মিশরের বিখ্যাত ক্বারী আব্দুল বাসিত ইবনে আব্দুস ছামাদ। তার সুললিত কন্ঠের কোরআন তেলাওয়াত শোনেনি এরকম মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। সুরের এই কারিগরকে বলা হতো "দ্যা গোল্ডেন থ্রোট"।আজ আমরা জানার চেষ্টা করবো বিশ্বখ্যাত ক্বারী আব্দুল বাসিত সম্পর্কে:
১৯২৭ সালে মিশরের হেরমানথিস শহরে জন্ম গ্রহন করেন তিনি। ছোট বেলা থেকেই সুললিত কন্ঠে কোরআন তেলাওয়াতের প্রতি তার প্রচুর আগ্রহ ছিলো তার। মাত্র ১০ বছর বয়সে পবিত্র কোরআনের হাফেজ হন আব্দুল বাসিত এবং ১৪ বছর বয়সে গ্রামের মসজিদে তারাবির নামাজে ইমামতি করেন তিনি।মিশরের তৎকালীন বিখ্যাত ক্বারী ছিলেন ক্বারী রিফাত,আব্দুল বাসিত তার তেলাওয়াত রেডিওতে শোনার জন্য ৩ কিমি পথ পায়ে হেটে এক মেয়রের বাড়ীতে যেতেন,বাড়ী ফিরে নিজে নিজে সেরকম করে তেলাওয়াতের চেষ্টা করতেন।
আব্দুল বাসিতের তেলাওয়াত যে কাউকে মহচ্ছন্ন করতো, তার সুরের মূর্ছনায় বিমোহিত হতো মুসলিম অমুসলিম সবাই। তার কন্ঠস্বরে পবিত্র কোরআনের আকর্ষণীয় তেলাওয়াত শুনে ঈমানদারদের হৃদয়ে অনুরাগ ও সম্মোহনী শক্তি বৃদ্ধি পেত।তার যাদুময়ী স্নিগ্ধ, য্যোতির্ময় সুরের মূর্ছনায় ইসলাম গ্রাহন করেছে কয়েক ডজন আমেরিকান।
১৯৬১ সালে ক্বারী আব্দুল বাসিত পাকিস্তানের বাদশাহী জামে মসজিদ এবং বাংলাদেশের মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় কোরআন তেলাওয়াত করেছিলেন।
৬১ বছরের জীবনে বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন তিনি, সাথে পেয়েছেন বিভিন্ন উপাধী।মরক্কোর বাদশাহ মুহাম্মাদ আল-খাশিস তাকে কায়রো ছেড়ে মরক্কোয় স্হায়ী বসবাসের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
সিরিয়া তাকে ১৯৫৬ সালে "বেছামুল এসতেহকাক" পদকে ভূষিত করেন ।
লেবানন সরকার তাকে "বেসামুল আরয" পদকে ভূষিত করেন।
মালয়েশিয়া সরকার ১৯৫৬ সালে তাকে "বেসামে যাহবী" পদকে ভূষিত করেন।
১৯৯০ সালে মিশরের সরকার তার মৃত্যুর পর "ইসমুস শেখ" পদকে ভূষিত করেন।
এছাড়াও পাকিস্তান, সেনেগাল সহ বিভিন্ন দেশ তাকে পুরস্কৃত করেছে।
★কোরআন তেলাওয়াতের বিখ্যাত ইতিহাস:১৯৭০ এর দশকে তিন তিনবার তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ক্বারীর খেতাব অর্জন করেন। মিশরের প্রেসিডেন্টের সাথে একবার রাশিয়া সফরকালে তিনি কোরআন তেলওয়াত করেন। একপর্যায়ে রাশিয়ার অমুসলিম ডেলিগেটররা অর্থ না বুঝলেও শুধু মাত্র সুরের কাপনে, সুরের শক্তির কাছে নিজেদের অশ্রু বিসর্জন দেয়! হয়ত এটা ছিলো প্রানের গভীর থেকে উঠে আসা কোন আবেগপূর্ন আকুতি। যার কারনে না বুঝেও শুধুমাত্র সুর শুনেই কেঁদে উঠেছিলো তাদের প্রান।
একদিন ক্বারী আব্দুল বাসিত এক মজলিশে গেলেন কোরআন তেলাওয়াত করতে। সেখানে তাঁর জন্য বরাদ্দকৃত সময় ছিলো মাত্র ১০ মিনিট। কিন্তু যখন তিনি তেলাওয়াত শুরু করলেন কিছুটা ভিন্নতা দেখা গেলো। তাঁর কন্ঠের সুরে মুগ্ধ হয়ে সবাই তাকে অনুরধ করলো আরো কিছুক্ষন তেলাওয়াত করতে। তিনি ১০ মিনিটের স্থলে ১;৩০ মিনিট তেলাওয়াত করলেন। সময়জ্ঞান ভূলে সবাই শুধু শুনতেই থাকলো! এমনি মোহ, এমনি মায়া ছিলো তাঁর কন্ঠে।
ক্বারী আব্দুল বাসিত ১৯৮৮ সালের ৩০ নভেম্বর মৃত্যু বরন করেন। মহান রব তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা করুন "আমিন"