What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review আড়াই ঘণ্টার মুগ্ধতা ‘ন্যায় অন্যায়’ (1 Viewer)

nTeRTgW.jpg


১৯৯১ সালের মধ্য দিকে গ্রাম থেকে আসা এক মামাকে নিয়ে সিলেটের নন্দিতা সিনেমা হলে সন্ধ্যা ৬টার শো দেখতে গিয়েছিলাম। তার আগে পাশের অবকাশ ও দিলশাদ সিনেমা হলে প্রদর্শিত হওয়া 'পদ্মা মেঘনা যমুনা' ও 'গর্জন' সিনেমার পোস্টার দেখতে দেখতে নন্দিতার সামনে এসে 'ন্যায় অন্যায়' সিনেমার পোস্টার দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম কোনটা দেখবো।

মামা পোস্টারে এ জে মিন্টুর 'ন্যায় অন্যায়' লেখা দেখেই বলে ফেললেন 'ভাগিনা ন্যায় অন্যায় দেখমু।' কারণ জিজ্ঞেস করায় বললেন 'এ জে মিন্টুর সিনেমা মামু, বাকিগুলো পরে আগে এইটা।' আমি মনে মনে যে 'ন্যায় অন্যায়' দেখতে চাইছিলাম সেটা আর বুঝতে দেইনি। আমারও দেখার উদ্দেশ্য একটাই।

'লালু মাস্তান'-এর পর এ জে মিন্টুর পিওর কমার্শিয়াল ধামাকা 'ন্যায় অন্যায়', তবে এই সিনেমার পূর্বে তিনি 'সত্য মিথ্যা' দিয়ে দর্শক ও সমালোচকদের হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন এবং আবার মাশালাদার সিনেমা নির্মাণ করলেন।

সিনেমা শুরু হয় শিল্পপতি আনোয়ার হোসেন ও আনোয়ারা দম্পতির সুখের সংসার দিয়ে যেখানে গানে গানে বলেছিলেন 'আমাদের ঘর কত সুন্দর, স্নেহভরা মমতায় ভরা কটি প্রাণ, সব মিলে যেন এক সাজানো বাগান'। কিন্তু সেই সংসারে আনোয়ার হোসেনের সরল বিশ্বাসে হুট করে জায়গা করে নেয় ছদ্মবেশী আহমেদ শরীফ। আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে জায়গা পাওয়ার পর সে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দলবল দিয়ে ডাকাতি করায় এবং সেই রাতে মুখোশ পরে আনোয়ার হোসেনের শ্যালিকা তরুণী খালেদা আক্তার কল্পনাকে ধর্ষণ করে, ডাকাত দল যাওয়ার আগে আহমেদ শরীফের গায়ে আঘাত করে যেন সবাই বুঝতে পারে ডাকাত দলকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে আহত হয়েছে।

এদিকে ধর্ষিতা কল্পনাকে নিয়ে আনোয়ার হোসেন ও আনোয়ারা চিন্তিত হয়ে পড়লে আহমেদ শরীফ বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় যাতে সরল বিশ্বাসেই সবাই রাজি হয়ে যায়। বিয়ের কদিন পরেই কল্পনার কাছে ধরা পড়ে যায়, মুখোশধারী সেই ডাকাত ছিলো আহমেদ শরীফ এবং সে-ই পরিকল্পিতভাবে ডাকাতি করে। আহমেদ শরীফ কল্পনাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়। এবার সে আনোয়ার হোসেনের ছেলেকে স্কুল থেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করতে যায়, যেখানে মুক্তিপণ দিতে গিয়ে আহমেদ শরীফকে চিনে ফেলে আনোয়ার হোসেন। আহমেদ শরীফ আর আনোয়ার হোসেনকে ছাড়ে না। ছেলে বন্দীদশা থেকে পালিয়ে যায় আর আনোয়ার হোসেন চিরদিনের মতো বন্দী হয়ে থাকে আহমেদ শরীফের আস্তানায় যাকে নির্যাতন করার রেকর্ড দেখিয়ে দেখিয়ে আনোয়ারার মুখ বন্ধ করে রেখে সব সম্পত্তি নিজে ভোগ দখল করতে থাকে আহমেদ শরীফ।

এভাবে নানা ঘটনায় এগিয়ে যায় গল্পটি এবং আহমেদ শরীফ ও তার দলবলকে হাতে প্রমাণে ধরতে আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে ছদ্মবেশে জিনাতের (আনোয়ার হোসেনের মেয়ে) স্বামী হিসেবে প্রবেশ করে সিআইডি অফিসার আলমগীর। যাকে প্রতিরোধ করতে ভাড়া করে আহমেদ শরীফ নিয়ে আসে রানা মাস্তান নামের জসিমকে যে জসিমই হলো আহমেদ শরীফের বন্দীদশা থেকে পালিয়ে যাওয়া আনোয়ার হোসেনের কিশোর ছেলেটা। একসময় ধূর্ত আহমেদ শরীফের মুখোশ উম্মোচিত হয় এবং আনোয়ার হোসেন তার পরিবারে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে সিনেমাটি শেষ হয়। কিন্তু দর্শকদের চোখে মুখে রয়ে যায় আড়াই ঘণ্টার মুগ্ধতার রেশ।

এ জে মিন্টু কেমন পরিচালক ছিলেন তা নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রতিটি সিনেমায় 'কেন তাকে বাংলা বাণিজ্যিক সিনেমার মাস্টার মেকার বলা হতো?' এই প্রশ্নের জবাব তিনি অসাধারণভাবে দিয়ে যেতেন। পুরোপুরি মাশালাদার সিনেমা কিংবা দর্শক সমালোচকদের মন জয় করার মতো সিনেমা সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন অন্যন্য অসাধারণ যার কারণে বাঘা বাঘা পরিচালকদের ভিড়ে তিনি চাবার শ্রেষ্ঠ পরিচালক হওয়ার এক অন্যন্য সম্মান অর্জন করেছিলেন।

শেষ করার আগে একটা তথ্য দেই তা হলো— জসিমের সাথে এ জে মিন্টুর 'ন্যায় অন্যায়' ছিলো সর্বশেষ সিনেমা। যার পর মিন্টুর আর কোন সিনেমায় জসিমকে পাওয়া যায়নি। প্রথম চলচ্চিত্র 'মিন্টু আমার নাম' থেকে মিন্টু-জসিম জুটির শুরু, যার পর প্রতিজ্ঞা, বাঁধনহারা, অন্যায়, চ্যালেঞ্জ, প্রতিহিংসা, মান সম্মান, অশান্তি, বিশ্বাসঘাতক, লালু নাস্তান ও 'ন্যায় অন্যায় দিয়ে দীর্ঘ সফলতার সমাপ্তি হয়। খলনায়ক থেকে নায়ক দুই রূপেই জসিমকে অসাধারণভাবে দর্শকদের মনে চিরদিনের জন্য ঠাঁই করিয়ে দিয়েছিলেন মাস্টার মেকার এ জে মিন্টু।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top