিহি, আরামদায়ক আর দৈর্ঘ্য বেড়ে হয় ১২ হাত। সবচেয়ে বড় কথা হলো নগরকেন্দ্রিক ফ্যাশনে তাঁতে বোনা কাপড় বিশেষ স্থান পেয়েছে। আশির দশকের শেষ অংশ থেকে সাপ্তাহিক বিচিত্রার ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতা ক্রেতা-বিক্রেতার যোগসূত্র তৈরিতে একটা বড় অবদান দেখা যায়। এরপর নব্বই দশকে নতুন নতুন ফ্যাশন হাউস এসে দেশি কাপড়ের পরিসরটা বাড়িয়ে দেয়।

খাদির বেলায়ও একই কথা। কুমিল্লার চান্দিনার শৈলেন গুহকে কেন্দ্র করে খাদির একটা নবজাগরণ দেখা যায় নব্বই দশক থেকে। ২০০০ সালের পর বেশ কয়েক বছর ঈদ আর শীত একই সময়ে থাকায় খাদির তৈরি পোশাক বেশ ব্যাপকভাবেই দেখা যায়। কয়েক বছর ধরে খাদির কাপড়ে চালানো হয়েছে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা। পাতলা হয়ে উঠেছে খাদি। চলতি ধারার নানা পোশাকেই ব্যবহার করা হচ্ছে ঐতিহ্যের এ কাপড়।

জামদানির আবেদন দেড়-দুই দশক ধরে বেড়ে চলেছে। বিয়ের অনেক কনেই এখন বেছে নেন জামদানি। আর বিয়ের পোশাক হিসেবে কাতান-বেনারসির চাহিদা তো সব সময়ই রয়েছে। ২০০০ সালে গ্রামীণ চেক বেশ জনপ্রিয়তা পায়। মাদ্রাজ চেকের বিকল্প হিসেবে যথেষ্টই সমাদৃত হয় আরামদায়ক সুতির এই কাপড়। বাংলাদেশের গ্রামীণ চেককে দেশ তো বটেই বিদেশেও জনপ্রিয় করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন বিবি রাসেল। সিল্কের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়েছে সিল্ক সুতার উচ্ছিষ্ট অংশ দিয়ে তৈরি অ্যান্ডি সিল্ক। বিশেষ করে পাঞ্জাবি, শাল, শাড়িতে অ্যান্ডি সিল্কের ব্যবহার বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়। মাঝেমধ্যেই পোশাকে সরাসরি গামছার ব্যবহার দেখা যায়। গামছা শাড়িও আমাদের ফ্যাশনধারায় জনপ্রিয় হয়েছে মাঝেমধ্যে।

ঐতিহ্যের মসলিনও গত এক দশকে ফিরে এসেছে দারুণভাবে। মসলিন নিয়ে নতুন করে কাজ ও গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে।

QZon6yg.jpg


গত ৫০ বছরে খাদি নিয়ে হয়েছে নানা রকম পরীক্ষা–নিরীক্ষা। খাদি দিয়ে এখন বানানো হচ্ছে নানা ধরনের পোশাক। মডেল: রাতুল, পোশাক: এমদাদ হক

মাধ্যমেও দেশজ ছোঁয়া

fGxAGpr.jpg


নানা কাটের পোশাকে করা হচ্ছে প্যাচওয়ার্ক। সঙ্গে বেলবটম কাটের প্যান্ট। সত্তরের দশকে এ কাটের প্যান্ট তরুণ-তরুণীদের আলমারির একটি অংশই হয়ে গিয়েছিল। ঘুরেফিরে নানা সময়ে এটি আবার চলতি ধারায়। টপ: খুঁত, গয়না: তাহিতী

শাড়িতে সরাসরি নকশিকাঁথার ফোঁড়, নকশিকাঁথার ছাপ—লোকজ উপকরণকে বারবার ফিরিয়ে আনছে ফ্যাশনে। মাধ্যম হিসেবে ব্লক প্রিন্টের জনপ্রিয়তা চিরায়তই বলা যায়। ব্লকপ্রিন্ট নব্বই দশক পর্যন্ত মোটামুটি লতাপাতা, আলপনার মতো নকশা ছিল ব্লকে। ২০০০ সালের পর থেকে বিষয়ভিত্তিক কাজের ধারা বাড়তে থাকে, তখন ব্লকেও আসে বৈচিত্র্য। সন্দেশের ছাঁচ, শখের হাঁড়ি, পাখি, প্যাঁচা, টেপাপুতুল ইত্যাদি নকশা থাকছে ব্লকপ্রিন্টে।

বছরের কোনো না কোনো সময়ে ফ্যাশন হাউসগুলোর সংগ্রহে বড় জায়গা দখল করে থাকে টাই-ডাই করা পোশাক। বাটিকের কাজও দেখা যায় ঘুরেফিরে। পোশাকে বাড়তি কাজ হিসেবে অ্যাপ্লিক, কারচুপি, সুতার কাজও সব সময় থাকছে। কয়েক বছর ধরে চাহিদা বাড়ছে প্যাচওয়ার্কের কাজের।

লোকজ শিল্পের নানা উপাদান ঘুরেফিরে এসেছে। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে মাধ্যম হিসেবে হাতে আঁকা মানে হ্যান্ডপেইন্টের ব্যবহার দেখা যায়। যদিও পরে সে ধারা কখনো কমবেশি হয়েছে। পোশাকে রিকশাচিত্রের ব্যবহারও দেখা গেছে নানা ঢঙে।

OQ2zIBq.jpg


তাঁতের কাপড়ে তৈরি স্কার্ট ও লম্বা কটির ওপরে ব্লক প্রিন্ট। পোশাক: বিবিয়ানা

জিনস ও অন্যান্য

p78lwBm.jpg


nWfQlL5.jpg


এখন তৈরি হচ্ছে জিনসের নানা রকম পোশাক। শার্ট, লম্বা ফ্রক, জ্যাকেট কিংবা প্যান্ট তৈরি করেছে নতুন স্টাইল। পোশাক: সারা লাইফস্টাইল, গয়না: তাহিতী

স্বাধীনতার পর ঢাকার কয়েকটি টেইলারিং হাউসে জিনস পাওয়া যেত, সেটা অর্ডার দিয়ে প্যান্ট তৈরি করা যেত। সে সময় আবার বিদেশ থেকে আমদানি করা পুরোনো কাপড়ের একটা চাহিদাও ছিল। সেটাও ছিল জিনসের একটা উৎস। বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পের উত্থানের পর ভালো মানের জিনস দেশের বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। তৈরি পোশাক কারখানার উদ্বৃত্ত জিনস ঢাকার বঙ্গবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে থাকে। এখন তো জিনস দিয়ে ফ্যাশন হাউসগুলো নানা রকম পোশাক তৈরি করছে।

তারুণ্যের পছন্দ টি-শার্ট। কিন্তু সেটায় দেশি আমেজ ছিল না। নব্বই দশক থেকে নিত্য উপহারের উদ্যোগে টি-শার্টে উঠে আসে আমাদের নিজস্বতা। বাংলাদেশের পতাকা, দেশি শিল্পীদের আঁকা নকশা ইত্যাদি দ্রুতই তরুণদের নজর কাড়তে থাকে। ফলে শাহবাগের আজিজ মার্কেট ঘিরে সৃজনশীল টি-শার্ট তৈরির একটা ধারা তৈরি হয়, যা এখন ব্যাপকভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে।

২০১০ সালের পর থেকে প্রযুক্তির প্রসার হতে থাকলে আন্তর্জাতিক ধারার খবরাখবর সঙ্গেই সঙ্গে পান ফ্যাশনপ্রেমীরা। তাই রং, পোশাক ইত্যাদিতে বৈশ্বিক ছোঁয়া থাকা স্বাভাবিক। তবে পোশাক যাই-ই হোক, উপকরণটা হচ্ছে দেশি। বাংলাদেশের ৫০ বছরে ফ্যাশনধারা এগিয়ে চলেছে দেশজ আবহ ধরে। এমনটা তো বলাই যায়।

DxZZXPl.jpg


ফুলহাতা শার্ট পাশ্চাত্যের আনুষ্ঠানিক পোশাক। তবে আমাদের দেশেও কর্মক্ষেত্র বা অনুষ্ঠানে ফুলহাতা শার্ট এখন পরিচিত। শার্ট: ইনফিনিটি
 

Users who are viewing this thread

Back
Top