What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

জাস্টিন ট্রুডো ও আধুনিক কানাডা (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
X9irsoH.jpg


১৯৭১ সাল, বাংলাদেশ যখন নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সর্বশক্তি দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই করে যাচ্ছে, তখন গুটিকয়েক রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপ্রধান এগিয়ে এসেছিলেন মুক্তিকামী বাংলাদেশীদের সাহায্যার্থে। তাদের মধ্যে কানাডার সহোযোগিতায় ছিল অন্যতম। পাকিস্তান এবং আমেরিকার বিরদ্ধে বলিষ্ঠ কন্ঠ তুলেছিলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডো। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বন্ধুত্বের হাত।

আর সে বছরেরই ২৫ ডিসেম্বর কানাডার ১৫তম প্রধানমন্ত্রী পিয়ের ট্রুডোর ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক দেবশিশু। যাকে দেখে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বলেছিলেন, এই শিশুটি একদিন কানাডার প্রধানমন্ত্রী হবে। কে জানতো সেদিনের সেই শিশুটি ৪৩ বছর পর নিক্সনের ভবিষ্যতবাণীটি সত্যি করে কানাডার ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হবে। কে সেই শিশু জানতে চাইছেন? তার নাম জাস্টিন ট্রুডো। বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

মাত্র ৪৩ বছর বয়সে কানাডার প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম বিশ্ববাসীর নজর কাড়েন তিনি। সুঠাম সুদর্শন জাস্টিন ট্রুডোর ব্যক্তিত্ব, রুচিশীলতা আর বাগ্মিতা দ্রুতই তাকে পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলে।

পিয়েরে ট্রুডো ও মার্গারেট ট্রুডোর প্রথন সন্তান জাস্টিন ট্রুডো। বাবা, মা দুজনেই ছিলেন রাজনীতির সাথে জড়িত। বাবা পিয়েরে ট্রুডোর নামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আধুনিক কানাডার ইতিহাস। পিয়েরে কানাডার মাল্টিকালচারালিজমের প্রবক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৬০সালে 'লিবারেল পার্টি অব কানাডা'- এ যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে ফেডারেল রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর পিয়েরে ট্রুডো ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত এবং কিছুদিন বিরোধী দলে থেকে আবার ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

PE9W3DL.jpg


পিয়েরে ট্রুডো; Photo: wikipedia

পিয়েরে ট্রুডো ১৯৭১ সালের মার্চ ভালোবাসে বিয়ে করেন মার্গারেট সিনক্লেয়ারকে। যদিও তাদের বয়সের ব্যবধান ছিল অনেক বেশী। পিয়েরে ট্রুডোর বয়স তখন ৫২ এবং মার্গারেট ছিলেন ২২ বছরের সদ্য তরুণী। শুরুতে ভালোই চলছিল সবকিছু। কিন্তু পিয়েরে রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত জীবন একসাথে সামলে উঠতে পারেননি। পরিবারের সকল দায়িত্ব এসে পড়ে মার্গারেটের কাঁধে। ততদিনে জাস্টিন ট্রুডো ছাড়াও আরও দুটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন এই দম্পতি। নানা হতাশায় মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন মার্গারেট। প্রধানমন্ত্রীর লাগেজে করে মাদক আনার দায়ে একবার সংবাদের শিরোনামই হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ফলস্বরূপ ১৯৭৭ সালে ভেঙে যায় ট্রুডো-মার্গারেটের সংসার। তবে আইনি লড়াইয়ে তিন সন্তানকে নিজের কাছেই রাখতে সক্ষম হন পিয়েরে ট্রুডো।

মা বাবার বিচ্ছেদের ঘটনা খুব বাজেভাবে প্রভাব ফেলে জাস্টিন ট্রুডোর জীবনে। পারিবারিক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠলেও তিনি কখনো বিপথগামী হননি। কঠিন মনোবল ও স্বতঃস্ফূর্ত মন নিয়ে তিনি এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে। ১৯৯৪ সালে তিনি ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরপর যুক্ত হন শিক্ষকতার সঙ্গে।

২০০০ সালে পিতার মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন জাস্টিন। ২০০৮ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন তিনি। সেই সময় কানাডার প্রভাবশালী পত্রিকা গ্লোব এন্ড মেইল এর প্রধান সম্পাদক এডওয়ার্ড গ্রিনস্পন তার সম্পাদকীয়তে লিখেন, "অন্য কয়েকজন নতুন নির্বাচিত এমপির মতো জাস্টিন ট্রুডোরও সম্ভাবনা রয়েছে আগামীতে প্রধানমন্ত্রী হবার"।

২০১০ সালে ভূমিকম্পে হাইতিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলে, অসহায় জনগণের পাশে দাঁড়ান তিনি। হাইতিবাসীদের অভিবাস সুবিধা প্রদানের প্রচারণা চালান। এসময় হাইতি কমিউনিটিতে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
২০১১ সালের নির্বাচনে জাস্টিন ট্রুডো আবারো এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু পার্টির সার্বিক জয়ের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। মাত্র ৩৪টি আসন পেয়ে দলটি তৃতীয় স্থান লাভ করে। সে সময়ে দলের নেতৃত্বে ছিলেন মাইকেল ইগনাটিফ। নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলের নেতৃত্ব থেকে সরে আসেন মাইকেল। তখন অনেকেই জাস্টিনকে নেতৃত্ব নেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি রাজী হননি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে লিবারেল পার্টির প্রধান নেতা নির্বাচিত হন জাস্টিন।

২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয় জাস্টিন ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টি। ২০১১ সালের নির্বাচনে যেখানে তাদের আসন সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৬টি সেখানে ২০১৫ সালের নির্বাচনে তারা পায় ১৮৪টি আসন। দলের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন জাস্টিন ট্রুডো।

নির্বাচনের আগে গাঁজা বৈধ করার পক্ষে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রুডো। বিরোধীরা তার এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে অনেক হাসিঠাট্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তার কথা রেখেছেন। জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কানাডিয়ান গাঁজা সেবনকে অপরাধ মনে করেন না। বরং তারাও এটি বৈধ করার পক্ষে। অভিবাসী আইন নিয়ে অন্যান্য দেশ যখন অনঢ়, কানাডা তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সিরিয়াবাসীদের দিকে।

২০১৭ সালে কয়েকটি মুসলিম দেশের শরণার্থী এবং অভিবাসীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শরণার্থীদের উদ্দেশ্যে ট্রুডো বলেন "আপনাদের জন্য কানাডার দরজা খোলা। ' এ জন্য তিনি হ্যাশট্যাগ 'ওয়েলকামটুকানাডা' চালু করেন। তিনি আরো বলেন "ধর্ম বিশ্বাস যাই হোক না কেন নির্যাতন, সন্ত্রাস ও যুদ্ধপীড়িত অঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা কানাডায় স্বাগতম। বৈচিত্র্য আমাদের শক্তি।'

YpU54Jl.jpg


দুই বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর ২০০৫ সালে প্রেমিকা সোফি গ্রেওয়ারকে বিয়ে করেন। বর্তমানে তিন সন্তানসহ এই দম্পতি সুখী দাম্পত্যের এক অন্যবদ্য দৃষ্টান্ত বিশ্ববাসীর কাছে।; Photo: The Associated Press

সম্প্রতি কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক অস্থিরতা শুরু হলে তিনি কানাডাবাসীর পাশে দাঁড়ান। জাতির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "ঘর থাকুন। ভয় নেই, আপনাদের সবার একাউন্টে আপনাদের মাসিক বেতনের টাকা পৌঁছে যাবে। শুধু তাই নয়, আপনারা যারা বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন, সেই ভাড়াও সরকার বহন করবে। এসব নিয়ে একটুও চিন্তিত হবার কারণ নেই। আপনাদের ভালো রাখাই আমার কাজ। যারা সরকারের নিয়ম মানবে তাদের এক কালীন অতিরিক্ত অর্থ পুরস্কার দেয়া হবে।"

প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বেশ কয়েকটি বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেও নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে জাস্টিন ট্রুডো যে প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়েছিলেন, বাস্তবায়ন করেছেন তার ৯২ শতাংশ। সরকার পরিচালনায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইতিবাচক অবস্থান তাকে এনে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা।

একজন নেতা প্রকৃত অর্থে দেশকে মহান করতে পারেন না, দেশকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার কারিগর নাগরিকেরা, সুশীল সমাজের রাজনৈতিক পরিপক্বতা। ট্রুডোও ক্ষমতায় এসে কানাডাকে খোলনলচে বদলে দেননি, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করেছেন পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক। বিশ্বব্যাপী ট্রুডোর জনপ্রিয়তার মূল কারণ কানাডার মুক্ত গণতন্ত্র, দীর্ঘদিন ধরেই যা মানুষকে আকৃষ্ট করেছে কানাডায় অভিবাসী হতে, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিরাপদ আবাস গড়তে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top