What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made তবু তুমি অজানা ১ (1 Viewer)

Joined
Aug 23, 2020
Threads
74
Messages
111
Credits
7,126
বিগত কয়েক সপ্তাহ জুড়ে পড়েছি এক জ্বালায়। প্রতি সপ্তাহেই কুরিয়ার থেকে দরজার সামনে বক্স রেখে যায়। বক্স খুললে ভেতরে ১৫-১৬ বছরের মেয়েদের রেডিমেট থ্রি পিচ না হয় কসমেটিকস, পারফিউম। পুরো তল্লায় এই বয়সের মেয়ে নাই, তারপর আমারো কোনো বোন-টোন নাই যে তাকে পাঠাবে। এদিকে আম্মু সেই লেভেলের সন্দেহ করে । সন্দেহ থেকে বাঁচতে আমি বক্সগুলো আম্মুর সামনেই খুলি আবার আম্মুর লকারেই রেখে দেই, যার চাবি আম্মু নিজের আঁচলে ঝুলিয়ে রাখে অলটাইম।

আমি শাওন আহমেদ। ঢাকার অন্যতম অভিজাত এলাকার চিপা কর্ণারে থাকি ফ্লাট নিয়ে । পুরো ঢাকার যে চেহারা এই কর্ণারের অংশে আসলে আপনি দেখতে পাবেন ভিন্ন দৃশ্য। এই এলাকায় মানুষজন হাইলি সোসাল। প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের সম্পর্ক ভালো। সবাই সবার ঘরের খবর জানে। মনেই হয়না যে এটা ঢাকার একটা অংশ। আমি ছোট থেকেই এখানে বড় হয়েছি । বর্তমানে একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে বিএ অনার্স শেষ করার লক্ষ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।

তো আবার কাজের কথায় ফিরি,
পুরো প্যাকেটের কোথাও প্রেরকের কোনো নাম ঠিকানা লিখা নাই। কিন্তু বক্সের ধরণ দেখে আর লোগোতে নিশ্চিত হতে পেরেছি যে কোন কুরিয়ার থেকে আসছে। পর পর তিন সপ্তাহ এমন কান্ড দেখে মেজাজ চরে গেল । হেইহেই করতে করতে চলে গেলাম কুরিয়ারের অফিসে । তাদের একদিন কি আমার একদিন । কিন্তু ওখানে গিয়ে আমারই হাওয়া ফুস। কুরিয়ার এসেছে অন্য এলাকার কুরিয়ার পয়েন্ট থেকে। কিন্তু সেখানে গিয়েও লাভ হলো না । তারাও বলতে পারল না কার জিনিসপত্র ওগুলো বা কোথা থেকে আসছে।

প্রতি সপ্তাহের মতো এই সপ্তাহেও প্যাকেজ হাজির। তবে আজ প্যাকেট খুলে দেখি ভেতরে ভিন্ন চিত্র। একটা শাড়ি সাথে পাঞ্জাবি। মনে মনে আমি একটু খুশিই হলাম । " তবে মনে হয় কেউ বউ হয়ে আসার আগেই তার জিনিসপত্র আমার বাড়ি লোড দিচ্ছে যাতে ট্রাকের খরচ বেচে যায়।" আম্মু এসেই পাঞ্জাবিটা হাত থেকে কেড়ে নিলেন । এপাশ ওপাশ দেখে বললেন, " খুশি হইশ না এইডার কোনো পকেট নাই মেয়েদের পোষাক।"

: তোর দিয়ারে দ্যিল।

: কি বলিস ফসফস করে?

: কই কিছু না আম্মু । দাও এগুলা লকারে রেখে আসি।

: থাক আমি নিজে রেখে আসব আজ ।

: ক্রিপা হয় মাতাজি।

: হুট বেয়াদপ।

আমি কোনদিকের বেয়াদব ভাবতে ভাবতে মাথা চুলকাচ্ছি, কিন্ত বেয়াদপের পক্ষে লজিক পেলাম না। আম্মু জিজ্ঞাস করার জন্য মাত্র, " অ্যআ আম্মু.. " বলছি। অমনি

: লজিক পাটায় বেটে গিলায় দিবনে।

আমি আর কিছু বললাম না ।

ফ্রেন্ড সার্কেলেও একটা কেমন কেমন ভাব আমার প্রতি । একজনের সাথে শেয়ার করার পর পুরো সার্কেলে কথাটা ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই হাসি তামাশা করে ।

আম্মু জামাকাপড়গুলো নিয়ে যাওয়ার পর আমি বক্সটা ফেলে দেওয়ার জন্য তুলতে গিয়ে দেখি ভেতরে একটা খাম আছে। বক্সটা আবার নামিয়ে খামটার মুখ খুলে উকি দিয়ে দেখি দুটো চিঠি জাতীয় কিছু ভেতরে। বের করে একটা শক্ত প্লাস্টিকের কিছু পেলাম, কিন্তু দূর থেকে কাগজ মনে হচ্ছিলো। আম্মু আবার নাক গলাবে ভয়ে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলাম। প্লাস্টিকটা ডাস্টবিনে ফেলে দিলাম। আরেকটা চিঠিই, খুলে দেখি শুরুতে সুন্দর সম্বোধন ,

ওমার প্রাণপ্রিয় জান্নাত,
ভালোবাসা নিও। তোমার সেই নীল আকাশের পরী আইডি থেকে আমাদের পরিচয়। প্রোফাইল পিকচারে নীড় শাড়ির ছবিটায় হাহা দিয়ে তর্ক শুরু । আজো রয়েছে সে স্মৃতি । তোমাকে যে এত গিফ্ট দেই রিপ্লেতে আসে না তার গল্প। তবে কি ইহা তোমার কাছে স্বল্প?
ইতি
তোমার হাসিবুল ।

এইবার মনে শান্তি পাইলাম। দ্রুত ল্যাপটপে আইডিটা সার্চ মেরে দেখি তিনশ আইডি হাজির এক ঘণ্টা ধরে বেছে বেছে তিনটা আইডি সন্দেহ জনক হলো। এরমধ্যে একজনেরই লিভিং ঢাকা দেয়া । রিকু না দিয়ে সরাসরি ইনবক্সে নক দিলাম।

" এই যে হিজরা ফালতুমি পাইছেন? "
.
.
রাতের ডিনার শেষ করে রুমে এসে ল্যাপটপ দিয়ে ফেসবুকে লগ ইন করে দেখি সে রিপ্লে দিয়েছে।

একগাদা এংরি ইমুজি । আমিও রিপ্লে দিলাম,

" ম্যাডাম আপনার প্রয়সী যে আমার কাছে আপনার জিনিসপত্র পাঠিয়েছে।"

: মানে কে আপনি কোথা থেকে বলছেন?

আমি আমার নাম ঠিকানা বলতেই সে ম্যাসেজটায় sad রিয়াক্ট দিল।

: আসলে আমি ওনার সাথে মজা করছিলাম । কিন্তু উনি যে এত সিরিয়াসলি নিবেন আমি বুঝতে পারিনি।

: দেখুন জিনিসগুলো আপনার আপনি ফেরত নিলে আমি বাঁচি।

এরপর কিছুক্ষণের কথাবার্তায় সিদ্ধান্ত হলো আগামীকাল সংসদ ভবনের সামনে এসে তিনি জিনিসপত্র নিয়ে যাবেন । ব্যস এদিক নিপ্টে যেতেই আম্মু আব্বুর রুমে গেলাম ।

আম্মুকে বোঝানো দায়। কিন্তু বরাবর আব্বু আমার সাইডে থাকে । এ যাত্রাও আব্বুর বুঝের কারণে আম্মু মেনে নিল । অনুমতি পেলাম লকারের সব মেয়েটাকে দিয়ে আসার।

পরেরদিন....

আমি সংসদ ভবনের সামনে একটা ভারি ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভেতরে ভয় হচ্ছে কারণ এখানে মাঝেসাঝেই চুরির ঘটনা ঘটে। আমারে বড়লোক্স ভেবে পেটে ছুড়ি পোচ দিলে কিছু বলতে পারব না, স্পট ডেড হয়ে যাবো। মেয়েটার কোনো ফটো টটোও নাই ষে বুঝব দূর থেকে আসতেছে কিনা । একটা মেয়ে আমার প্রায় গা ঘেষে দাঁড়ালো। মৃদ্যু কন্ঠে বলল, " আপনি কি শাওন? "

ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখি প্রায় ১৫-১৬ বয়সের মেয়ে। আমিও মৃদ্যু কন্ঠে বললাম, " জ্বী! আপনি কি জান্নাত? " মেয়েটা চোখ গোল গোল করে তাকালো।

: আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?

: আপনার প্রয়সীর চিঠিতে ছিল নামটা ।

: দেখুন মিস্টার উনি আমার কেউ না, আমি জাস্ট ফান করেছি।

: বাট উনি তো সিরিয়াস ছিলেন।

: হ্যা তা অবশ্য ঠিক ।

: এই নিন এগুলো ধরুন।

ব্যাগটা মেয়েটার হাতে দিতে গিয়ে মেয়েটাকে একটু ভালোভাবে দেখলাম। অসম্ভব সুন্দর চোখ । কাধ পর্যন্ত কাট করা চুল। ফেস কাটিংও যথেষ্ট মায়াবি।

: ও বাবা এতো প্রচন্ড ভারি।

: দেখেছেন কতটা সিরিয়াসলি নিয়েছেন তিনি। আমি বলি কি আপনি এখুনি ক্ষমা চেয়ে নিন যদি রিলেশন না করতে চান তো।

: হুম ঠিকই বলেছেন।

: নম্বর আছে ওনার?

: হ্যা আছে আছে।

মেয়েটা ফোনবুক থেকে আমাকে নম্বরটা দেখাল।

: আসলে আমার তো ব্যালেন্স কম প্লিজ একটু আপনি কল দিন প্লিজ।

: আচ্ছা দিচ্ছি ।

আমি উনাকে কল দিলাম । দুবার ফোন বাজার পর কেউ রিসিভ করল। কিন্তু আমি হ্যালো বলার পর উনি শ্রেফ "ঽ" বলেই লাইন কেটে দিলেন। পরপর আরো কয়েকবার কল দিলেও রিসিভ করলেন না।

: ধরতেছে না একবার মাত্র রিসিভ হলো তবুও আওয়াজ নেই।

: ও হয়ত টিউশনে গেছে। আপনি আপনার নম্বরটা একটু দিবেন?

: কেন?

: না মানে যদি লাগে আরকি।

: তা আপনারটা দিননা।

: মানে আসলে মেয়েদের নাহ নম্বর দিতে নাই।

: কে বলেছে?

: হুমায়ূন আহমদ স্যার ।

: কি?

মেয়েটা খিলখিল করে হেসে উঠল। আমার কানে যেন ঝুম ঝুম করে বাজতেছে। মেয়েটাকে নম্বর দিয়ে আমি বাড়ির পথে রওনা হলাম । " যাক আজ শান্তুির ঘুম হবে।"

পরেরদিন বেলা ১১ টা ১৫,

বাড়ি থেকে দূরে টং ঘরে আসছি চা খেতে । জীবনে সিগারেট ফুকি নাই কিন্তু আজ মাইন্ড বানায় আসছি সিগারেটে টান দিব। এক টানে স্বর্গে। মামার চা শেষ করে সিগারেট চাইব সেসময় কে যেন পেছন থেকে কাধে টোকা দিল। পিছনে মুড়ে দেখি ৬ ফুটের পুলিশ । পিছনে দেখি আরো কয়েকজন পুলিশ।

: আপনি শাওন আহমেদ?

সামনে দাড়ানো পুলিশ জিজ্ঞাস করল।

: জ্বি আমিই শাওন কেন স্যার কোনো সমস্যা?

: আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে এখুনি ।

: কিন্তু স্যার থানায় কেন যাব?

গতকাল ফাহাদের কললিস্টে আপনি সর্বশেষ তার সাথে কথা বলেছেন।

: জ্বী একজন বলেছিল তাই কল করেছিলাম আরকি।

: ফাহাদের খুন হয়ে গেছে।

:কিহ....?

আমি একটা ধাক্কামতো খেলাম। এরপর দুজন হ্যাংলামতো পুলিশ এসে আমার দুই বাহু ধরে গাড়িতে তুললেন । কিন্তু নিজ এলাকায় না বলে চিন্তা হচ্ছে আব্বু আম্মু যদি খবরটা না পায় সমস্যা। একজন অফিসার হাতে হাতকড়া পড়াতে গেলে সিনিয়র মতো অফিসার বললেন, " থাক লাগবে না প্রাইমারি সাসপেক্ট আর পলায়ন করবে বলে মনে হচ্ছে না। " উপস্থিত সবাইই হেসে দিল । আমার হাসি আসছে না।

: স্যার ঐ ভদ্রলোকের বাড়ি কোথায়? (আমি)

: যে মারা গেছে?

: জ্বী স্যার ।

: টাঙ্গাইলে।

: ও আচ্ছা ।

গাড়ি বসুন্ধরা রোড় হয়ে যাচ্ছে । হঠাৎ ঠাস করে শব্দ হলো। সবাই এদিক ওদিক দেখছে। হঠাৎ দেখি সিনিয়র সেই পুলিশ নেতিয়ে আমার পায়ের ওপার পড়ল। একজন স্যার স্যার বলে ধরতে আসতেই মাথাটা রক্তাক্ত হলো সেই একই শব্দের সূচনায়। এরপর একের পর শব্দ আমার পাশের সব পুলিশই গুলিবিদ্ধ । হঠাৎ আরেকটা শব্দের পর গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল। গাড়ির ভেতরে আমি কেবল বসে ছিলাম । পড়ে গেলাম। গাড়ি উল্টে যেতেই এক ঝটকায় ভূমিপতন। পায়ে প্রচন্ড লেগেছে, রক্ত বের হচ্ছে মেবি। ঘটনা দেখে সবাই বিস্মিত কেউ সাহায্য করতে আসছে না। আমি নিজেই উঠে একটা দোকানের কাছে গিয়ে টিস্যু আর পানি দিতে বললাম । যেই মাত্র উনি আমাকে পানির বোতল দিলেন। কালো মাস্কে মুখ ঢাকা দুজন এসে দোকানিকে ভেতর থেকে বের করে বড় ছুড়ি দিয়ে ধর থেকে গলা আলাদা করে ফেলল। ফিকনি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসতে দেখে আমার পেটে মোচড় দিয়ে উঠল । বমি করতে লাগলাম। মুখে বমি নিয়েই আমি দৌড় দিলাম। দৌড়ে যমুনা ফিউচারের সামনে আসতেই হাপিয়ে উঠলাম একদম। আমাকে হাপাতে দেখে একজন গায়ে হাত দিয়ে কি হয়েছে জিজ্ঞাস করলেন, পরক্ষণে গায়ে রক্ত মাখা জামা দেখে উনি ভয়ে পালাতে শুরু করলেন। কিন্তু কিছুদূর না যেতেই দুজন ওনার সামনে দুজন পিছে দাঁড়িয়ে ঘেরাও করল তারপর ক্রসফায়ারের মতো গুলি করে মেরে দিল । আমার পেট আবার মুচড়ে উঠল । আমি কোনোরকমে দুই দোকানের মাঝখানে চিপা গলির ভেতর ঢুকে গেলাম । তিনবার বমি হলো। মাথা ঝিমাচ্ছে, চোখ ঝাপসা লাগে । পকেটে কিছু কেপে উঠল, ফোন। অননোন নম্বর থেকে।
" হ্যা হ্যাল হ্যালো? "
" আপনি কোথায়? আমি জান্নাত । " তারপর ই কান্নার আওয়াজ।
" কি হয়েছে কাদতেছেন কেন? "
ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বলল, " সকালে আমাকে দোষী করে তুলে দিতে চারজন পুলিশ এসেছিল। আমি স্কুলের পথে রওনা হয়েছিলাম। কিন্তু পথে মাঝখানে তাদের কেউ খুন করে দেয়। আমি প্রচন্ড ভয় নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি । ওরা বাড়িতে এসে আমার বাবা মাকে...... " আবার কান্না করতে লাগল

" ওরা কারা, হ্যালো ওরা কারা? "

ফোন কেটে গেছে। আমার কপাল ঘেঁমে উঠেছে। পেটে আবার মোচড় দিচ্ছে। গলিটা হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেল। গলির মাথায় ছুরিধারী সেই দুজন দাঁড়িয়ে আছে।......

(চলবে...)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top