What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected শেষবেলার গল্প (1 Viewer)

Joined
Aug 23, 2020
Threads
74
Messages
111
Credits
7,126
বৃদ্ধাশ্রমে আসছি ছয় মাস হয়েছে। না আমার ছেলেকে খারাপ বলবো না।ছেলের বউটাও খুব ভাল! ভাবছেন কেমন ভাল শশুর কে বৃদ্ধাশ্রম রেখেছে।না ওরা আমাকে পাঠায়নি আমি নিজেই এসেছি।আমার একমাত্র ছেলে এবং ছেলের বউ দুজনেই চাকুরী করে।সারাদিন ব্যাস্ত সময় কাটিয়ে ফিরে সেই রাত্রিবেলা।

সারাক্ষণ নিঃসঙ্গ একাকি আমি একটা মহুর্ত একটা যুগের মত।কথা বলার কেউ নেই। হাত ধরার কেউ নেই।অভিমান করার কোন ছায়া নেই।
আছে একজন নার্স সময় সময় ওষুধ দেয়া।আর দাদু এটা এখন খান।
আপনি কতবার বলেছি এটা করা যাবে না।আর ঘর পরিস্কারার একটা আয়া!

নাতিটারও সময় নেই সকাল থেকে রাত।কখনও গানের ক্লাস কখনও নাচের।স্কুল, টিউশন এসবতো আছেই।তারউপর ক্যারাটে শিখে।
ক্লান্ত নাতি ঘরে ফিরে একটু অবসর তখন ল্যাপটপে গেম খেলা।

অনেক রাতে বউমা ঘরে ফিরে আমার ঘরে আসে। বাবা সারাদিন কেমন কাটলো?

কি লক্ষি মেয়ে! মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ক্লান্ত পরিশ্রান্ত। নিড়ে ফিরে একটু আরাম চায়।কোন সমস্যা নেই মা।তুমি যাও বিশ্রাম নেও।

কিছু লাগবে বাবা?

না মা।তুমি যাও একটু রেস্ট নেও।

এই এরা, এদের সব আছে।ঘরে দামি টেলিভিশন। হরেকরকম আসবাপত্র সাজানো ঘর আছে।দামি চেয়ার আছে।ঘরের সাথে আছে বারান্দা । সেখানে হেলান দিয়ে বসে থাকার ইজিচেয়ার।পাশেই খোলা মাঠ।হাত বাড়ালেই ছোয়া যায় আকাশ।আকাশে তারা আছে। আছে এত্ত বড় চাদঁ।
শুধু চাঁদ দেখার সময় নেই। এদের সময়ের বড় অভাব। এরা ছুটছে শুধু ছুটছে।কোথায় গন্তব্য!

আমার আছে অঢেল সময়।কোথায় যাওয়ার তাড়া নেই।চাদঁ আছে দেখার সাথী নেই।বালিশ আছে সেখানে গল্প নেই।বারান্দা আছে সেখানে চায়ের পেয়ালে হাতে দাড়িয়ে থাকার ছায়া নেই।ভিজে যাওয়া চোখ মুছার রুমাল আছে মুছে দেয়ার হাত নেই।শুধু তীরে ভেরার অপেক্ষা।এখানেই ওদের সাথে বিস্তর ফারাক।

তাই আমি ভাবলাম বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাবো।সেখানে আমার মতো ওদেরও অঢেল সময়।সমবয়সী মানুষেদের পাশে পাবো।একটু গল্প করা যাবে।সুখ দুঃখ কথা বলে সময় কেটে যাবে।

প্রথম যখন ওদের বললাম। এটা কি বলেন বাবা! চমকে উঠলো।ছেলে আমার কিছুতেই রাজি না।প্রয়োজন আরেকজন নার্স রেখে দিবে।কি করে ওকে বুঝাবো নার্স নারে বোকা, আমার সঙ্গী দরকার।রাতে আসলো বউমা।

বাবা শুনলাম আপনি বৃদ্ধাশ্রমে চলে যেতে চান! কেন বাবা? আমি কোন ভুল করেছি?

নারে মা তোমার মতো এমন লক্ষী কয়জনের ঘরে থাকে!

তাহলে কেন এমন সিদ্ধান্ত?

মারে ওখানে থাকলে সমবয়সী মানুষ থাকবে। সময়টা ভাল কাটবে।
এই যে একাকিত্ব নিঃসঙ্গতার দুঃখ!

সবাই উপরের খোলসটা দেখে। তারই যত্নশীল।
খোলসের ভিতরে একটা নদী আছে ওরা জানে! নদীতে ঢেউ উঠে
নিশিতে,কখনও কালবৈশাখী ঝড়! ভেঙে যায় কুল।

নদীটা যখন ভীষণ শান্ত শীতল
সাদ হয় সেখানে কেউ সাতার কাটুক।
দাপিয়ে বেড়াক পুরো নদী।
ওরা বুঝে? খোলসটার বয়স বাড়ে বুড়ো হয়
নদীটার কি বয়স বাড়ে বুড়ো হয়!

ঠিক আছে বাবা আপনি ভাল থাকলে যান।

একটা ভাল দেখে বৃদ্ধারশ্রমে চলে আসালাম।এদের পরিবেশ চমৎকার।দেয়াল ঘেরা টিনের ঘর। এক রুমে দুটি খাট।একটি জানালা।রুমের সামনে একটা ফুলের বাগান।পছন্দ হল আমার পরিবেশ।

ছেলে আমার খারাপ না, ছুটিরদিনে সবাই মিলে আমার কাছে চলে আসে।সারাদিন সময় কাটায়, ভালোই আছি আমি এখানে।

বৃদ্ধাশ্রমে এক রুমে দুজন। আমার রুমে একজন মহিলা। ভাবছেন এটা কি? মহিলা পুরুষ একসাথে। এই বয়সে পুরুষ মহিলা বলে আলাদা কিছু থাকেনা। বাল্যকালের মত সব এক।

আমার পাশের খাটে থাকে শেফালি। ওর অবশ্য আমার মতো সেচ্ছায় আগমন না।ওর ছেলে মেয়েরা সব বিদেশে থাকে।গত পাঁচ বছরে কেউ আসেনি একবারের জন্য। কালেভদ্রে কখন কল দেয়।সেফালি ছিল এক কলেজের প্রোফেসর। এক সময় দাপিয়ে বেড়াতো পুরো কলেজ।ছাত্র ছাত্রীরা ভয়ে কেঁপে উঠতো।আজ কি শান্ত!

সেফালি খুব কথা বলার মানুষ সারাক্ষণ ওর কলেজ জীবনের গল্প।
স্বামী মারা গেছে তখন ছেলে মেয়ে গুলো ছোট।ওদের এতো কষ্ট করে বড় করে তুলেছে আজ সব ভুলে গেছে। একা একটা মেয়ে মানুষ সারাদিন কলেজে ক্লাশ নেয়া বাড়িতে এসে ছেলে মেয়ের জন্য রান্না করা।ওদের পড়ালেখার খবর রাখা একা হাতে সব সামলিয়েছি।কোন আত্বীয় স্বজন পাশে দাড়ায়নি।বরং শুনিয়েছে কটু কথা।

বাবা মা আবার বিয়ে করার জন্য বলতো। কি করে কাটবে তোর সারাটা জীবন। একা একটা মেয়ে তুই কেমন কাটাবি।

তোমরা এসব কি বলো।আমার দুটি ছেলে মেয়ে ওরাই আমার জীবন। ওদের নিয়ে আমার জীবন কেটে যাবে।

যাদের জন্য জীবন যৌবন বিলিয়ে দিলাম।নিজের সাদ আহলাদ বিসর্জন দিলাম।তারা নিঃসঙ্গ মায়ের একটুখানি খবর নেয়ার সময় হয়না।ওদের সারাটা জীবন দিলাম ওরা বুঝি আমায় একটি মহুর্ত দিতে পারে না?
বলে আর দুচোখ ভেজায় জ্বলে।আচলে চোখ মুছে আর বলে থাক
তোরা সুখ থাক।এইতো আর কয়দিন আমার জীবন।একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন!

এখানে সবার এমন গল্প। কোন বাবার চোখ ভিজে বা কোন মায়ের।
কি এক জীবন। সব ঘর হারা পাখি এখানে মিলেছে এক নীড়ে।সবার চোখে একটা শুকনো মরুভূমির আক্ষেপ!

আজ মনটা ভীষন রকমের খারাপ গতকাল আমার রুমমেট সেফালি।হঠাৎ গভীর রাতে কেমন করতে লাগলো।আমি বললাম কি হয়েছে বুকের মধ্যে ব্যাথা।সাথে সাথে এখানকার দায়িত্ব থাকা ডাক্তারকে ডেকে আনলাম।
ডাক্তার সব চেক করে জানালো।সেফালি আর নেই।ওদের ছেলে মেয়েদের চিরদিনের জন্য মুক্তি দিয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে।নিথর দেহটি পড়ে আছে বিছানায়!একে একে সবাই চলে যাচ্ছে। কোন একদিন আমার বেলা ফুরাবে!

সফালির ছেলে মেয়েদের বহুবার কল দেয়ার পর পাওয়া যায়নি।পরের দিন ছেলে ফোন দেয়।জানার পর বললো কবর দিয়ে দিন খরচ কত লাগবে? সেটা পাঠিয়ে দিবে! সবাই কেঁদেছে হয়তো ওদের সন্তানরাও এমন বলবে।

নতুন একজন মহিলাকে আমার রুমে দেয়া হয়েছে। প্রকৃতির নিয়ম সে তার শুন্যতা পূরণ করে নিবে।কেউ হারিয়ে যাবে সেথায় নতুনের জায়গা হবে।

মহিলা আমার রুমে প্রবেশ করলো।কেমন পরিচিত মুখ। বহুদিনের চির চেনা সে মুখের অবয়ব! বয়স হওয়ায় পুরো নিশ্চিত হতে পারছিনা।নাম বললো।

আমি মিতু।

বুকের মাঝে চিন করে উঠলো।হটাৎ বিজলি চমকালে যেমন হয়।মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম!

হ্যালো হ্যালো

আমায় চিনোনি মিতু? আমি নাবিল

এবার মুখখানা আমাবস্যা রাতের মতো আঁধার নেমে এলো।দুচোখে
অশ্রু! তুমি!

তোমার ট্রেন এতো বিলম্ব দিন যে আমার সন্ধা হল।

আমি যে ভুল ট্রেনে চড়ে ছিলাম,ভুল সুদরাতে দিন পোহালো।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top