What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঝাল–মসলায় রসনাবিলাস (1 Viewer)

6dI0Xnq.jpg


আগুনঝাল শুঁটকি ভুনা বা লালে–ঝালে একাকার মাংস–আলু–ঝোলে ভাত মেখে খাওয়ার কথা মনে হলে আমাদের সবারই জিবে পানি চলে আসে। কিন্তু বিশ্বের আরেক প্রান্তে আমাদেরই কোনো ইউরোপীয় বন্ধু হয়তো লবণ–গোলমরিচ ছিটিয়েই খেয়ে নেয় তার চর্ব্য–চূষ্য সবকিছুই। ঝালে নাকাল এই আমাদের চোখের পানি নাকের পানিতে ঘেমে–নেয়ে হু হা করতে দেখে তারা হয়তো অবাক হয়ে ভেবেই পায় না, সেধে সেধে এমন কষ্ট আমরা কেনই–বা করি। তবে ঝাল–মসলার প্রতি এই অনন্য আকর্ষণ কিন্তু সারা বিশ্বেই সমাদৃত বহু যুগ ধরে। পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই ঝাল–মসলার খুব প্রচলন না থাকলেও ভারতীয় উপমহাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশেই কিন্তু ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার বহুল প্রচলিত ও খুবই জনপ্রিয়। তাই আজ যখন আন্তর্জাতিক ঝাল–মসলাদার খাদ্য দিবস, খাবারে এই মসলা আর ঝালের ইতিবৃত্ত খানিকটা ঘেঁটে দেখা যেতেই পারে।

খাবারে ঝাল–মসলার ইতিহাস

d7byN3Y.jpg


বলা হয়ে থাকে, পর্তুগিজদের হাত ধরে ভারত উপমহাদেশ তথা আমাদের দেশে মরিচের আগমন, ছবি: করোলিনা গ্রোভস্কা

মানুষ কখন, কীভাবে তার খাদ্যে বিশিষ্ট স্বাদ বা ফ্লেভার আনার জন্য সিজনিং বা নুন–ঝাল–মসলা প্রয়োগ করতে শুরু করল, তা এখনো নৃতত্ত্ববিদদের কাছে এক রহস্যের ব্যাপার। তবে খুঁজতে খুঁজতে একেবারে পেছনে ফিরে গেলে পাওয়া যায়, ছয় হাজার বছর আগে, খোদ ইউরোপেই বালটিক সভ্যতার নিদর্শন খনন করতে গিয়ে যে রান্নার পাত্র পাওয়া যায়, তাতেই মিলেছে প্রথম ঝাল–মসলার নিদর্শন। এটিই ইউরোপে আবিষ্কার হওয়া প্রথম ঝাল খাবারের নিদর্শন। এ ছাড়া ঝাল–মসলাদার খাদ্যের আরেক প্রধান উপাদান লাল মরিচের জন্মস্থান ধরা হয় মেক্সিকোকে। বলা হয়ে থাকে, কলম্বাসের অভিযানের পর সেখান থেকেই মরিচ ছড়িয়ে পড়ে সারা দুনিয়ায়। আমাদের উপমহাদেশে এই মরিচ এনেছিল পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক। তার আগে এখানে আঞ্চলিকভাবে গোলমরিচ, কাসুন্দি কিংবা চুই দিয়েই খাবারকে ঝাল করা হতো বলে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া যায়।

খাবারে ঝাল–মসলার উপাদান

LNoxX3J.jpg


সাধারণভাবে খাবারে ব্যবহৃত হওয়া বিভিন্ন ধরেনর মসলা, ছবি: মারফি

দেশে দেশে বিভিন্ন মসলার ব্যবহারে খাবারকে সুস্বাদু করে তোলার প্রচেষ্টা চলছে যুগ যুগ ধরে। মসলাদার ও স্বাদযুক্ত ফ্লেভার আনার জন্য প্রাচীন ইউরোপে ব্যবহার করা হতো শর্ষের কাসুন্দির মতো মাস্টারড পেস্ট, যার পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে লাটভিয়াতে। এ ছাড়া বিশ্বের প্রাচীনতম মসলার একটি গোলমরিচের প্রচলন ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে। এরপরে চিলি পেপার বা লাল মরিচ এসে ঝালের খেলায় একাই করে দিল বাজিমাত। এখন তো ঝাল–মসলাদার খাবার মানেই বিভিন্ন রকমের মরিচের কারসাজি। তবে গরমমসলায় ব্যবহৃত কালো এলাচি ও লবঙ্গ, জাপানের ওয়াসসাবি, এমনকি আমাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রচলিত চুইঝাল দিয়েও খাবারে ঝাঁজালো স্বাদ আনা যায়। তবে ঝাল ও মসলাদার খাবারে ঝাল উপাদানের সঙ্গে অন্যান্য মসলা, যেমন: দারুচিনি, এলাচি, তেজপাতা, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, হলুদ, জয়ত্রী, জায়ফল, জিরা, ধনে—এমন সব উপাদানের মেলবন্ধন ঘটালে তবেই মসলাদার খাদ্যের আসল স্বাদ ফুটে ওঠে।

দেশে দেশে ঝাল–মসলা

CsfvN2V.jpg


ঝাল খাবার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খাওয়া হয়। ঝালের অন্যতম প্রধান উপাদান মরিচ, ছবি: কটনব্রো

ঝাল–মসলাদার খাবার বলতেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে দেশি খাবারের ছবি। ভুনা, ভাজা, ভর্তা, চচ্চড়ি, ঝোল, বিরিয়ানি, কাবাব—সবকিছুতেই আমাদের চাই ঝাল ঝাল স্বাদ। তবে মজার ব্যাপার হলো, আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশের রসুইখানাতেও ধুমসে চলে ঝালের কারবার। এই ধারাবাহিকতায় প্রথমেই আসে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর কথা। মেক্সিকো তো মরিচেরই জন্মভূমি। জালাপিনো, হাবানেরো—এমন সব মোহনীয় নামের বিচিত্র সব মরিচ ব্যবহার করা হয় মেক্সিকান খাবারে। এ ছাড়া পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে আসা স্কচ বনেত মরিচের বদৌলতে এই অঞ্চলের খাবারও ঝাল–মসলাদার হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে। পূর্ব এশিয়ার ঝালপ্রেমী দেশগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে থাইল্যান্ডের নাম। কাঁচা হলুদ, আদা লেমন গ্রাস, চিংড়ি শুঁটকির গুঁড়া আর মরিচের সমন্বয়ে তৈরি এদের খাবারগুলোয় অনন্য এক ঝাঁজালো ফ্লেভার আছে। এ ছাড়া কোরিয়াতেও মাছ–মাংস রান্না বা ঝলসানোর ক্ষেত্রে মসলাদার স্বাদ জনপ্রিয়। ইন্দোনেশিয়ার ঝাল খাবারগুলোর বিশেষত্ব হলো, এখানে প্রচণ্ড ঝাল–মসলার সঙ্গে পরিমাণমতো তালের গুড় ও বাদামবাটা দিয়ে এক অভূতপূর্ব ঝাল-মিঠে ঝড় তোলা হয় স্বাদগ্রন্থিতে।

cilbSjn.jpg


বলা হয়ে থাকে, মেক্সিকো মরিচের জন্মভূমি, ছবি: মার্ক স্টেবনিকি

এরপর এশিয়ার বৃহত্তম দেশ চায়নার ঝাল খাবারের কথা না বললেই নয়। এদের খাবারে সাদা সিচুয়ান গোলমরিচ ও লাল শুকনা মরিচ—দুইই ব্যবহার হয় উদার হস্তে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নেপালে প্রতিদিনের খাবারে ঝাল–মসলাদার স্বাদ অপরিহার্য। শ্রীলঙ্কায় প্রায় প্রতিটি তরকারিতে প্রচুর ঝাল মরিচের সঙ্গে দেওয়া হয় নারকেলের দুধ। আর আমাদের বাংলাদেশে ভাতের সঙ্গে আলাদা করে পোড়া শুকনা মরিচ বা কাঁচা মরিচ কামড়ে খাওয়ার যে প্রচলন আছে, তা সত্যিই আর কোথাও সেভাবে দেখা যায় না।

বিখ্যাত কিছু দেশি–বিদেশি মসলাদার খাবার

BjpWO65.jpg


ব্রিটিশ ফাল কারি, ছবি: রিও লেক্যাটম্পেসি

অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, গিনেস বুকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল–মসলাদার খাবার 'ফাল কারি' তৈরি করা হয়েছিল ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের বাংলাদেশি মালিকানার এক রেস্টুরেন্টে ঝাল খাওয়ার চ্যালেঞ্জ হিসেবে। ইচ্ছা করে ভূত জলোকিয়াসহ ১০ রকমের মরিচ দিয়ে বানানো এই মাংসের তরকারি আসলে কোনো দেশেই সেভাবে খাওয়া হয় না। সেভাবে দেখতে গেলে ভারতের প্রচলিত মাংসের কারিগুলোর মধ্যে ভিন্দালু কারি খুবই বিখ্যাত ঝাল হিসেবে। আমাদের দেশের তো মাছ, মাংস, সবজি, শাক, ভর্তা, বড়া—সবকিছুই ঝাল–মসলা না দিলে অপূর্ণ রয়ে যায়।

77a9cN4.jpg


কোরিয়ার খাবার কিমচি, ছবি: পিক্সাবে

এদিকে দক্ষিণ আমেরিকার চিলি কন কার্নে নামের ঝালে ঝোলে মাংসের কিমা আর ছিলকা সুদ্ধ রাজমার ডাল দিয়ে রান্না করা খাবার সারা বিশ্বেই খুব জনপ্রিয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজে জ্যামাইকার জার্ক চিকেন হচ্ছে ঝাল ঝাল বারবিকিউ করা মুরগির রসালো সুস্বাদু আরেকটি খাবার, যা ঝালপ্রেমীদের মন জয় করেছে। কোরিয়ার কিমচি (মরিচবাটা আর সিরকায় জারানো বাঁধাকপির আচার), বুলগগি (ইচ্ছেমতো মরিচ দিয়ে ঝলসানো পাতলা করে কাটা গরুর মাংসের স্লাইস) বা চায়নার সিচুয়ান ডিশগুলোকে পৃথিবীর সব জায়গায় ঝাল–মসলাদার খাবার হিসেবে সবাই ভালোবাসে। ইন্দোনেশিয়ার সাম্বাল (চিংড়ি শুঁটকি, উদার হাতে দেওয়া মরিচ, লেবুর রস, আদা, রসুন আর তালের গুড় দিয়ে বানানো পেস্ট), থাইল্যান্ডের বিশ্ববিখ্যাত টম ইয়াম স্যুপের (চিংড়ি, লেমন গ্রাস, মরিচ, আদা, লেবুর রসে বানানো) কথা তো বলতেই হয়।

ঝাল–মসলাদার খাদ্যের উপকারিতা

ঝালপ্রেমীদের জন্য সুখবর হচ্ছে, বিশিষ্ট গবেষণাবিদদের তত্ত্বাবধানে ২০১৫ সালে হার্ভার্ড অ্যান্ড চায়না ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের করা এক গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে, ঝাল–মসলাদার খাদ্য গ্রহণকারীদের আয়ু অন্তত তুলনামূলকভাবে ১৪ শতাংশ বেশি বেড়ে যায়। এর পরে এ নিয়ে আরও গবেষণা করেও একই ধরনের ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মনে করেন, মসলাদার খাদ্য দেহের মেটাবলিজম ও শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলো ত্বরান্বিত ও বৃদ্ধি করে। হলুদের কারকিউমিন তো যুগ যুগ ধরে ইনফেকশন আর প্রদাহের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আদা–রসুনেরও আছে এ রকম গুণাগুণ। খুব আশার কথা হচ্ছে, মরিচের মূল উপাদান ক্যাপ্সাইসিনের অনন্য ভূমিকা রাখার ক্ষমতা থাকতে পারে ক্যানসার-যুদ্ধে আর প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও। এ নিয়ে বহু গবেষণা চলছে পৃথিবীজুড়েই।

Re56Z9s.jpg


মরিচসহ বিভিন্ন মসলার আছে অসাধারণ সব উপকারিতা, ছবি: বিবেক

এ ছাড়া বিভিন্ন মসলার আছে অসাধারণ সব উপকারিতা। বিশেষত, সাধারণ সর্দি-জ্বর, ছোটখাটো সংক্রমণ আর ক্ষুধামান্দ্য, অরুচির জন্য সঠিক মসলাদার খাবার খুবই উপকারী। তবে মসলাদার খাবারের চনমনে ভাব আর ঘেমেনেয়ে উঠে ফুরফুরে ভাব আমাদের দেহ–মনে নিয়ে আসে সঞ্জীবনী অনুভূতি, এ নিয়ে কোনোই সন্দেহ নেই। সারা বিশ্বেই এখন ঝাল–মসলাদার খাবারের ট্রেন্ড। সবকিছুতে হট সস ছিটিয়ে খাওয়া এখন পশ্চিমা কিশোর–তরুণদের মধ্যে বহুল প্রচলিত। লবণ, গোলমরিচ ছিটিয়ে ছুরি কাঁটা দিয়ে সটান বসে ডিনার করা ইংরেজদের জাতীয় খাদ্য নাকি এখন ঝাল ঝাল, নাকাল করা, হাত দিয়ে রুটির সঙ্গে খাওয়া চিকেন টিক্কা মাসালা কারি! আর আমরা তো এক মুঠো মরিচ বেটেই ভাত খেয়ে নিতে পারি অথবা পোড়া মরিচের সঙ্গে পান্তা! ঠেসে মরিচ দেওয়া ঝাল ঝাল চটপটি–ফুচকার সঙ্গেও উদ্‌যাপন করা যেতে পারে বিশ্ব ঝাল–মসলা দিবস!
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top