What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

নবাবের চেয়ে বেগম বড় - শেষ পর্ব (1 Viewer)

2JtQb21.jpg


ভগ্নহৃদয়ে বহু বেগম সাহিবা সব সহ্য করলেন। নিঃস্ব হয়ে গেলেও ভেঙে পড়েননি। ফয়জাবাদ তখনো তাঁর ঠিকানা এবং মাথা উঁচু করে থাকার স্থান। তিনি তখনো সেখানকার রানি। সময় ধৈর্যশীল, সাহসী নারীর পরীক্ষা নেয় বারবার। ১৭৯৭ সালে পুত্র নবাব আসাফ-উদ-দৌলা মৃত্যুবরণ করেন। নবাব আসাফ-উদ-দৌলার পালকপুত্র নবাবের আসনে আসীন হলেও ব্রিটিশদের কূটনৈতিক চালের সঙ্গে পেরে উঠতে পারেননি। চার মাস নবাবের দায়িত্ব পালন করার পর ইংরেজরা তাঁকে গ্রেপ্তার করে পাঠিয়ে দেয় কলকাতায়।

QNlWwa5.jpg


বহু বেগম সাহিবার তথা উম্মাত-উজ-জোহরা বানুর প্রতীকী ছবি। তিনি দেখতে প্রায় এ রকমই ছিলেন বলে জানিয়েছে বেগম কা মকবারা ট্রাস্ট।

এরপর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের আসনে বসায় নবাব শুজা-উদ-দৌলার আরেক বেগম খুর্দ মহলের পুত্র সাদাত আলী খানকে। বহু বেগম সাহিবার ক্ষমতা ও অর্থ তত দিনে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল, এই সতীনপুত্রকে তাঁর স্বামী নবাবের আসনে বসাতে চেয়েছিলেন কিন্তু বেগমের জেদের কারণে পারেননি। পুত্রের মৃত্যুর পর বহু বেগম সাহিবা সতেরো বছর বেঁচেছিলেন এবং সৎপুত্র নবাব সাদাত আলী খানের শাসনামলেও জীবিত ছিলেন।

নবাব সাদাত আলী খানের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র গাজীউদ্দীন হায়দার যখন অওধের নবাব হন, তারপর মৃত্যুবরণ করেন অওধ রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও প্রতিপত্তিশালী এই বেগম। অওধের এই বেগম মোট ছয়জন নবাবের শাসনামল দেখে যেতে পেরেছিলেন, যা অন্য কোনো বেগমের নসিব হয়নি। স্বামী নবাব শুজা-উদ-দৌলা ছিলেন স্বাধীন নবাব। কিন্তু অওধ রাজ্যে ইংরেজ প্রবেশ করে সে সময়ই। বেগমের চোখের সামনে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারত গ্রাস করা শুরু হয় এবং জীবদ্দশায় নবাবদের কোম্পানির হাতের পুতুল হয়ে রাজ্য চালাতে দেখে গেছেন তিনি।

KUTuhOU.jpg


বহু বেগম সাহিবার সমাধিসৌধে প্রবেশের তোরণ

ব্রিটিশ অফিসারদের সঙ্গে বেগমের কোনো বিরোধ ছিল না, বরং সদ্ভাব রেখে চলার চেষ্টা করেছিলেন। তবু লুট করা হয়েছিল তাঁর খাজনা, নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছিল এই রানিকে। বহু বেগম সাহিবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ফয়বাদের শানশওকত খতম হয়ে যায়। সাবেক অওধ রাজধানী ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়ে।

এখন তো পুরোনো দালানকোঠা কিছুই নেই। মোতিমহল নামে যে প্রাসাদে তিনি বাস করতেন, তার নামনিশানা কোথাও নেই। আশপাশে দু–একটা পলেস্তারা খসে যাওয়া দেয়াল বা ভাঙা বাড়ি দেখে একটুও আন্দাজ করার উপায় নেই কেমন ছিল উনিশ শতকের ঝকমকে, হিরে–জহরতের ফয়জাবাদ।

flEdsCa.jpg


তোরণ থেকে বহু বেগম সাহিবার সমাধিসৌধ

বেগমের মকবারার রাস্তা বেশ সরু। গাড়ি কোনোরকমে ঢোকে। রাস্তার মুখেই বিশাল তোরণ, গায়ের হলুদ রং চটে কালচে রং ধারণ করে পড়ে আছে। প্রায় তিনতলা উচ্চতার তোরণের দোতলায় বারান্দা আর তার গায়ে, থামে লতাপাতার কারুকাজ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।

BwYeEQQ.jpg


বহু বেগম সাহিবার সমাধিসৌধের একাংশ

তোরণ থেকে আরও প্রায় দুই শ মিটার এগোলে মকবারার সদর দরজা। দোতলা সমান কাঠের দরজা, মাথাটি গোলাকার এবং এর সঙ্গে জুড়ে যাওয়া তোরণ। কাঠে খোদাই করা সূক্ষ্ম পারস্য দেশীয় কারুকাজ। এই মকবারায় কোনো মোগল স্থাপত্যশৈলী স্থান পায়নি। পুরোটাজুড়েই বেগমের নিজের দেশের স্থাপত্যশিল্প। বেগমের প্রধান উপদেষ্টা দারাব আলী খান তখনকার আমলের তিন লাখ টাকা খরচ করেছিলেন মকবারা নির্মাণ করতে।

কিন্তু মকবারার সদর দরজা দেখি বন্ধ। এত দূর থেকে এসে বন্ধ দরজা দেখে চলে গেলে কীভাবে হবে! তোরণের সামনের মাঠে কয়েকজন নারী বসেছিলেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, মকবারা বন্ধ কেন। তাঁরা বললেন, প্রহরী গেছেন দুপুরের খানা খেতে। এসে পড়বেন এখনই। আমার মাথায় হাত। করোনার জন্য নাকি এখন দর্শনার্থী একেবারেই নেই। তার ওপর ভদ্রলোকের 'দোপ্যাহের কা খানা' যদি বিকেল অবধিও শেষ না হয়, তাহলে আমি লক্ষ্ণৌ ফিরব কখন?

1Y47Rrn.jpg


বহু বেগম সাহিবার সমাধিসৌধের বারান্দা, দেয়াল ও ছাদের কারুকাজ

আমার ট্যাক্সি ড্রাইভারও এদিক–সেদিন খোঁজ নিয়ে প্রহরী সাহেবের মুঠোফোন নম্বর জোগাড় করে কথা বললেন। মিনিট দশেকের মধ্যেই তিনি সাইকেল চেপে হাজির।

বিশাল স্বাস্থ্যের, চশমা চোখে, সে রকম বিশাল গোঁফওয়ালা, শার্ট–প্যান্ট পরিহিত একজন মানুষ, তবে পাহারা দিচ্ছেন এই বিশাল মকবারা!

সদর দরজার পকেট গেট খুলে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। গেটের ভেতরে অনেকখানি জায়গাজুড়ে বাগান আর মকবারার আকার দেখে আমার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। তাজমহলের পর এই মকবারাই কোনো বেগমের সবচেয়ে বিশালাকৃতির মকবারা বলে গণ্য করা হয়। যদিও মকবারাটি ইট–সুরকি দিয়ে তৈরি, তবু বিশালতায়, আভিজাত্যে, ঐশ্বর্যে নবাব শুজা-উদ-দৌলার মকবারাকে হার মানায়।

yBVHlkW.jpg


বহু বেগম সাহিবার সমাধিসৌধের ভেতরের ইমামবাড়া

লম্বা বাগান পেরিয়ে মকবারার মূল ভবনের সামনের দিকে ঢোকার জন্য কোনো গেট নেই। এক পাশে একটা ছোট দরজা গলে চোরা গলির মতো পেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলে দোতলায় মকবারার মূল অংশ। বিশাল খোলা বারান্দা গোল করে ঘিরে রেখেছে মকবারার ভেতরের ইমামবারা। নবাব বংশ শিয়া মতাবলম্বী। তাই অওধ নবাবদের হাওয়া গায়ে লাগানো মানেই কাছাকাছি ইমামবাড়া খুঁজে পাওয়া।

বেলি ফুল রঙের শুভ্র মকবারার মাঝখানে একটি গম্বুজ, চারপাশে চারটি মিনার। ভেতরে হালকা বাদামি রঙের দেয়ালজুড়ে লতাপাতা, ফুলের অসামান্য কারুকাজ, খোদাই করা। বারান্দার ছাদেও নকশা করেছে সাত আসমানের সব মাধুর্য মিশিয়ে, নীল আকাশ আর সাদা মেঘের সমন্বয়ে ফুল এঁকেছেন যেন স্বয়ং পরওয়ারদিগার।

আঙুরলতায় এঁকেবেঁকে স্বর্গের একেকটা নদী হয়ে গেছে নকশা। নকশায়, শিল্পীর হাতের জাদুতে এক মোহ জেগে ওঠে সে দালানের। কারণ, সেখানে একাকী, রূপকথার নয়, সত্য সত্যই এক রানি থাকেন, এক আমির দিল বেগম, যাঁর হাতে গড়ে উঠেছিল রাজ্য, বেজেছিল নাকারা রাজ্যের পথে পথে, যাঁর আঙুলের ইশারায় চালিত হতো লাখ লাখ সেপাই–বরকন্দাজ, পাইক–পেয়াদা, যার আদেশে ফয়জাবাদ ছিল দেশের সবচেয়ে আদরণীয় শহর। যিনি মুহিতের ঝরনা বইয়ে দিয়েছিলেন প্রিয়তম স্বামীর দুর্দিনে।

E9UpzsX.jpg


বহু বেগম সাহিবার সমাধিসৌধের বারান্দার দেয়ালের কারুকাজ

ইমামবাড়ায় ঢোকার প্রতিটি দরজার ওপরে জোড়া মাছের প্রতিকৃতি খোদাই করা। নবাব বংশ মাছকে শুভ প্রতীক বলে মনে করতেন। তাই অওধের সব স্থাপনায় জোড়া মাছের উপস্থিতি দৃশ্যমান।

সবই আছে কিন্তু বহু বেগম সাহিবার রওজা মোবারক কোথায়? কারণ, এ যাবৎকালের অওধ নবাবদের যত সমাধিসৌধ দেখেছি, সবার সমাধির প্রতীক সমাধি ওপরের তলায় থাকে আর নিচতলায় থাকে আসল সমাধি। যা ভেবেছি ঠিক তা–ই, বেগম ঘুমাচ্ছেন নিরালায়, মকবারার ঠিক কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁর সমাধি। দোতলার কারুকাজময় দেয়ালে মেঝের ওপর ছোট চারকোনা ঘুলঘুলির ফাঁক দিয়ে বেগমকে দেখা যায়। এ রকম ঘুলঘুলি সব কটি দেয়ালের নিচের অংশের মাঝামাঝিতে আছে আর সব কটি ঘুলঘুলি দিয়েই বেগমকে একই অ্যাঙ্গেলে দেখা যায়।

স্থপতিকে কুর্নিশ জানিয়ে মকবারার প্রহরী ইদরিস সাহেবের কাছে আবদার করলাম বেগমকে কাছ থেকে দেখার জন্য। একটু আহ্লাদ করে আঙ্কেলও ডাকলাম। কিন্তু কাজ হলো না। নিচের ঘরের চাবি নাকি ট্রাস্টের প্রধানের হাতে। তাঁর কাছে নেই। বেগম সাহিবাকে কাছ থেকে দেখতে পেলাম না বলে তাঁর সঙ্গে কিছু আলাপ আধুরা রয়ে গেল। মার্বেল পাথরের মেঝে আর তার ওপর কবর, কবর একটা সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। কবরকে চাঁদোয়া করে রেখেছে এক টুকরা কাপড়ের ছাউনি। ঘুলঘুলির ফোকর দিয়ে এটুকুই দেখা যায়। কক্ষটি যাতে অন্ধকার না থাকে, সে জন্য বাতি জ্বালানো আছে। এরপর ইদরিস আঙ্কেল আমাকে নিয়ে গেলেন ইমামবাড়ার ভেতরে। সাধারণত মুহররম, ঈদ-এ-মিলাদুন্নবীতে এখানে দোয়া খায়ের করা হয়।

celvLpc.jpg


বহু বেগম সাহিবার সমাধিসৌধের ভেতরের ইমামবাড়ার জানালা

বহু বেগম সাহিবার কবরের ঠিক ওপরের তলায় একই জায়গায় প্রতীকস্বরূপ আরেকটি কবর করা আছে, কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। শিয়া মতাবলম্বী ছিলেন অওধের নবাব বংশ। তাই শিয়া রীতি–রেওয়াজ অনুসরণ করে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হয় আজও।

সবুজ কার্পেট দিয়ে ইমামবাড়ার ভেতরের মেঝে ঢাকা আছে আর এক কোণে একটা ছোট দোলনা চোখে পড়ল। বুঝলাম না দোলনা কেন। আবার মুশকিল আসান করলেন ইদরিস আঙ্কেল। দোলনাটা নাকি ইমাম হাসান, হোসেনের শিশুকালের প্রতীক। আমার জানা নেই তাঁরা দোলনায় দোল খেতেন কি না। তবে ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে প্রতীকস্বরূপ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্য রাখা দোলনা অনেক দেখেছি।

ভারতে নানান ধর্ম পাশাপাশি চলে নিজেদের সংস্কৃতির প্রভাবে আর সরল বিশ্বাসে। ইমামবাড়ার দেয়াল ও ছাদের বাইরের দেয়াল, ছাদের চেয়ে বেশি জমকালো কাজ। গম্বুজটি বহু বেগম সাহিবার কবরের ঠিক ওপরে। বেগম সাহিবা কি শুয়ে শুয়ে কারুকাজের মায়া ছড়ান, নাকি তিনি সব আহ্বান পেছনে ফেলে নিশ্চিন্তে ঘুমের রাজ্যে বিচরণ করেন! অথবা এমনও হতে পারে তিনি নীরবে হারিয়ে যাওয়া অওধ রাজ্যের সব গল্প কানে কানে ফিসফিস করে বলে যান।

বেগম সাহিবার মকবারার বারান্দা থেকে যত দূর চোখ যায়, সবুজ গাছপালা ছেয়ে আছে পুরো এলাকা। ফলে এক শান্ত পরিবেশ। নিশ্চুপ প্রকৃতি বেগমের নামে ফাতেহা পাঠ করে, আকুল বাতাস ঘুরেফিরে বেগমের রুহের মাগফিরাত করে দোয়া করে, সেই দোয়া আকাশের লালিমা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সন্ধ্যাবেলায়। সন্ধ্যা থেকে সুবহে সাদিক অবধি জিকির করে যায় বাগানের সব ফুলকলি। বেগমের গুনগান ছাড়া ফয়জাবাদের শৌর্যগাথা অসমাপ্ত। ফয়জাবাদ তাই বেগমের একক সাম্রাজ্য হয়ে এখনো সুবাস বিলায়।
 
I think this is one of the masterpiece series in NIRJONMELA. Only I suggest change of title. It doesn't go with the content.
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top