What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সাকিউলেন্টস: বাগানবিলাসে নতুন বিপ্লব (1 Viewer)

AjcYaTh.jpg


এখনকার দিনে এমন কোনো বাগানবিলাসী মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি স্যাকিউলেন্টসের নাম শোনেনি। ইনডোর প্ল্যান্ট বা ঘরের ভেতরে ছোট পরিসরে যে গাছপালাগুলো রাখা যায়, তার মধ্যে এখন স্যাকিউলেন্টস উদ্ভিদগুলোই বেশি জনপ্রিয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় এ-জাতীয় উদ্ভিদ প্রবল দাপটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একুশ শতকের প্রথম থেকেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, শহরে ডিম ভাজাকে অমলেট বলার সেই কৌতুকের মতোই আমাদের চিরচেনা পাথরকুচি, ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা, কাঁটামুকুট এসবই কিন্তু বাগানের জগতে বর্তমানে এই অত্যন্ত ট্রেন্ডি, ফ্যাশনেবল স্যাকিউলেন্টসের মধ্যে পড়ে।

স্যাকিউলেন্টস কী

uC8w483.jpg


স্যাকিউলেন্টস জাতীয় উদ্ভিদ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ভাবে সাজানো যায় ঘরের বাগান, ছবি: আন্দ্রিয়া

ইংরেজিতে সাকিউলেন্ট (succulent) শব্দটির অনেকগুলো অর্থের মধ্যে একটি হচ্ছে রসালো। এই নামের প্রতি সুবিচার করেই কিন্তু রসালো পাতা ও কাণ্ডযুক্ত গাছগুলোকে সাকিউলেন্ট নামে ডাকা হয়। এরা সাধারণত আকারে খুব বড় হয় না। সবুজের সঙ্গে সঙ্গে স্যাকিউলেন্টস উদ্ভিদগুলো হতে পারে বিচিত্র সব রঙের। একরঙা না হয়ে এই গাছগুলো বহু বর্ণের হয়ে থাকে প্রায় সময়েই। সব স্যাকিউলেন্টসে অবশ্য ফুল হয় না। পাতাবাহার ধরনের স্যাকিউলেন্টসগুলোও খুব জনপ্রিয়। এ ছাড়া অনেক স্যাকিউলেন্টস আবার ক্যাকটাস-গোত্রীয় হয়। এতে দেখা যায় মিহি রোমের মতো অথবা বড় বড় কাঁটা।

স্যাকিউলেন্টসের বাঁধভাঙা জনপ্রিয়তা

gbdLk7H.jpg


আন পিকো, ছবি: উইকিপিডিয়া

বহু যুগ ধরে এই রসালো পাতার উদ্ভিদ বিভিন্ন নামে ও রূপে একেক দেশের মাঠেঘাটে, বনেবাদাড়ে, মরুভূমিতে, এমনকি স্যাঁতসেঁতে দেয়ালের কোণে জন্মেছে। আমাদের বাগানে, ঘরের কোণে, ছাদে বা বারান্দার টবেও এরা জায়গা পেয়েছে বহুদিন হয়। কিন্তু এই শতকের প্রথম দিকে একেবারে জ্যামিতিক হারে বেড়ে গেছে এর জনপ্রিয়তা। আমেরিকা থেকে শুরু হওয়া এই স্যাকিউলেন্টস ট্রেন্ড এখন রাজত্ব করে চলেছে বিশ্বজুড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও উঠেছে স্যাকিউলেন্টস-ঝড়। ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট, ফেসবুক, কোথায় নেই স্যাকিউলেন্টসের জয়জয়কার! আজকাল তো ইকেবানার মতো স্যাকিউলেন্টসের অ্যারেঞ্জমেন্ট বা সাজসজ্জাও এক অনন্য শখের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুনিয়াজুড়ে। বহু ফেসবুক গ্রুপ আছে স্যাকিউলেন্টস শৌখিনতা নিয়ে। কেউ কেউ একে স্যাকিউলেন্ট পেট বা পোষা স্যাকিউলেন্টস বলেও অভিহিত করছেন।

বিশ্বব্যাপী স্যাকিউলেন্টস ট্রেন্ডের কারণ

Q2IkoJd.jpg


সেডাম জাতীয় একটি জনপ্রিয় উদ্ভিদ, ছবি: টিজানা দ্রেন্ডারস্কি

স্যাকিউলেন্টস উদ্ভিদগুলো রসালো পাতাবিশিষ্ট বলে এরা অনেক দিন পানি দেওয়া, যত্নআত্তি ছাড়াই বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকতে পারে। খুবই ঘাতসহ এই গাছগুলোর যেন কই মাছের প্রাণ! সেই সঙ্গে পাতা বা গোড়া থেকেই আবারও জন্মায় অনেক চারাগাছ। এ ছাড়া চটজলদি বাসাবাড়ি বদলের সময় এদের অনায়াসেই সঙ্গী করে নিয়ে যাওয়া যায় সহজে বহন করা যায় বলে। আকারে ছোট এই গাছগুলো রাখতে বেশি জায়গা লাগে না। ডেস্কের কোনায়, দেয়ালে একেবারে বেডসাইড টেবিলেও রাখা যায় এগুলো। পানি-কাদা ছড়িয়ে জায়গা ময়লাও হয় না। আর সেই সঙ্গে অত্যন্ত ট্রেন্ডি, ফ্যাশনেবল বাগানবিলাসের ব্যাপারটা তো আছেই। অনেক মনোবিজ্ঞানী এ রকমটাও বলেন যে স্যাকিউলেন্টস শ্রেণিভুক্ত উদ্ভিদগুলো আমাদের সঙ্গী হয়ে এই চরম যান্ত্রিক জীবনের একাকিত্ব দূর করতে ভালো ভূমিকা রাখে।

বিভিন্ন রকমের স্যাকিউলেন্টস

পৃথিবীব্যাপী শখের বাগানিরা ২০ হাজারেরও বেশি স্যাকিউলেন্টস উদ্ভিদের মধ্য থেকে রূপসী আর টেকসই বিভিন্ন গাছকে নিয়ে এসেছেন শৌখিন বাগানে। নানা জাতের স্যাকিউলেন্টস শোভা পাচ্ছে অফিস ডেকোরেশনে, ঘরের কোণে, বসার ঘরের টেবিলে, ঝুলবারান্দায় অথবা শোয়ার ঘরের বেডসাইড টেবিলেও।

4LUT4Cc.jpg


বারোস টেইল, ছবি: উইকিপিডিয়া

এই ইনডোর স্যাকিউলেন্টসগুলোর মধ্যে খুব জনপ্রিয় হচ্ছে রোজেয়াম (Roseum) আর বারোস টেইল (burro's Tail)। আমাদের পরিচিত পাথরকুচিও কিন্তু এদিক থেকে খুবই এগিয়ে। সারা বিশ্বে প্রায় প্রতিটি দেশেই এর আগুনরঙা বা সোনালি হলুদ ফুলের জন্য এই গাছগুলো খুব প্রিয় হাউস প্ল্যান্ট হিসেবে। আমাদের দেশের আরেক জনপ্রিয় গাছ ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা ওষধি গাছ হিসেবে যেমন ঘরে ঘরে আমরা লাগাই, স্যাকিউলেন্টস হিসেবেও কিন্তু এর কদর রয়েছে পৃথিবীজুড়ে।

22FVMxR.jpg


পান্ডা প্ল্যান্ট, ছবি: উইকিপিডিয়া

একটি বিশেষ ধরনের ইনডোর স্যাকিউলেন্টস আজকাল সবার নজর কাড়ছে, যার নাম হলো পান্ডা প্ল্যান্ট। আকারে খুবই ছোট আর কোমল রোমে ঢাকা এর পাতাগুলোর কিনারে আছে কালো কালো ফোঁটা। তাই হয়তো নাদুসনুদুস এই গাছ পান্ডার কথা মনে করিয়ে দেয়। ক্যাকটাস–জাতীয় স্যাকিউলেন্টসের মধ্যে ঘরে রাখতে সুবিধা হয় পিন কুশন ক্যাকটাসগুলো। উপযুক্ত পরিবেশে এই অনূর্ধ্ব ছয় ইঞ্চির ক্যাকটাসগুলোয় হয় বর্ণিল সব ফুল। স্নেক প্ল্যান্ট, জেব্রা প্ল্যান্ট—এসব স্যাকিউলেন্টস উদ্ভিদ বহু বছর ধরেই আমাদের দেশে ঘরে রাখা পাতাবাহারগাছ হিসেবে সমাদৃত। এ ছাড়া আমাদের চিরচেনা কাঁটামুকুট গাছ কিন্তু রাশভারী ক্রাউন অব থ্রোনস নামে শোভা পাচ্ছে সারা দুনিয়ার স্যাকিউলেন্টসপ্রেমীদের ঘরে।

আউটডোর স্যাকিউলেন্টস

xImBLS7.jpg


হেনস অ্যান্ড চিকস, ছবি: উইকিপিডিয়া

এবার আসা যাক ঘরের দুয়ারে, উঠানে, ড্রাইভওয়েতে আর অবশ্যই বাগানে লাগানোর উপযোগী আউটডোর স্যাকিউলেন্টসের গল্পে। এই ধরনের গাছের মধ্যে নিঃসন্দেহে জনপ্রিয়তায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হেনস অ্যান্ড চিকস (Hens and Chicks)। এই নামকরণের পেছনে কী কারণ আছে, তা একেবারেই অজানা। ফুলের পাপড়ির আকারে সাজানো এর রসালো পাতার সারিগুলো দেখলে একবারের জন্যও মুরগির কথা মনে পড়ে না। এই গাছে টুকটুকে লাল ফুল হয় আর আপাতদৃষ্টিতে মরে গিয়েও আবার পরে বেঁচে ওঠে।

3nR1j9x.jpg


সেডাম জাতীয় একটি উদ্ভিদ, ছবি: উইকিপিডিয়া

এ পরই বলতে হয় সেডাম ( Sedum) জাতীয় স্যাকিউলেন্টসের কথা। এগুলোর সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, এরা সবুজ থেকে শুরু করে গোলাপি, নীল, ধূসর ইত্যাদি রঙের হতে পারে। হতে পারে সটান তিন ফুট লম্বা বা একেবারেই লতানো। ক্যাকটাস–জাতীয় স্যাকিউলেন্টসের মধ্যে বল ক্যাকটাসগুলো ঘরের বাইরে বেশ ভালো হয়। এই উদ্ভিদগুলো বাগানসজ্জায় মরুময় আবহ তৈরি করে বলে শখের বাগানিরা একে বড়ই ভালোবেসে বাগানে লাগিয়ে থাকেন। বিভিন্ন আকৃতি ও বর্ণবৈচিত্র্যময় বল ক্যাকটাসে গুচ্ছ ধরে বাহারি সব হলদে সোনালি ফুলও ফোটে। এ ছাড়া উদ্যানে রোপণ করা যায়—এমন স্যাকিউলেন্ট গাছের মধ্যে আরও আছে স্টোনক্রপ, আগাভে, প্লাশ প্ল্যান্ট ইত্যাদি।

স্যাকিউলেন্টসের বিশ্বব্যাপী জয়জয়কারের মিছিলে আমাদের দেশের বাগানিরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। এখন বাংলাদেশের সব নার্সারি, অনলাইন গার্ডেনিং স্টোর, এমনকি বড় বড় সুপার মার্কেটেও স্যাকিউলেন্টস গাছ, গাছ রাখার পাত্র, প্রয়োজনীয় মাটি, নুড়িপাথর ইত্যাদি পাওয়া যায় অনায়াসেই। করোনার লকডাউনের বদৌলতে ঘরে বসে সজীব–সুন্দর একটা সময় কাটাতে অনেকেই স্যাকিউলেন্টসের দেখভাল করাকে বেছে নিয়েছিলেন। পারিবারিক আবহে সময় কাটানোর ক্ষেত্রেও শিশুদের মোবাইল ফোন আর টিভি থেকে সরিয়ে মা–বাবাসহ সবাই স্যাকিউলেন্টস নিয়ে নাড়াচাড়া করতে পারেন ছুটির দিনে।

IpzCyao.jpg


অ্যালোভেরা, ছবি: উইকিপিডিয়া

নাগরিক জীবনে, ফ্ল্যাটবাড়ির বদ্ধ গণ্ডিতে যেন এক টুকরো প্রকৃতি তুলে নিয়ে আসতে পারে স্যাকিউলেন্ট গাছ আমাদের জীবনে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top