What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ক্রাশ কনফেশন (1 Viewer)

Joined
Aug 23, 2020
Threads
74
Messages
111
Credits
7,126
ছেলের ঘড়িতে মেয়ের ওড়না আটকে যাওয়ার ঘটনা শুধু নাটক সিনেমায় হয় না। বাস্তবেও হয়। আমার সাথে ও হয়েছে। তাও বাস স্টপে নামক লোকসমাগমে। ঘটনা বলি, কলেজ যাবার জন্য বাস স্টপে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করছিলাম অনেকক্ষণ যাবত। কিন্তু বাসের দেখা নেই। প্রায় আধঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর বাস এলো। তখনি ঘটলো সিনেমাটিক ঘটনা। বাস আসায় তাড়াহুড়ো করে যেতে গিয়ে ওড়নায় টান পড়লো। আমি থেমে গেলাম। পুরো মাথা না ঘুরিয়ে আড়চোখে ওড়নার কোণার দিকে তাকালাম। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু চোখে পড়লো। আমার গোলাপি রঙের জর্জেট ওড়নার কোণা আটকে আছে সাদা চামড়ার উপর পরে থাকা সাদা শার্টের হাতার শেষ প্রান্তে রূপালি রঙের ডায়াল ঘড়িতে। ঘড়ি আর ওড়নার মিলন দেখে আমি সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। আমি যদি ভুল না হই তবে আমার ওড়নাটা তার হাত ঘড়িতে আটকেছে যাকে দেখে মিনিট দশেক আগে আমি ক্রাশ খেয়েছিলাম।

বাস স্টপে এসে দাঁড়ানোর মিনিট পাঁচেক পরেই দেখলাম রাস্তার অপাশ থেকে এক সুদর্শন যুবক দৌড়ে আসছে। ধবধবে সাদা চামড়ার উপর সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট জড়ানো। গলায় কালো টাই ঝুলছে। হাতের পরে থাকা রূপালী রঙের ডায়াল ঘড়ি আমার চোখ এড়ায়নি। মাথা ভর্তি কালো রেশমি চুল ছেলেটার সাথে দৌড়াচ্ছে যেন। দূরে থাকায় চেহারা বুঝা যাচ্ছিলো না। কাছে আসতেই চেহারা দৃশ্যমান হলো। একবারেই নজরকাড়া চেহারা। কালচে লাল ঠোঁটে কোণে হাসি দুলছে। যেন বাস স্টপ নয় বিয়ের পর প্রথম শ্বশুরবাড়ি এসেছে। সে যাই হোক, ছেলেটার চেহারা দেখে ক্রাশ খেয়েছিলাম । ছাউনির কাছে এসে ছেলেটা চারদিক চোখ বুলিয়ে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো। সেই হিসেবে আমার ওড়না তার ঘড়িতেই আটকেছে। তা দেখে আমার মন খুশিতে নেচে উঠেছিলো। সে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে আর তার গায়েও একি শার্ট ছিলো তারমানে সেই ছেলের ঘড়িতেই আমার ওড়না আটকেছে!

হুট করে সিনেমার দৃশ্য চোখে ভেসে উঠলো। নায়কের ঘড়িতে নায়িকার ওড়না আটকে যায়। তারপর নায়ক ধীরে ধীরে নায়িকার কাছে আসে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর ঘড়ি আর ওড়নাকে একে অপরের বন্ধন থেকে মুক্ত করে দুজনেই মুচকি হেসে চলে যায়। প্রেম রোগে বশ করে দুজনকেই। নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে দুজনেই দুজনকে ভাবতে থাকে। পরদিন থেকে বাস স্টপে তাদের দৃষ্টিবিনিময় হয় । ধীরে ধীরে সেই দৃষ্টিবিনিময় প্রেম রূপ নেয়। আহ! তারমানে সিনেমার মতো হলে আমার এ প্রেম হবে? প্রেমহীন জীবনটা চৈত্র মাসের খরা নদীর মতো চৌচির হয়ে আছে। অবশেষে জীবনে প্রেম নামক এক পশলা বৃষ্টির আগমন ঘটবে! প্রেম আসবে আমার জীবনে! আহ! কত দিনের সাধনা আমার! ফাইনালি প্রেম আসছে তাও সিনেমাটিক ভাবে! আমার ফেসবুক রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস এবার সিঙ্গেল থেকে ইন এ রিলেশনশিপ হবে! ভাবতেই ঠোঁটের কোণে লাজুক হাসি ফুটে উঠলো। ইচ্ছে করছে এখনি ফেসবুকে গিয়ে স্ট্যাটাস দিই, ইন এ রিলেশনশিপ উই মাই ক্রাশ। অনেক লাইক কমেন্ট পড়বে। ভাবতেই মনে লালা লায়া লালায়া টোন বেজে উঠলো। নিজেকে সিনেমার নায়িকা ভাবতে শুরু করলাম। এই ব্যস্ত কোলাহল ছেড়ে ক্রাশকে নিয়ে কল্পনার রাজ্যে পাড়ি জমালাম। ঠোঁটের কোণে লাজুক হাসি ঝুলে আছে। আমার ভাবনা উসাইন বোল্টের মত দৌড়ে কোথা থেকে কোথা যাচ্ছে! ভাবনার সাথে সাথে হাসিটাও প্রশস্ত হচ্ছে। কিন্তু আমার সেই হাসিটা হয়তো খুব কম আয়ু নিয়েই এসেছে। তাইতো খনিকেই নিষ্প্রাণ হয়ে গেলো। আমার হাসিকে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করলো বয়স্ক এক মোটা কন্ঠ। আমি যখন কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করছিলাম তখন কেউ একজন আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমাকে ডাকলো,
"মামুনি?"
আমি জবাব দিলাম না। তিনি আবারো ডাক দিলেন,
"মামুনি শুনছো? আমার অফিসে দেরি হচ্ছে। "
এবার ভাবনা থেকে বেরিয়ে গেলাম। সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমার বাবার বয়সী সাদা চামড়ার এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। আমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটায় একরাশ বিরক্তিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম তার দিকে। তিনি বললেন,
"মামুনি বাস চলে যাচ্ছে।"
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। যার অর্থ বাস এসেছেই যাওয়ার জন্য। বাস তো যাবেই। ইচ্ছে হলে আপনিও যান। আমার আর আমার নায়কের সিনেমাটিক দৃশ্যে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন কেনো! আমার চাহনি তিনি বুঝতে পারলেন কিনা জানি না। তিনি আবার বললেন,
"আমার অফিসের লেট হচ্ছে। তুমি কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি বাসে উঠবে?"

বিরক্তিতে আমার চেহারার রঙ পালটে গেছে। আমি কন্ঠে এক রাশ বিরক্তি মাখিয়ে বললাম,
"কে আপনি? আপনার অফিসে লেট হচ্ছে তা দিয়ে আমি কি করবো আংকেল? লেট হলে যান? দাঁড়িয়ে আছেন কেনো! আমাকেই বা এসব বলার কি প্রয়োজন? "
আমার কথায় সামনে থাকা মানুষটা আমার দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলেন। যেন আমি না জানাতে তিনি বেশ অবাকই হয়েছেন৷ সেকেন্ডের দশেক বিস্ময়ের সাগরে হাবুডুবু খেয়ে আমতা আমতা করে বললেন,
"মামুনি আমার ঘড়িতে তোমার ওড়না আটকে আছে। যার জন্য আমি যেতে পারছিনা। তুমি ওড়নাটা ছাড়িয়ে নাও, আমি চলে যাচ্ছি।"

আংকেলের এই কথায় আমি আংকেলের হাতের দিকে তাকালাম। তাতেই আমার মন ভেঙেচুরে খান খান হয়ে গেলো। আমার ওড়না ওই সুদর্শন যুবকের ঘড়িতে নয় বাবার বয়সী আংকেলের ঘড়িতে আটকেছে! আমি আংকেলের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম আংকেলের গায়েও সেই ছেলেটার মতো সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট। গায়ে হুবহু ছেলেটার মতো ঘড়ি। গায়ের রঙ ও একি। তারমানে আমি যাকে এতক্ষণ নায়ক ভাবছিলাম সে কোন ছেলে নয় বরং বাবার বয়সী লোক! ভাবতেই এক মুহুর্তের জন্য ব্রেকাপের কষ্ট অনুভব করলাম। বুকের ভিতরে আবারো চৈত্র মাসের খরা লাগলো যেন। আহ! আমার নায়ক, প্রেম, সিনেমাটিক দৃশ্য! ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাদি। আর বলি, আমার জীবনে কি প্রেম আসবে না? সিনেমাটিক দৃশ্য হবে না? নাকি এমন ছ্যাকাই খেয়ে যাবো?

আমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটালো আরেক কন্ঠ,
"বাবা চলো আমাদের দেরি হচ্ছে। বাস গেলো বলে।"
এবার কন্ঠটা আগের চেয়ে ভিন্ন মনে হলো। তাকিয়ে দেখি সেই কন্ঠের মালিক আর কেউ নয় আমার কল্পনার নায়ক মানে সেই সুদর্শন ছেলে। ছেলেটা আংকেলের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের পোশাক এক। তার কথা শুনে বুঝলাম আমার ক্রাশ আংকেলের ছেলের। আমার কষ্টটা যেন বেড়ে গেলো। আমি বাকরূদ্ধ। শেষ অব্দি নায়কের বাবার ঘড়িতে আমার ওড়না আটকালো! হায় বিধাতা! উঠিয়ে নাও আমায়।

ছেলেটার কথায় আংকেল তার হাতের দিকে ইশারা করে বললেন,
"প্রদীপ, আমার ঘড়িটাকে মুক্তি দে তো। আটকা পড়েছে। "
আংকেলের মুখে 'প্রদীপ'নামটা শুনেই বুঝলাম আমার ক্রাশের নাম প্রদীপ। নামটায় যেন নায়ক নায়ক ভাব আছে। সে নায়ক হয়ে আমার ওড়নাটা তার ঘড়িতে আটকালে কি এমন হতো! বেশ হতো না? ঠাস ঠুস প্রেম হয়ে যেত। আমার জীবন চৈত্র থেকে ফাল্গুনে রূপ নিতো। প্রদীপ +অভিহা। আহা! সেই যায়!
আমি প্রদীপের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম, বিধাতা একে আমার জীবন নামক হারিকেনের প্রদীপ বানিয়ে দাও। আমি সচ্চ কাঁচ হয়ে আকঁড়ে রাখবো। এবারো আমার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটালো প্রদীপ।
"তুমি কি যে করো না বাবা? ঠিক করে চলাফেরা করবে না? যেখানে সেখানে আটকে যাও। "
বলে প্রদীপ একবার আমার ওড়নার দিকে তাকালো। তারপর আমার দিকে তাকালো। তার ফর্সা চোয়ালের প্রশস্ত কপাল কুঁচকানো। যা বিরক্তি প্রকাশ করছে। প্রদীপের কথায় বাস্তবে ফিরে এসে প্রদীপের মায়াবী চোখের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলাম। তাতেই আমি যেন খান খান গেলাম। সেই মায়াবী চোখ তার। আবারো যেন ক্রাশ খেলাম। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে আমি বুকে হাত দিয়ে বলতাম,"কেয়া লুক হে ইয়ার? হায় মে মারজাবা!" কিন্তু এখন সেই কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই আমি। ছ্যাকা সেবন করে বীজগণিতের বি এস্কোয়ার হয়ে গেছি। মানে ব্যাঁকা আর বোবা হয়ে গেছি। আমি টু শব্দ না করে চুপচাপ বাবা ছেলের কান্ড দেখতে যাচ্ছি আর মনে মনে নিজ ভাব প্রকাশ করছি। আংকেল এবার বিরক্তি নিয়ে বললেন,
"এত কথা বলিস না। ঘড়ি থেকে ওড়নাটা খুলে দে। "
প্রদীপ এবার ভ্রু কুঁচকে আংকেলের হাতের দিকে তাকালো। তারপর বলল,
"আমি পরনারীর কাপড়ে হাত দিই না বাবা। তুমিই খুলো।"

প্রদীপের কথায় আমি আরেকবার ক্রাশ নামক আহার গ্রহণ করলাম। হায়! কি লয়াল! এমন একজনকেই চেরাগে কেরাসিন ভর্তি করে খুঁজছি অনেক বছর যাবত । ইশ! আমার ওড়ানা যদি আজ প্রদীপের ঘড়িতে আটকাতো তবে আমি এবং এক্ষুনি কাজি অফিস গিয়ে ঠাস ঠুস করে বিয়ে করে নিতাম। তারপর রংঢং করে ছবি তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতাম, ম্যারেজ উইথ মাই লয়াল এন্ড ড্যাশিং হাজবেন্ড। এমন ফিদা ময় হাজার চক আঁকছি আমি। আমার ফিদানেস দূর করতে বিরক্তি আর রাগ মাখানো কন্ঠে প্রদীপ আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
"এই মিস? বোবা নাকি পাথরের মুর্তি? কথা না বলে স্ট্যাচু হয়ে আছেন কেনো! এটা কি মোভ এর এড চলছে? যদি তেমন ভেবে থাকেন তবে বলি এড শেষ হয়ে গেছে। কোমর, মাথা ও হাটুতে মলম লাগানো শেষ বাস্তবে এবার বেরিয়ে আসেন। আর ওড়নাটা খুলে আমাদের যেতে দিন। "
সত্যিই আমি তখন বোবা হয়ে গেলাম। মনে মনে বললাম, ওহে ক্রাশ? তুমি যদি বলো তবে আমি বোবা হতেও রাজি। জাস্ট একবার বলো কবুল। আমি যে তোমার প্রেমে আকুল! মনে কথা মনেই রয়ে গেলো। বলা আর হলো না। আমি পিটপিট করে চেয়ে রইলাম। আমার থেকে উত্তর না পেয়ে প্রদীপ রেগে বলল,
"চলাফেরার ঠিক নেই। আবার আসে একা চলতে! যত্তসব আজাইরা পোলাপান।"
প্রদীপের কন্ঠে উপসে পড়া রাগ। আংকেল প্রদীপকে থামাতে বললেন,
"আহ! প্রদীপ, তুই মেয়েটাকে বকছিস কেনো! এটুকুনি মেয়ে এত কিছু বুঝে নাকি? "
"বুঝে না, সে তো হামাগুড়ি দেয়া বাচ্চা! যত্তসব আজাইরা। এদের ঢং আমার ভালো মত চেনা আছে। "
ঝাঁজালো কন্ঠে বলে প্রদীপ তার বাবার ঘড়ি পরা বাঁ হাতটা হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিলো। আংকেলের হাতে থাকা রূপালী চেইনের ঘড়িটা খুলে আমার ওড়নার কোণায় বেধে ওড়নাসহ মাটিতে রেখে দিলো। তারপর নিজের হাত ঘড়িতে সময় দেখে বলল,
" ৯:৪০! অনেক দেরি হয়ে গেছে বাবা। চলো এবার। এসব আজাইরা কাজে সময় নষ্ট করার মানে নেই।"

আংকেল আমার ওড়নায় লেগে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,
"আরে আমার ঘড়ি! "
" তোমার ঘড়ি পরনারীতে আসক্ত। দেখোনা যার তার কাছে চলে যায়? এমন ক্যারেক্টরলেস ঘড়ি পরার চেয়ে না পরাই ভালো। আমি তোমাকে ভালো ক্যারেক্টরের ডিসেন্ট ঘড়ি নিয়ে দিবো। এই ঘড়িটা তার আসক্তিত নারীর কাছেই থাকুক। চলো । "
বলে আংকেলের হাত টেনে বাসে কাছে নিয়ে গেলো। এক মুহুর্তের জন্য আমার মনে হলো এখানে প্রদীপের বাবা আংকেল নয় বরং আংকেলের বাবা প্রদীপ। যেমন বিহেভ! বাবা বাবা টাইপ। আমি নিষ্পলক চোখে প্রদীপের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। বাস চলে গেছে আগেই। প্রদীপ আংকেলকে একটা সিএনজিতে তুলে দিয়ে আমার তাকিয়ে থাকার মাঝেই প্রদীপ আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। প্রদীপকে আসতে দেখে আমার মন খুশিতে নেচে উঠলো। এবার নিশ্চয় প্রদীপ আমাকে সরি বলবে,নাম্বার চাইবে। আমাদের প্রেম হবে। আমার মনে বন্ধ হওয়া লালা লা লায়ালা টোন বেজে উঠলো আবার। সেই টোনের অফ বাটনে ক্লিক করে প্রদীপ বলল,
"এই মিস মূর্তি, সিনেমা একটু কম দেখবেন। সারাদিন নাটক সিনেমা দেখে মনে মনে কিসব ভাবেন। রাস্তা ঘাটে চলতে গিয়ে হুশ থাকে না। যার তার ঘড়িতে ওড়না আটকান। কোনটা বাবার বয়সী আর কোনটা প্রেমিক মনে থাকে না। বাবার বয়সী মানুষকে প্রেমিক ভেবে আকাশসম এক্সপেকটেশন নিয়ে বসে থাকেন! এসব বাদ দিন। এটা সিনেমা নয় এটা বাস্তব। এখানে নায়কের ঘড়িতে নায়িকার ওড়না আটকালে প্রেম হয় না। নায়কে ইভটিজার ভেবে গনধোলাই চলে। ভাগ্যিস আজ আমি ছিলাম। নয়তো আমার বাবার কপালে দুঃখ ছিলো।"
প্রদীপের কথা শুনে আমি অবাক। প্রদীপ পুরো ব্যাপারটা বুঝে গেছে! হায় আল্লাহ কি লজ্জা লজ্জা! আমি অবাক চোখে প্রদীপের দিকে তাকালাম। দেখি প্রদীপ মিটিমিটি হাসছে। লজ্জায় আমার মাটি খুড়ে ঘর বানিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। আমি চোখ নামিয়ে অন্য দিকে তাকালাম। প্রদীপ হাসি থামিয়ে বলল,
"আর হ্যাঁ, আমি বিবাহিত। পাঁচ বছরের একটা মেয়েও আছে। সেকেন্ড চান্সের আশা নেই। এই যে ক্রাশ, মন যে করে উড়ুউড়ু রয়না যে আর ঘরে,এই টাইপ ব্যাপার সেপার পার করেছে এসেছি বহু আগেই। তবে হ্যাঁ? আপনার মতো আমার একটা বোন আছে। সেই হিসেবে আমি আপনাকে ছোট বোনই বলি। ছোট বোন হিসেবে এডভাইজ দিই, বি কেয়ারফুল। রাস্তায় ছেলে বুড়োর পার্থক্য বুঝুন। আর কল্পনার নিজেকে সিনেমার নায়িকা না ভেবে বাস্তবে নিজেকে একজন সাধারণ মেয়ে ভাবুন। ভালো থাকবেন। আসি।"

বলে প্রদীপ হাটা ধরলো। খেয়াল করলাম প্রদীপ মুখ চেপে আছে। হয়তো হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে। আমি লজ্জায় ঘুরে দাঁড়ালাম। এত লজ্জা জীবনেও পাই নি। ক্রাশ খেলাম তাও বিবাহিত একজনের উপর! যে কিনা বউ না বানিয়ে আমাকে বোন বানিয়ে দিলো! আর ওড়না আটকালো তাও কিনা বাবার বয়সী কারো ঘড়িতে! ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা কি লজ্জা!

এক পা বাড়াবো তখন প্রদীপ ডাক দিলো। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রদীপ আমার সামনে কাচুমাচু করে বলল,
"আসলে অনেক ভেবে দেখলাম বাড়িতে আমার ছোট বোন আছে। আর বোনের দরকার নেই। আপনাকে ছোট বোন বললেও মানতে পারবো না। আমি আপনাকে অন্যকিছু মানতে পারবো। বলতে লজ্জা লাগছে। "
আমি কৌতুহলী চোখে তাকালাম। সে কি আমাকে বউ বানাতে চায়? ভাবতো তেমনই। আমি কৌতুহল দমাতে না পেরে বললাম,
"তবে আপনি আমাকে কি ব....
আর বলতে দিলো না প্রদীপ। আমাকে থামিয়ে বলল,
" ঠিক ধরেছেন।"
আমি বিস্মিত চোখে তাকালাম। মনের মাঝে লালা লা লালা লা টোন বাজতে শুরু করে সবে তখনই প্রদীপ বলল,
"উই ইউ বি মাই সেকেন্ড মাদার?"

প্রদীপের কথা শুনে টোন বন্ধ হয়ে সাবানার কানে হাত দিয়ে বলা নায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া এ হতে পারে না কথাটা বেজে উঠলো। সেকেন্ড মাদার! লাইক সিরিয়াসলি? এই প্রথম কোন মেয়েকে ক্রাশ তার বাবার বিয়ের প্রস্তাব দিলো! আমার মাথা ভনভন করছে। যে কোন সময় আমি ঘুরে পড়বো। আমার মার্বেলের মতো গোলগোল চোখের দিকে তাকিয়ে প্রদীপ মুচকি হেসে বলল,
" আপনার ওড়না আমার বাবার ঘড়িতে আটকেছে। আপনি নায়ক ভেবে বাবাকেই কল্পনা করেছেন। আমি আপনার কল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতে চাই। আপনাকে আমার বাবার জীবনে আনতে চাই। আমাদের বাড়িতে আপনার কোন সমস্যা হবে না। আমি, সূচনা, আলো,প্রভা,মা বাবা সবাই ফ্রি মাইন্ডেড। আপনি সুখে থাকবেন। আপনি বাবার চিন্তা করবেন না আমি আমার বাবা এবং আপনার বাবাকে রাজি করাবো। আর আমার বাবার ঘড়িটা আপনার কাছেই থাক। অনেক স্মৃতি, সিনেমাটিক দৃশ্য জড়িয়ে আছে কিনা! যত্মে রাখবেন। আমি মায়ের সাথে কথা বলবো। মায়ের অনুমতি পেলে ইনভাইটেশন কার্ড পাঠাবো। চলে আসবো। আপনাকে সৎমা বানাতে আমার আপত্তি নেই। আসি উডমি মা। নিজের খেয়াল রাখবেন।"

বলে ঠোঁট চেপে হাসি আটকে চলে গেলো। আমার অবস্থা আরো বেহাল। আগে তো ভালোই ছিলো বোন। এবার কিনা মা! ছিঃ ছিঃ ছিঃ এত লজ্জা এত লজ্জা জীবনে পাইনি। আমার চোখে পানি ভর করছে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, ওহে মানুষ, সিনেমাটিক দৃশ্য বাস্তবে হয় না। হয় তার উলটো। এখানে ঘড়িতে ওড়না আটকালে প্রেম হয় না, ছোট বোন, সৎ মা হয়ে যায়।

প্রদীপ চলে যাচ্ছে আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। যেন যে একা যাচ্ছে না। যাবার সময় আমার ক্রাশ, স্বপ্ন, ফেসবুক স্ট্যাটাস সব নিয়ে যাচ্ছে। আমার কান্না পাচ্ছে। ভীষণ কান্না। আমি আর কলেজে যেতে পারলাম না। বাসায় চলে আসলাম। সোজা রুমে এসে বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে লাগলাম। সেই কান্নার শেষ নেই। প্রেম না করে ও ছ্যাকা খেয়েছি। ভীষন ছ্যাকা। হায় প্রেম কবে আসবে তুমি!
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top