What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বড়ির গল্প (1 Viewer)

Y6jMRS7.jpg


নানা রকম ডালের বড়ি সুস্বাদু তো বটেই, এগুলোকে এখন পুষ্টির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে।

'থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়' বহুল ব্যবহৃত প্রবাদ। বাঙালি জীবনে এ প্রবাদের অর্থ বৈচিত্র্যহীন। রান্নায় বৈচিত্র্যহীনতা, জীবনে বৈচিত্র্যের অভাব—এ রকম বোঝাতেই এ প্রবাদ। 'থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়' প্রবাদটিতে বাঙালির তিনটা বহুল প্রচলিত খাবারের কথা বলা হয়েছে। এই খাবারগুলো আবহমানকাল ধরে আমাদের রসনাবিলাসী মনকে তৃপ্ত করে আসছে। সুস্বাদু তো বটেই, এগুলোকে এখন পুষ্টির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে।

এই তিন খাবারের প্রথমটি হচ্ছে থোড়, অর্থাৎ কলাগাছের ভেতরের নরম অংশ, যাকে অনেক অঞ্চলে কাঞ্জল বা ভাদাল নামে ডাকা হয়। দ্বিতীয়টি হলো বড়ি। আমরা যাকে ডালের বড়ি ও কুমড়ো বড়ি নামে ডেকে থাকি। আর তৃতীয়টি, অর্থাৎ খাড়া মানে হলো শজনে—এখন পুরো বিশ্বে এটি 'সুপার ফুড' হিসেবে পরিচিত। এই তিনে মিলে হওয়া 'থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়' প্রবাদটির অর্থ বৈচিত্র্যহীন হওয়ার কারণ আছে অনেক। সে ভিন্ন গল্প। কলাগাছ, শজনেগাছ আর মাষকলাই এ অঞ্চলে খুব সহজে উৎপন্ন হওয়া উদ্ভিদ। সেগুলো থেকে খাবার বানানোর ইতিহাস তাই বেশ প্রাচীন আমাদের এ অঞ্চলে। হাতের কাছে কোনো কিছু না থাকলে কলাগাছের থোড়সহ অন্যান্য অংশ, বড়ি আর শজনেডাঁটা বা পাতা দিয়ে 'একটা কিছু' রান্না করে এক বেলা পার করে দেওয়াটা আমাদের অভ্যাস। সে জন্যই এ প্রবাদের জন্ম। এর অর্থে যতই বৈচিত্র্যহীনতা থাক না কেন, থোড়, বড়ি আর খাড়া দিয়ে কিন্তু সুস্বাদু খাবার রান্না করা যায়।

আশি বা নব্বইয়ের দশকে গ্রামে গ্রামে বড়ি দেওয়ার দৃশ্য ছিল নিয়মিত। শীত এলেই মাষকলাইয়ের বড়ি বানিয়ে সে বড়িকে খোলা জায়গায় নরম রোদে শুকাতে দেওয়ার দৃশ্য খুব একটা ধূসর হয়নি এখনো। কিন্তু বড়ি দেওয়ার সে চলই এখন সীমিত হয়ে গেছে। সাদা ধবধবে সুতি কাপড়ের ওপর দেওয়া সাদা শিশিরবিন্দুর মতো ডালের বড়ি ছিল সাদা সুতার ওপর সাদা সুতায় নকশা বোনা বনেদি জামদানির মতোই সুন্দর শিল্পকর্ম।

ডাল বা কুমড়োর বড়ি মূলত সংরক্ষণযোগ্য খাদ্য উপাদান। বড়ি বানিয়ে ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে কাচের বয়ামে পুরে বছরভর খাওয়া যায়।

নাম যেহেতু ডালের বড়ি, তাই এর মূল উপাদান যে ডাল, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মাষকলাই, মসুর এবং মটর ডাল ব্যবহার করা হয় এটি তৈরি করতে। সারা রাত ডাল ভিজিয়ে রেখে পরদিন পানি ঝরিয়ে সকালবেলা পাথরের জাঁতায় পিষে লেই তৈরি করে তারপর দেওয়া হয় বড়ি। তবে ব্যাপারটি সহজ নয়। পাটায় বা জাঁতায় মিহি করে বেটে নিয়ে খুব ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হয় ডালের লেই। দীর্ঘ সময় ধরে ভালোভাবে ফেটানোর ওপরই নির্ভর করে বড়ির গুণগত মান। বলা হয়ে থাকে যে ডালের লেই ফেটানোর পর তাতে বাতাস থাকা যাবে না কোনোভাবেই। বাতাসহীন লেই হলেই কেবল সুস্বাদু বড়ি পাওয়া যাবে। কোনোভাবে লেইয়ে বাতাস থেকে গেলে বড়ি কিছুটা তিতা হবে। মটর ডালের চাষ আমাদের দেশে এখন একেবারেই কম। তাই বড়ি বানাতে এখন ব্যবহার করা হয় মাষকলাই ও মসুর ডাল। তবে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে মাষকলাইয়ের ডাল দিয়েই বহুলভাবে তৈরি করা হয় বড়ি।

9DdbCZR.jpg


আমাদের দেশের সব অঞ্চলে ডালের বড়ি বানানো হয় না। ঢাকার বিক্রমপুর-মানিকগঞ্জ অঞ্চল, যশোর-খুলনা অঞ্চল, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং উত্তরবঙ্গের রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে ডালের বড়ি বানানোর প্রচলন আছে, যদিও তার পরিমাণ এখন কমে এসেছে। এগুলো ছাড়াও কিছু অঞ্চলে ডালের বড়ি বানানো হয় বটে। কিন্তু সেটা উল্লেখযোগ্য নয়। তবে প্রায় পুরো দেশেই এখন কমবেশি খাওয়া হয় ডালের বড়ি।

শুধু ডাল দিয়ে বানানো বড়ি ডালের বড়ি এবং ডালের লেইয়ের সঙ্গে চালকুমড়ার মিহি কুচি মিশিয়ে বানানো বড়ি কুমড়ো বড়ি নামে পরিচিত।

ছোট ও বড়—এ দুই আকৃতির হয়ে থাকে ডালের বড়ি। আকারভেদে এর রান্নাও ভিন্ন ভিন্ন। ছোট আকারের ডালের বড়ি সাধারণত ভর্তা বা ভাজা খাওয়ার জন্যই ব্যবহার করা হয়। এটা যে অন্য তরকারিতে দিয়ে খাওয়া হয় না, তা নয়। তবে বড় আকৃতির বড়ি দিয়েই তরকারি খাওয়াটা সাধারণভাবে প্রচলিত।

মূলত নিরামিষ তরকারির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে বড়ি। এটি কোনো একক উপাদান হিসেবে তরকারিতে ব্যবহার করা হয় না। সুক্তো, সবজির ঘন্ট, ভাজা, ঝোল এবং অম্বল বা টক—এ ধরনের খাবারে অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয় বড়ি, তা সেটা কুমড়ো বড়ি হোক অথবা ডালের বড়ি।

'ফুল বড়ি ফলমূলে বিবিধ প্রকার,/ বৃদ্ধ কুষ্মাণ্ড বড়ির ব্যঞ্জন অপার।...' ষোলো শতকের মাঝামাঝিতে রচিত চৈতন্য চরিতামৃত বইয়ে 'ফুল বড়ি'র কথা পাওয়া যায় এভাবে। এই ফুল বড়ি মসুর ডালে তৈরি হতো বলে জানা যায়। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, আমাদের অঞ্চলের খাবারে বড়ির উপস্থিতি বেশ প্রাচীন। উল্লেখ করে রাখি, বিভিন্ন ধরনের গয়নার আদলে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে 'গয়না বড়ি' বা 'নকশি বড়ি' তৈরি করে থাকেন সে অঞ্চলের নারীরা। এ ধরনের নকশি বড়ি আমাদের দেশে তৈরি হয় না। অবশ্য কেউ কেউ যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এ ধরনের নকশি বড়ি তৈরির চেষ্টা করেন না, তা নয়। তবে তা ব্যক্তিগত পর্যায় পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।

আগেই উল্লেখ করেছি যে ডালের বড়ি বা কুমড়ো বড়ি ভাজা বা ভর্তা ছাড়া অন্যান্য খাবারের মূল অনুষঙ্গ বা উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। এটি সহযোগী অনুষঙ্গ। সবজির ঘন্ট বানালে তাতে হালকা টেলে নেওয়া বড়ি যোগ করা যায় কিংবা সুক্তোর মতো খাবারেও একইভাবে বড়ি যোগ করা যায়। এটি রান্নায় যোগ করা হয় শেষের দিকে। হয়ে যাওয়া তরকারি নামানোর কিছুক্ষণ আগে আগে তাতে টেলে নেওয়া বড়ি যোগ করতে হয়, যাতে সেগুলো আস্ত থাকে। অনেক হলো কথা। এবার ঝটপট রেঁধে ফেলুন ডালের বড়ি বা কুমড়ো বড়ির তরকারি। স্বাদের বদল হোক।

wXnKocv.jpg
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top