What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made শেষের আড়ালে (1 Viewer)

Joined
Aug 23, 2020
Threads
74
Messages
111
Credits
7,126
-আপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন নাতো?
কথাটা শুনে ল্যাপটপ থেকে চোখ ফিরিয়ে মিমির দিকে তাকালাম। মেয়েটির চোখদুটোতে টকটকে লাল আভা ধারণ করেছে। বুঝতে পারছি হয়তো রিপোর্টটা হাতে পাওয়ার পর নিশ্চুপে কান্না করেছে।
-কী হলো বলেন!
-এসব কী ধরণের কথা মিমি। তোমাকে যদিও আমি বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করেছি কিন্তু তোমার প্রতি ভালোবাসাটা এখনো ফিকে হয়ে যায়নি বরং প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
-এসব কথা কী আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলছেন নাকি মন থেকে? কদিন পর যদি বাবা মা জানতে পারে যে আমি মা হতে পারবোনা তখনতো...
-আহ এসব কথা রাখোতো। দরকার হলে আমরা বাচ্চা দত্তক নিবো। তুমি এতো চিন্তা করোনা।
-নাহ ঐসবের দরকার নেই বরং আপনি আরেকটা বিয়ে করে নিন আর তাছাড়া বাবা মা যখন জানতে পারবে তখনতো এমনিতেই বিয়ে করতে বলবে। তবুও আমাকে ডিভোর্স দিয়েননা প্লিজ। আমি অপনার মায়া কাটিয়ে অন্য কোথাও থাকতে পারবো না।
এই বলেই মিমি হু হু করে কেঁদে আমার পা দুটো জড়িয়ে ধরলো। আমি বুঝিনা যে বিয়ের পাঁচ বছর পরও একটি মেয়ে এতোটা আবেগী, স্বামীভক্ত আর নমনীয় কীভাবে হতে পারে! মিমিকে পায়ের নিকট থেকে উঠিয়ে শক্ত করে বুকের সাথে লেপ্টে ধরে বললাম,
-তুমি কীভাবে ভাবতে পারলে যে আমি তোমার মতো একটি বাবুকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে ঘর সংসার করবো? আর সেখানেতো ডিভোর্সের প্রশ্নই ওঠে না। যদি আর কখনো এই কথা বলো তখন তোমার সাথে আর কথাই বলবোনা।
মেয়েটি আমার কথা শুনে এখনো নিশ্চুপে কাঁদছে। হয়তো এই শ্রেষ্ঠ বুকের ছায়াতেও উপযুক্ত ভরসা পাচ্ছেনা। আমার মা তেমন শিক্ষিত না হলেও তীক্ষ্ম জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন একজন মানুষ। তিনি যৌক্তিকতা ব্যতীত কোন কথা বলেন না। আমি জানি যে মায়ের সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী হলো মিমি। তিনি মিমিকে কোনোদিনও একটি উচ্চ গলায় কথা বলার সাহস পাননি কারণ মিমি এতোটাই নরম মনের একটি মেয়ে, যে ওর সাথে একবার কথা বলবে তার হাসি বৈ কি রাগ উঠবে না। পরদিন কীভাবে কীভাবে যেন মা জানতে পেরে গেল যে মিমি মাতৃত্বের স্বাধ গ্রহণ করতে অক্ষম। তাই তিনি একান্ত আমাকে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে বললেন,
-তো এখন কী ভাবছিস? কী করবি? মিমিতো মা হতে পারবেনা।
মায়ের কথা শুনে আমি কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বললাম,
-তুমি যা বলবে তাই।
-আমি যদি বলি আরেকটি বিয়ে কর তাহলে কী তাই করবি?
কথাটা শুনে হৃৎপিন্ডটা একবার বুকের সাথে বারি খেলো বোধহয়। মা যে এমন একটি কথা বলবে ভাবতেই পারিনি। আর তাছাড়া আমি কখনো মায়ের উপর কথাও বলিনা। আমাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে মা বললেন,
-এই কী তোর বউয়ের প্রতি ভালোবাসা? যে ছেলে বউ এবং মায়ের মধ্যে কেবল একজনকেই প্রাধান্য দেয় সে কখনও সুপুরুষ হতে পারেনা। মনে রাখবি বউয়ের ভালোবাসা বউয়ের জায়গাতে আর মায়ের সম্মান মায়ের জায়গাতে। আমি বোধহয় তোর মতো একটা কাপুরুষকে জন্ম দিয়ে মস্তবড় ভুলই করে ফেলেছি। তুই কী আমাকে অতিসম্মান দিয়ে ভালো সাজতে চাস? মিমিকে রেখে যদি তুই দ্বিতীয় বিয়ে করার চিন্তা মাথায় এনে রাখিস তবে এখনই তোকে ত্যাজ্য ঘোষণা করলাম। মেয়েদের মা হতে না পারার কষ্টটা যে কতটা কঠিন সেটা তোরা বুঝবি কীভাবে? তোর বাবা আমাকে এতোটাই ভালোবাসতো যে বিয়ের দশবছর পরেও যখন আমার সন্তান হচ্ছিল না তখন আশেপাশের মানুষ অনেক কথাই বলতো। কিন্তু তোর বাবা আমাকে বুকের মাঝে রেখে সবসময় সান্ত্বনা দিয়ে যেতেন। সেসময় যদি তিনি আমার পাশে না থেকে দ্বিতীয় বিয়ে করতেন কিংবা ডিভোর্স দিতেন তখন আমার মতো অসহায় কেউ থাকতোনা। মিমির অবস্থাও এখন তাই। সন্তান আর বংশের বাতি জালিয়ে কী হবে যদি একটি ভালোবাসার সম্পর্কে ফাটল ধরে? আর আমি মিমিকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। তোর যদি বিয়ে করতে মনে চায় তবে এই ঘর থেকে এখনি বের হয়ে গিয়ে বিয়ে কর। মিমি আমার বউমা নয় ও আমার মেয়ে।
হঠাৎই মিমি দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে অঝোর ধারায় কান্না করতে লাগলো। আমি জানি মিমি এতক্ষন যাবৎ দরজার আড়াল থেকে মায়ের সকল কথোপকথনই শুনেছে। একজন বউ আর শ্বাশুড়ির মধ্যে কতটা বন্ধন থাকলে যে এতোটা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সেটা আজ নিজ চোখেই দেখতে পাচ্ছি। দুজনের জড়িয়ে ধরা এই কান্না দেখে আমার চোখটাও খানিকটা ভিজে গেলো। আমার এতোটাও সক্ষমতা নেই যে এই ভালোবাসার বন্ধনে চিড় ধরানোর। আমি আমার মাকে নিয়ে আজ এতোটাই গর্বিত যে আমাকে যদি নোবেল পুরষ্কারও দেওয়া হয় তবুও এতোটা গর্বিতবোধ করবোনা নিজেকে নিয়ে। প্রত্যেকটা শ্বাশুড়ি যদি নিজের ছেলের বউদের সাথে এতোটা ভালোবাসা তৈরি করতে পারতো তবে বন্ধ্যা মেয়েরা আজ অসহায় হয়ে নিজের দুর্বলতাকে প্রকাশ করার সুযোগই পেতোনা। কিন্তু পৃথিবীটা কী আসলেই এই সুখকর মুহূর্তগুলো নিয়ে নিজ অক্ষে আবর্তন করে? কখনোই না! এগুলো শুধু কল্পনাতেই প্রমাণ করা সম্ভব, বাস্তব বড়ই কঠিন যার প্রমাণ প্রতিটি ঘরে ঘরে বউ শ্বাশুড়ির দ্বন্দ।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top