What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected ডাকাত পরিবারে বিয়ে - ১ম পর্ব (1 Viewer)

p7PmKCC.jpg


আমার ধারণা আমার স্ত্রী ডাকাত পরিবারের মেয়ে। শুধু ঘটকের প্রশংসা শুনে হুট করে এভাবে বিয়ে করাটা একদম ঠিক হয়নি। বিয়ের আগে মেয়ের পরিবার সম্পর্কে ভালো করে খোঁজখবর নেওয়া উচিত ছিল। বিষয়টা প্রথম টের পেলাম বিয়ের গেটের ফিতা কাটতে গিয়ে। ফিতা কাটার জন্য কাঁচি না দিয়ে তারা আমাকে চাপাতি দিয়েছে। চাপাতি মানে চাপাতি, কসাইরা যা দিয়ে মাংস প্রসেস করে।

শ্যালক গোত্রের কেউ একজন আমার হাতে একটি বড় চাপাতি দিয়ে বলল,
-দুলাভাই, আমি ফিতার নিচে একটা কাঠ ধরছি, আপনি ফিতায় চাপাতি দিয়ে জোরে একটা কোপ দেন।

iCHFkBa.jpg


বিয়ে দুজন ব্যক্তিকে পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধ করে,অলংকরণ: মাসুক হেলাল

দুনিয়ার কেউ চাপাতি দিয়ে বিয়ের গেটের ফিতা কেটেছে বলে আমি কখনো শুনিনি। অথচ আমাকে তাই করতে হলো। বিয়ে শেষে বিদায় নিয়ে স্ত্রীকেসহ গাড়িতে উঠতে যাব, এ সময় আমার নতুন বউ তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল। মেয়ের কান্না দেখে মেয়ের মামা বলল,
-আমাদের মেয়ে আজ যাবে না। আপনারা সবাই চলে যান। আগামী পরশু দিন বউভাতের অনুষ্ঠানে আমরা মেয়েকে নিয়ে আসব।

মেয়ের মামার বিশাল দেহ, ডাকাতের মতো চেহারা ও গোঁফের অবস্থা দেখে বরপক্ষের কারও আর না বলার সাহস হলো না। আমি মিনমিন করে আমার বাবাকে বললাম,
-আব্বা, অবস্থা বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না। চলেন, আমরা চুপচাপ চলে যাই।
আমি নিচু স্বরে বললেও মেয়ের মামা আমার কথা ঠিকই শুনতে পেলেন। আমার কথা শেষ না হতেই তিনি গর্জন করে উঠলেন,
-এই ছেলে, তুমি কোথায় যাও? তোমাকে তো যেতে বলিনি?

বিয়েতে বিদায় বেলায় সাধারণত মেয়েরা কাঁদে। আমার বেলায় হয়েছে উল্টো। যখন আমার পরিবারের লোকজন আমাকে রেখে চলে যাচ্ছিলেন, তখন আমি আমার বাবাকে জড়িয়ে ধরে নীরবে চোখের পানি ফেলছিলাম। মনে হচ্ছিল চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলি, আব্বা, আপনি আমারে এই ডাকাত বাড়িতে একা রেখে যাবেন না।
কিন্তু বহু চেষ্টা করেও মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের করতে পারলাম না। বাবাকে জড়িয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলার সময় আড় চোখে দেখলাম মেয়ের মামা আমার দিকে তাকিয়ে তাঁর গোঁফ পাকাচ্ছেন আর মিটি মিটি হাসছেন।

ocg1k2Q.jpg


অবশেষে মেয়ের বাড়িতেই বাসর ব্যবস্থা হলো। অনেক রাতে মেয়ের ভাবি আমাকে বাসর ঘরে নিয়ে গেলেন। বাসর ঘরে মেয়ের কাছে আমাকে রেখে চলে যাওয়ার সময় ভাবি মেয়েকে বললেন,
-ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করার কোনো দরকার নেই। আমি ও তোমার ভাই দরজার বাইরে দা আর বঁটি নিয়ে বসা আছি। তুমি আওয়াজ দিলেই আমরা এসে কাজ ফাইনাল করে দেব।
ভাবির কথা শুনে আমার বুক শুকিয়ে গেল। ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে সিনেমার নারী ভিলেনের মতো একটা বাঁকা হাসি দিলেন। তারপর আবার আমার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
-আরেকটা কথা, তোমার বালিশের নিচে জিনিস রাখা আছে। প্রয়োজন হলে ব্যবহার করবে।

কনাকে দেখে আমার মুখটা আরও বেশি হাঁ হয়ে গেল। আমার মনে হলো কোথাও একটা ভুল হয়েছে। এত সুন্দর মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে কোনোভাবেই হতে পারে না।

এ কথা বলেই তিনি দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে চলে গেলেন। জানি না বালিশের নিচে কী রাখা আছে। কিন্তু ভাবির ইঙ্গিতপূর্ণ কথা শোনার চেয়ে ভাবির দা-বঁটির কথা শুনে আমার বাসর রাত করার শখ এমনিতেই মিটে গেছে। আমি মনে মনে বললাম, এই মেয়েকে স্পর্শ তো দূরের কথা, আমি মেয়ের দিকে তাকাতেও রাজি নই।

ঘরের মধ্যে কম পাওয়ারের মিষ্টি একটা আলো জ্বলছে। এই মিষ্টি আলোয় রুমে একটা রোমান্টিক পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভয় পাওয়ার কারণে এই কম পাওয়ারের আলোর বাসর ঘরটাকে এখন আমার টর্চার সেল বলে মনে হচ্ছে। খেয়াল করে দেখলাম, রুমে এক পাশের দেয়ালে ফ্রেমে বাঁধানো তিনটি ছবি ঝুলছে।

ছবিগুলোতে একটি মেয়ে মার্শাল আর্টের পোশাক পরে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তুলেছে। অন্ধকারে মেয়েটির চেহারা পরিষ্কার বোঝা না গেলেও ধারণা করলাম, ছবিগুলো আমার সদ্য বিবাহ করা বউয়ের। একটা ছবিতে দেখলাম, বউ ফ্লাইং কিক দিচ্ছে। ওই ছবি দেখে ভয়ে ঢোক গিলে মনে মনে বললাম, হে মাবুদ, তোমার মনে এই ছিল? দুনিয়ায় এত মেয়ে থাকতে শেষ পর্যন্ত এই ডাকাত পরিবারে আমায় আইনা ফেললা?

GYYEIOa.jpg


আমার বউ কনা খাটের মাঝখানে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। আর আমি খাটের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। বুঝতে পারছি না আমি কী করব। খেয়াল করলাম, আমার পা দুটো একটু একটু কাঁপছে। কপাল ঘামছে, গলা শুকিয়ে আসছে। বিয়ের আগে করোনার লকডাউনের কারণে আমি মেয়েকে সরাসরি দেখার সুযোগ পাইনি। তবে আমার দুলাভাই বলেছেন, মেয়ে খুবই সুন্দরী। তবে এ মুহূর্তে মেয়ে সুন্দর কি না, সেটা নিয়ে আমি মোটেও ভাবছি না। আমি ভাবছি এই ডাকাতদের হাত থেকে কীভাবে নিজের জীবনটা রক্ষা করব। এ সময় কনা ঘোমটার আড়াল থেকে মিষ্টিভাবে বলল,

-তুমি কি সারা রাত এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে? -অবশ্যই।

-মানে কী! এই সব কী বলছ?

-আমি খবর নিয়েছি, আজ পর্যন্ত কেউ সারা রাত বাসর রাতে দাঁড়িয়ে থাকার রেকর্ড করতে পারেনি। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সারা রাত দাঁড়িয়ে থেকে গিনেস বুকে নাম লেখাব।

বাসর ঘরে রেখে চলে যাওয়ার সময় ভাবি মেয়েকে বললেন, ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করার কোনো দরকার নেই। আমি ও তোমার ভাই দরজার বাইরে দা আর বঁটি নিয়ে বসা আছি। আবার আমার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, আরেকটা কথা, তোমার বালিশের নিচে জিনিস রাখা আছে। প্রয়োজন হলে ব্যবহার করবে।

-তুমি কি আমার সঙ্গে ফাজলামি করছ?

-জি না। কুংফু-কারাতে জানা বউয়ের সঙ্গে স্বামীরা কখনো ফাজলামি করে না।

-তার মানে তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছ?

-জি, আমি আপনাকে ভয় পাচ্ছি।

-বউকে ভয় পাওয়া ভালো। আচ্ছা, তুমি আমাকে আপনি করে বলছ কেন?

-কারণ, অনুমতি ছাড়া কাউকে তুমি বলা ঠিক না।

-কিন্তু আমি তো অনুমতি ছাড়াই তোমাকে তুমি করে বলছি।

-আপনার বিষয়টা আলাদা। আপনি তো কুংফু জানেন। আপনি চাইলে আমাকে তুই করেও বলতে পারেন। আমার কথা শুনে সে খিলখিল করে হেসে উঠল। এরপর বলল, -বোকার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে, এসে আমার ঘোমটাটা খুলে আমাকে দেখ।

-না না, দেখতে হবে না। আপনাকে আমার খুউব পছন্দ হয়েছে।

-দেখতে হবে না মানে! অবশ্যই দেখতে হবে। আর আমাকে তোমার পছন্দ হয়েছে মানে কী? তুমি তো আমাকে দেখনি। এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে আমার সামনে এসে বসো। আমি ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কনার সামনে বসলাম।

Lh9nt6s.jpg


তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে তার ঘোমটা খুললাম। কিন্তু তার মুখ দেখতে পেলাম না। কারণ, কনা মুখে মাস্ক পরে আছে। তবে যতটুকু বোঝা গেল মেয়ে যথেষ্ট রূপবতী। আমি কনার মুখের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম।

-কী ব্যাপার, হাঁ করে তাকিয়ে আছ কেন? একটু সরে বসো। আমি মাস্ক খুলব। আমি দূরে সরে বসতেই কনা মুখ থেকে মাস্ক সরিয়ে ফেলল।

-নাও এবার দেখ। দেখে বল আমাকে কেমন লাগছে।

কনাকে দেখে আমার মুখটা আরও বেশি হাঁ হয়ে গেল। আমার মনে হলো কোথাও একটা ভুল হয়েছে। এত সুন্দর মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে কোনোভাবেই হতে পারে না। -এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছ কেন? মুখটা বন্ধ করো। তারপর বলো, আমাকে কেমন লাগছে।

-সিমব্রা কুছি বেল্লো।

-মানে কী!

-এটা ইতালিয়ান ভাষা। মানে আপনাকে খুউব সুন্দর লাগছে।

-ইতালিয়ান ভাষায় না। সুন্দর লাগলে বাংলা ভাষায় বলো, মাশাআল্লাহ সুন্দর লাগছে। -মাশাআল্লাহ সুন্দর লাগছে।

-শোনো, আমি এখন বাথরুমে যাচ্ছি। কাপড় পাল্টে অজু করব। এরপর তুমি গিয়ে অজু করবে। তারপর আমরা দুজনে একসঙ্গে নফল নামাজ পড়ব। ঠিক আছে?

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। বুঝলাম মারার আগে এই মেয়ে আমাকে নামাজ পড়িয়ে নেবে। মৃত্যুর আগে নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে অতীত ভুলের জন্য তওবা করার সুযোগ দিচ্ছে সেটাও তো কম না। সে জন্য মনে মনে স্ত্রীকে ধন্যবাদ দিলাম।

-আর শোনো, ওই টেবিলের ওপর মাস্ক আছে। নিয়ে পরে ফেলো। করোনায় সব সময় মাস্ক পরে থাকবে। শোনো, তোমার জীবন এখন শুধু তোমার না, ওটা এখন আমার। অতএব সাবধানে থাকবে। এ কথা বলে কনা বাথরুমে ঢুকে গেল।

কনার শেষ লাইনটায় একটা ভালোবাসার ছোঁয়া পেলাম। মনে হলো মেয়েটা সম্ভবত খারাপ না। আসলে ডাকাতের ঘরেও ভালো মানুষ জন্ম নিতে পারে।

কনাকে দেখে আসলেই আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। ভেবেছিলাম বাসর রাত উদযাপন করব না। কিন্তু এখন একটু একটু ইচ্ছা হচ্ছে। ভাবলাম বালিশের নিচ থেকে জন্মনিরোধক নিয়ে নিজের পকেটে রাখি, যাতে প্রয়োজনের সময় খুঁজতে না হয়। ধীরে ধীরে বালিশ সরিয়ে তাকাতেই আমার সারা শরীরের উত্তেজনা এক নিমেষেই উধাও হয়ে গেল। কারণ, বালিশের নিচে কোনো জন্মনিরোধক নেই। তার পরিবর্তে সেখানে রাখা আছে একটি হাতুড়ি। রুমের বাইরে দা, বঁটি আর রুমের ভেতরে হাতুড়ি।

সম্ভবত আজ রাতই আমার শেষ রাত। বুঝলাম বউ মিষ্টি কথা বলে আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। আমি শিওর, এই মেয়ে একটু পর এই হাতুড়ি দিয়ে আমার মাথায় বাড়ি মারবে। তারপর ওর ভাই-ভাবি এসে বঁটি দিয়ে আমাকে জবাই করবে। ভয়ে আমার পুরো শরীর কাঁপতে লাগল। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে বালিশটি আবার যথাস্থানে রেখে দিলাম। তারপর ফিসফিস করে পড়তে লাগলাম,

'লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন। লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন...।' (চলবে...)

* ইমদাদ বাবু, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top