তিন বেলা ভাত আর বিরিয়ানি খেয়েও অনেকে থাকেন শুকনা। আর মাংস, তেল, চর্বি এড়িয়েও কেউ ওজন কমাতে পারেন না। কেন এমন হয়? সাধারণত যাঁরা অনেক খেয়েও ওজন বাড়াতে পারেন না, তাঁদের হাড় অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক একটু সরু থাকে। এ ছাড়া এ ধরনের রোগীদের হজমশক্তি অন্যদের চেয়ে বেশ ভালো। ফলে যা খাওয়া হয়, তাই দ্রুত হজম হয়ে যায়। দ্রুত হজম হওয়ার ফলে শরীরের গঠন পরিবর্তন হয় না। প্রথমেই মনে রাখতে হবে আমাদের ওজন প্রধানত খাদ্যের পরিমাণের ওপর নির্ভর করলেও আরও নানা রকম বিষয়ের ওপরও নির্ভরশীল। তেমনই কয়েকটি বিষয় আলোচনা করব এবার।
জেনেটিক বা বংশগত: কোনো পরিবারে যদি অধিকাংশ মানুষ স্থূল হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে ওই বাড়ির বাকিদেরও মোটা হওয়ার প্রবণতা বেশি। আবার যে পরিবারে বেশির ভাগ মানুষ রোগা, তার রোগা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এই জিন বা বংশগত বিষয়টি আমাদের হাতের বাইরে। অথচ এটি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
হরমোন: সবার দেহে হরমোনের পরিমাণ সমান নয়। ব্যক্তি ও বয়সভেদে এর হেরফের ঘটে। থাইরয়েডের হরমোন, এন্ড্রোজেন, ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, গ্রোথ হরমোন ইত্যাদির তফাতের কারণে রোগা বা মোটা হওয়া অনেক সময় নির্ভর করে। থাইরয়েড নির্গত হরমোনের পরিমাণ বাড়লে আমাদের ওজন কমতে পারে, এর উল্টোটাও হয়। গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হলো লেপ্টিন। এটি কারও কারও দেহে বেশি তৈরি হয়। তখন সে বেশি খাওয়াদাওয়া করতে পারে না, অল্পেই সন্তুষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া দেহের চর্বি থেকে শক্তি তৈরি করে এবং চর্বি ঝরিয়ে ফেলে।
আমরা যে খাবার খাই, তা হজম করার জন্য দরকার উৎসেচক, এই উৎসেচক তৈরি ব্যাহত হলে বা বেরোনোর পথে বাধা থাকলে খাবার হজমও হবে কম। সে ক্ষেত্রে ওজন কমে যাবে। আপনি যথাসাধ্য খাওয়ার পরও যদি লিভার ঠিকমতো কাজ না করে, তখন ওজন কমবে।
ব্যায়াম: ব্যায়াম করে অনেকে ওজন কমিয়ে ফেলতে পারে। আবার ব্যায়াম করে ওজন বাড়ানোও সম্ভব। এটি নির্ভর করে ব্যায়ামের আগে, পরে কী খাওয়া হচ্ছে, কোন সময়ে ব্যায়াম করা হচ্ছে, কোন ধরনের ব্যায়াম করা হচ্ছে তার ওপর। যারা স্থূলকায় তারা সকাল-বিকেল দৌড়াদৌড়ি করলে রোগা হবে। আবার যাঁরা রোগা, তাঁরা ওয়েট লেফটিং ইত্যাদি করে এবং প্রোটিন–জাতীয় খাবার বেশি করে খেয়ে ওজন বাড়াতে পারেন। ব্যায়াম ছাড়াও আমরা নিজেদের অজান্তেই বিভিন্ন কাজ করে থাকি, যেমন আঙুল নাড়ানো, পা নাড়ানো, মুখের অঙ্গভঙ্গি করা, চুলকানো, মাথা দোলানো ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা গেছে এসব কাজকর্ম দেহের প্রচুর শক্তি নষ্ট করে। এ অভ্যাসগুলোও কিছু মানুষের মধ্যে বেশি থাকে। তারা অনেক খাওয়াদাওয়া করলেও ওজন বাড়ে না।
ঘুম: যারা রাতে ঠিকমতো ঘুমায় না, তাদের ওজন কমে যাওয়া স্বাভাবিক। ঘুমের সঙ্গে আমাদের হরমোন বিশেষ করে গ্রোথ হরমোন এবং ইনসুলিনের সরাসরি সম্বন্ধ আছে। ঘুমের সঙ্গে দুশ্চিন্তা, অবসাদের সম্বন্ধ আছে। আপনি প্রচুর খাওয়াদাওয়া করে, ব্যায়াম করেও কোনো ফল পাবেন না, যদি না ঘুম ঠিকঠাক হয়।
দুশ্চিন্তা: যাঁরা বেশি দুশ্চিন্তা করেন, তাঁদের ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে। দুশ্চিন্তা হলে আমাদের এড্রিনাল গ্লান্ড থেকে কর্টিসল হরমোন বের হয়। এর প্রভাবে পেটে ফ্যাট জমা হতে থাকে। আর তখন সেই ব্যক্তি সহজেই মোটা হতে থাকেন।
আরও অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আছে আমরা কোনো ওষুধ খাচ্ছি কি না, দেহে অনেক দিন ধরে কোনো ইনফেকশন আছে কি না, যেটা আমরা বাইরে থেকে বুঝতে পারছি না, আমরা কতক্ষণ পরপর খাচ্ছি, কতটা জল পান করি ইত্যাদি। এখানে একটি দরকারি কথা বলে রাখা দরকার। যারা খাবার খুব বেশি চিবিয়ে খায়, তারা মোটা হয় না সহজে। এর কারণ, চিবিয়ে ধীরে ধীরে খেলে আমাদের পরিপাকনালি থেকে নানা ধরনের হরমোন বের হয়ে মস্তিষ্কে জানান দেয় যে যথেষ্ট খাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে গিলে গিলে তাড়াহুড়ো করে খেয়ে নিলে এ হরমোনগুলো যেমন বের হয় কম, তেমন মস্তিষ্ক ওই কম সময়ে সন্তুষ্ট হয় না। ফলে অনেকটা খাবার খেতে হয়, যেটা মোটা হওয়ার জন্য দায়ী।