What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

নবাবের চেয়ে বেগম বড় - পর্ব–১ (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
lmQxcmm.jpg


নবাবের চেয়ে বেগম বড়! এমন তাজ্জব কি বাত শোনা যায়নি ভূ–ভারতে। হ্যাঁ, নবাবের চেয়ে বেগম এ শহরে আসলেই বড়; আকারে, জৌলুশে, কারুকাজে, ঐশ্বর্যে। মানে বেগমের মকবারা বা সমাধিসৌধ। বেগমের মকবারার সামনে নবাবের মকবারা যেন রাজাধিরাজের সামনে মাথা নিচু করে থাকা এক প্রজা।

6hWuKFD.jpg


নবাব বুরহান-উল-মুলক সাদাত আলী খান, ছবি: সংগ্রহ

এমন আশ্চর্য কাণ্ড দেখতে গেলে আমাদের ঢাকার মানচিত্র থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যেতে হবে ভারতে। ভারত সীমান্ত থেকে আরেকটু গড়াগড়ি খেতে খেতে যদি নবাবি মেজাজ আনতেই হয়, তাহলে উত্তর প্রদেশের প্রাচীন সমৃদ্ধিশালী নগর ফয়জাবাদের দিকে মুখ ঘোরাতে হবে। অওধ রাজ্যের প্রথম নবাব বুরহান-উল-মুলক সাদাত আলী খান এখানেই আস্তানা গেড়েছিলেন। এর পরের নবাব হলেন বুরহান-উল-মুলকের জামাতা সফদার জং। তিনি নিজের রাজধানী ফয়জাবাদকেই মানতেন। অওধ রাজ্যের তৃতীয় নবাব সফদার জংয়ের পুত্র শুজা উদদৌলা।

মাতামহ ও পিতার জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছিল মোগল সম্রাটদের অধীনে কাজ করে অন্যান্য রাজ্য সামলাতে। বেশির ভাগ সময়ই তাঁদের কাটত লড়াইয়ের ময়দানে বা রাজ্য পরিচালনার কাজে বিভিন্ন জায়গিরে। তাই বাস করার জন্য পাকাপাকি কোনো ব্যবস্থা অওধের প্রথম দুই নবাবের ছিল না। তাঁরা অস্থায়ী ছাপরা ঘর তুলে সেখানে বসবাস করতেন। তাঁদের বেগমরাও সেভাবেই থাকতেন।

xtWaI3v.jpg


নবাব শুজা উদদৌলা, ছবি: সংগ্রহ

অওধ রাজ্যে পারস্যের নিশাপুর থেকে আসা নবাব বুরহান-উল-মুলক সাদাত আলী খানের বংশধরেরা পাকাপোক্তভাবে ফয়জাবাদে বসবাস করা শুরু করেছিলেন তৃতীয় নবাব শুজা উদদৌলার সময় থেকে। তবে নবাব হিসেবে একেবারেই যে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়নি, তা নয়। তাঁর সময়েই প্রথম অওধের কোনো নবাবের ইংরেজদের সঙ্গে প্রথম সংঘর্ষ ঘটে।

বক্সারের যুদ্ধে বাংলার নবাব মীর কাসিমকে সাহায্য করতে গিয়েছিলেন মোগল সম্রাট শাহ আলম ও অওধপতি। শুজা উদদৌলার দল যুদ্ধে হেরে গিয়ে ইংরেজদের ৫০ লাখ টাকা আর নিজেদের কয়েকটি এলাকা হস্তান্তর করে সন্ধি চুক্তি করেন। সেই সঙ্গে অওধের ওপর খবরদারি প্রথম শুরু হয় ইংরেজদের। অওধের স্বাধীনতার সূর্য ধীরে ধীরে অস্তমিত হওয়ার প্রথম প্রহর শুরু হলো তখনই। ইংরেজ পেল অওধে অবাধে বাণিজ্য করার সুযোগ এবং সেনাবাহিনীর কার্যকলাপে নাক গলানোর অধিকার।

প্রায় ৭ ফুট উচ্চতার, সুদর্শন নবাব ফয়জাবাদ ফিরে এসে নিজ রাজধানীকে ঢেলে সাজালেন। পরিপূর্ণ নগরীর রূপ দান করলেন, নতুন নতুন মহল নির্মাণ করলেন, সেনাবাহিনীতে নতুন লোক নিলেন, অশ্বারোহী বাহিনী গড়লেন, দুর্গ তৈরি হলো। মানে সে এক এলাহি আয়োজন।

ফয়জাবাদে রাজধানী হয়েছে শুনে রাজ্যের সব আলেম, কাবিল, ধনী, গুণবান লোকজন সেদিকে আসতে শুরু করলেন। একটি অনন্যসাধারণ জনপদ গড়ে উঠল ফয়জাবাদ। আর দিল্লির অবস্থা এমন হলো যে সেখানকার শিল্পীদের মুখ ঘুরে গেল ফয়জাবাদের দিকে। কিছুদিনের মধ্যেই ফয়জাবাদ হয়ে উঠল এক সুখী, সম্পন্ন, রুচিশীল, সাংস্কৃতিক নগরী।

hSbNu8A.jpg


লালবাগ গেট, ফাইজাবাদ, ১৮০১, শিল্পী থমাস এবং উইলিয়াম ড্যানিয়েল, ছবি: উইকিপিডিয়া

র শহরকে সুসজ্জিত করে তোলার খুব শখ ছিল, সঙ্গে খেয়াল ছিল প্রজাদের উন্নতি বিধানের। পাকা ও চওড়া রাস্তাঘাট ইতিমধ্যেই নির্মাণ করা হয়ে গেছে। জায়গায় জায়গায় বাগান আর ফুলে ডুবে থাকা শহর। খাস শহরের ভেতরে তিনটা বাগান ছিল—আঙ্গুরীবাগ, মোতিবাগ ও লালবাগ। সন্ধ্যায় বসত নৃত্যগীতের আসর। সবচেয়ে নামকরা শিল্পী আর বাইজিদের আনা হতো আসরকে আরও রংদার, খুশবুদার করার জন্য।

শহরের আমির, রইসগন এই বাগিচায় এসে সময় কাটাতে চাইতেন। এমনকি বাইরে থেকে নবাব, শাহজাদারা এই শহরের সুনাম শুনে জীবনে অন্তত একবার এখানকার সৌরভ গায়ে মাখার ইরাদা করতেন।

ফয়জাবাদের চওক বা বাজার এলাকা এতই জমজমাট থাকত যে সেখান থেকে বিনা বাধায় হেঁটে যাওয়া সম্ভব হতো না। বাজারে স্তূপ করা নানান দেশের দামি দামি, উচ্চ রুচিসম্পন্ন, শৌখিন জিনিস, দাম যা–ই হোক না কেন, নিমেষে তা বিক্রি হয়ে যেত। ইরান, চীন, বিলেত, ফ্রান্স থেকে ব্যবসায়ীরা লাভের আশায় ফয়জাবাদে এসে ভিড় করত। যে জিনিসই আনা হতো, তাই বিক্রি হয়ে যেত।

দিল্লির সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি থেকে শুরু করে চিকিৎসক, গায়ক, নৃত্যশিল্পী, অভিজাত নর–নারী সবাই অওধ রাজ্যে কর্মরত। সবাইকে প্রচুর বেতন দেওয়ার ক্ষমতা নবাবের ছিল, সবাই আমির, সবার বটুয়াভর্তি আশরফি। এ যেন আরেক দিল্লির হুবহু ছবি।

যে রকম জাঁকজমকের সঙ্গে নবাব শুজা উদদৌলা জীবনযাপন করতেন সে রকম আর কোনো রাজ্যের রাজাকে দেখা যায়নি।

দিনে মাত্র ছয়টি পরোটা খেতেন নবাব। আর এই ছয়টি পরোটা ভাজতে লাগত ৩০ সের ঘি। ৫ সের ঘি দিয়ে একটি পরোটা ভাজা হতো, আবার নতুন ৫ সের ঘিয়ে আরেকটি। একবার ব্যবহারের পর সেই ঘি ফেলে দেওয়া হতো। অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর কথা আর নাই–বা বলি।

অন্য রাজ্যের জনসাধারণও এমন বেপরোয়া অর্থ ব্যয় করার সাহস পেত না যে রকম অওধবাসী করতেন। শুধু শানশওকতে নয়, ফয়জাবাদ শিক্ষাদীক্ষার দিক দিয়েও ছিল অগ্রগামী। তখন সারা ভারতবর্ষ থেকে ছাত্ররা আসত শিক্ষা গ্রহণ করতে।

V7fTcca.jpg


নবাব শুজা উদদৌলার মকবারা বা সমাধিসৌধে লেখক, ছবি: সংগৃহীত

নবাব শুজা উদদৌলার ৯ বছর শাসনের ফসল এই ভরভরান্ত ফয়জাবাদ শহর।

মোগল সম্রাটের প্রধানমন্ত্রী নবাব শুজা উদদৌলা সারা বছরে মাত্র চার মাস ফয়জাবাদে থাকতেন। বাকি সময় কাটত সরকারি কাজে দৌড়ঝাঁপে, ভ্রমণে ও শিকারে। নবাবের প্রধান বেগম ছিলেন বেগম উম্মাত-উজ-জোহরা বানু ওরফে বহু বেগম সাহিবা। পারস্য দেশ থেকে এসেছিলেন তিনি। নবাবের অন্যান্য বেগম, মুতাহ বিবি থাকলেও নবাবের অনুপস্থিতিতে ফয়জাবাদ তথা অওধ রাজ্যশাসন চলত তাঁর ইশারায়। শুধু অওধই নয় নবাব শুজা উদদৌলা ছিলেন আজমির ও কাশ্মীর প্রধান। ফয়জাবাদ, খলিলাবাদ, গোরাখপুর, বেহরাইচ, লক্ষ্ণৌ নিয়ে ছিল অওধের বিশাল রাজত্ব। এত ক্ষমতা, এহমিয়াত থাকা সত্ত্বেও নবাব ছিলেন বহু বেগম সাহিবার আজ্ঞাবহ। কেন সে গল্প একটু পরে বলছি।

অওধের রাজধানীকে আধুনিক রূপ দেওয়া শৌখিন, রুচিশীল, সাহসী বীর যোদ্ধা নবাব ইন্তেকাল করেন ১৭৭৫ সালে, মাত্র ৪৩ বছর বয়সে নিজ হাতে গড়া শহর ফয়জাবাদে। তাঁকে সমাহিত করা হয় গুলাব বাড়ি নামক একটি বাগানবাড়িতে, যা তিনি আগে থেকেই নির্মাণ করে রেখেছিলেন।

১৭৬৪ সালের যে ফয়জাবাদের কথা বলেছিলাম, যার ছবি মনে আঁকা, এর সঙ্গে সে সময়কার কয়েকটি চিত্রকর্মও দেখেছি। লক্ষ্ণৌ থেকে ভোরে রওনা দিলাম ফয়জাবাদের উদ্দেশ্যে। পথ প্রায় দেড় শ কিলোমিটার। নবাবের আমলে ঘোড়া বা গরুর গাড়ি করে যেতে হলে দু–তিন দিন অনায়াসে লেগে যেত। কিন্তু ট্যাক্সি করে হাইওয়ে এনএইচ ২৭ ধরে, চারপাশের কোথাও ফসল তুলে নেওয়া খালি মাঠ বা কোথাও মফস্বল শহরের অস্থায়ী চা–বিস্কুটের দোকান আর সাদা ধুতি-কুর্তা পরে সাইকেল আরোহীকে পেছনে ফেলে অন্যান্য গাড়ি, ট্রাক, বাসের সঙ্গে পাল্লা দিতে দিতে তিন ঘণ্টায় পাড়ি দিলাম পথ।

ফয়জাবাদ তো আর আড়াই শ বছর আগের চেহারায় নেই, পাল্টেছে। ছোটখাটো মফস্বল শহর এখন, নেই সেই রাজকীয় সমারোহ আর জমজমাট নগর৷ ঢোল, নাকাড়ার বদলে বাইক, গাড়ির হর্নের প্যাঁ–পুঁ আওয়াজ আমাকে সাদরে সংবর্ধনা প্রদান করল এবং গুলাববাড়ি খুঁজে পাওয়া খুব সহজ হলেও সরু রাস্তার ট্রাফিক জ্যাম গার্ড অব অনার দিল। আমি এতক্ষণে অধৈর্য হয়ে উঠেছি। এতক্ষণ বন্ধনহীন ঘুড়ির মতো উড়ে এসেছি লক্ষ্ণৌ থেকে আর এখন গুলাববাড়ি মাত্র এক কিলোমিটার দূরে কিন্তু লম্বা জ্যাম।

QAnU27Y.jpg


ফাইজাবাদ চক, ছবি: উইকিপিডিয়া

রাস্তার দুই ধারে মনিহারি দোকান, ছোট ছোট একতলা–দোতলা বাড়ি আর ছোট ছোট মন্দির। শহরের মাঝখানে চওক। চওকে দেখা মিলল শহরের পুরোনো তোরণের। তোরণের মাথায় একটা ছোট গাছ গজিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে কথা কইছে। প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত তোরণ এখন। পলেস্তারা খসে ভেতরের ইট–সুরকি দেখা যাচ্ছে।

অল্প এগোলে গুলাববাড়ি। নবাব শুজা উদদৌলার স্থাপনা বলতে এই একটি ভবন এখন টিকে আছে। বাকি সব দখল হয়ে ভেঙে নতুন ভবন করা হয়েছে। কেই–বা মনে রেখেছে অওধপতি, মোগল সাম্রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top