What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

শেষের পাতায় শুরু (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
"শেষের পাতায় শুরু" - by pinuram

TGQ8JOq.jpg


গল্পটা সম্পূর্ণ রূপে কাল্পনিক এবং সম্পূর্ণ লেখকের চিন্তন প্রভুত, এই গল্পের সব চরিত্র আর ঘটনা সম্পূর্ণ রূপে লেখকের মস্তিস্ক প্রভুত, কোন জীবিত অথাব মৃত ব্যাক্তির সাথে কোন মিল নেই, যদি কেউ কোন মিল খুঁজে পান তাহলে সেটা নিতান্তই কাকতালীয়।

পর্ব এক (#1-1)

সামনের বাড়ির কার্নিশে কাকটা অনেকক্ষণ ধরে একটানে ক্যা ক্যা করে যাচ্ছিল। আকাশে মেঘের ঘটা দেখে কারুর বলার জো নেই যে শরত কাল এসে গেছে। সেই সাদা পোজা তুলোর মেঘের জায়গায় কালো মেঘ ছেয়ে ছিল আকাশে। হয়ত কিছুক্ষনের মধ্যেই বৃষ্টি নামবে। তেইশটা বসন্ত পেরিয়ে আসা সুন্দরী আম্বালিকার মন হারিয়ে যায় আকাশের কালো মেঘের আনাগোনা দেখে। গত রাতে ঝম ঝম করে বৃষ্টি হয়েছিল, মেঘের গর্জনে অনেকক্ষণ ঘুম আসেনি ওর। মা থাকলে, মায়ের পাশে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে নিশিন্ত মনে ঘুমাতে পারত, কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসেনি ওর চোখে। কয়েক মাস পরেই ওর মাস্টার্সের পরীক্ষা তারপর চাকরি করবে ইচ্ছে আছে। প্রোফেসর কি যে ছাতার মাথা পড়িয়ে চলেছে সেইদিকে বিশেষ মন ছিল না ওর। এক মনে কাক টাকে দেখতে দেখতে পাতলা গোলাপি ঠোঁটের মাঝে পেন চিবোতে চিবোতে কোথায় যেন হারিয়ে গেছিল। মনের আঙ্গিনায় গুন গুনিয়ে ওঠে একটা গানের কলি, ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস আজকে হল সাথী, সাত মহলার স্বপ্নপুরী, নিভল হাজার বাতি... ও যে বড় একা, নীলাদ্রি না থাকলে হয়ত হারিয়ে যেত কোথাও। আরো একজন আছে ওর জীবনে যার মিষ্টি হাসি মনে পরলে সব কিছু বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত।

ওর প্রিয় আর একমাত্র বান্ধবী পিয়ালীর আলতো ধাক্কায় সম্বিত ফিরে পেল আম্বালিকা, "কি রে আজকে তোর মন কোথায়?"

মিষ্টি হেসে উত্তর দেয় আম্বালিকা, "এই ত আছি।"

পিয়ালী জিজ্ঞেস করে, "আজকে তোর ভাইয়ের জন্মদিন না?"

মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।" মুচকি হেসে বলে, "পরের বছর নার্সারিতে ভর্তি হবে সেটা ভেবেই কেমন যেন হাসি পাচ্ছে। দিনে দিনে যা বাঁদর হচ্ছে না, কি বলব।"

বলেই দুই বান্ধবী হেসে ফেলে।

আম্বালিকার মা মারা যায়, তখন আম্বালিকা অনেক ছোট। বাবা, দক্ষিণ কোলকাতার নামজাদা ডাক্তার, ঢাকুরিয়ায় ওদের বিশাল দোতলা বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনায় খুব ভালো তাই বাবার ইচ্ছে ছিল মেয়েও ডাক্তারি নিয়ে পড়বে। কিন্তু ডাক্তারি পড়া আর হয়নি ওর। ওর মা মারা যাওয়ার পর থেকে ওর বাবা বেশির ভাগ সময় হস্পিটাল আর পেসেন্ট নিয়েই পড়ে থাকতেন। ধিরে ধিরে বাবার আর মেয়ের মাঝের ব্যাবধান অনেক বেড়ে যায়। বেশ কয়েক বছর পরে ওর বাবা দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন তার হস্পিটালের একজন নার্সকে, সুমিতা। তারপর থেকেই বাবা আর মেয়ের সম্পর্কে চিড় ধরে যায়। বিশাল দুতলা বাড়িতে বড্ড একা আম্বালিকা, মন মাঝে মাঝেই কেঁদে উঠত, মাঝে মাঝে মনে হত সব কিছু ছেড়ে যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবে। বাবার ইচ্ছে অমান্য করেই ডাক্তারি পরীক্ষা ঠিক ভাবে দেয়নি, কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়ে কলেজে। সেই নিয়ে বহুবার আম্বালিকাকে বাবার কাছে কথা শুনতে হয়েছে। ওর সৎমায়ের সাথে ইচ্ছে করেই ভালো সম্পর্ক রাখেনি কোন দিন আম্বালিকা, কিন্তু সুমিতা সবসময়ে চেষ্টা করতেন বাবা মেয়ের মাঝে যেন একটা সুহৃদ সম্পর্ক বজায় থাকে। কলেজে পড়ার সময়ে নীলাদ্রির সাথে দেখা। নীলাদ্রি যদিও ওর কলেজের ছাত্র ছিল না, দু'বছর আগেই যাদবপুর থেকে আরকিটেকচার নিয়ে পাশ করেছে। একটা কন্সট্রাক্সান কোম্পানিতে চাকরি করে। নীলাদ্রি আর ওর সম্পর্ক নিয়ে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল বাবার সাথে তবে মেয়ের জেদের সামনে ঝুঁকে যেতে হয়। মেনে নেন আম্বালিকা আর নীলাদ্রির সম্পর্ক।

গত বছরের ঠিক এই রকম এক দিনের কথা মনে পড়ে যায়। বাবার সাথে নীলাদ্রিকে নিয়ে তুমুল ঝগড়া, রাগে দুঃখে আম্বালিকা নিজের ঘরে ঢুকে আত্মহত্যা করতে যায়। কিন্তু নিজের ঘরে ঢুকে বিছানার দিকে তাকিয়ে ওর আর আত্মহত্যা করা হল না। কচি এক শিশু ওর বিছানায় বসে ওর পেন খাতা বই সব কিছু মেলে ধরে খেলায় মত্ত। আম্বালিকাকে উন্মাদ অবস্থায় ঘরের মধ্যে ঢুকতে দেখে সেই শিশুটা কিছু না বুঝেই ওর দিকে কচি হেসে দুই হাত মেলে ধরে। ওর সৎমা, ওর নামের সাথে মিলিয়ে ছেলের নাম রেখেছিল অম্বরীশ। আম্বা আদর করে ওকে রিশু ডাকত। রিশুর নরম টোপা গালের হাসি দেখে আম্বা আর সেই যাত্রায় আত্মহত্যা করতে পারল না। জড়িয়ে ধরেছিল দুই হাতে সেই কচি শিশুকে। নাকের ওপর নাক ঠেকিয়ে হেসে বলেছিল, বড্ড দুষ্টু তুই, আমার সব খাতা বই নষ্ট করে দিলি। বাঁচতে হলে শুধু তোর জন্যেই বাঁচব। সেই কচি অম্বরীশের সেদিন ছিল জন্মদিন। নীলাদ্রিও আসবে পীয়ালি ও নিমন্ত্রিত।

পিয়ালী জিজ্ঞেস করে, "নীলাদ্রি কলেজে আসবে কি?"

মাথা দোলায় আম্বালিকা, "হ্যাঁ আসবে, হয়ত বাইরে দাঁড়িয়ে। তারপর একটু বাজারে যাবো একটু কেনাকাটা আছে, রিশুর কেকের অর্ডার দিয়েছি সেটা নিয়ে বাড়ি ফিরব। তুই ওই সাতটার মধ্যে চলে আসিস, আমরা ততক্ষনে বাড়ি পৌঁছে যাবো।"

পিয়ালী জিজ্ঞেস করে, "এই পুজোতে কোথাও যাচ্ছিস নাকি তোরা?"

মাথা দোলায় আম্বালিকা, "না রে, বাবা মনে হয় পুজোতে বাড়িতে থাকবে না। এক কনফারেন্সে নিউইয়র্ক যাওয়ার কথা আছে। বাড়িতে শুধু আমি আর সুমিতা থাকব।"

পিয়ালী কপট হেসে জিজ্ঞেস করে, "এখন সব ঠিক আছে তোদের মধ্যে?"

আম্বালিকা মাথা দোলায়, "ওই আছে এক রকম, যেমন থাকতে হয়।"

ঘড়ি দেখে আম্বালিকা, সাড়ে তিনটে বাজে, এই ক্লাসের পরে আর কোন পিরিওড নেই, নীলাদ্রির সাথে বেড়িয়ে যাবে।

ঠিক সেই সময়ে লেকচার থেমে যেতেই সবাই উন্মুখ হয়ে পরে। পিওন এসে সরকার স্যারের কানে কানে কিছু একটা বলতেই, সরকার স্যার আম্বালিকা কে ডাক দেন, বলেন যে প্রিন্সিপাল ওকে নিজের কেবিনে ডেকেছেন। আম্বালিকা বরাবর ভালো ছাত্রী, লেকচার থামিয়ে এইভাবে প্রিন্সিপালের ডাক পড়বে সেটা নিতান্ত আশাতীত। পিয়ালী ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, কি ব্যাপার, হটাত এইভাবে কেন ডেকেছেন। এর উত্তর আম্বালিকার নিজের জানা নেই, তাই বই গুছিয়ে চুপচাপ পিওনের পেছন পেছন ক্লাস ছেড়ে বেড়িয়ে আসে। প্রিন্সিপালের কেবিনের দিকে যেতে যেতে পিওনকে প্রশ্ন করলে তার কোন সদুত্তর পায়না। বুকের হাতুরি বেজে চলেছে এক নাগাড়ে, হটাত করে এইভাবে সমনের কারণ কিছুতেই খুঁজে পায়না। প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকেই ওর চোখ পরে চেয়ারে বসে থাকা এক পুলিস ইন্সপেক্টরের ওপর। হাজার প্রশ্ন নিয়ে পুলিসের দিকে তাকিয়ে থাকে আম্বালিকা। তারপর যে ঘটনা শুনল তাতে ওর পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। রিশুকে নিয়ে ওর বাবা আর সুমিতা, দুপুরের দিকে বেড়িয়েছিল একটু। বাড়ি ফেরার পথে বাসের সাথে ওদের গাড়ির এক্সিডেন্ট হয়। ওর বাবা আর সুনিতা, তৎক্ষণাৎ মারা যান, ভাগ্যক্রমে রিশুর বেশি আঘাত লাগেনি। সব শুনে কিংকর্তব্য বিমুড়ের মতন হা করে চেয়ে থাকে সবার দিকে। বাবার প্রতি তেমন টান কোনদিন ছিল না তবে এইভাবে হটাত করে ওকে ছেড়ে চলে যাবে সেটাও ভাবেনি আম্বালিকা। মাথা ঘুড়ে পরে যাওয়ার মুহূর্তেই, পিয়ালী ওকে ধরে ফেলে। প্রিন্সিপালের রুমের বাইরে তখন অনেক ভিড়।

পিয়ালী আম্বালিকাকে নিয়ে কলেজ ছেড়ে বেড়িয়ে আসে, সাথে আরো কয়েকজন। কলেজের বাইরে নীলাদ্রিকে দেখে ভেঙ্গে পরে আম্বালিকা, ভাষা হারিয়ে যায়, কি বলবে কি করবে ভেবে পায় না। ট্যাক্সি করে পুলিশের গাড়ির পেছন পেছন হসপিটাল পৌঁছায়। বাবা নাম করা ডাক্তার ছিলেন, তাই সেই হস্পিটালের অনেকের চেনা। মর্গে বাবা আর সুমিতার দেহ সাদা কাপড়ে ঢাকা দেখে, অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে। একবারের জন্য মনে হয় যেন সব শেষ হয়ে গেল। চোখ বন্ধ করে, বুক ভরে শ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করে অম্বরীশের কথা। ডাক্তার জানায়, ভাগ্যক্রমে ছোট্ট রিশুর বিশেষ আঘাত লাগেনি, কাকতালীয় ভাবে পেছনের সিটের মাঝে আটকে ছিল। আম্বালিকা চোখ মুছে পেডিয়াট্রিক বিভাগে প্রবেশ করে। নার্সেরা ছোট্ট রিশুকে নিয়ে হিমসিম, এক নাগারে কেঁদে চলেছে, ওর চারপাশে সবাই অচেনা। দিদিকে দেখতে পেয়েই লাফ দিয়ে দিদির কোলে উঠে প্রানপন শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে। আম্বালিকা চোখ বন্ধ করে শেষ শক্তিটুকু নিঃশেষ করে শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধরে রিশুকে। এর সামনে কাঁদলে চলবে না, ভেঙ্গে পরলে চলবে না ওর। এক বছর আগের সেই কথা মনে পরে যায়, এরপর বাঁচতে হবে শুধু এই শিশুটার জন্য।

আম্বালিকা রিশুর গালে চুমু খেয়ে বলে, "আমার সোনা বাবার কি হয়েছে?"

আদো আদো কন্ঠে উত্তর দেয় রিশু, "মা তই? আমি বালি দাবো..."

ম্লান হাসে আম্বালিকা, "হ্যাঁ সোনা এই যাবো।" রিশুর চোখের জল মুছিয়ে টোপা নরম গালে বার কয়েক চুমু খেয়ে আদর করে বলে, "আজ আমার সোনার জন্মদিন, আমার সোনা কেক খাবে, কত লাল রঙের গাড়ি আসবে, কত খেলনা আসবে।"

দিদির প্রবোধ বাক্যে ছোট্ট রিশু সব ভুলে হেসে ওঠে, "রেড কার?"

বুকের পাঁজর এক এক করে ভাঙতে শুরু করে আম্বালিকার, তাও চোখের জল আটকে রেখে রিশুকে বলে, "হ্যাঁ সোনা, রেড কার। বাবা আর মা তোমার জন্য কেক আনতে গেছে, রেড কার আনতে গেছে।"

ওদের দেখে পিয়ালী চোখের জল আটকাতে পারে না। আম্বালিকা ওর দিকে তাকিয়ে ইশারায় কান্না বন্ধ করতে অনুরোধ করে। রিশুকে কোলে নিয়ে আম্বালিকা আর পিয়ালী একটা ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরে আসে, পেছনে নীলাদ্রি এ্যাম্বুলেন্সে আম্বালিকার বাবা মায়ের মৃত দেহ নিয়ে আসে। ঘর ভর্তি লোকজন, কারুর মুখে কোন কথা নেই সবাই চুপ করে শুধু আম্বালিকাকে দেখে চলেছে। আত্মীয় সজ্জনের মধ্যে অনেকেই ভেঙ্গে পড়েছে, বিশেষ করে সুমিতার বাড়ির লোকেরা। আম্বালিকার অনুরোধে বাবা মায়ের মৃতদেহ নিচের তলার হল ঘরে রাখা হয়। রিশুকে কোলে নিয়ে ওপরের তলায় চলে যায়। অনেকক্ষণ চুপ করে রিশুকে বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে বসে থাকে, কথা বলার ভাষা হারিয়ে গেছে অনেক আগেই, তাও হাসি মুখে রিশুকে না না আছিলায় ভুলিয়ে রাখে। ওর এই রূপ দেখে সবাই আশ্চর্য হয়ে যায়। রিশু কিছুতেই ছাড়তে চায় না ওকে, কোনমতে চোখের জল আটকে অনেক কষ্টে অনেক ভুলিয়ে ভালিয়ে রিশুকে কিছু খাইয়ে দিয়ে কাজের মেয়ের কাছে রেখে নিচে নেমে আসে।

নিচের তলায় লোকজন আত্মীয় সজ্জনে ভর্তি, লোকে লোকারণ্য। হলের মাঝে, বাবার আর সৎ মায়ের মৃত দেহ শায়িত, সেদিকে দেখে চুপ করে একটা চেয়ারে বসে পরে আম্বালিকা। ওর কঠিন চোয়াল আর কাজল কালো চোখের ভাবলেশহীন চাহনি দেখে কারুর সাহস হয় না ওর সাথে কোন কথা বলার। কথা বলার ভাষা হারিয়ে, চুপ করে মেঝের দিকে এক ভাবে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top