What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বাগানের ভয়ংকর গাছগুলো (1 Viewer)

MqA1zxf.jpg


ক্যালিফোর্নিয়া পিচার প্ল্যান্টস বা কোবরা লিলি, ছবি: উইকিপিডিয়া

বাগানের সব গাছ এবং ফুলই যে সুন্দর হবে, তেমন কোনো কথা নেই। সুন্দর ফল, পাতার উদ্ভিদও ভয়ংকর হতে পারে। 'ভয়ংকর সুন্দর' কথাটি মনে হয় সে জন্যই জন্ম নিয়েছে। ভয়ংকর সুন্দর শব্দটির সঙ্গে এক ধরনের রোমাঞ্চকর অনুভূতি জড়িয়ে আছে। আর সে জন্যই হয়তো চোখের সামনে অভিনব সব উপায়ে জীবন্ত পোকা ধরে খেয়ে ফেলা অদ্ভুত গাছগুলো হাউস প্ল্যান্ট হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

cvBv6Pb.jpg


একটি ইয়াতেভিও গাছ স্থানীয় একজন মানষকে খেয়ে ফেলছে, মধ্য আমেরিকা। জে. ডব্লিউ. বুয়েলের 'ল্যান্ড অ্যান্ড সি' থেকে, ১৮৮৭, ছবি: উইকিপিডিয়া

পতঙ্গভুক বা শিকারি গাছগুলোকে ইন্ডিয়ানা জোন্সের অ্যাডভেঞ্চার মুভিতে বা সত্যজিৎ রায়ের লেখা 'সেপ্টোপাসের ক্ষিদে' গল্পে যেমন ভয়ংকর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা অবশ্য বাস্তব অর্থে অনেকটাই কল্পনাপ্রসূত। বরং প্রতিকূল পরিবেশে একেবারে বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই কিন্তু এই উদ্ভিদেরা পোকামাকড় শিকার করে খেয়ে থাকে। এ জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জলাবদ্ধ ভূমিতে বা জলাশয়ে যেখানে শিকড় বিস্তার করে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করা খুব কঠিন, সেখানে অনেক পতঙ্গভুক গাছ জন্মে। নানান ছলাকলায় রূপে-রঙে ভুলিয়ে অথবা নিঃসৃত মিষ্টি রসের লোভে প্রলুব্ধ করে মশা-মাছি থেকে শুরু করে বেশ বড় আকৃতির পোকাও ফাঁদে ফেলে আটকে আস্তে আস্তে হজম করে ফেলতে পারে পোকাখেকো গাছেরা। নাগরিক জীবনের একঘেয়েমি কাটিয়ে উঠতে শখের বাগানিরা আজকাল খুবই ঝুঁকছেন এমন সব গাছকে হাউস প্ল্যান্ট হিসেবে রাখার প্রতি।

সারা পৃথিবীতে প্রায় ৬০০ প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদ আছে। আকার আকৃতি, গড়ন, রং-রূপ আর শিকার ধরার কৌশলের দিক থেকে এগুলো একটি অপরটি থেকে খুবই আলাদা। একমাত্র তুষারাবৃত অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর সবখানেই এমন উদ্ভিদ জন্মায়। তবে এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতেই এদের বেশি দেখা যায়। মূলত বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি মেটাতেই এসব শিকারি গাছ শিকার ধরে থাকে। তবে পোকামাকড়ের পাশাপাশি কালেভদ্রে ছোট পাখি, ব্যাঙ বা ইঁদুরকে ফাঁদে ফেলতে পারলে কিন্তু আরামসেই হজম করে ফেলে এই মাংসাশী গাছগুলো। এদের সবাই কিন্তু ঘরোয়া বাগানে লাগানোর জন্য খুব উপযুক্ত নয়। হাউস প্ল্যান্ট হিসেবে যেসব শিকারি গাছ শখের বাগানিদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষস্থান জুড়ে আছে, তার মধ্যে জনপ্রিয় ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ, পিচার প্ল্যান্ট, বাটার ওয়ার্ট, সানডিউ প্রভৃতি।

WAr97wT.jpg


ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ, ছবি: উইকিপিডিয়া

পতঙ্গভুক উদ্ভিদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ। একেবারে ভীষণদর্শন, রীতিমতো হা করা চোয়ালের মতো পাতাযুক্ত গাছটি আবার রং-রূপে সত্যিই নয়ন মনোহর। এই পাতাগুলোর ধারজুড়ে চোখের পাপড়ির মতো অংশ থাকে, যা কিনা শিকারের উপস্থিতি সম্পর্কে গাছটিকে জানিয়ে দেয়। মিষ্টি গন্ধের রসের লোভে আর টুকটুকে রঙের মোহে পোকামাকড় এই হা-করা পাতার মাঝে গিয়ে বসলেই খপ করে বুজে যায় তা। এবার পাচকরসের ক্রিয়ায় পোকাটিকে আস্তে আস্তে হজম করে ফেলে সুন্দরী ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ। তবে ঘরে মশা-মাছি না থাকলে এতে কিছুটা নাইট্রোজেন জাতীয় সার প্রয়োগ করতে হয়।

এরপরেই যে শিকারি গাছের কথা আসে তা হলো কলসিগাছ বা পিচার প্ল্যান্টস। এদের মাংকি কাপও বলা হয়। এর চোঙ ধরনের লম্বা কলসি আকৃতির পরিবর্তিত পাতার ভেতরে থাকে সুগন্ধি রস। আঠালো মধুর মতো মিষ্টি সেই রস খেতে গিয়ে পোকামাকড় সহজেই আটকে যায়। কারণ এর ভেতরে আছে নিম্নমুখী মিহি কাঁটার মতো আঁশের স্তর।

lC3aUuQ.jpg


কলসিগাছ বা পিচার প্ল্যান্টস অথবা মাংকি কাপ, ছবি: উইকিপিডিয়া

পিচ্ছিল এই স্তর পোকাকে দ্রুত কলসির ভেতরে নিয়ে গেলেও বের হতে দেয় না। রস খেয়ে সেই রসেই পতঙ্গ প্রবরটির করুণ মৃত্যু ঘটে কলসির ভেতরে। শুকনো পাতাচূর্ণ এর ভেতরে পড়লেও নাইট্রোজেনের ঘাটতি কিছুটা দূর হয় এই জাতীয় গাছের। তাই ঘরের ভেতরে লাগালে এভাবে পাতা চূর্ণ করে দেওয়া যায় কলসিগুলোতে।

v5UVZzO.jpg


সানডিউ বা সূর্য শিশির, ছবি: উইকিপিডিয়া

আমাদের দেশে জন্মানো পতঙ্গভুক গাছের মধ্যে ঘরোয়া বাগানে রাখার জন্য সবচেয়ে সহজ হচ্ছে সানডিউ বা সূর্য শিশির। লম্বায় এক থেকে তিন ইঞ্চি এই গাছগুলো সবুজ পাতার গায়ে লালচে রোমে আবৃত থাকে। খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে এই সূর্য শিশির। এর রোমগুলোর গায়ে শিশিরকণার মতো অপরূপ সুন্দর রসের বিন্দুগুলো কিন্তু এতই আঠালো যে পোকামাকড় এতে আটকে পড়ে এবং এর পাচকরসে মারা পড়ে ও দ্রবীভূত হয়ে যায় ধীরে ধীরে। সানডিউ বা সূর্য শিশিরের বেশ আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ দরকার হয়। বারান্দা বা জানালার কার্নিশে রাখলে এই গাছগুলো তাই ভালো থাকে।

বাটারওয়ার্ট নামের আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ আর একেবারে সাধারণ গাছের মতো সবুজ পাতাওয়ালা গাছটি কিন্তু পোকামাকড়ের জন্য বড়ই ভয়ংকর। এতে বসলেই আটকে যায় যেকোনো পোকা। কারণ, এর পাতা থেকে রেজিনের মতো আঠালো রস বের হয়, যা একই সঙ্গে পোকাকে আটকে ফেলতে ও হজম করতে সহায়তা করে।

nlRHa1L.jpg


শীতে বাটারওয়ার্ট, ছবি: উইকিপিডিয়া

আর যে শিকারি উদ্ভিদের কথা না বললেই নয়, তার নাম Utricularia গোত্রের পাতা ঝাঝি, জলজ ঝাঝি বা ঝাঝিদাম। আমাদের দেশের অনেক স্থানেই বাঁওড় বা জলাবদ্ধ এলাকায় এই শিকড়বিহীন শিকারি গাছ জন্মে। কিছুদিন আগে ঝিনাইদহের বাঁওড়ে এর একেবারে আনকোরা আরেকটি জাতের সন্ধান পেয়েছেন আমাদের দেশের উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা। প্রাণিজ প্রকৃতির কিছুই এরা সংলগ্ন পানিতে টিকতে দেয় না। তাই সৌন্দর্যবর্ধন বা শখের জলজ উদ্ভিদের পাত্রে জলজ ঝাঝি রাখলে তা এডিস মশার লার্ভা বিনাশে একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যান্য পতঙ্গভুক হাউস প্ল্যান্ট ও ঘরের মশা মাছি দূর করতে পারে একেবারে প্রাকৃতিক উপায়ে। এ ব্যাপারে প্রকৃত বিশদ গবেষণা করা এখন সময়ের দাবি।

wPkpgXv.jpg


নৌকায় তোলার পরে জলজঝাঝি। কোটচাঁদপুরের জয়দীয়া বাঁওড়, ছবি: সংগৃহীত

শিকারি গাছের রূপ-বৈচিত্র্য আসলেই ঘরোয়া বাগানে এক ব্যতিক্রমী আমেজ নিয়ে আসতে পারে। আর সঙ্গে রোমাঞ্চের ব্যাপারটি তো আছেই। শিশুরা এই গাছগুলোকে মশা-মাছি খাইয়ে ডিসকভারি বা ন্যাচারাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের মতো প্রাকৃতিক এই ডকুমেন্টারি মুভি দেখে অত্যন্ত মজার একটি সময় পার করতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এই গাছগুলোকে যেন বেশি পোকামাকড় না খাওয়ানো হয়।

আবার, জলাবদ্ধ জায়গায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই গাছগুলোর শিকড় সব সময় পানিতে ডোবা অবস্থায় রাখতে হয়। সেই পানি হতে হয় বৃষ্টির পানি বা ডিস্টিল্ড ওয়াটার, যাতে সাপ্লাইয়ের পানির মতো মিনারেল থাকে না। এ ক্ষেত্রে, মাটিও এমন হতে হবে যেন তা যথেষ্ট পানি ধারণ ও নিষ্কাশন করতে পারে এবং কিছুটা ফাঁপা ধাঁচের নুড়িমিশ্রিত থাকতে হবে।

3VbxtnH.jpg


টবে রোপণ করা ক্যালিফোর্নিয়া পিচার প্ল্যান্টস বা কোবরা লিলি, ছবি: উইকিপিডিয়া

শীতকালে সূর্য শিশির ছাড়া বাকি সব পতঙ্গভুক উদ্ভিদ সুপ্ত অবস্থায় থাকে। একটু গরম পড়লেই শুরু হয় রং, রূপ ও রসের ছলনায় পোকামাকড় শিকার। ঝাঝি দামের ঝাড়গুলোতে অবশ্য বর্ষাকালেই তুমুল হলদে ফুল ফোটে। আর কলসিগাছ হতে পারে লালচে, বেগুনি এমন হরেক রঙের।

আমাদের দেশে এখন অনেক নার্সারিতে শিকারি গাছ পাওয়া যাচ্ছে। এসব গাছের বীজ বিভিন্ন অনলাইন শপেও পাওয়া যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক গ্রুপ ও কমিউনিটি গড়ে উঠেছে যেখানে শিকারি গাছের বাগানিরা একে অপরকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন এবং গাছও আদান-প্রদান করেন। এখনো দেশের সর্বসাধারণের কাছে খুব পরিচিত না হলেও ব্যতিক্রমী হাউস প্ল্যান্ট হিসেবে এই গাছগুলোর আলাদা কদর আছে শৌখিন বাগানিদের কাছে।
 
ছবিগুলো দারূণ। তথ্যবহ লেখা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top