What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

খরচ বাঁচাতে যা করবেন (1 Viewer)

Ie9GXEj.jpg


করোনা মহামারি বিশ্বব্যাপী আমাদের সবার জীবনে যেমন মৃত্যু, চরম অসুস্থতা, প্রিয়জনদের হারানোর অপরিসীম বেদনা-বিপত্তি নিয়ে এসেছে, ঠিক তেমনই আমাদের অর্থনৈতিক জীবনেও নেমে এসেছে মহাবিপৎসংকেত। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত, করোনা যেন সবাইকেই অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। এমন একটা অবস্থায় দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে আরেকটু অর্থনৈতিক সাশ্রয় ঘটানো যায়, সেদিকেই এখন নজর দেওয়ার প্রবণতা গড়ে উঠেছে। আমাদের দেশের বাসাবাড়িতে, পারিবারিক আবহে গার্হস্থ্যবিজ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগ নেই বললেই চলে। অথচ বিশ্বব্যাপী গার্হস্থ্যবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ গবেষকেরা এই প্রাত্যহিক জীবনযাপনে সাশ্রয় কীভাবে আনা যায়, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে যাচ্ছেন। আমাদের দেশের গার্হস্থ্য দিনযাপনেও এখন এসব পরীক্ষিত কায়দাকানুনগুলোর প্রয়োগ ঘটানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে গেছে।

ঘরোয়া বাজেট তৈরি ও হিসাবরক্ষণ

1tvoBy8.jpg


বাড়িতে সাপ্তাহিক, মাসিক এবং বার্ষিক আয়-ব্যয়ের বাজেট তৈরি করার আসলে কোনো বিকল্প নেই

বাড়িতে সাপ্তাহিক, মাসিক এবং বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব মতো একটি বাজেট তৈরি করার আসলে কোনো বিকল্প নেই। একেবারে সেই বাজেট হয়তো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলা সম্ভব হয় না, কিন্তু পরিকল্পনামাফিক খরচগুলো সাজিয়ে নেওয়ায় বাড়তি খরচ খুব সহজেই চোখে ধরা পড়ে। তবে এর জন্য প্রতি সপ্তাহে সময় করে একবার সাপ্তাহিক খরচাপাতি হালনাগাদ করে নেওয়া দরকার। এর জন্য একেবারে দিন–তারিখসহ আলাদা একটি ডায়েরি রাখা খুবই সুবিধাজনক। গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী মিলে বসে মাসিক বাজেটে কী কী গরমিল হলো, তা মাস শেষে দেখে রাখা যেতে পারে।

পানি ও বিদ্যুৎ বিলে লাগাম দিন

IhLzI8J.jpg


একটু সচেতন হলেই বিদ্যুৎ বিলে হতে পারে সাশ্রয়

একটু সচেতন হলেই মাস শেষে বিলের বাড়তি বোঝা থেকে মুক্তি পেতে পারি আমরা। তবে সে জন্য বাড়ির সবাইকে প্রয়োজন শেষে ফ্যান, লাইট, টিভির সুইচ বন্ধ করে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে ছোট থেকেই। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী লাইট, এসি, ফ্রিজ আপাতদৃষ্টিতে একটু দাম বেশি হলেও মাসিক খরচ কমিয়ে আনে নিঃসন্দেহে। এ ছাড়া ট্যাপের পানির ধারা অকারণে ছেড়ে রাখার বদভ্যাস ত্যাগ করতে হবে আমাদের। এসিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কম তাপমাত্রা এবং ওয়াশিং মেশিনে শুধু শুধু গরম পানি ব্যবহার করলেও বাড়তি বিল গুনতে হয়।

পুনর্ব্যবহার ও পুনঃ চক্রায়ন (রি-ইউজ অ্যান্ড রিসাইকেল) করুন

ঘরের বিভিন্ন জিনিসপত্র চট করে ফেলে না দিয়ে অন্যভাবে একে আবার ব্যবহার করা যায় কি না, তা একটু ভেবে দেখা উচিত। শেষ হয়ে যাওয়া জ্যাম-জেলি বা হরলিকসের বোতলে চিনি, লবণ, মসলাপাতি সব বাড়িতেই রাখা হয়। তেলের খালি বোতল মাপমতো কেটে গাছ লাগাতে ব্যবহার করা যায় অনায়াসেই। ছিঁড়ে যাওয়া বা চুপসে যাওয়া দু–তিনটি বালিশের তুলো মিলিয়ে আরেকটি খোলে ভরে নিলেই হয়ে গেল নতুন বালিশ। পুরোনো আসবাবগুলো একটু রঙিন বার্নিশ করে নেওয়া যায় ইচ্ছেমতো। পুরোনো বিরাট ট্রাংকটি রং করে ওপরে গদি-তাকিয়া দিলেই হয়ে গেল বসার ঘরে চা–শিঙারা–আড্ডার উপলক্ষ। আর ঘরের পুরোনো কাপড়, কাগজ, বোতল ইত্যাদি রিসাইক্লিং বা পুনঃ চক্রায়ন যেমন পরিবেশের জন্য উপকারী, তেমন দুই পয়সা এলে তা জমিয়ে প্রয়োজনীয় কোনো জিনিস কেনা যায় ঘরের জন্য।

খাদ্যে অপচয় রোধ করুন

সাপ্তাহিক একটা মোটামুটি খাদ্যতালিকা বা মেন্যু থাকলে খাদ্য অপচয় অনেকটা কমে আসতে পারে। খাবার রান্না করার পর খেয়ে বেঁচে গেলে তা কীভাবে সদ্ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে ভাবা উচিত আমাদের। আগের দিনের ভাত দিয়ে মজাদার ভাতভাজি তো ঘরে ঘরেই হয়। কিন্তু রয়ে যাওয়া দুই টুকরো মাছ, একটু সবজি, এক টুকরো মুরগির মাংস—এমন সবকিছুর সঙ্গেই সেদ্ধ সবজি চটকে, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ কুচি মেখে বল বানিয়ে, ডিমে ডুবিয়ে ডুবো তেলে ভেজে বিকেলের নাশতায় বানিয়ে নেওয়া যায় মজাদার চপ। সবজির ফেলনা অংশ, যেমন: খোসা, বীজ ইত্যাদি দিয়ে মজার চচ্চড়ি, ভাজি ও ভর্তা বানানো সম্ভব। আর ঘরের বাগানের জন্য সবজির ফেলে দেওয়া অংশ কম্পোস্ট বানানোর কাজেও ব্যবহার করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, বাইরের খাবার না খেয়ে ঘরেই শিশুদের আবদারের পিৎজা, বার্গার, ফ্রাইড চিকেন বানিয়ে নিলে এগুলো স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাশ্রয়ীও হয়ে থাকে।

নিজেরাই করুন

করোনাকালে অনেকেই আমরা খণ্ডকালীন গৃহপরিচারিকা না আসতে পারার জন্য পরিবারের সবাই মিলে হাতে হাতে ঘরের সব কাজ করার অভ্যাস করেছি। সাহায্যকারীর ওপরে আবারও একেবারে নির্ভরশীল না হয়ে গিয়ে রান্না, ধোয়ামোছা, ঘর পরিষ্কারের কাজগুলো নিজেরা করলে একদিকে যেমন সাশ্রয় হয়, তেমন পারিবারিক সম্পর্কগুলোও দৃঢ় হয়। ছোটখাটো মেরামতি, সেলাইফোড়াই, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ নিজেরা করলেও সব মিলে বেশ টাকাপয়সা সাশ্রয় হয়। উন্নত বিশ্বে কিন্তু এসব কাজ সবাই নিজেরাই করে। পারলারে বা সেলুনে না গিয়ে লকডাউনের সময়ের মতোই চুল কাটা, ফেসিয়াল, পেডিকিউর ও ম্যানিকিউর বাড়িতেই করে নেওয়া যাক না ইন্টারনেট থেকে শিখে নিয়ে!

BmCFBvz.jpg


ধুয়ে নেওয়া যায়, এমন সুতি ও গেঞ্জি কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন

ডিসপোজিবল জিনিসের ব্যবহার কমান

শিশুর জন্য ডিসপোজিবল ডায়পারের বদলে কাপড়ের ন্যাপি, মোছামুছি করতে ধোয়া পুরোনো ন্যাকড়া, এমনকি কিচেন টাওয়েলের বদলে কাপড় ব্যবহার করার তাগিদ এখন সারা বিশ্বে। ডিসপোজিবল মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার না করে ধুয়ে নেওয়া যায়, এমন সুতি ও গেঞ্জি কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা যায়। পকেটের সনাতনী রুমালের হারানো জায়গাটা ফিরিয়ে দেওয়া যায় দেদার ফেসিয়াল টিস্যুর প্যাক না কিনে। এতে পরিবেশদূষণ রোধের সঙ্গে সঙ্গে টাকা পয়সাও বেঁচে যাবে নিঃসন্দেহে।

রসুইবাগান করুন

OFaYC7e.jpg


বাতিল প্লাস্টিকের বোতল হতে পারে রসুই বাগানের উপকরণ

কিচেন গার্ডেন বা রসুইবাগানের ধারণা এখন সারা বিশ্বেই খুব জনপ্রিয়। লেবু, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, কারিপাতা, অরেগানোপাতা ইত্যাদি নিজেদের বারান্দার বা জানালার কার্নিশের টব থেকে ছিঁড়ে এনে খেতে সে যে কী এক আত্মতৃপ্তি, তা বলে বোঝানোর নয়। আর সামান্য কয়েকটি টাকা হলেও রোজই এ থেকে সাশ্রয় করা যায়। সময়, সুযোগ ও জায়গা থাকলে বিভিন্ন শাকসবজি, ফলমূল নিজেরাই ছাদে, উঠোনে বা বারান্দার বাগানে উৎপাদন করে খাওয়া সম্ভব। এতে বাগানের পরিচর্যা করে অবসর সময়টাও সুন্দরভাবে কাটানো যায়।

ঘরের সামগ্রী পাইকারি দরে বা বিশেষ ছাড়ে কিনুন

বেশির ভাগ মুদিসামগ্রী, শুকনো বাজার, ফল, সবজি, মাছ, মাংস বেশি পরিমাণে কিনলে পাইকারি দরে পাওয়া যায়। তাই শুকনো ও মুদি বাজার মাসে একবার এবং কাঁচাবাজার সপ্তাহে একবার বেশি পরিমাণে করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। দেখেশুনে সুযোগমতো একটা বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী একটি ডিপফ্রিজ কিনে নিলে প্রথমে একটু বড় খরচ হলেও আখেরে লাভই হবে বলা যায়। সিজনে সস্তার ইলিশ আর আম কিনে ফ্রোজেন করে সারা বছরই খাওয়া যাবে। আবার সব অনলাইন স্টোর এবং সুপার মার্কেটেই ঘুরেফিরে প্রায় প্রতিদিন বেশ কিছু বিশেষ ছাড় পাওয়া যায় কেনাকাটায়। তাদের এই অফারগুলো মোবাইলে টেক্সট মেসেজে পাওয়ার ব্যবস্থা করলে সুযোগ বুঝে অনেক সাশ্রয় করা যায় দৈনন্দিন জীবনে। এ ছাড়া, একেবারে ছুটির দিনে সকালে থলে হাতে বাজারে গিয়ে মাছের বাজারের আগুন নিজের মাথায় করে ঘরে না ফিরে বুদ্ধি করে কার্যদিবসগুলোয় বা সন্ধ্যায় বাজার করতে গেলে একই জিনিস অনেক কম দামে কেনা যায়।

যানবাহনের বদলে সাইকেল চালান বা হাঁটুন

kDy4ToP.jpg


স্বল্প দূরত্বে যাতাযাতের জন্য রিকশায় ওঠা বাদ দিন

মোড়ের দোকানে পাউরুটি কিনতে গেলে বা রাস্তার ওপার থেকে ওষুধ আনতে গেলেও 'এই রিকশা' বলে হাঁক দেওয়া আমাদের বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কাছের কোথাও গেলে অনায়াসে হেঁটে যাওয়া যেতে পারে। আর সাইকেল চালানোর অভ্যাস গড়ে তুললে নিমেষেই যেকোনো জায়গায় চলে যাওয়া যায় একদম বিনা খরচে। সেই সঙ্গে ব্যায়ামের সুফল বাড়তি পাওনা। তাই অফিস থেকে ফিরতে গাড়ি, বাস, রিকশা একটু দূরে ছেড়ে দিয়ে অথবা সম্ভব হলে পুরোটা পথ হেঁটেই ফিরলে পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে নিজের পকেটও রক্ষা পাবে।

খুঁজলে এমনতর আরও বহু উপায় পাওয়া যাবে, যার সাহায্যে এই কঠিন সময়ে, দুর্মূল্যের বাজারে কিছুটা হলেও সাশ্রয়ের স্বস্তি দেখা দেবে। পরিবারের সবাই অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের দিকে আরেকটু মনোযোগী হলে এই অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করে আমরা আবারও ভালো দিনের কাছে পৌঁছে যাব স্বচ্ছন্দে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top