হাদিস অস্বীকারকারিদের অপপ্রচারের বদৌলতে একথা আজ খুব প্রচলিত হয়ে গেছে যে, ২০০ হিজরির আগে হাদিস লিপিবদ্ধকরণ শুরুই হয় নাই। হাদিসকে যারা একেবারে অস্বীকার করেন না তারাও এই প্রোপাগান্ডার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হাদিসকে কম গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে করতে শুরু করেছেন এবং যেনতেন ভাবে অনেক শক্তিশালী সহিহ হাদিসকেও কুরআনের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করেছেন।
কুরআন সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও শ্রুতি এবং স্মৃতিই যেমন প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে, লিপিবদ্ধকরণ সহায়ক মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে, হাদিসের ক্ষেত্রেও তাই। আল্লাহতায়ালা কুরআনকে যেসকল মানুষের শ্রুতি, স্মৃতি এবং বিশ্বস্ততার দ্বারা সংরক্ষণ করেছেন, হাদিসের ক্ষেত্রে সেই একই মানুষের শ্রুতি, স্মৃতি এবং বিশ্বস্ততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা মানুষকে ধীরে ধীরে কুরআনের প্রতিই আস্থাহীন ও সংশয়ী করে তুলবে।
একথা সত্য যে কুরআন অবতরণের প্রাথমিক দিকে হাদিস লিপিবদ্ধকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। তার সম্ভাব্য কারণ কী ছিল?
কুরআন সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও শ্রুতি এবং স্মৃতিই যেমন প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে, লিপিবদ্ধকরণ সহায়ক মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে, হাদিসের ক্ষেত্রেও তাই। আল্লাহতায়ালা কুরআনকে যেসকল মানুষের শ্রুতি, স্মৃতি এবং বিশ্বস্ততার দ্বারা সংরক্ষণ করেছেন, হাদিসের ক্ষেত্রে সেই একই মানুষের শ্রুতি, স্মৃতি এবং বিশ্বস্ততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা মানুষকে ধীরে ধীরে কুরআনের প্রতিই আস্থাহীন ও সংশয়ী করে তুলবে।
একথা সত্য যে কুরআন অবতরণের প্রাথমিক দিকে হাদিস লিপিবদ্ধকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। তার সম্ভাব্য কারণ কী ছিল?
- মূখ্য কারণ হতে পারে কুরআন এবং হাদিস মিশ্রিত হয়ে যাবার আশঙ্কা এবং
- গৌণ কারণ হতে পারে লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমের অপ্রতুলতা।
কিন্তু যেক্ষেত্রে এবং যে সময়ে এই আশঙ্কা বিদ্যমান ছিল না, সেক্ষেত্রে এবং সেসময়ে হাদিস লিপিবদ্ধকরণের এই নিষেধাজ্ঞাও বহাল ছিল না; বরং হাদিস লিপিবদ্ধকরণ শুরু হয় স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশাতেই। এটা যে নিছক দাবি নয় বরং ঐতিহাসিক বাস্তবতা সেটাই এই লেখায় তুলে ধরা হবে ইনশা-আল্লাহ।
এক.
এক.
হাদিস লিপিবদ্ধকরণের নিষেধাজ্ঞার স্বরূপ
১.১ হাদিস লিপিবদ্ধকরণের নিষেধাজ্ঞা
প্রথমেই সেই বিখ্যাত হাদিস লিপিবদ্ধকরণের নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদিসটি একটু দেখে নিই।
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
তোমরা আমার থেকে লিখো না। কুরআন ব্যতীত কেউ যদি আমার থেকে কিছু লিখে থাকে তবে যেন তা মুছে ফেলে। আমার থেকে হাদিস বর্ণনা কর, এতে কোন অসুবিধা নেই। যে ব্যাক্তি আমার উপর মিথ্যারোপ করবে- হাম্মাম (র.) বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, 'ইচ্ছাকৃতভাবে' – তবে সে যেন দোযখে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।
[সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩০০৪]
লক্ষ্য করুন,
১.১.১
এখানে যেমন কুরআন ব্যতীত অন্য কোন কিছু লিপিবদ্ধকরণকে নিষেধ করা হচ্ছে।
১.১.২
ঠিক তেমনি হাদিস বর্ণনা করার নির্দেশও প্রদান করা হচ্ছে।
১.১.৩
অর্থাৎ লিপিবদ্ধকরণের নিষেধাজ্ঞা কখনোই হাদিসের প্রচার প্রসারকে রূদ্ধ করার জন্য ছিল না।
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
তোমরা আমার থেকে লিখো না। কুরআন ব্যতীত কেউ যদি আমার থেকে কিছু লিখে থাকে তবে যেন তা মুছে ফেলে। আমার থেকে হাদিস বর্ণনা কর, এতে কোন অসুবিধা নেই। যে ব্যাক্তি আমার উপর মিথ্যারোপ করবে- হাম্মাম (র.) বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, 'ইচ্ছাকৃতভাবে' – তবে সে যেন দোযখে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।
[সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩০০৪]
লক্ষ্য করুন,
১.১.১
এখানে যেমন কুরআন ব্যতীত অন্য কোন কিছু লিপিবদ্ধকরণকে নিষেধ করা হচ্ছে।
১.১.২
ঠিক তেমনি হাদিস বর্ণনা করার নির্দেশও প্রদান করা হচ্ছে।
১.১.৩
অর্থাৎ লিপিবদ্ধকরণের নিষেধাজ্ঞা কখনোই হাদিসের প্রচার প্রসারকে রূদ্ধ করার জন্য ছিল না।
১.২ হাদিস লিপিবদ্ধকরণের অনুমতি ও অনুপ্রেরণা
এবার আমরা হাদিস লিপিবদ্ধকরণের নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে হাদিস লিপিবদ্ধকরণের অনুমতি ও অনুপ্রেরণার অনুসন্ধান করবো।
আবু ক্বাবিল বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা.-কে বলতে শুনেছি, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশে বসে লিখতাম। (একদা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো: দু'শহরের কোন্ শহরটি সর্বপ্রথম বিজিত হবে, কনস্টানটিনোপল, না-কি রোম? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: না, বরং হিরাকল (হিরাক্লিয়াস)-এর শহর (কনস্টানটিনোপল) সর্বপ্রথম বিজিত হবে।" [সুনানে দারিমী, হাদিস নং ৫০৩ , সহিহ হাদিস]
আবু হুরাইরা(রা.) হতে বর্ণিত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাদের মধ্যে আমার অপেক্ষা অধিক হাদিস কেউ বর্ণনা করেন নাই, আব্দুল্লাহ বিন 'আমর ব্যতীত যিনি লিখে রাখতেন আর আমি কথনই তা করতাম না। [সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১১৩]
আবু ক্বাবিল বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা.-কে বলতে শুনেছি, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশে বসে লিখতাম। (একদা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো: দু'শহরের কোন্ শহরটি সর্বপ্রথম বিজিত হবে, কনস্টানটিনোপল, না-কি রোম? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: না, বরং হিরাকল (হিরাক্লিয়াস)-এর শহর (কনস্টানটিনোপল) সর্বপ্রথম বিজিত হবে।" [সুনানে দারিমী, হাদিস নং ৫০৩ , সহিহ হাদিস]
আবু হুরাইরা(রা.) হতে বর্ণিত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাদের মধ্যে আমার অপেক্ষা অধিক হাদিস কেউ বর্ণনা করেন নাই, আব্দুল্লাহ বিন 'আমর ব্যতীত যিনি লিখে রাখতেন আর আমি কথনই তা করতাম না। [সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১১৩]