What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

নবাবের চেয়ে বেগম বড় - পর্ব–২ (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
0EpOukP.jpg


গুলাববাড়ির সদর দরজা বিশালাকৃতির, ভেতরের মকবারা বেশ বড় এলাকাজুড়ে দেয়াল দিয়ে ঘেরা। সাদা থেকে রং ক্ষয়ে যাওয়া চুনকাম করা সদর দরজায় পারস্য স্থাপত্যশৈলীর কারুকাজ। তোরণে ফুল, লতাপাতা খোদাই করা, ঝুলবারান্দায় বাতাস এলোমেলো পাখা মেলে গড়িয়ে এক বারান্দা থেকে আরেক বারান্দায় ছুটে বেড়াচ্ছে। মোগল স্থাপত্যশৈলীর যদি কোনো একটি অংশ আমাকে সারা দিন ধরে দেখতে বলা হয়, তবে তা হলো ঝুলবারান্দা আর এর মাধুর্য লুকিয়ে থাকা রহস্যময় কারুকাজের প্রতিটি খাঁজ।

2RiE3Sw.jpg


নবাব শুজা-উদ-দৌলার সমাধি বা গুলাববাড়ি

তোরণে কাঠের দরজা এখনো ক্ষয় না করে যত্নে ধরে রেখেছে খোদাই করা নকশা।

নবাব সুজা–উদদৌলার বাগানবাড়ি ভেবেছিলাম হবে একেকটি ফুলের বিছানা। গোলাপ ফুলে বাগান থাকবে আচ্ছাদিত। কিন্তু ভেতরের আঙিনায় ঘাসের গালিচা, পাতাবাহার আর কয়েকটা ছোট–বড় পামগাছ ছাড়া আর কিছুই দেখলাম না।

মকবারাটি আকারে ছোট। আঙিনার সোজা পথ ধরে চলে যাওয়া যায় একদম ভবনের হৃদয়ে। কোনো লুকোচুরি নেই। কিন্তু এ হৃদয় যে তালাবদ্ধ! সামনে এসে অন্দরে না গিয়ে ফিরে আসা যায় না। নবাব সুজা-উদদৌলার খোঁজ করেছিলাম গত বছর যখন লক্ষ্ণৌ এসেছিলাম তখনো। কিন্তু সময়ের অভাবে ফয়জাবাদের আতিথ্য গ্রহণ করতে পারিনি। এখন এই করোনাকালে আশপাশে দর্শনার্থীদের ভিড় যেমন নেই, তেমনি নেই সমাধির কোনো কর্মচারী।

pv5r4Qt.jpg


নবাব শুজা-উদ-দৌলার সময়কার রূপার টাকা ছবি: সংগ্রহ

এককালে সমাধির চারপাশে সরু চ্যানেলের মতো জলাধার ছিল, এখন শুধু সামনের দিকটায় আছে। বলা হয়ে থাকে, গুলাববাড়ি থেকে একটি সুড়ঙ্গ চলে গেছে সোজা লক্ষ্ণৌ অবধি। অবশ্য এর হদিস এখন কেউ জানে না।

সমাধি ভবনের ভেতরের লোহার খাঁজকাটা গেট তালাবদ্ধ। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে হাঁক দিলাম, 'কেউ আছেন? গেট খুলে দিন।'

একটু উঁকিঝুঁকি মারতে দেখি ভেতরে বাঁ পাশে একজন মানুষ শুয়ে ঘুমাচ্ছেন। আমি আরও জোরে হাঁক মারলাম, 'ওহে প্রধানমন্ত্রীর পাহারাদার, খোলো খোলো দ্বার।'

ছন্দে মেঘবৃষ্টি নামে আর এ তো এক পাহারাদার মাত্র। তিনি কুম্ভকর্ণ হতেই পারেন না। এসে গেট খুলে দিলেন।

ভেতরে কাঠের কারুকাজের মনোভাব বুঝতে বুঝতে আরও বুঝলাম যে নবাব শুজা-উদদৌলা এই গোলাপ আর চন্দনকাঠের কদর জানতেন খুব। তাই তাঁর এবং তাঁর মাতা বেগম সদর-উন-নিসার পাশাপাশি সমাধির চারপাশে কাঠের সুরম্য দেয়াল করে দেওয়া আছে। সে দেয়ালের কাঠের গায়ে ফুল লতাপাতার সূক্ষ্ম কারুকাজ খোদাই করা। কাঠের ফ্রেমের মধ্যে রঙিন কাচের পর্দা একটা মানুষের চিরস্থায়ী ঘুমের স্বপ্নকে রং দিয়ে এঁকে গেছে।

HDvhhzA.jpg


নবাব শুজা-উদ-দৌলার সমাধি ঘিরে কাঠের কারুকাজ

মাথার ওপর ঝাড়বাতির ঝাড় নুয়ে নবাবকে কুর্নিশ করে চলেছে। নবাবের কবরের সামনে নবাব সুজা-উদদৌলা ও তাঁর পিতা নবাব সফদার জংয়ের ছবি পাশাপাশি রাখা। মাঝখানে শূন্য ফুলদানি, আগরবাতিদানি, মোমবাতিদানি একা একা যেন নিজের সঙ্গে কথা বলছে। অওধ রাজ্যের শৌখিন নবাবের সমাধি যেন কেঁদে কেঁদে মারসিয়া গায়, মাতম করে।

সমাধিসৌধের সেই স্লিপিং বিউটি প্রহরী আমাকে নবাবের ইতিহাস বলা শুরু করতেই থামিয়ে দিলাম। বললাম, 'ফুলদানি, আগরবাতিদানি, মোমবাতিদানি খালি কেন?'
জানালেন, 'এখন করোনাকালে কেউ আসে না, এলেও বাগানে ঘুরেফিরে চলে যান। সমাধিতে কেউ আলো জ্বালানোর নাম করেন না।' তাই জ্বলেনি আলো, বয়ে যায়নি গোলাপের, আগরবাতির খুশবু। অথচ কত শখ করে নবাব এ বাগানের নাম রেখেছিলেন গুলাববাগ বা গোলাপবাগান।

নবাবের বংশধরদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যাঁরা, তাঁরা রয়েছেন এখন কলকাতায়। এখানে তেমন আসা হয় না তাঁদের।

নবাবের সমাধির চারপাশ ঘুরে দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। সমাধির মাথার তাজ, একটি মাত্র গম্বুজ। দোতলায় শুধু বারান্দায় ঘেরা চারদিকে বারোটা জানালা শহরের সঙ্গে আলো–বাতাস আদান-প্রদান আর একাকিত্ব যাপন করছে।

Uqmql5q.jpg


নবাব শুজা-উদ-দৌলার সমাধিপ্রাঙ্গণের মসজিদ

সমাধিসৌধের সব কটি বারান্দায় পারস্য স্থাপত্যশৈলীর ছাপ। নবাবপুত্র আসাফ-উদদৌলা লক্ষ্ণৌয়ে যে ইমামবাড়া নির্মাণ করেছেন, তার কিছু অংশ এই নকশা থেকে ধার নেওয়া।

নবাবের মকবারা প্রাঙ্গণের এক কোনায় মসজিদ তিন গম্বুজ আর দুটি মিনার নিয়ে এখনো কথা বলে যায় নবাবের সঙ্গে। রং চটে যাওয়া, শেওলা ধরা মসজিদ গল্প করে সেই অমূল্য দিনগুলোর, যখন উজির-এ-আলম ঘোড়ায় চড়ে শহর পরিদর্শনে বের হতেন আর কোথাও কোনো অসুন্দর বাড়ি বা ভাঙা রাস্তা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙে সুন্দর করে নির্মাণ করার নির্দেশ দিতেন।

নবাবের মকবারা থেকে চললাম নবাবের প্রধান মহিষী বহু বেগম সাহিবার মকবারার দিকে। পেছনে পড়ে রইল নবাবের ৪৩ বছরের জীবনের পুরোনো ডায়েরির পাতা, ৯ বছর শাসনামলের চড়াই-উতরাইয়ের আফসানা।

BdfFUZV.jpg


বহু বেগম সাহিবার সমাধিসৌধ বা মাকবারা

বহু বেগম সাহিবা ছিলেন অওধ রাজ্যের নবাবপত্নীদের মধ্যে সবচেয়ে ধনাঢ্য বেগম। জন্ম পারস্যে হলেও তিনি মোগল রাজপরিবারে বড় হয়েছেন। তাই তাঁর আচার-ব্যবহার ছিল মোগল রাজনন্দিনীদের মতোই। বলা হয়ে থাকে, ১৭৪৩ সালে যখন সুজা-উদদৌলা এবং উম্মাত-উজ-জোহরা বানুর শাদি হয়, তখন ৪৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। মোগল প্রাসাদে লালিতপালিত হওয়া বহু বেগম সাহিবা ফয়জাবাদে নিজের হারেমকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছিলেন। নবাব বেশির ভাগ সময় থাকতেন রাজ্যের বাইরে। তাই রাজ্যের চালিকাশক্তি একপর্যায়ে তাঁর হাতেই চলে যায়।

১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে হেরে গিয়ে নবাব যখন আত্মগোপন করে আছেন আর ইংরেজরাও ৫০ লাখ টাকা না হলে সন্ধি করবে না বলে সোজা জানিয়ে দিয়েছে, তখন আত্মীয়–বন্ধুদের কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাততে হয়েছিল নবাবকে। এ সময় বহু বেগম সাহিবা নিজের সব গয়না, নিজের জমি ইত্যাদিসহ সর্বস্ব দিয়ে দিয়েছিলেন। নবাবের বিপদে যদি তাঁর সম্পত্তি কাজে না–ই আসে, তাহলে সেসবের আর মূল্য কী! এরপর থেকে নবাব বহু বেগমকে আরও কদর করতে থাকেন। প্রতিদিন দুবেলা খানা খেতেন বেগমের সঙ্গে এবং বেগমের প্রাসাদে রাত কাটাতেন।

8wzWvKq.jpg


বহু বেগম সাহিবার সমাধিসৌধে প্রবেশের তোরনের গায়ের কারুকাজ

অন্য বেগমের কাছে নবাব যেতেন লুকিয়ে। বহু বেগম সাহিবা জানতে পারলে ক্ষুব্ধ হতেন এবং নবাবকে তিরস্কার করতেন। নবাবের কাছে অতিরিক্ত টাকা থাকলে, পুরস্কার পেলে তা বহু বেগম সাহিবাকে দিতেন। বহু জায়গির নবাব এই বেগমের নামে লিখে দিয়েছিলেন। নবাবের অন্য বেগমেরা বহু বেগম সাহিবার আজ্ঞাবহ থাকতেন।

নবাবের অকস্মাৎ মৃত্যুর পর পুত্র আসাফ-উদদৌলার হাতে পড়ে রাজ্যশাসনের ভার। সরল, ভোগবিলাসে মত্ত নয়া নবাব টাকাপয়সার জন্য নিজ আম্মা হুজুরের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিলেন। বহু বেগম সাহিবার ছিল এই একটিমাত্র পুত্র। তাই একটু বেশি আদরে আর রাজ্যশাসনের রীতিনীতি শেখানো হয়নি। এদিকে ইংরেজরা থাবা তুলে বসে আছে কীভাবে রাজ্য হাত করা যায়। নবাব আসাফ-উদদৌলা আম্মা হুজুরকে পরোয়া না করে একা একা রাজধানী বসালেন লক্ষ্ণৌয়ে। আম্মা হুজুর পড়ে রইলেন ফয়জাবাদে। নতুন নবাব ফয়জাবাদ আসতেন যদি টাকার প্রয়োজন হতো বা লোক পাঠিয়ে জোর করে লাখ লাখ টাকা আদায় করতেন আম্মার কাছ থেকে। নিজে ডুবে থাকতেন শরাবে আর রাজ্য চালাত তাঁর প্রধানমন্ত্রী, চেলাচামুণ্ডারা।

MM13vgT.jpg


বহু বেগম সাহিবার সমাধিসৌধের বারান্দার দেওয়াল ও ছাদের কারুকাজ

এদিকে নবাব সোজা-উদদৌলার অন্য বিধবা বেগম ও সন্তানদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বহু বেগম সাহিবা। এত প্রতাপশালী, বিত্তবান, বিচক্ষণ হওয়া সত্ত্বেও পুত্র আসাফ-উদদৌলা তাকে যথাযথ সম্মান দিতেন না। এ নিয়ে রাজমাতার কষ্টের সীমা ছিল না। এই সুযোগ কাজে লাগাল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস।

আসাফ-উদদৌলাকে অশেষ ভোগবিলাসে ডুবে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে রাজ্যের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে চাইল, এ জন্য শুধু নবাবকে এর নজরানা হিসেবে কয়েক লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। নবাবের হয়ে রাজ্য চালাবে কোম্পানি, সামরিক সাহায্য প্রদান করবে। প্রথম থেকেই নবাবের রাজ্যশাসনের আগ্রহ ছিল না। বহু বেগম সাহিবার চাপে পড়ে তাঁর পুত্রকে বাধ্য হয়ে নবাব সোজা-উদদৌলা–পরবর্তী নবাব হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।

হেস্টিংস তখন নজর দিলেন ফয়জাবাদে সোজা-উদদৌলার বিধবাদের ওপর। আজব অভিযোগ আনলেন, বেগমেরা নাকি অন্যান্য রাজ্যের রাজার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন কোম্পানিকে ঘায়েল করার জন্য। বেগমদের গ্রেপ্তার করা হলো, বিশ্বস্ত কর্মচারীদের ওপর চলল অত্যাচার। এভাবেই কোম্পানি সে সময় ১০ লাখ পাউন্ড আদায় করেছিল বহু বেগম সাহিবার কাছ থেকে। এসব চলল নবাব আসাফ-উদদ্দৌলার অমত সত্ত্বেও।

১৭৮১ সালে নবাব আসাফ-উদদৌলা কোম্পানিকে ফৌজ বাবদ নজরানা দিতেন বছরে ৫০ লাখ টাকা।

* লেখক: ফাতিমা জাহান
 

Users who are viewing this thread

Back
Top