What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other আমার একান্ত কাঞ্চন (1 Viewer)

bbB6TUk.jpg


আমরা যখন বেড়ে ওঠার বয়সটা পার করছি যে নায়কদের ছবি সিনেমাহলে দেখে যাচ্ছিলাম তার মধ্যে মান্না, সালমান শাহ, রুবেল, আমিন খান, রিয়াজ, ওমর সানী, শাকিল খান, ফেরদৌস, শাকিব খান ছিল। তখনকার নব্বই দশকে আমাদের হাফ প্যান্ট পরার বয়স থেকেই সালমান শাহ, মান্না তাদের দাপট ছিল দারুণ। আমাদের ঐ সময়টাতে বড়ভাই বা চাচা-রা ইলিয়াস কাঞ্চনের গল্প খুব করতেন। কাঞ্চনকে বড়পর্দায় আমি খুব কম পেয়েছি। গুটিকয়েক ছবি দেখেছি যখন সে তার সময়ের রাজত্বের শেষের দিকে ছিল। কাঞ্চনের গল্প শুনতে শুনতে তার প্রতি খুব আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল। বিটিভি-ই ছিল ভরসা আর পরে চালু হওয়া একুশে টিভিতে যে বাংলা ছবিগুলো দিত কাঞ্চন প্রায়ই থাকত। টিভিপর্দায় দেখেই কাঞ্চনের ভক্ত হতে থাকি ধীরে ধীরে কারণটা তো বলেছিই সিনেমাহলে তাকে তেমনটা পাইনি। শেষের দিকের কিছু ছবি দেখেছিলাম।

আমাদের থানাশহরের সিনেমাহলে দর্শক ডিমান্ডে প্রায়ই পুরনো ছবি চালানো হত। এর ভেতরে সবচেয়ে বেশি চালাত 'ছুটির ঘণ্টা।' এটা দেখেছিলাম বাবার সাথে। ওটাই জীবনের প্রথম ছবি ছিল সিনেমাহলে দেখা। সিনেমাহলের প্রতি ভালোবাসা ঐ যে শুরু হলো আর থামল না। তো যেটা বলছিলাম কাঞ্চনকে টিভিতে দেখেই সিনেমাহলের ক্ষুধা মেটাতে হয়েছিল। যেদিন 'বদসুরত' ছবিটা প্রথম দেখি টিভিতে খুব ভয় পেয়েছিলাম। নায়কের মুখ এত কুৎসিত হবে কেন এটা ভেবে আমরা বন্ধুমহল ছবির পরিচালকের গুষ্টি উদ্ধারও করেছিলাম প্রথমে। পরে আবার প্লাষ্টিক সার্জারির মাধ্যমে কাঞ্চনের মুখটা অসাধারণ হয়। তখন আর গুষ্টি উদ্ধারের দরকার পড়েনি..😃..'ভাইবন্ধু' ছবিটা দেখার পর এ ছবিটা এত ভালো লেগেছিল যে আবার কবে হবে সে অপেক্ষায় থাকতাম।

বিশেষ করে অপূর্ব সব গানের জন্য। 'ভেঙেছে পিণ্জর মেলেছে ডানা' এ গানটা তো লিজেন্ডারি হয়ে গেছে। এছাড়া 'তুমি এলে সমুখে' অসম্ভব রোমান্টিক গান যেটা ছিল স্টেজ পারফরম্যান্স। বড়বেলায় এসে যখন জানতে পারি এশিয়া মাইনরের অভিনেত্রীরাও তখন আমাদের ছবিতে কাজ করেছিল খুব ভালো লেগেছে। ছবিতে জাফর ইকবালের নায়িকা ছিল একটা বিদেশী মেয়ে যার নাম ছিল তামারা। তাজিকিস্তানের অভিনেত্রী। আসল নামটাই ব্যবহার হয়েছিল। এছাড়া কাঞ্চনের নায়িকা ছিল কলকাতার সুনেত্রা। তখন টলিউডের থেকে আমরা এগিয়ে ছিলাম বাণিজ্যিক ছবির টেকনিকের দিক থেকে এসব ভাবতে দারুণ লাগে। কি দিন ছিল আমাদের!

ruo7IzZ.jpg


'বন্ধন' ছবিটা দেখেছিলাম যেদিন শাবানা ও কাঞ্চনের ভাইবোনের সম্পর্ক দেখে মনে হয়েছিল আমি আমার বোনকে কতটা ভালোবাসি…♥..কাঞ্চন-চম্পার ছেলে মারা যাওয়ায় শাবানা নিজের ছেলেকে দিয়ে দেয় লুকিয়ে। স্যাক্রিফাইসটা পরে জানতে পারে সবাই। একটা সিকোয়েন্স হৃদয়কে খুব সহজে স্পর্শ করেছিল। শাবানার বিয়ে হয় আলমগীরের সাথে ঠিক পরদিন সকালে ব্রেকফাস্টে বসেছে সবাই তখন কাঞ্চন শাবানার বাড়ি গিয়ে হাজির। ভাইয়ের অশ্রুভরা চোখ দেখে শাবানা বুঝে যায় বোনকে ছাড়া থাকতে তার কতটা কষ্ট হয়েছে। ভাইবোন জড়িয়ে ধরে পরস্পরকে। এগুলো হচ্ছে পারিবারিক মূল্যবোধ যা আপনার আমার সবার ভেতরে আছে।

'স্নেহের প্রতিদান' ছবিটাতে চোর অপবাদে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয় কাঞ্চনকে। কাঞ্চন পরে নিজের চেষ্টায় বড় শিল্পী হয়। রাজিব তার অভিভাবক ছিল। কাঞ্চন রাজিবের অপমানের শোধ নেয় নানাভাবে। বিভিন্ন গেটআপে দেখা গিয়েছিল কাঞ্চনকে। সিরিয়াসনেস, কমেডি দুটোই ছিল অভিনয়ে। 'প্রেমের প্রতিদান' ছবির 'আমার মনের আকাশে আজ জ্বলে শুকতারা' অ্যামেজিং গান ছিল। টিভিতে ছবিটা দেখার পরে সবার মুখে মুখে ছিল গানটা। তখন একটা ঘটনা ঘটত। এক শুক্রবার থেকে আর এক শুক্রবার পর্যন্ত যে ছবি প্রচার হত তার কোনো গান ভালো লেগে গেলে সেটা ছেলেপেলেরা সারা সপ্তাহ গাইত। আমরা তখন দেশীয় ছবিকে এভাবেই উদযাপন করতাম। 'বেদের মেয়ে জোসনা' মাস্টারপিস কাঞ্চনের। মনে আছে থানাশহরের সিনেমাহলে দর্শক ডিমান্ডে যেদিন লাগানো হলো লোকে লোকারণ্য ছিল আবার টিভিতে একদিন দিল গ্রামের ক্লাব কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। ছবির প্রত্যেকটা গান, সংলাপ, দৃশ্য বড়ভাই, চাচা, মামাদের মুখস্থ। ছবির সাথে সাথে নিজেরা বলত। একটা ছবির দর্শক রেসপন্স কতটা হাই লেভেলের হতে পারে ঐ সময়েই বুঝেছিলাম।

PA1953c.jpg


আমার ভালো লেগেছিল 'বেদের মেয়ে জোসনা আমায়' আর 'আমি বন্দী কারাগারে' গান দুটি। 'অচেনা' ছবিটা অনেক ভালো লেগেছিল। শাবানার সাথে মানসিক দ্বন্দ্ব ছিল কাঞ্চনের। শাবানা জানত না কাঞ্চন তারই ছেলে। আলমগীর কাঞ্চনের ড্রাইভার ছিল। জ্বরে পড়ে আলমগীর ডিউটিতে যেতে না পারায় কাঞ্চন তার বাড়ি গিয়ে শাবানাকে ইংরেজিতে শিষ্টাচার শেখাতে চায়। কাঞ্চন মনে করে শাবানা তেমন কিছু জানে না কিন্তু কাঞ্চনকে চমকে দিয়ে শাবানাও ইংরেজিতে শিক্ষা দিয়ে দেয়। অসাধারণ একটা সিকোয়েন্স ছিল। চম্পার সাথে 'আর যাব না এমেরিকা' গানটা খুবই প্রিয়। 'মহৎ' ছবিতে স্যাক্রিফাইসিং ক্যারেক্টার করেছিল কাঞ্চন। ওমর সানী ও শাহনাজের সাথে 'প্রেম কখনো মধুর' গানটি আমাদের ছবির ক্লাসিক গানের মধ্যে অন্যতম। মৌসুমীর সাথে 'শেষ রক্ষা' ছবিতে 'আমার হবে সেই বৌ' গানটি খুব মজা দিয়েছিল। এ গানটা স্কুলে গিয়ে আমরা বান্ধবীদের গেয়ে শোনাতাম আর ক্ষেপাতাম। 'আত্মত্যাগ' ছবিতে 'এ জীবন তোমাকে দিলাম বন্ধু' গানটি অার একটা ক্লাসিক গান।

কাঞ্চনের এক্সপেরিমেন্ট দুর্দান্ত ছিল। 'সিপাহী' ছবির শেষ দৃশ্যে জাতীয় সংসদের সামনে দেশ ও জাতির কাছে বিচার প্রার্থনার আর্তনাদ করে যে অভিনয় করেছে কাঞ্চন সেটা তার নিজস্ব ক্যারেক্টার দখল করার ক্ষমতা। ববিতার সাথে সাদাকালো 'সুন্দরী' ছবির নায়ক ছিল সে। এছাড়া ছিল 'বসুন্ধরা' ছবিতেও যেটা ছিল 'তেইশ নম্বর তৈলচিত্র' উপন্যাস থেকে নির্মিত। 'সুন্দরী' ছবির 'কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিল না' গানটি বয়স্ক যারা খুব পছন্দ করত। শাবানার মতো সিরিয়র অভিনেত্রীর নায়ক হয়েছিল 'শেষ উত্তর' ছবিতে। দেখে চমকে গিয়েছিলাম। 'বাল্যশিক্ষা' ছবির 'খোদা তোমার এ দুনিয়ায়' বা 'আমার এ গানখানি যদি ভালো লাগে' জাস্ট অসাধারণ ছিল। কাঞ্চনকে ঐ ছবিগুলোতে খুব ইনোসেন্ট লেগেছিল। রেডিওতে খুব বাজাত গানগুলো। 'আঁখি মিলন' ছবির 'আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে' আমার মতে কাঞ্চনের সবচেয়ে হিট গান। বাংলাদেশী ছবি সম্পর্কে একটু হলেও যারা খোঁজ রাখে তারা এ গানটা অবশ্যই শুনেছে। আরো কত ছবি কত স্মৃতি কাঞ্চনকে নিয়ে তবে অাফসোস একটাই কাঞ্চনের 'ভেজা চোখ' নামের ক্লাসিক ছবিটি দেখতে পারিনি। ইউটিউবে ছবির অডিও শুনে সান্ত্বনা খুঁজেছি। এ ছবির 'জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প' চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া ক্লাসিক গান। আর একটা আছে 'তুই তো কাল চলে যাবি'।

gq71KDX.jpg


আমার নিজের কাছে কাঞ্চনকে কান্নার অভিনয়ে সবচেয়ে ভালো লাগে। জীবন্ত মনে হয়। মনে হয় আমার চোখের সামনে কাঁদছে। আর ভালো লাগে কাঞ্চনের বডি ল্যাংগুয়েজ। যে ক্যারেক্টারই দেয়া হোক পারফেক্ট বডি ল্যাংগুয়েজে করে দেখাবে। বলিউডি পারফেকশনিস্ট বলতে যে বিশেষণ করে যারা হ্যাপি থাকে তাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে ইচ্ছে করে কাঞ্চন আমাদের বিশাল বড় পারফেকশনিস্ট।

কাঞ্চনকে নিয়ে আমাদের ছেলেবেলার সিরিয়ররা যা বলতেন সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে সত্য। তারা কাঞ্চনকে নিয়ে গর্ব করতেন। বলতেন কাঞ্চন তাদের হাসাত, কাঁদাত। আর আমার স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার সাথে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গিতে কাঞ্চন সেই নায়ক যার ছবিতে মানুষের প্রতিদিনের জীবনের নানা উপলব্ধিগুলো আছে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এ তিন পরিসর মিলিয়েই তো আমরা থাকি কাঞ্চন তিন পরিসরেই ছবি করেছে এবং সফল। তাকে টুপি খোলা সালাম করা যায় আর সেজন্যই তিনি আমাদের ইন্ডাস্ট্রির বিগেস্ট সুপারস্টার।

আমার একান্ত ইলিয়াস কাঞ্চন স্মৃতি-অনুভূতিতে এভাবেই উজ্জ্বল। এর সাথে খুঁজে নিতে পারেন আপনার একান্ত কাঞ্চনকেও।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top