What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

tVnB2VH.jpg


লবঙ্গ আমাদের অতিপরিচিত একটি মসলার নাম। রান্নার স্বাদ আনতে এর জুড়ি মেলা ভার। এশিয়া, আফ্রিকা, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে ঝাল এবং মিষ্টি জাতীয় খাবারে এটি ব্যবহার করা হয়। আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে সিরিয়া, চীন, রোম, আফ্রিকাতে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে আধুনিক সময়ে সবার প্রথমে ইন্দোনেশিয়ার মালুকু দ্বীপপুঞ্জে এটি পাওয়া যায়। এরপর এখান থেকে ডাচ্‌ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে লবঙ্গ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

WGDQK68.jpg


চিরসবুজ লবঙ্গগাছের ফুলের কুঁড়িকেই লবঙ্গ বা লং, ছবি: উইকিপিডিয়া

চিরসবুজ লবঙ্গগাছের ফুলের কুঁড়িকেই লবঙ্গ বা লং বলা হয়। এই বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium aromaticum। রান্নার স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশেই এখনো ঔষধি উপাদান হিসেবে এর ব্যবহার করা হয়। লবঙ্গের ভেতর রয়েছে 'ইউজেনল' নামের একটি যৌগ, যা এর সুগন্ধের মূল কারণ। এটির ৭২ থেকে ৯০ শতাংশই ইউজেনলে ভরপুর। যৌগটি জীবাণু ও ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এতে আরও আছে ক্যারিওফিলিন নামের আরেকটি যৌগ যা একধরনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান।

পুষ্টি উপাদান

১ চামচ গুঁড়া লবঙ্গতে আছে ৬ ক্যালরি, ১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রাম ফাইবার, দৈনন্দিন চাহিদার ৩ শতাংশ ভিটামিন সি, ২ শতাংশ ভিটামিন কে এবং ৫৫ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ। এতে কিছু পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন ই–ও আছে। এ ছাড়া আছে সামান্য ক্যারোটিন পিগম্যান্ট, যা ভিটামিন এ–তে পরিণত হয়।

aU4rem2.jpg


লবঙ্গতে ব্যথা উপশমকারী উপাদান আছে, ছবি: উইকিপিডিয়া

দাঁতের নানা সমস্যার সমাধানে

শোনা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব তিন শতকে চীনে যখন হান রাজবংশের শাসন চলছে, তখন নাকি সেখানকার রাজ্যসভায় মুখে লবঙ্গ রেখে প্রবেশ করতে হতো। কারণ, এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। আর আমাদের এই উপমহাদেশে দাঁতে সামান্য ব্যথা হলেই দাদি–নানিরা লবঙ্গ খেতে বলতেন। এতে নাকি ব্যথার উপশম হয়। নানা রকমের পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার পর এর সত্যতা মিলেছে। ৪০ জনকে নিয়ে করা ২১ দিনের একটি গবেষণার জন্য সবাইকে লবঙ্গ, টি ট্রি ওয়েল আর তুলসীমিশ্রিত ভেষজ মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে বলা হয়। এই ৪০ জনের সবাই দাঁতের কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগছিলেন। ২১ দিন পর দেখা যায়, দাঁতের সমস্যা, যেমন দুর্বল মাড়ি, দুর্গন্ধ, প্ল্যাক সবকিছুই প্রায় সেরে গেছে। এ জন্য দন্ত্য চিকিৎসকেরা প্রায়ই রোগীদের ওষুধের পাশাপাশি লবঙ্গ চা বা আস্ত লবঙ্গ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

খাদ্যে বিষক্রিয়া সারাতে

অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে অনেকেই মাঝেমধ্যে বিষক্রিয়ার সম্মুখীন হন। এ সময় লবঙ্গ খেলে দ্রুতই উপকার পাওয়া যায়। এতে বিদ্যমান ইউজেনল একটি শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এটি খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য দায়ী ই কোলাই, স্টেপটোকক্কাস, স্ট্যাফিলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া মারতে সহায়তা করে।

ivfONg4.jpg


লবঙ্গ শুকানো হচ্ছে, ছবি: উইকিপিডিয়া

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে

লবঙ্গে আছে নাইজেরিসিন নামের একটি যৌগ। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে বেশ কার্যকর। নাইজেরিসিনের জন্যই রক্ত থেকে শর্করা বিভিন্ন কোষে পৌঁছে দেওয়া, ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়ানো ও ইনসুলিন নিঃসৃত হওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর মতো কাজ ভালোভাবে হয়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লবঙ্গ খাওয়া যেতে পারে।

ক্যানসার প্রতিরোধে

লবঙ্গ অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের আধার। ইউজেনল একটি শক্তিশালী অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা ভিটামিন ই–এর চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি কার্যকরভাবে শরীরে ফ্রি র‍্যাডিকেলের ফলে হওয়া অক্সিডেটিভ ক্ষতি থামাতে পারে। অক্সিডেটিভ ক্ষতির কারণে ক্যানসার হয়ে থাকে।
হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায়

লো বোন মাস বা হাড়ের কম ঘনত্ব এমন একটি অবস্থা, যা বয়স্কদের অস্টিওপরোসিস রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে, ইউজেনল হাড়ের ঘনত্ব বাড়িয়ে এটি মজবুত করে থাকে। এ ছাড়া লবঙ্গ ম্যাঙ্গানিজের উৎকৃষ্ট উৎস। ক্যালসিয়ামের মতো এটিও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী।

আলসার নিরাময়ে

ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, স্ট্রেস বা জিনগত কারণে পেপটিক আলসার বা পাকস্থলীর আলসার হয়ে থাকে। লবঙ্গ দিয়ে তৈরি অ্যাসেনশিয়াল ওয়েল গ্যাসট্রিক মিউকাসের উৎপাদনে সাহায্য করে। এই মিউকাস পাকস্থলীকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে ঢাল হিসেবে কাজ করে।

DBfBipS.jpg


লবঙ্গের উপকারিতা ভালোভাবে পেতে প্রতিদিন অন্তত এক কাপ লবঙ্গের চা খেতে পারেন

যেভাবে খাওয়া যায়

মসলা হিসেবে রান্নায় তো দেওয়া যায়ই। লবঙ্গের অন্যান্য উপকারিতা ভালোভাবে পেতে প্রতিদিন অন্তত এক কাপ লবঙ্গের চা খেতে পারেন। বানানোর পদ্ধতি খুবই সহজ। এক কাপ গরম পানিতে ৫-৬টি লবঙ্গ জ্বাল দিলেই তৈরি লবঙ্গ চা। সর্দি–কাশিতেও এটি বেশ উপকারী। এ ছাড়া সামান্য লবণ দিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। যদি না উচ্চ রক্তচাপের কোনো সমস্যা না থাকে।

সতর্কতা

লবঙ্গের ইউজেনলের গুণাগুণ অনস্বীকার্য। তবে মাথায় রাখবেন, এটি বেশ টক্সিক একটি উপাদান। অতিরিক্ত লবঙ্গ খেলে যকৃতের ক্ষতি হতে পারে। এ জন্য নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খেতে হবে। ১৫ বছরের নিচের শিশুদের আলাদা করে লবঙ্গ বা এর চা থেকে দূরে রাখুন।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন, মেডিকেল নিউজ টুডে, ভেরি ওয়েল হেলথ, ওয়েব এমডি
 

Users who are viewing this thread

Back
Top