What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other দিব্যা ভারতী: অভিমানে ঝরে যাওয়া ফুল (1 Viewer)

40HsLn9.png


ভিউকার্ড–পোস্টারের সেই দিনগুলোর কথা মনে আছে? নব্বই দশকের সেই দিনগুলোর কথা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে হকার বসত পোস্টার নিয়ে। পাড়া–মহল্লায় বই-খাতা বিক্রির দোকান, এমনকি মুদি দোকানেও বিক্রি হতো ভিউকার্ড। উৎসব–পার্বণে মেলা বসত। সেসব মেলায় কিছু দোকান থাকত, যেখানে তারকাদের মুখাবয়বসমৃদ্ধ পোস্টার বিক্রি হতো। সেসব পোস্টার–ভিউকার্ডে একটা মুখ খুব দেখা যেত, তিনি বলিউড অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী। ছেলেদের মানিব্যাগে, আয়নার পেছনে, সেলুনে কিংবা মেলায় অথবা ভিসিআরের ক্যাসেটকভারে থাকত তাঁর লাস্যময়ী ছবি।

hcr1nRr.jpg


বলিউডের ক্ষণজন্মা অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী। ছবি: ফেসবুক থেকে, ইনস্টাগ্রাম

দিব্যা ভারতী এক দীর্ঘশ্বাসের নাম। অভিমানে ঝরে যাওয়া ফুলের নাম। মাত্র তিন বছরের অভিনয়জীবনেই তিনি উঠেছিলেন জনপ্রিয়তা আর পরিচিতির শীর্ষে। দিব্যার জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। আজ তাঁর ৪৭ পূর্ণ হতো। কিন্তু মহাকাল সে সুযোগ দেয়নি তাঁকে। বরং মাত্র তিন বছরের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার রেখে ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল ১৯ বছর বয়সে অকালেই চলে গিয়েছিলেন দিব্যা। মৃত্যুর ২৮ বছর পরেও দিব্যা ভারতীর মৃত্যুও আজও এক অজানা রহস্য। শুধুই কি দুর্ঘটনা! নাকি এর পেছনে ছিল কোনো ষড়যন্ত্র? উত্তর মেলেনি।

নব্বই দশকের ভিসিআর আর পোস্টারের সে যুগে বলিউডে নারী তারকার নতুন আইকন ছিলেন দিব্যা ভারতী। সে যুগ শেষ হয়েছে। এসেছে অ্যান্ড্রয়েড-আইফোনের যুগ। টিকটক, লাইকির যুগ। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এখন তারকাদের বড় 'আবাস'। এই যুগে দিব্যা নেই। তবে আজও দারুণ স্পষ্ট দিব্যার নামটি। আজ সকাল থেকে ফেসবুক, টুইটারে দিব্যাকে দেখা যাচ্ছে। সেই মন–ভুলানো হাসিতে।
মৃত্যুর ২৮ বছর পরেও দিব্যার মৃত্যুও আজও এক অজানা রহস্য। ভারতীয় পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিব্যা ভারতীর মৃত্যু ছিল দুর্ঘটনা। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে মদ্যপ অবস্থায় পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দার রেলিং ধরে হাঁটছিলেন দিব্যা, পা পিছলে পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন, মাথায় গভীর ক্ষত চিহ্ন ছিল।

cMZDdTQ.jpg


১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল মারা গেছেন দিব্যা। ছবি: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম

যদিও দুর্ঘটনার এই প্রতিবেদনকে আজও মেনে নিতে পারেনি ভক্তরা। দিব্যা ভারতীর মৃত্যু নিয়ে বলিউডের অন্দরেও অনেক গল্প শোনা যায়। অনেকের মতে এটা ছিল ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুন। কেউ কেউ মনে করেন আত্মহত্যা করেছিলেন এই অভিনেত্রী। এই তর্ক চলছে বছরের পর বছর। হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেই দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল।

ভারতের স্থানীয় সাংবাদিক রোশমিলা ভট্টাচার্য লিখেছেন, 'সেদিনের কথা আমার মনে আছে। আমি মাত্র অফিসে ঢুকেছি, যখন খবর এল দিব্যা ভারতীকে গুলি করে মারা হয়েছে। আমার বিশ্বাস হয়নি। মজা করে প্রশ্ন করেছিলাম, কে ছবি তুলেছে, গৌতম না রাকেশ? আমার সহকর্মী জানিয়েছিল, কেউ ছবি তোলেনি। বলেছিল আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগসূত্র আছে এই ঘটনার সঙ্গে। এরপর খোঁজ নিয়ে স্পষ্ট জানাই, এটা গুজব, কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে খবর আসে দিব্যা ভারতী আর নেই।'

rqreLyq.jpg


দিব্যা ভারতীর মৃত্যু নিয়ে বলিউডের অন্দরেও অনেক গল্প শোনা যায়, ইনস্টাগ্রাম

রোশমিলা আরও লিখেছেন, 'আমরা জানতে পারি, দিব্যা তার বাড়ির ব্যালকনি থেকে পা পিছলে পড়ে গেছে, গুঞ্জন শোনা যায় আত্মহত্যা, এমনকি খুনেরও। তবে শেষমেশ পুলিশ ফাইলে তার মৃত্যুর ঘটনাকে একটা সাধারণ দুর্ঘটনা বলেই উল্লেখ করে মামলার ফাউল চূড়ান্ত করে।'

r055vT8.jpg


শাহরুখের সঙ্গে অল্পদিনেই জুটি তৈরি হয়েছিল। ছবি: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম

দিব্যার বলিউড যাত্রা

বাবা ওমপ্রকাশ ভারতী ছিলেন জীবনবিমাকর্মী। মা মিতা ভারতী গৃহিণী। ছোট ভাই কুনাল এবং সৎবোন পুনমের সঙ্গে মুম্বাইয়ে বেড়ে ওঠা দিব্যার। ছোট থেকেই হিন্দি, মারাঠি আর ইংরেজিতে স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন। পড়তেন মানেকজি কুপার হাইস্কুলে। তবে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার পরে নবম শ্রেণির পরে আর পড়াশোনা করেননি তিনি।

১৯৮৮ সালে 'গুনাহো কা দেবতা' ছবিতে দিব্যার অভিনয়ের কথা হয়। কিন্তু শেষ অবধি তিনি বাদ পড়েন। কীর্তি কুমার তাঁকে বেছে নিয়েছিলেন 'রাধা কা সংগম' ছবির জন্য। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সেই সুযোগ চলে যায় জুহি চাওলার কাছে।

cEIdNtq.jpg


দিব্যা ভারতী, ইনস্টাগ্রাম

বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন দিব্যা। কিছুটা নিজের অনিচ্ছায় তিনি শুরু করেন তেলুগু ছবি 'বব্বিলি রাজা'-এর শুটিং। ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া 'বব্বিলি রাজা' এখন অবধি সফল তেলেগু ছবির মধ্যে অন্যতম। প্রথম ছবিতেই আকাশছোঁয়া সাফল্যের পরে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি দিব্যাকে। প্রথম দুই বছর তেলেগু ও তামিল ছবিতে অভিনয়ের পরে হিন্দি ছবির জগতে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯১ সাল থেকে। ১৯৯২ সালটি ছিল হিন্দি ছবিতে দিব্যা ভারতীর বছর। ওই এক বছরে দিব্যা অভিনীত ১২টি ছবি মুক্তি পায়।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সে সময় দিব্যা ভারতীর পর্দায় উপস্থিতি এতটাই আবেদনময় ছিল দর্শকের কাছে যে এই অষ্টাদশী নায়িকাকে দিয়ে ছবি স্বাক্ষর করাতে প্রযোজকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল।

qa629aX.jpg


দিব্যা ভারতী, ইনস্টাগ্রাম

গোপনে বিয়ে করেছিলেন

শোনা যায়, ১৯৯২ সালেই দিব্যা ভারতীর সঙ্গে পরিচয় হয় প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার। ভারাসোভার তুলসী অ্যাপার্টমেন্টে নাদিয়াদওয়ালাদের ফ্ল্যাটেই গোপনে বিয়ে করেন দুজনে।

২৮ বছর কেটে গেছে; অথচ আজও সাজিদের পরিবারের একজন হয়েই যেন আছেন দিব্যা ভারতী। দিব্যার শেষ ব্যবহৃত পারফিউম, তার চুলের যত্নআত্তির দ্রব্যসামগ্রী এখনো যত্ন করে রেখেছেন সাজিদ।

fjwuBnR.jpg


দিব্যা ভারতী, ইনস্টাগ্রাম

এখনকার মতো সেই সময়েও নায়িকা বিবাহিত হলে দর্শকের কাছে তাঁর আবেদন কমে যায় বলে মনে করা হতো। তাই বিয়ের বিষয়টি একেবারেই গোপন রাখা হয়। কিন্তু ১০ মে দিব্যা-সাজিদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীর এক মাস আগেই চলে গেলেন দিব্যা।

দিব্যা ভারতী এখনো সাজিদের পরিবারের একজন

২৮ বছর কেটে গেছে; অথচ আজও নাকি সাজিদের পরিবারের একজন হয়েই যেন আছেন দিব্যা ভারতী। দিব্যার শেষ ব্যবহৃত পারফিউম, তার চুলের যত্নআত্তির দ্রব্যসামগ্রী এখনো যত্ন করে রেখেছেন সাজিদ।

pZdhlED.jpg


দিব্যা ভারতী এখনো সাজিদের পরিবারের একজন, ইনস্টাগ্রাম

গত বছর এপ্রিল মাসে এই খবর জানালেন সাজিদেরই পরের স্ত্রী ওয়ার্দা নাদিয়াদওয়ালা। ওয়ার্দা ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, 'দিব্যা আমাদের জীবনের একটি অংশ। সাজিদ এখনো ভোলেনি তাঁকে।' শুধু কি তাই, ওয়ার্দার সঙ্গে সাজিদের প্রথম সাক্ষাতের বিষয়টিও কাকতালীয়ভাবে দিব্যাকে কেন্দ্র করে।

ওয়ার্দা বলেন, 'হ্যাঁ, বিস্ময়করভাবে এটাই সত্য যে আমাদের দুজনের প্রথম দেখা হওয়ার তিনিই ছিলেন মাধ্যম। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে সাজিদের একটি সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েই পরিচয় হয়েছিল। অবশ্য সাজিদ, দিব্যার বাবা, আমার শ্বশুর আমাকে বলতেন, আমি নাকি দেখতে একেবারেই দিব্যার মতো, একই ব্যবহার, একই আচরণ।

GKWz5Gb.jpg


দিব্যা ভারতী, ইনস্টাগ্রাম

এমনকি দিব্যার বাবা ওয়ার্দাকে ডাকতেন মেয়ে হিসেবেই। ওয়ার্দা বলেন, 'তাঁর জায়গায় নিজেকে দেখার কোনো অধিকার আমার নেই। আমি আমার নিজের জায়গা তৈরি করেছি। তাঁর স্মৃতি সব সময়ই অসম্ভব সুন্দর। দিব্যা আমাদের জীবনেরই অংশ।'
দিব্যা কতখানি সাজিদের পরিবারে স্থান করে নিয়েছেন, তারও উদাহরণ দিলেন ওয়ার্দা। তাঁর কথা, 'আমার ছেলেমেয়েরা যখন তাঁর ছবি দেখে, তারা বলে আমাদের বড় মা।'

mi7mP6a.jpg


দিব্যা ভারতী, ইনস্টাগ্রাম

দিব্যার অসমাপ্ত ছবিগুলো

দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর সময় পাঁচ থেকে ছয়টি ছবি অসমাপ্ত ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযোজকদের নতুন নায়িকাদের নিয়ে নতুন করে শুটিং করে ছবি শেষ করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে 'লাডলা', যা নতুন করে শুটিং করা হয় শ্রীদেবীকে নিয়ে।

অসমাপ্ত ছবিগুলোর তালিকায় রয়েছে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য ছবি 'মোহরা', 'কর্তব্য', 'বিজয়পথ', 'দিলওয়ালে' ও 'আন্দোলন'। আরও কয়েকটি বড় ব্যানারের ছবির কাজও বন্ধ হয়ে যায়, যেগুলোয় অভিনয়শিল্পী চূড়ান্ত ছিল। যেমন অক্ষয় কুমারের সঙ্গে 'পরিণাম', সালমান খানের সঙ্গে 'দো কদম', ঋষি কাপুরের সঙ্গে 'কন্যাদান', সানি দেওলের সঙ্গে 'বজরঙ্গ' ও জ্যাকি শ্রফের সঙ্গে 'চল পে চল'।

XM2PKvg.jpg


দিব্যার জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। ছবি: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম

দিব্যার মৃত্যুর ঠিক আগেই শুটিং শেষ হয়েছিল 'রং' ও 'শতরঞ্জ' ছবির। মৃত্যুর পরেই মুক্তি পায় দুটি ছবি। বলিউড বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, মাত্র তিন বছরে যে অভিনেত্রী সাফল্যের এই উচ্চতায় উঠতে পারেন, বেঁচে থাকলে হয়তো আজকের দিনে তিনি মাধুরী অথবা শ্রীদেবীর মতোই হয়ে উঠতেন বলিউডের আরেক কিংবদন্তি নায়িকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিব্যার অকালমৃত্যু না হলে শ্রীদেবী, জুহি ও মাধুরী দীক্ষিতদের হিসাব–নিকাশটা অন্য রকম হতো।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top