What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

zZfQ4rf.jpg


জো বাইডেনের জীবনের গল্প অনেকটা ফিনিক্স পাখির মতো বারবার ফিরে আসার ঘটনার মতো। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এখন পর্যন্ত দুবার ব্যর্থ হলেও জীবনের কাছে হার মানেননি কখনোই। ১৯৭২ সালের বড়দিনের আগের রাতে এক মর্মান্তিক এক সড়ক দূর্ঘটনায় নিজের স্ত্রী আর এক বছরের কন্যা সন্তানকে হারিয়েছিলেন। সে যাত্রায় কোনমতে বেঁচে গিয়েছিল তার দুই পুত্র। ২০১৫ সালে আবারো ধাক্কা। ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছিল তার ৪৬ বছর বয়সী ছেলের জীবন। জো বাইডেন বারাক ওবামার পাশে দাড়িয়ে বলেছিলেন, ২০১৬ সালে অন্তত না। তবে তিনি ফিরবেন। বাইডেন কথা রেখেছেন। ২ বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একেবারে দাঁড়প্রান্তে।

জো বাইডেন পরিচিতি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ সিনেটর এবং ডেলওয়্যার রাজ্যের সবচেয়ে বেশিদিন সিনেটর থাকা মানুষটি জো বাইডেন। ১৯৮৭ ও ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্টের জন্য লড়েছিলেন বাইডেন। প্রথমবার বুঝতে পেরেছিলেন বড্ড নবীন তিনি। তাই সরে গিয়েছিলেন নিজেই। আর ২০০৮ সালে প্রাইমারিসে ডেমোক্র্যাটদের চূড়ান্ত এবং পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া বারাক ওবামার কাছে হার মেনেছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে ওবামার "Change We Need" শ্লোগানের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কাছে ভাটা না পড়লে হয়ত সেবারই প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। বাইডেনের সেই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল। বারাক ওবামা সেটি জানতেন। তাই ওবামার দীর্ঘ ৮ বছরের প্রেসিডেন্সিতে জো বাইডেনই ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে।

জো বাইডেন সে দায়িত্ব বেশ ভালভাবেই পালন করেছিলেন। বারাক ওবামা এক ভাষণে বলেছিলেন, বাইডেনের সাথে তার ব্রোমান্স ছিল প্রেসিডেন্ট জীবনের বড় সম্বল। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সম্মান হিসেবে ২০১৭ সালে বাইডেন পেয়েছিলেন প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম।

১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর জন্ম নেয়া ৭৭ বছর বয়সী এই নেতার এবারই সবচে বড় সুযোগ প্রেসিডেন্টের আসনে বসার।

বর্ণিল ছাত্রজীবন এবং প্রথম প্রেম

ইউনিভার্সিটি অফ ডেলওয়্যারের ছাত্র জো বাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম অর্ধেক কাটিয়েছেন দুটো কাজে। প্রথমত ফুটবল, দ্বিতীয়ত নারী। ইতিহাস ও রাজনীতির ছাত্র বাইডেন প্রথম রাজনীতির মঞ্চে আগ্রহী হন আরেক কিংবদন্তীর জন্য। জন এফ কেনেডির ১৯৬১ সালের নির্বাচনের পর প্রথম রাজনীতিতে আগ্রহ পান বাইডেন।

প্রথম বর্ষের বসন্তের ছুটি কাটিয়ে বাহামাস থেকে ফেরার পথে পরিচিত হন সিরাকিউস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিলিয়া হান্টারের সাথে। বাইডেন যাকে বলেছিলেন, প্রথম দর্শনেই প্রেম। আর ভালবাসার টানেই একপর্যায়ে সব ছেড়ে পড়াশোনায় ব্যাপক মনোযোগী হয়ে পড়েন তিনি। ১৯৬৫ সালে ডেলওয়্যার থেকে গ্র‍্যাজুয়েশন শেষ করেই বাইডেন ছুটে যান সিরাকাউস বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। এরমাঝে চুকিয়ে নেন বিয়ের পর্বটাও। ১৯৬৬ সালেই নিলিয়া হান্টারের সাথে গাটছাড়া বাঁধেন জো বাইডেন।

রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিনগুলি

সিরাকাউস থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা শেষে ১৯৬৮ সালে বাইডেন নিজ শহরে ফিরে আসেন। ডেলওয়্যারের উইলমিংটনে একটি ল ফার্মে পেশাগত জীবন শুরু করেন তিনি। একইসাথে যুক্ত হন ডেমোক্রেটিক পার্টির সাথে। অল্প সময়েই রাজনীতির মঞ্চে নিজেকে দাঁড় করাতেও সক্ষম হন বাইডেন। ১৯৭০ সালের নিউক্যাসেল সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত হন বাইডেন। কাউন্সিলম্যান হবার পরপরই ১৯৭১ সালে নিজের ব্যক্তিগত ল ফার্মও স্থাপন করেন তিনি।

একদিকে কাউন্সিলম্যান, অন্যদিকে আইনজীবী। এতকিছুর মাঝে জো বাইডেন সামলেছেন জীবনটাকেও। ১৯৬৯ সালে জোসেফ বাইডেন, ১৯৭০ সালে হান্টার বাইডেন এবং ১৯৭১ সালে নাওমি বাইডেনের জন্ম হয়। নিজের জীবনের শুরুর দিনগুলো নিয়ে পরে বাইডেন বলেছিল, "ওই সময় সবকিছুই আমার প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দ্রুত ঘটছিল।"

পরের বছরই বাইডেনকে রীতিমতো দাবার চাল হিসেবে নিয়োগ দেয় ডেমোক্রেটিক পার্টি। মাত্র ২৯ বছর বয়সেই বাউডেনকে মুখোমুখি হতে হয় সিনেট নির্বাচনে। এতটুক হলে তবু নিজেকে শান্ত রাখা যেত। কিন্তু বাউডেনের প্রতিপক্ষ ছিলেন সে সময়ের জনপ্রিয় সিনেটর রিপাবলিকান ক্যালেব বোগস। এই পর্যায়ে এসে পরিবারকে পাশে পেয়েছিলেন বাইডেন। ভড়কে না গিয়ে নিজের সবটুকু দিয়েই চেষ্টা করেছিলেন। বোন ভ্যালেরি বাইডেন ছিলেন ক্যাম্পেইন ম্যানেজার। এছাড়া তার বাবা-মা দুজনেই বাইডেনের হয়ে প্রতিদিন প্রচারণায় ছিলেন। একদিকে পেশা, অন্যদিকে রাজনীতির ডাক, সেই সাথে পরিবার। এদিকে বয়সটাও কম। জো বাইডেনের যুদ্ধটা কঠিনই ছিল ।

কিন্তু নভেম্বরে অঘটনের জন্ম দেন বাইডেনই। ক্যালেবকে হটিয়ে ডেলওয়্যারের সিনেটর নির্বাচিত হন তিনি। মার্কিন ইতিহাসে যা পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ।

সিনেটর জো বাইডেন

সিনেটর হিসেবে জো বাইডেন অনেক লম্বা সময় পার করেছেন। তবে দীর্ঘ সময় থাকলেও তাতে চরম আস্থার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় চার দশক সিনেটর বাইডেন ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সম্মানের স্মারক হিসেবে বেশ কিছুদিনের জন্য মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির প্রধান ছিলেন। কাজ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সম্পর্ক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সরাসরি অস্ত্র হামলায় না যাবার জন্য মার্কিন জনগণ এখনো সিনেটর বাইডেনের কাছে কৃতজ্ঞ। এছাড়া বিরোধপূর্ণ বালকান অঞ্চলের সাথে শান্তি আলোচনা এবং সোভিয়েতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য ন্যাটোর সদস্য বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ সব কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। সর্বদা শান্তির পক্ষে থাকা জো বাইডেন দারফুরে হামলা এবং প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাক আগ্রাসনের কট্টরবিরোধী ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই

জীবন তাকে বারবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। কখনো স্ত্রী-সন্তান কেড়ে নিয়েছে। কখনো মুখোমুখি করিয়েছে প্রচন্ড চাপের। তবু জো বাইডেন ভেঙে পড়েননি। ডেমোক্র্যাটদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় বাইডেন ১৯৮৭ সালে প্রথম সিদ্ধান্ত নেন প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন বলে। কিন্তু সিনেট আর রাষ্ট্রপ্রধান পদের মাঝে বিস্তর ফারাক বুঝতে সময় লাগেনি। বাইডেন সরে গিয়েছিলেন। যদিও দাপ্তরিকভাবে দেখানো হয় তাকে পরাজিত প্রার্থী হিসেবে। পরে তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইনে বক্তব্য চুরির অভিযোগ পর্যন্ত এসেছিল।

১৯৮৮ সালে জানা যায় বাইডেনের মস্তিষ্কের দুটো আর্টারি আকারে বড় হয়ে গেছে। মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারের সময় আচমকা তার ফুসফুসে রক্ত জমতে শুরু করে। দরকার হয় আরো এক অস্ত্রোপচারের। তবে প্রেসিডেন্টের পদে হেরে যাওয়া বাইডেন জীবনের কাছে আরো একবার জিতে ফিরেছিলেন। মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে সব জটিলতা কাটিয়ে আবারো ফিরেছিলেন ডেলওয়্যারের সিনেটর হয়ে।

আর ২০০৮ সালে তার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াইটা শেষে এসে থেমেছিল বারাক ওবামার কাছে। তবে বারাক ওবামার সাথে তিনিও ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন পরের ৮ বছর। প্রথম দফায় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন জন ম্যাককেইন আর ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন সারাহ পলিন। আর ২০১২ সালে ওবামার প্রতিপক্ষ ছিলেন মিট রমনি। বাইডেনকে লড়তে হয়েছিল পল রায়ানের বিপক্ষে। রীতিমতো হেসেখেলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ করেছিলেন জো বাইডেন।

প্রবাদ বলে, পুরাতন চাল ভাতে বাড়ে। এর আগে দুইবার হারের মুখ দেখেছিলেন। আবার দুইবার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও ছিলেন। ছিলেন ডেলওয়্যারের দীর্ঘদিনের সিনেটর। জো বাইডেন কি এবার পারবেন? প্রতিপক্ষের কৌশল হোক কিংবা নিজের প্রজ্ঞা, আপাতত সবই বাইডেনের পক্ষে। হোয়াইট হাউজে বাইডেনের পা রাখার ইচ্ছেটা বেশ পুরাতন। ভাগ্য আর বয়স জানান দিচ্ছে, হলে এবারই। অন্যথায় হয়ত অসম্ভব। বেলায় বেলায় বয়স তার ৭৭-এ এসে ঠেকেছে। জীবনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এগিয়ে যাওয়া বাইডেনের কাছে সামনের পথটা কতটা সহজ হবে তা সময়ই জানে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top