What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

চার বিস্ময়কর নারী (1 Viewer)

ফরাসিতে একটা কথা আছে—'লা ভি এ বেল'। বাংলা করলে হয় 'জীবন সুন্দর'। অথচ কিছু একটা মনের মতো না হলেই 'ধুর ছাই' বলে হতাশ হয়ে পড়ি আমরা। তখন মনে হয়, জীবন মানেই যুদ্ধ। তা ঠিক, জীবন মানে যুদ্ধ তো বটেই। তবে আমাদের সামনে কিছু উদাহরণ আছে, যেগুলো দেখলে মনে হয়, জীবন যে সুন্দর, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ওই উদাহরণ বা অনুকরণীয় মানুষদের অনেকেই শারীরিক অক্ষমতা জয় করেছেন। বরং সীমাবদ্ধতাই তাঁদের মানসিক শক্তি জুগিয়েছে। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তেমনই বিস্ময়কর চার নারীর কথা পড়ুন। জীবনটাকে অবশ্যই সুন্দর মনে হবে...

m5RXnZW.jpg


এক পায়ে পৃথিবীর সাত সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেছেন অরুণিমা সিনহা | 'বর্ন অ্যাগেইন অন দ্য মাউন্টেন' বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে

তেজি অরুণিমা সিনহা

২০১১ সালে চলন্ত ট্রেনে দুর্বৃত্তদের কবলে পড়েন ভারতের জাতীয় নারী ভলিবল দলের খেলোয়াড় অরুণিমা সিনহা। গলার সোনার মালাটি ছিনিয়ে নিলে বাধা দিয়েছিলেন তিনি। দুর্বৃত্তরা তাঁকে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ে তাঁর পা। অরুণিমা পঙ্গু হয়ে যান মাত্র ২২ বছর বয়সে। পরবর্তী সময়ে চলাফেরার জন্য একটি কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে।

কৃত্রিম পা জীবনে কিছুটা গতি এনে দিলেও অরুণিমার মন মানছিল না। সারা জীবন ছুটে বেড়িয়েছেন, গতিই তাঁর জীবন। তাই সিদ্ধান্ত নেন, এভারেস্ট জয় করবেন। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক একদম বেঁকে বসেছিলেন। কিছুতেই অনুমতি দিতে চাইছিলেন না। কিন্তু অরুণিমা দমার পাত্রী নন। অসম্ভবকে সম্ভব করেই ছাড়বেন। এমন দৃঢ় সংকল্প এবং প্রশিক্ষণ সত্যি সত্যিই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল এভারেস্টে—২০১৩ সালে। অরুণিমা সিনহা হলেন এক পা–বিহীন প্রথম নারী, যিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে উঠে প্রমাণ করেছেন যে শারীরিক অক্ষমতা মানুষকে অক্ষম করে না; মানুষ অক্ষম হয় মানসিক দুর্বলতায়। দুর্বৃত্তরা তাঁর গলা থেকে সোনার মালা ছিনিয়ে নিলেও রাষ্ট্র তাঁর গলায় পরিয়ে দিয়েছে পদ্মশ্রী পদক। আর কেবল এভারেস্টই নয়, একে একে পৃথিবীর সাত মহাদেশের সাত সর্বোচ্চ শৃঙ্গও জয় করে ফেলেছেন তেজি অরুণিমা। এ পর্যন্ত পুরস্কার হিসেবে পাওয়া সব অর্থ তিনি দান করে দিয়েছেন দরিদ্র ও ভিন্নভাবে সক্ষম ক্রীড়াবিদদের উন্নয়নের জন্য গড়া তহবিলে। পড়ে দেখতে পারেন ২০১৪ সালে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী বর্ন অ্যাগেইন অন দ্য মাউন্টেন।

8SJ1zUj.jpg


শারীরিক অক্ষমতা হার মেনেছে মামা ক্যাক্সের কাছে, টুইটার

প্রেরণার বাতিঘর মামা ক্যাক্স

আর মাত্র তিন সপ্তাহ আয়ু আছে। চিকিৎসকেরা সবাই একমত। হাঁটুর হাড়ে আর ফুসফুসে মরণ কামড় বসিয়েছে ক্যানসার। একপর্যায়ে হাঁটুর অনেকখানি ওপর থেকে ডান পায়ের প্রায় পুরোটাই কেটে ফেলা হলো। মাত্র একটি পা নিয়ে নতুন জীবনের দুর্গম পথে পা বাড়ালেন মামা ক্যাক্স। বিলীন হয়ে যাওয়া জীবন থেকে একে একে বের করে আনতে শুরু করলেন বর্ণিল সব রং।

টপ মডেল হতে হলে নিজেকে নানাভাবে প্রমাণ করতে হবে—এমন গতানুগতিক ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়ে মার্কিন–হাইতিয়ান মামা ক্যাক্স হয়ে ওঠেন টপ মডেলদের একজন। তাঁর ডাক পড়ে খোদ হোয়াইট হাউসের ফ্যাশন শোতে। ওই অনুষ্ঠানে তাঁর বেদনার আর্তি ভেসে যায় আনন্দের অশ্রুজলে। তবে ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর মাত্র ৩০ বছর বয়সে অবসান হয় মামা ক্যাক্সের বর্ণাঢ্য জীবনের। মামা ক্যাক্স চলে গেলেও তাঁর জীবনসংগ্রামের কথা মানুষ ভুলে যায়নি। বহু প্রতিবন্ধীকে তিনি আলো দিয়ে যাচ্ছেন প্রেরণার বাতিঘর হয়ে।

7xB72Jf.jpg


বিশ্বের সবচেয়ে খাটো নারী জ্যোতি আমগে, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস

জ্যোতি আমগের আলো

২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, জ্যোতি আমগের ১৮তম জন্মদিনের ঠিক আগের দিনের কথা। সেদিন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ ঘটা করে জানিয়ে দেয়, জ্যোতি আমগে বিশ্বের সব জীবিত নারীর মধ্যে সবচেয়ে খাটো। তাঁর উচ্চতা মাত্র ২ ফুট শূন্য দশমিক ৬ ইঞ্চি এবং ওজন ১১ পাউন্ড। উচ্চতায় খুব খাটো হলেও ছোটবেলা থেকেই নামীদামি অভিনেত্রী হওয়ার বিশাল স্বপ্নটা ঠিকই দেখতেন জ্যোতি। স্বপ্ন সত্যিও হয়েছে ২০০৯ সালে। 'বডি শক: টু ফুট টল টিন' নামের প্রামাণ্যচিত্রে নাম ভূমিকায় কাজ করেন তিনি। ভারতীয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান 'বিগ বস-৬'-এ যোগ দেন অতিথি শিল্পী হিসেবে। এ ছাড়া অভিনয় করেছেন 'আমেরিকান হরর স্টোরি: ফ্রিক শো'তে।

3H66EPt.jpg


পঙ্গুত্ব কেড়ে নিতে পারেনি সুধা চন্দ্রনের স্বপ্ন, সংগৃহীত

পরিশ্রমী সুধা চন্দ্রন

ভারতীয় চ্যানেল খুললেই সুধা চন্দ্রনকে দেখা যায়। কত যে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি! তাঁর অভিনীত সিনেমার সংখ্যাও তো কম নয়। তবে মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই নাচ শিখতে শুরু করেন তিনি। স্বপ্ন দেখতেন, একদিন বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী হবেন। লক্ষ্য ঠিক রেখেই চলছিলেন। অথচ ১৬ বছর বয়সে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পায়ে ভীষণ এক আঘাত সব ওলটপালট করে দেয়। ডান পায়ের প্রায় পুরোটাই কেটে ফেলতে হয়। প্রথম দিকে খানিকটা ভেঙে পড়লেও জীবনযুদ্ধে ঠিকই জয়ী হন সুধা।

পা কেটে ফেলার পর দুই বছর ধরে কৃত্রিম পায়ে হাঁটাচলা রপ্ত করেন সুধা চন্দ্রন। দুই বছর পর আবারও নাচ শিখতে শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখাপড়াও চালিয়ে যান। স্নাতকোত্তর করেন অর্থনীতিতে। এত কিছুর মধ্যে ভারতনাট্যম নৃত্যশিল্পী তো বটেই নিজেকে একজন মেধাবী অভিনেত্রী হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন প্রচণ্ড পরিশ্রম করে। ছয়টি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন সুধা চন্দ্রন। বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। সুনাম বয়ে এনেছেন নিজের দেশের জন্য। আর তাই ছোটদের উদ্দীপ্ত করতে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাঁর সংগ্রামী জীবনের কথা।

অরুণিমা সিনহা, মামা ক্যাক্স, জ্যোতি আমগে ও সুধা চন্দ্রন পৃথিবীর কোটি কোটি নারীর প্রতিনিধি মাত্র, যাঁরা সংগ্রাম করে জীবনকে মহিমান্বিত করেছেন। আমাদের জানাতে পেরেছেন জীবন সত্যিই সুন্দর।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top