What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

রম্য গল্প : কানা মিলন (1 Viewer)

Joined
Aug 23, 2020
Threads
74
Messages
111
Credits
7,126
মিলনের সামনে যে তিনজন সুন্দরী বসে আছে তাদের তিনজনকেই ওর এই মুহূর্তে বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।এই ভয়ংকর রকমের সুন্দরী মেয়েগুলো এতকাল কোনো গুহায় লুকিয়ে ছিল ? কেন দেখা দিল না ? কেন ওর হৃদয়কোণে উথাল পাথাল করা প্রেমের ঢেউ তুলল না ? মিলন মনের দুঃখে চোখ কোচলে পকেট থেকে টিস্যুটা বের করে ফচফচ করে নাক ঝেড়ে চশমাটা পরে নিল।তিনটা মেয়ের মধ্যে ডানদিকে কোণায় বসা মেয়েটার নাকটা একটু বোচা।চশমাটাও মনে হয় একটু মোটা ফ্রেমের।কানা মেয়েকে বিয়ে করাটা বোধহয় ঠিক হবে না।বন্ধু মহলে সে নিজেও কানা মিলন নামে খ্যাত।দেখা যাবে বিয়ের পর জামাই বউ দুই কানা মিলে কানামাছি খেলতে খেলতেই অর্ধেক জীবন কেটে যাবে।তারচাইতে বাকি দুটো মেয়ে পাত্রী হিসেবে বেটার অপশন।বেটার বললে অবশ্য কিঞ্চিৎ ভুল হবে, বেস্ট অপশন।এদের দুইজনকে একসাথে বিয়ে করা গেলে মিলনের কলিজাটা ঠান্ডা হত।ইশ সত্যিই যদি একসাথে দুইজনকে বিয়ে করা যেত ! যদিও বিয়ে করতে এসে এসব আকাশ কুসুম ভেবে ভেবে চোখের পানি নাকের পানি দিয়ে একটা যমুনা বানালেও কোনো লাভ হবার কথা নয়।পুরুষ মানুষের জীবনে সম্ভবত সবচেয়ে কষ্টের দিন সেটা যখন চোখের সামনে ডানা কাটা পরীরা ঘোরাঘুরি করলেও তাদের আপন করে পাওয়ার একফোঁটা সুযোগও থাকে না।এতদিন বিয়ের জন্য আধাপাগল হওয়ার পরেও আজ সেই কাঙ্ক্ষিত দিনে কেন জানি বার বার ওর মনে হচ্ছে,

' বিয়েটা কি আরেকটু দেরিতে করা উচিত ছিল ? '

বহুকষ্টে মিলনের বিয়েটা এবার ঠিক করেছে সাত্তার মামা।এর আগে মামা ওকে অনেকবার প্রেম করার পরামর্শ দিয়েছেন।এ যুগের ছেলে মেয়েরা নিজ দায়িত্বেই তাদের মনের মানুষ খুঁজে নিয়ে বাবা মায়ের ঝামেলা অনেকটা কমিয়ে দেয়।মামার মতে - মিয়া তার বিবিকে খুঁজে নেবে অতঃপর কাজী কেস ডিসমিশ করে দেবে।ব্যস হয়ে গেল কঠিন সমস্যার সহজ সমাধান।তবে মিলনের জন্যে এই সহজ সমাধান করে নেয়া মোটেও সহজ ছিল না।প্রেম ভালোবাসা ঘটিত বিষয় সম্পর্কে মিলনের সাধারণ জ্ঞান একদম জিরো লেভেলের।কলেজের সময়টাতে সাত্তার মামার বন্ধুর মেয়ে নীলিমাকে ভীষণ ভালো লাগত মিলনের।কিন্ত কখনোই ওকে মনের কথাটা মুখ ফুটে বলার সুযোগ পাই নি মিলন।নীলিমারা ওদের পাশের ফ্লাটেই থাকত তখন।বিকেলবেলা ছাদের গাছগুলোতে পানি দেবার বাহানায় প্রায়ই নীলিমাকে একনজর দেখতে ছুটে যেত মিলন।নীলিমা ওই সময়টায় ওর ছোট বোনকে নিয়ে ছাদে আসত।ওর চোখে চোখ পড়তেই নীলিমা এমন চোখ রাঙানি দিত যেন মিলনকে আস্ত গিলে ফেলবে।তাই বেচারা মিলনও সামনে এগোনোর খুব একটা সাহস জোটাতে পারত না।কেবল একদিন বহু কষ্টে বাড়ি থেকে আট দশবার আয়নার সামনে রিহার্সেল করার পর নীলিমাকে বলেছিল,

' আপনার লাল ওড়নাটা খুব সুন্দর ! '

জবাবে নীলিমা হো হো করে হেসে বলেছিল,

' কানা কোথাকার ! লাল আর গোলাপি রংয়ের পার্থক্য বোঝে না ! '

মিলন ভয়ে ভয়ে প্রেমের পথে এগোবে কি এগোবে না ভাবতে ভাবতে নীলিমার বাবা চাকরির বদলি হয়ে পরিবার সহ চলে গেলেন খুলনায়।তাই মিলনকেও বাধ্য হয়ে নীলিমা নামক মনের ঘরটাতে মস্ত বড় তালা ঝুলাতে হয়েছিল।এরপর থেকে প্রেমঘটিত ব্যাপার স্যাপারে খুব একটা আগ্রহ কাজ করে নি মিলনের।কেন জানি নীলিমা নামক চিনচিনে ব্যথাটা মাঝে মধ্যে রাতবিরাতে জেগে ওঠে ওর।

.
মামার বুদ্ধিতে দ্বিতীয়বারের মত প্রেম করার চেষ্টায় সফল হবার সুপ্ত বাসনা নিয়ে এগোতে না এগোতেই মিলন পড়েছিল মহা বিপদে।ভাগ্যিস সোহান সেদিন লুকিয়ে লুকিয়ে ওদের কথা শুনে এগিয়ে এসেছিল।তা না হলে কি কেলেঙ্কারিটাই না হত ! অফিসে নতুন জয়েন করা সুন্দরী রিমাকে কোনো কিছু না ভেবে দুম করেই একদিন প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ফেলে মিলন।রিমা প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে মিলনের দিকে তেড়ে আসতেই সোহান দ্রুত ওদের সামনে হাজির হয়ে হাসতে হাসতে বলে,

' রিমা তোমাকে তো একটা গোপন কথা বলাই হয় নাই।আমাদের মিলন ভাই কিন্ত ভীষণ দুষ্টু।একটু আগে আমার সাথে ভাই বাজি ধরেছেন তোমাকে এই কথাটা বলে দেখিয়ে দেবে।আমি অবশ্য ভেবেছিলাম মিলন ভাই তোমার সামনে গিয়ে ভড়কে যাবে ; অথচ দেখ কিভাবে তুড়ি মেরে আমাকে হারিয়ে দিল।'

সেদিন পরিস্থিতি সামলে নেয়ার কৃতিত্ব পুরোটাই সোহানের।তা না হলে রিমার সাথে মিলনের সম্পর্কটা এখন অতটা সহজ হত না।সেদিন রিমা চলে যাবার পর সোহান মিলনকে বলছিল,

' পুকুরে মাছ ধরতে নামছেন খুব ভালা কথা।তয় তার আগে মাছে গো সম্বন্ধে একটু ধারণা নিয়া রাখবেন না মিয়া ! '

রিমা যে বিবাহিত তা মিলনের একেবারেই জানা ছিল না।এরপর প্রেম ঘটিত অধ্যায়ের ওপর বড় একটা সমাপ্তি চিহ্ন এঁকে মিলন সমস্ত দায়িত্ব মামার হাতেই ছেড়ে দিল।মা বাবার কথামত মামা যাকে ধরে আনবে ও তাকেই চোখ বুঁজে বিয়ে করবে বলে বাড়িতে জানিয়ে দিল।যদিও মামা শুরুর দিকে ওর কথা খুব একটা কানে নিল না।বেশ কয়েকবার তার নির্বাচিত পাত্রীর সামনে মিলন নিজের বেকুব ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলার পর মামা বললেন,

' ভাগ্যিস বিয়েটা সময়মত সেরেছিলাম।তা না হলে এমন বলদ ভাগ্নের মামা ভেবে মানুষজন আমাকেও মেয়ে দিত কি না সন্দেহ ! '

অতঃপর বাবা মায়ের সাথে গোল টেবিল বৈঠকে মিলনের জন্য সুপাত্রী নির্বাচন করে বিয়ের কথাটা পাকাপাকি করতে আর দেরি করেনি সাত্তার মামা।এবারে বিয়ের আগে মিলনের সাথে একটিবারের জন্য পাত্রীকে দেখা করতে দেয়া হয় নি।কোনো এক অজ্ঞাত কারণে পাত্রীপক্ষ থেকেও এই দেখাদেখির ব্যাপারটা নিয়ে তেমন তোড়জোর করা হয়নি।এইতো কিছুক্ষণ আগে মিলন প্রথমবারের মত ওর অবিবাহিত বউকে এক ঝলক দেখার সুযোগ পেয়েছে।তবে কেন জানি এই মেয়েটিকে ওর খুব চেনা চেনা লাগছে।কোথাও কিছু একটা ভুল হচ্ছে কিনা ভাবতে ভাবতে মিলন চশমার কাচটা ভালো করে মুছে আবার পরে নিল।কাজী সাহেব কাজ সেরে বিদায় নিতেই মিলন লাজুক হেসে বলে,

' আপনাকে এক ঝলক দেখতেই কেমন যেন চেনা চেনা লাগছিল।একেই বুঝি মনের মিলন বলে ! '

সাথে সাথেই নীলিমা ঠোঁট উল্টে পাশে বসা সাত্তার মামাকে বলল,

' এই মামা কানাটা কি বলছে এসব ? আমাকে কি চিনতে পারে নি এতক্ষণ ! '

মামা নীলিমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে,

' গাধাটাকে তুই একটু মানুষ বানিয়ে নিস মা। '

জীবনে এই প্রথম অপমানিত হবার পরেও সুখের সাগরে ভেসে যাচ্ছে মিলন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top