What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

চিজ লাভারস ডে - স্বাদে অনন্য ঢাকাই পনির (1 Viewer)

2m5IVGG.jpg


রোজার দিনে ইফতারে পুরান ঢাকার চকবাজারের পনির সমুচা, বিয়েতে বরযাত্রী আপ্যায়নে ঢাকাই পনিরের পাতলা স্লাইস অথবা বাকরখানির ওপরে ছিটানো পনিরের কুচির অতুলনীয় স্বাদ যিনি পেয়েছেন, তিনিই বলতে বাধ্য হবেন যে পুরান ঢাকার খাদ্যখানায় ঢাকাই পনিরের স্থানটি সত্যিই আর অন্য কিছু দিয়ে পূরণ করা যায় না। মূলত ঢাকার নবাব পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় শৌখিন খাদ্যতালিকায় এই পনিরের নাম উঠে এলেও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামসহ অনেক এলাকার গ্রামীণ খাদ্যসংস্কৃতির সঙ্গে যুগ যুগ ধরে এই পনিরের নাম জড়িয়ে আছে।

Sbd4GQB.jpg


তবে এ কথা বলতেই হয়, ঢাকার নবাব পরিবারের রসুইঘরে আর দস্তরখানে এর কদরের কারণেই হয়তো মুখে মুখে এর নাম 'ঢাকাই পনির' হয়ে গেছে। আজকাল বড় বড় দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান একে অষ্টগ্রাম পনির নামেই মোড়কে পুরে বাজারজাত করছে। নাম যা–ই দেওয়া হোক না কেন, স্বাদে অনন্য এই ঢাকাই পনিরের আবেদন এর সমঝদারদের কাছে অপরিবর্তিত আছে।

ছোট ছোট বাঁশের ঝুড়িতে রেখে তৈরি করা হয় বলে গোলাকৃতি এই পনিরের গায়ে ঝুড়ির দাগগুলো বসে গিয়ে এর অনন্য ও বিশিষ্ট রূপ দেয়। অত্যন্ত উপাদেয় আর নোনতা স্বাদের ঢাকাই পনির কাটলেই দেখা যায় ছোট ছোট অসংখ্য ছিদ্র। ছোট্ট এক টুকরো ধবধবে সাদা পনির হাতে নিয়ে একটু চটকে দিলেই দেখা যাবে এর দানাদার ভাব। পনিরওয়ালা ভাইদের কাছে কড়া, মাঝারি বা হালকা লবণযুক্ত—সব রকম পনিরই পাওয়া যায়। কাগজের মতো পাতলা করে কেটে দেওয়া পনিরের নমুনা চেখে লবণের পরিমাণ পরখ করেও কেনা যায়।

ItSu4ER.jpg


তবে অভিজ্ঞজনমাত্রই বুঝতে পারবেন, একেবারে সাদাটে আর নরম মানেই কম লবণের পনির। আর ভঙ্গুর, দানাদার আর একটু হলদে ভাব থাকে বেশি লবণের পনিরে। এই ঢাকাই পনির কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে বহুল ব্যবহৃত পনির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। মূলত রন্ধনোপযোগী সেই পনির আসলে ভারী ওজনের নিচে চেপে পানি বের করে নেওয়া ছানা। আর সেখানে এই ঢাকাই পনিরের মতো লবণ ব্যবহার করা হয় না।

পর্তুগিজরা প্রথম ছানা এনেছিল, নাকি মোগল প্রভাবেই পনির তৈরি হয়েছিল, সেই টাগ অব ওয়ার ইতিহাসবেত্তাদের কাছে ছেড়ে দিয়ে আমরা ঢাকাই পনির কীভাবে বানায়, বরং সেদিকে একটু নজর দিই। সাধারণভাবে বলা যায়, দুগ্ধজাত যেকোনো খাবারের সংস্কৃতি সেখানেই গড়ে ওঠে যেখানে প্রচুর পরিমাণ দুধ উৎপন্ন হয়।

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলায় মহিষের দুধের অঢেল প্রাচুর্যের কারণেই হয়তো সেখানে এই ঢাকাই পনিরের উৎপত্তি। এ ছাড়া এই পনির মানিকগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশে অনেক জায়গাতেই তৈরি হয় বহু বছর ধরে। আজকাল মহিষ পালনের প্রবণতা কমে যাওয়ায় গাভির দুধ থেকেই পনির তৈরি হচ্ছে। তবে গাভির দুধে চর্বির পরিমাণ কম হওয়ায় এখনকার পনিরে আগের তুলনায় কিছুটা হালকা ভাব থাকে আর পনির তৈরিতে তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে দুধ প্রয়োজন হয়।

প্রাচীনকাল থেকে পনির তৈরিতে কমবয়সী গরুর বট বা অন্ত্রের বিশেষ অংশ থেকে এর ভেতরের স্তর বের করে তা দিয়ে দুধ 'ফাটানো' হতো। 'কাফ রেনেট' নামে এই বিশেষ বস্তু দ্বারাই বিভিন্ন উপায়ে বিশ্বব্যাপী বিচিত্র ধরনের সব পনির বানানো হয়। তবে নানা কারণে বর্তমান সময়ে ছানার পানি, সিরকা ইত্যাদি দিয়েই পনির তৈরি করা হয়। কাঁচা, খাঁটি দুধে ঈষদুষ্ণ ছানার পানি বা দুধ ফাটানোর জন্য উপযোগী অন্য যেকোনো পদার্থ খুব জোরে ঘূর্ণি তৈরি করে মেশাতে হয়।

btjQ3jf.jpg


তারপর আস্তে আস্তে হাত বা নাড়ানি দিয়ে নেড়ে ফেটে যাওয়া দুধের ছানা অংশ ঝুড়িতে তুলে নিয়ে পানি ভালোভাবে ঝরিয়ে নিতে হয়। এই সময়ে এতে কঞ্চির তেরছা অগ্রভাগযুক্ত ছুরির মতো এক জিনিস দিয়ে শক্ত চাকা অংশ খুব ভালোভাবে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে গুঁড়ো করে দেওয়া হয়। এভাবেই পরে পনিরের দানাদার ভাব পাওয়া যায়। এতে গভীর ছিদ্র করে ঠেসে লবণ ভরে নিয়ে ঢেকে তার ওপরে ভারী ওজন চাপা দিয়ে রাখতে হবে। এই পনির তৈরি হতে কিছুদিন সময় লেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গে খেলে ঢাকাই পনিরের আসল স্বাদ পাওয়া যায় না।

ঢাকাই পনির এমনিতেই স্লাইস করে খাওয়া হয় বা বাকরখানির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। পুরান ঢাকায় মেহমান বা বরযাত্রীর আপ্যায়নে ঢাকাই পনির অপরিহার্য। রোজার দিনে এই ঢাকাই পনিরের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। উপাদেয় এই পনির অন্যান্য ইফতারের সঙ্গে কেটে খাওয়ার পাশাপাশি, চকবাজারের ইফতারির বাজারেও ঢাকাই পনিরের তৈরি পনির সমুচার অসম্ভব কদর। মোগলাই পরোটাসহ আরও বিভিন্ন খাবারে ঢাকাই পনির ব্যবহার করা হয় পুরান ঢাকার রসুইখানায়। পুরান ঢাকার খাদ্যখানার মধ্যে একেবারে অনন্যসাধারণ হচ্ছে বাকরখানি। এই বাকরখানিরই হরেক রকমফেরের মধ্যে পনির–বাকরখানি খুবই প্রসিদ্ধ খাদ্যরসিকদের কাছে।

KnVpXgz.jpg


বাকরখানির ওপরে পনিরকুচি ছড়িয়ে তন্দুরে ঢুকিয়ে এই পনির–বাকরখানি বানানো হয়। ঢাকাই নবাব পরিবারের সূত্রে দিল্লির মোগল দরবারেও ঢাকাই পনিরের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে আমাদের অঞ্চলের প্রাচীন সমাজে দুধ বা ঘির খুব কদর থাকলেও ছানা বা পনিরে দুধের বিকৃতি ঘটানো হয় বলে এর প্রতি অনেকেরই ছিল কিছুটা বিরাগ—এমনটাই জানা যায় কোনো কোনো লেখায়। কিন্তু পরে উদ্ভিজ্জ আমিষের চাহিদা পূরণে ছানা, পনির আমাদের খাদ্যতালিকায় স্থান পেয়েছে পাকাপোক্তভাবেই। আর ঢাকাই পনির তো এখন সবার কাছেই সমানভাবে সমাদৃত।

বড় বড় ফাস্ট ফুড শপ, রেস্তোরাঁয় পাশ্চাত্য কায়দার বার্গার, পিৎজাসহ বিভিন্ন খাবারে ব্যবহৃত হচ্ছে এই পনির। সুপারশপে বা বড় বড় কোম্পানির নিজস্ব বিপণিকেন্দ্রগুলোতে সহজেই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি ঢাকাই পনির পাওয়া যায় এখন দেশজুড়ে।

হাতের কাছে পাওয়া ঢাকাই পনির দিয়ে অভিনব কিছু তৈরি করে চমকে দেওয়া যাক না হয় পরিবারের সবাইকে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top