What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

প্রথম বিশ্বযুদ্ধঃ মানব ইতিহাসে উগ্রতা আর বর্বরতার প্রথম পাঠ (1 Viewer)

eJwQfvT.jpg


আজকের ঝাকঝকে তকতকে ইউরোপের কথা মাথায় এলেই অনেকের মনে আলাদা একটা সুখানুভূতি আসে। মূলত চমৎকার জীবন যাপন ব্যবস্থা, দেশগুলোর মধ্যে একাত্মতা আর পর্যটনের জন্য অত্যন্ত লোভনীয় ইউরোপের মাটিতে যে কোটি মানুষের রক্তের দাগ লেগে আছে তা আমরা ভুলে যাই। সভ্য দেশের তকমা পাওয়া দেশগুলোর অসভ্যতা আর বর্বরতার চূড়ান্ত সীমায় পৌছানোর ঘটনা আজকাল আমাদের মনে থাকেনা। সেই বর্বরতার উৎসবে হারিয়ে গিয়েছিল মানবতা। সভ্যযুগের অসভ্য ও নৃশংসতম অবস্থার প্রথম দৃশ্য মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে এই ইউরোপেই । আর সেটি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

চিরচেনা প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্যের পতন, নতুন কতগুলো রাষ্ট্রের জন্ম বা ৭ কোটির বেশি সৈন্যের অংশগ্রহণ এর মতো একেবারে সাড়া জাগানো সব ঘটনার সমাবেশ ছিল এই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। যা বিশ্ববাসী আগে কখনো দেখেনি।

১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্ক ডিউক ফার্ডিন্যান্ডের হত্যার মাধ্যমে সূত্রপাত ঘটা এই বিশ্বযুদ্ধ দ্য গ্রেট ওয়ার নামেও পরিচিত। এই যুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল টানা চার বছর তিন মাস দুই সপ্তাহ অর্থাৎ ১৯১৮ সালের ১১ই নভেম্বর এর সমাপ্তি ঘটে ।

১৮৬৬ সালে অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরী একত্রিত হয়ে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য গঠিত হয় যার নেতৃত্বে ছিল অস্ট্রীয় সম্রাট। ১৯০৮ সালে অস্ট্রিয়ার সম্রাট বসনিয়া-হার্জেগোভেনিয়া অঞ্চল দখল করে নেয়। সেসময় পুরো ইউরোপ জুড়ে চলছিল জাতীয়তাবাদের উন্মাদনা। জাতীয়তাবাদের হাওয়া থেকে বসনিয়ার জনগণও বাদ ছিল না। নিজেদের দেশ দখল হয়ে যাওয়ায় বসনিয়ার অনেক মানুষ বিদ্রোহী হয়ে পড়ে।

২৮ জুন, ১৯১৪ সালে অস্ট্রিয়ার রাজপুত্র ফার্ডিন্যান্ড ও তার স্ত্রী বসনিয়ার হার্জেগোভিনার শহর সারায়েভুতে রাষ্ট্রীয় কাজে রওনা হন। যাত্রাপথে অসংখ্য উৎসুক জনতা তাঁদের পথে দাঁড়ায়। চলতি পথে জনতার ভিড়ের মাঝ থেকে একজন বিদ্রোহী প্রিন্সের গাড়ি বরাবর বোমা ছুড়ে মারে। কিন্তু তা রাজপুত্রের গাড়িতে না লেগে পেছনের গাড়িতে আঘাত হানে ও আগুন ধরে যায়। এতে রাজপুত্রের যাত্রাসঙ্গী ৮-৯ জন গুরুতরভাবে আহত হন।

yXJexCG.jpg


২৮ জুন, ১৯১৪- অস্ট্রিয়ার রাজপুত্র ফার্ডিন্যান্ড ও তার স্ত্রী; Photo: Theatlantic

এরপর ফার্ডিন্যান্ড সস্ত্রীক আহতদের দেখতে হাসপাতালে আসার সময় গুলিবিদ্ধ হন। তার স্ত্রী সোফির পেটেও গুলি লাগে এবং তাঁরা দুজনই মারা যান। ফার্ডিন্যান্ডের হত্যাকারী ১৯ বছরের তরুণ ছিল সার্বিয়ার নাগরিক যে কিনা বসনিয়ার বিদ্রোহীদের একজন। এই হত্যার প্রতিশোধ নিতে ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার দিকে গোলাবর্ষণ শুরু করে। মূলত এর মাধ্যমেই সূচনা হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার পেছনে আরও বেশ কিছু কারণ ছিল। প্রথমত, সেই সময়ে ইউরোপের ভূ-রাজনীতি ছিল বেশ জটিল সেই সাথে গোপনীয়। ফ্রান্সের সাথে ঐতিহাসিকভাবে বিরোধ থাকার দরুণ ব্রিটেনের সাথে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল জার্মানির। কিন্তু নৌ শক্তি অর্জনের প্রচ্ছন্ন প্রতিযোগিতা এসে পড়ায় জার্মানদের সাথে ব্রিটেনের সুসম্পর্ক আর থাকেনি। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল সাবমেরিন। মূলত এ ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল ব্রিটিশরা। আর জার্মানদের ব্রিটেনের এই আধিপত্য মোটেও সহ্য হচ্ছিল না। পাল্লা দিতে নিজেরাও এগিয়ে এসেছিল অনেকটা।

gG5pbmp.jpg


১৯১৪ সালের অষ্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, বলকান অঞ্চল ও অটোম্যান সাম্রাজ্যের মানচিত্র

এদিকে ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধের পর জার্মানির সাথে ফ্রান্সের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। অপরদিকে ফ্রান্সের মৈত্রী সম্পর্ক হয় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে। আর অস্ট্রো হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিজেদের জন্য হুমকির চোখে দেখত বিধায় অস্ট্রো হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি হয় জার্মানির।

বিংশ শতকের শুরুতে ইউরোপে চলছিল মরণাস্ত্র তৈরি ও কেনার প্রতিযোগিতা। মেশিনগান, ট্যাংকের মতো অস্ত্রের মজুদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল বাঘাবাঘা দেশ গুলো। এতকাল কেবল প্রতি ট্রিগারে একটি বুলেট ছোড়া যেত এমন বন্দুক ছিল, কিন্তু বিংশ শতকের শুরুতে মুহুর্তে ৬শ গুলি ছোড়ার মেশিনগান এসে গেছিল। আর ছিল ফাইটার বিমান। যা জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেনের মাঝে এনে দিয়েছিল যুদ্ধংদেহী মনোভাব।

সব মিলিয়ে পারস্পরিক অবিশ্বাস এসে যায় দেশগুলোর মাঝে। গোপনে বিভিন্ন চুক্তি হতে থাকে পরাশক্তিদের মাঝে। সেসব চুক্তি বিশ্বযুদ্ধের পথকে আরও ত্বরান্বিত করে। ১৮৭২ সালে অস্ট্রিয়া, জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ত্রিশক্তি চুক্তি হয়। এর অর্ধযুগ পর রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে জার্মানির। ফলে চুক্তির কার্যকারিতা হারায়। আর এতে করে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বেশ কিছু সংঘর্ষ ও বিরোধ যেমন, মরক্কো নিয়ে ফ্রান্স-জার্মানি দ্বন্দ্ব, রুশ-ব্রিটিশ রেষারেষি বা বলকান ইস্যুতে রাশিয়ার সাথে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়দের বিরোধ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি হিসেবে কাজ করেছে।

KZDlZyp.jpg


প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বুঝতে হলে ভূগোলের দিকে নজর দিতে হবে; Photo: Nationalarchives.gov

সে সময়ে ফ্রান্স ও ব্রিটেন সহ অন্যান্য ইউরোপের দেশগুলো বিশ্বজুড়েই নিজেদের ঔপনিবেশিক শাসন চালিয়ে আসছিল । বিশেষত এশিয়া ও আফ্রিকায় এর দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই। যার ফলে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের কারণে সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়তে সময় নেয়নি ।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন উগ্র জাতীয়তাবাদ এই বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পেছনে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। সে সময়ে ইউরোপে জাতীয়তাবাদ এতই বেড়ে গেছিল যে পারস্পরিক আলোচনায় বসে সমাধানের চাইতে পেশী শক্তির প্রদর্শন করাকে সবাই বীরত্ব বলে ধরে নিত। পত্র-পত্রিকা, বই সব কিছুতে যুদ্ধকে এতটাই মহিমান্বিত করা হয়েছিল যে, যুদ্ধ করা যেন সবার জাতীয় দায়িত্ব।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এক পক্ষে ছিল অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরী, জার্মানি ও অটোমান সাম্রাজ্য। এদের বলা হয় অক্ষ শক্তি। অন্যদিকে মিত্রশক্তি হিসেবে ছিল সার্বিয়া, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালি।

প্রেক্ষাপট থেকে ফিরে আসি চলমান বিশ্বযুদ্ধ প্রসঙ্গে। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরী যখন সার্বিয়ায় আক্রমণ চালায় তাতে সার্বিয়ার পক্ষে ছিল রাশিয়া। সে সময়টায় রাশিয়ার সম্রাট ছিলেন কাইজার। তার উপর ক্ষুদ্ধ থাকা জনগণকে অন্যদিকে মুখ করাতে এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় আগ্রহী হয়ে উঠেছিল রাশিয়ার সম্রাট। তিনি ১৯১৪ সালের ৩০শে জুলাই সৈন্যবাহিনীর একটি অংশকে পাঠায় সার্বিয়ায়।

rJ43QiX.jpg


প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ছিল সে সময়ের সেরা প্রযুক্তির ব্যবহার; Photo: Theatlantic

এ সময় জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় কেসার উইলিয়াম চিন্তায় পড়ে যান। কারণ নিয়মানুযায়ী জার্মানি অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরীর বন্ধু রাষ্ট্র হয়ে তাদের সাহায্য করতে গেলে লড়তে হবে সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো শক্তির সাথে। রাশিয়ার সাথে জার্মানরা যুদ্ধে যেতে চাচ্ছিলনা। তাই জার্মানি রাশিয়াকে যুদ্ধ থেকে সরে আসতে চিঠি পাঠায়। একই সময়ে জার্মানি ফ্রান্সকেও চিঠিয়ে দিয়ে জানতে চায় ফ্রান্স কার পক্ষে লড়বে।

রাশিয়া জার্মানির চিঠিকে পাত্তা না দেয়ায় যুদ্ধটা এসে পড়ে জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে। ১৯১৪ সালের ২ আগস্ট জার্মানি আবারো ফ্রান্সের নিকট যুদ্ধ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বললে ফ্রান্স জানায়, তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নেবে। এ অবস্থায় জার্মান সম্রাট রাশিয়া ও ফ্রান্স দুইদিক থেকে আক্রমণে হতে পারে এমন আশঙ্কা করে ফ্রান্সে আগেই আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও ফ্রান্সের সেরকম কোনো ইচ্ছাই ছিলনা।

জার্মানি ভাবে ফ্রান্সে সরাসরি আক্রমণ করলে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তাই ফ্রান্স ও জার্মানির সীমান্ত ঘেঁষা বেলজিয়ামকে ব্যবহার করে ফ্রান্স আক্রমণের পরিকল্পনা করে জার্মানি। তারা বেলজিয়ামের সম্রাট আলবার্টের নিকট প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু বেলজিয়ামের সম্রাট জার্মানির এ প্রস্তাব ভালো চোখে দেখেননি। তিনি ভাবেন জার্মানি ফ্রান্সের উদ্দ্যেশ্যে পাঠানো ৪ লাখ সৈন্য দিয়ে হয়ত বেলজিয়ামকেই দখল করে বসবে। উল্লেখ্য, সে সময় বেলজিয়ামের সৈন্য সংখ্যা ছিল এক লাখের কিছু বেশি।

jGddvsI.jpg


একই তালে আকাশে উড়ছে কিছু যুদ্ধ বিমান; Photo: Theatlantic

৩ আগস্ট বেলজিয়াম সাহায্য চায় ব্রিটেনের নিকট। আর তাতে সায় দেয় ব্রিটেন। ৪ আগস্ট বেলজিয়ামের নিষেধের তোয়াক্কা না করে জার্মান সৈন্যরা বেলজিয়ামে প্রবেশ করে। এতে ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সেই সাথে ফ্রান্সও জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আর সার্বিয়া ইস্যুতে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে রাশিয়া। বলকান অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অটোম্যান সাম্রাজ্যের সাথে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গোলযোগ পরিস্থিতিতে অটোম্যান সাম্রাজ্য রাশিয়াকে হামলা করে বসে।

ব্রিটেন যুদ্ধ ঘোষণা করার ফলে অবস্থা আরো জটিলতর হতে থাকে। কারণ তখন ব্রিটিশরা গোটা বিশ্বজুড়েই ঔপনিবেশিক শাসন চালাচ্ছিল। ভারতীয় উপমহাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিশর সহ ব্রিটেনের অধীনিস্ত দেশগুলো ব্রিটেনের পক্ষে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। কেবল ভারতীয় উপমহাদেশ থেকেই চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার সৈন্য পাঠানো হয়েছিল যুদ্ধে অংশ নিতে।

বিশ্বযুদ্ধ ক্রমশ ঘনীভূত হয়ে ওঠে। এতে যুক্ত হয় জাপানও। মোট ৯ টি দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়েছিল। আর ঔপনিবেশিক দেশের কথা হিসেব করলে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ২৮টি।

এক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে যায় এই যুদ্ধে। এর সূত্রপাত ঘটে এভাবে- সমুদ্রপথে জার্মানরা ব্রিটেনের কোনো জাহাজ দেখেলেই গুড়িয়ে দিতে চাইত। তো এমনি এক সময়ে জার্মানরা ভুলক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু জাহাজে আক্রমণ চালিয়ে ডুবিয়ে দেয়। এতে ক্ষেপে যায় যুক্তরাষ্ট্র। সেই সময় জার্মানি মেক্সিকোকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে উস্কানি দিতে থাকে। ১৮৪৮সালে মেক্সিকোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য নিয়ে বিরোধ লেগে যায় এবং ঐ স্থানটি শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের হাতে চলে যায়। জার্মানি মেক্সিকোকে জানায়, তাঁদের হারানো ভূমি ফিরে পেতে তাঁরা মেক্সিকোকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করবে।

এ জন্য মেক্সিকোকে একটি সাংকেতিক চিঠি পাঠায় জার্মানি। যা হাতে পায় ব্রিটেনের এক গোয়েন্দা। ব্রিটেন বিন্দুমাত্র দেরি না করে যুক্তরাষ্ট্রকে তা জানিয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র এতে ক্ষেপে গিয়ে ১৯১৭ সালে বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। আর সেই সাথে সাথে কিউবা, পানামা, থাইল্যান্ড, চীন, ব্রাজিল, গ্রীস, হাইতির মতো দেশগুলোও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তারো আগে ইতালি অন্য পাঁচটি দেশ সহ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণের পর অক্ষশক্তির পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রাণ হারায় ১ কোটি ৭০ লক্ষেরও বেশি মানুষ। আর হতাহত হয়েছিল ২ কোটিরও বেশি মানুষ। টাকার অঙ্কে হিসেব করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবেই প্রায় ১৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয় । আর পরোক্ষভাবে খরচ হয়েছিল ১৫১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

ALaZlMB.jpg


ভারতীয় উপমহাদেশ থেকেই চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার সৈন্য পাঠানো হয়েছিল যুদ্ধে অংশ নিতে; Photo: the Atlantic

৪ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধের পর রীতিমতো খোলনলচে পাল্টে গেল যেন বিশ্বজুড়েই। জার্মান, অটোম্যান, অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় ও রাশিয়ান সাম্রাজ্যের মত বড় চার সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। অটোম্যান সাম্রাজ্যের বেশিরভাগ আরব এলাকা ফ্রান্স ও ব্রিটেন নিজেদের অধীনে নিয়ে আসে।

১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে বলশেভিক বিপ্লব সংগঠিত হয়, যাতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব ছিল বলে ধারণা করা হয়। এর ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা রাশিয়ার রাজতন্ত্র সম্পূর্ণ ভেঙ্গে শুরু হয়েছিল গণতন্ত্রের। এছাড়া ১৯২২ সালে ইতালিতে ফ্যাসিস্টদের ক্ষমতা গ্রহণেও এই বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব আছে বলে মনে করা হয়। যুদ্ধের ভয়াবহতা উপলদ্ধি করে জাতিপুঞ্জের মত সংস্থা গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো হয় এই বিশ্বযুদ্ধের পরই।

ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসনামলের সূর্যাস্তের শুধু এখান থেকেই। বিশ্বযুদ্ধ কালে ইউরোপের প্রায় সকল কল-কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । ফলে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়। ইউরোপের নতুন করে আবার সেসব চালু করা সম্ভব হচ্ছিল না বিধায় যুক্তরাষ্ট্র সেসবের চাহিদা পূরণ করতে গড়ে তোলে অসংখ্য কল-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে করে অর্থনীতিতে অনেকটা এগিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র।

এই বিশ্বযুদ্ধের ফলে বিশ্ব মানচিত্রে আসে ব্যপক পরিবর্তন। অষ্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য ভেঙ্গে বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জন্ম হয়। অস্ট্রিয়া আর হাঙ্গেরী নামের নতুন দুই রাষ্ট্রের জন্ম হয়। যুগোস্লাভিয়ার জন্ম হয়। বল্টিক এলাকায় এস্তোনিয়া, লিথুনিয়া, পোল্যান্ডের মতো আরো কিছু দেশের জন্ম হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের ফলে জার্মানিকেও অনেকটা ভূমি হারাতে হয়। যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার নামে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির রেলওয়ে ইঞ্জিন, নানা প্রযুক্তি ও সাবমেরিন ছিনিয়ে নেয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও আফ্রিকায় জার্মান কলোনী সমূহ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জাপান সহ মিত্রশক্তির কিছু দেশ কুক্ষিগত করে। পাশাপাশি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমস্ত দায়ভার জার্মানির ওপর চাপানো হয় এবং জার্মানির সাথে "ট্রিটি অফ ভার্সাইলস" নামক একটি অসম চুক্তি করা হয়। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা স্বরূপ আরো ৫০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়- যা ছিল অযৌক্তিক। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে জার্মানির নিরীহ জনগণের উপর।

বিশ্লেষকরা মনে করেন এর ফলে জার্মানদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, এতে করে জার্মান জাতীয়তাবাদের নব উত্থান ঘটে। এমন উগ্র জাতীয়তাবাদের হাত ধরে বিগত শতাব্দীর নৃশংসতম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথ সুগম হয় বলে মনে করেন ঐতিহাসিকরা। যার কারণে বিশ্ব দেখেছিল হিটলার, মুসোলিনির মতো নেতাদের দোর্দন্ড প্রতাপ।

একটি অদ্ভুত ঘটনা দিয়ে শেষ করি। একজন ব্রিটিশ সৈন্য হেনরি টেন্ডি নিজ সৈন্যদল নিয়ে ফ্রান্সের সীমান্তে জার্মানির সাথে লড়াই করছিল। অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় পড়ে যায় জার্মানি। হঠাৎ একজন জার্মান সৈনিক তাঁর রাইফেলের সামনে এসে দাঁড়ায়। যে কিনা আহত অবস্থায় ছিল। হেনরি হঠাৎ করেই গুলি না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের রাইফেলটি নিচে নামিয়ে নেয়। আর এরপর অদ্ভুত হাসি হেসে জার্মান সৈন্যটি স্থান ত্যাগ করে।

অনেক বছর পর হেনরিকে এই বিষয়টিকে নিয়ে বেশ পস্তাতে হয়েছিল। মৃত্যুর পূর্বেও যা তার মানসিক পীড়ার কারণও হয়েছিল। কারণ তাঁর সেদিনকার রাইফেলের সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটি ছিল এডলফ হিটলার! সেদিন হেনরি গুলি চালালে হয়ত বিশ্বের ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top