What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review ক্যাম্পাস লাইফ ডকুমেন্টেশন (1 Viewer)

9YZlIPL.jpg


চলচ্চিত্র – শাটল ট্রেন
পরিচালক – প্রদীপ ঘোষ
অভিনয় – ইমরান হোসেন ইমু (রূপক), ইন্দ্রানী ঘটক (তিথি), সাদিয়া আফরোজ শান্তা (পাপড়ি)
গান – শাটল ট্রেন, হাওয়া চঞ্চল পুরে অঞ্চল, রঙিলা হাওয়া, তোমাকে পাবো না জানি, গ্রাম থেকে জেগে ওঠো, চাইয়া দেখো আমার কাছে।
মুক্তি – ২৪ মে ২০২০*
প্ল্যাটফর্ম – লাগ ভেলকি

প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে ছাত্রজীবনে নিজের ক্যাম্পাস অনেক রঙিন, স্মৃতিময়, আবেগ, ভালোবাসার নাম। ক্যাম্পাস লাইফের সেই জীবনকে কাছ থেকে ফ্রেমবন্দী করার প্রয়াস থেকে নির্মিত হয়েছে 'শাটল ট্রেন' চলচ্চিত্রটি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস লাইফ নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করেছেন প্রদীপ ঘোষ। দেশের প্রথম অনলাইন মুভি প্ল্যাটফর্ম 'লাগ ভেলকি'-তে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে।

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস লাইফ নিয়েও ছবি হয়েছে তবে তুলনামূলকভাবে 'শাটল ট্রেন' বেটার এখন পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব পরিচিত একটি যানবাহন শাটল ট্রেন যে ট্রেনে করে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে যায়। এই যানবাহনটির নামেই ছবিটির নামকরণ করা হয়েছে। নামকরণটি অর্থবহ হয়েছে কারণ শাটল ট্রেন এখানে দিনশেষে একটা লাইফ জার্নিকে তুলে ধরেছে ট্রেনরূপী গতিতে। ছবির শুরু ও শেষের সংযোগটা সেটাই প্রমাণ করে।

'শাটল ট্রেন' ছবির সবচেয়ে পজেটিভ দিক হচ্ছে এর ডিটেইল। দুই ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যেও ছবিটি অনেক বিষয়কে দেখিয়েছে। একটা ক্যাম্পাসে কি কি হতে পারে তার একটা ধারাবাহিক চিত্র আছে এ ছবিতে। যার জন্য ডিটেইল স্টোরির ছবি হয়ে উঠেছে। ক্যাম্পাস লাইফের পারফেক্ট ডকুমেন্টেশন হয়েছে।
সাধারণভাবে ছবির গল্প বললে তিথি, রূপক, পাপড়ি তিনটি চরিত্রের প্রধান উপস্থাপনায় ছবিটি এগিয়েছে। প্রেম, হললাইফ, আড্ডা, আন্দোলন, বিপ্লবী চেতনা এগুলো ছিল।

চট্টগ্রামের ইতিহাসের গুরুত্বে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা তাদের ইতিহাসকে ক্যাম্পাস আড্ডা, আন্দোলনে চর্চা হিসেবে দেখানো হয়েছে। এটা খুব সচেতনভাবেই করা হয়েছে। মার্ক্সবাদী আন্দোলনের চেতনা ছাত্রসমাজে কেন গুরুত্বপূর্ণ এটাও বেশ ভালোভাবে দেখানো হয়েছে এবং এর জন্য পুঁজিবাদী সমাজের শক্তিশালী অবস্থানকে বোঝাতে আন্তোনিও গ্রামসির 'প্রিজন নোটবুকস'-এর উদাহরণ আড্ডাতে টানা হয়েছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে। বসন্ত উৎসবের চমৎকার উপস্থাপনা আছে। ধর্মীয় উদারতার মেসেজ দেয়া হয়েছে। পাঠচক্রে দেশ ও সমাজ নিয়ে আলোচনা। এই ডিটেইল বিষয়গুলো ছবির গল্পকে মজবুত করেছে।

– আচ্ছা, তুমি রাজনীতি করো কেন? তুমি তো শিল্পী তোমার তো রাজনীতি করা কাজ না। তাছাড়া তোমাদের দল তো কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না।
– কে বলল আমি রাজনীতি করি? আমি তো তোমার আমার সবার অধিকারের কথা বলি। তুমি তো সমাজতত্ত্বের ছাত্রী। একটা সমাজে এত বৈষম্য নিয়ে মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকতে পারে? এই যে তুমি আমি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ কর যে তুমি আমি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছি এর টাকাটা আসছে কোত্থেকে? সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কাছ থেকে। তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে না।
ছেলেমেয়ে শুধু রোমান্টিক কথা বলার জন্য পাশাপাশি বসে না সেখানে সমাজতান্ত্রিক আলোচনাও হতে পারে। এটা সমাজসচেতনতার লক্ষণ। ভালো ছিল এই সিকোয়েন্সটি।

ছবির ফিনিশিং খুবই প্রশংসনীয়। প্রেম আর বিপ্লবের চেতনার মধ্যে যদি কোনো বাধা আসে কি করা উচিত তার একটা সুন্দর মেসেজ দেয়া হয়েছে। এমনকি সত্যিকারের ভালোবাসা থাকলে বিপ্লবকে শত্রু ভাবা উচিত কিনা এটাও ভালো দিক ছিল ফিনিশিং-এর।

প্রধান তিন চরিত্রের মধ্যে দুটি চরিত্র ইম্প্রেসিভ। রূপক চরিত্রে ইমরান হোসেন ইমু সবচেয়ে ন্যাচারাল অভিনয় করেছে। তার গেটআপের সাথে চরিত্র একদম পারফেক্ট ছিল। তিথি চরিত্রে ইন্দ্রানী ঘটক ভালো অভিনয় করেছে। তার রোমান্টিক অভিনয় অন্য অভিনয়ের থেকে বেটার। পাপড়ি চরিত্রে সাদিয়া আফরোজ শান্তা তুলনামূলকভাবে দুর্বল তবে ভালো করার চেষ্টা ছিল। বাকি চরিত্রগুলো প্রয়োজনমাফিক ছিল।

ছবিতে গান অনেক ছিল। এর মধ্যে 'শাটল ট্রেন' টাইটেল সং ভালো ছিল। বেস্ট ছিল 'হাওয়া চঞ্চল পুরে অঞ্চল' গানটি। শেষের দিকে 'চাইয়া দেখো আমার কাছে' গানটিও বেশ সুরেলা ছিল। ছবিটি সঙ্গীত বিভাগে ২০২০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে এটা নিঃসন্দেহে বড় অর্জন।

নেগেটিভ দিক ছবিতে বড় আকারে নেই। দুর্বলতা বললে ছবিতে ক্লাস, হললাইফের আড্ডা, সাংস্কৃতিক অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উৎসব যেমন পহেলা বৈশাখ, জাতীয় দিবস এগুলো আসেনি। শিক্ষকদের ভূমিকাকে বড় আকারে দেখানো হয়নি।

'শাটল ট্রেন' একটি ক্যাম্পাস লাইফ ডকুমেন্টেশন। ছবিটি একটি উদাহরণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয় এমন কাজ থাকা উচিত নামকরা কলেজগুলোতেও। তাহলে গুরুত্বপূর্ণ কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব সম্পদ হয়ে থাকবে এসব ছবি। ক্যাম্পাস লাইফের চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহ বাড়ুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

রেটিং – ৭.৫

* ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শাহবাগের গণ-গ্রন্থাগারে ছবিটির প্রথম প্রদর্শনী হয়।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top