What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কলিঙ্গ যুদ্ধ: ভারতবর্ষের নিষ্ঠুরতম ও মোড় পরিবর্তনকারী যুদ্ধ (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
XcpEtns.jpg


সদ্য যুদ্ধ জয়ী এক মৌর্য সম্রাট যুদ্ধ ময়দান ঘুরে দেখছেন। কিন্তু সম্রাটকে হাঁটতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ চারিদিকে যে শুধু লাশ আর লাশ। যুদ্ধক্ষেত্রের পাশ দিয়ে বয়ে চলা শান্ত নদী দায়ার সব জল রক্তের সাথে মিশে লাল রং বর্ণ ধারণ করেছে।

যে রাজ্য জয় তার পূর্বপুরুষদের স্বপ্ন ছিল সে রাজ্য আজ তার হাতের মুঠোয়। সম্রাটের তো গর্ববোধ হওয়ার কথা। কিন্তু সম্রাট যেন খানিকটা বিচলিত। তবে কি ময়দানের যুদ্ধ শেষ হলেও সম্রাটের মনের যুদ্ধ শেষ হয়নি? সম্রাটের বিচলিত মনকে আরো বিচলিত করে দিল এক বৃদ্ধার একটি প্রশ্ন- "আপনার কারণে আমি সব হারিয়েছি। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচবো?"

বলছিলাম উপমহাদেশের ইতিহাসে এক রক্তক্ষয়ী উপাখ্যান কলিঙ্গ যুদ্ধ ও সম্রাট অশোকের কথা।

কলিঙ্গ রাজ্য

বর্তমান ভারতের উড়িষ্যা ছিল প্রাচীন ভারতের শক্তিশালী কলিঙ্গ রাজ্য৷ পূর্বদিকে গঙ্গা এবং উত্তরে গোদাবরী নদী নিয়ে তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বাপেক্ষা শক্তিধর রাজ্য ছিল কলিঙ্গ।

গ্রিক পণ্ডিত দিউদারাসের পাণ্ডুলিপি অনুসারে, "কোনো বহিরাগত রাষ্ট্রের আক্রমণের মুখে কলিঙ্গ মুখ থুবড়ে পড়েনি। কলিঙ্গের শক্তিশালী হস্তিবাহিনীর সাথে পাল্লা দেয়ার মতো ক্ষমতাধর রাজ্য তখন একটিও ছিল না"। কথিত আছে, কলিঙ্গ রাজ্যের হাতির মতো বিশালাকৃতির হাতি আর কোন রাজ্যে ছিলনা। তাই এই রাজ্যের সমৃদ্ধির প্রতীক ছিল 'হাতি'।

কলিঙ্গ রাজ্যের সামরিক শক্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস তার পাণ্ডুলিপিতে লিখেছিলেন, "প্রথম মৌর্য সম্রাটের সময় কলিঙ্গের রাজার রক্ষার্থে প্রায় ৬০ হাজার পদাতিক, ১ হাজার অশ্বারোহী এবং ৭০০ হাতি মজুদ ছিল।" কলিঙ্গ রাজ্যে সমুদ্র বন্ধর থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যেও তারা ছিল সমগ্র ভারতবর্ষের মধ্যে শীর্ষে।

ZLbMvVn.png


মানচিত্রের নীল অংশ মৌর্যদের দখলে, আর বঙ্গোপসাগরের পাশে নীলের মধ্যে ছোট অংশটি কলিঙ্গ; Photo: wikipedia

রক্তক্ষয়ী কলিঙ্গ যুদ্ধ

ভারতের বুকে মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের হাত ধরে। চন্দ্রগুপ্তের পুত্র ছিলেন বিন্দুসার। পিতা বিন্দুসারের হাত ধরে রাজ্যাভিষেক হয় মৌর্য বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট অশোকের। পশ্চিমে আফগানিস্তান থেকে পূর্বে বাংলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল সম্রাট অশোকের সাম্রাজ্য।

অশোকের পিতামহ ও পিতা দুজনেই কলিঙ্গ রাজ্য আক্রমন করলেও জয়ী হতে পারেননি। কিন্তু সম্রাট অশোক পরাজয় মেনে নেয়ার পাত্র ছিলেন না৷ চারিদিকে যখন মৌর্যদের জয়জয়কার, তখন কলিঙ্গ রাজ্যের সামরিক শক্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্রাট অশোকের কাছে গলার কাঁটার মত বিঁধছিল। তাই সিরিয়া থেকে সেনা এনে নিজ দলে মোতায়ন, ৮ হাজার যুদ্ধরথ, ৯ হাজার হাতি, ৩০ হাজার অশ্বারোহী ও ৬ লাখ পদাতিক নিয়ে সম্রাট অশোক কলিঙ্গ রাজ্য আক্রমণের নীলনকশা বুনন শুরু করেন৷

খ্রিস্টপূর্ব ২৬১ সাল ছিল সম্রাট অশোকের রাজ্যাভিষেকের ৯ বছর পূর্তির সাল। তিনি এই সময়টাকে কলিঙ্গ রাজ্য আক্রমণের জন্য উপযুক্ত মনে করলেন। কলিঙ্গ রাজ্য যেন অতিসত্তর মৌর্য বংশের নিকট আত্মসমর্পণ করে- তেমনই এক অপমানজনক পত্র লিখে তিনি দূতের মাধ্যমে প্রেরণ করলেন কলিঙ্গের রাজা আনন্দ পদ্মানাভানের নিকট। এমন অপমানজনক পত্র পেয়ে কলিঙ্গ রাজা ভীষণ ক্রুদ্ধ হন এবং সরাসরি সম্রাট অশোকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কথা তার প্রেরিত দূতকে জানিয়ে দেন।

সম্রাট অশোক ঠিক এটাই চেয়েছিলেন। এরপর তিনি নিজের শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী নিয়ে যাত্রা শুরু করেন কলিঙ্গের দিকে। খবর পেয়ে কলিঙ্গ রাজ্যও প্রস্তুত হতে থাকে। ধৌলি পাহাড় ময়দান। দুই পক্ষের লাখ খানেক সৈন্য সমেত শুরু হয় ইতিহাসের ভয়ানক "কলিঙ্গ যুদ্ধ "। সম্রাট অশোক অনেক আগে থেকে যুদ্ধের জন্য নিজের বাহিনীকে প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। তাই ময়দানে তার বাহিনীর কাছে কলিঙ্গ সেনারা কিছুতেই পেরে উঠছিল না৷ কিন্তু কলিঙ্গরাও অতো সহজে হাল ছাড়বার পাত্র নয়৷ নিজেদের রাজ্য বাঁচাতে সৈন্যদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও নেমে পড়ে লড়াইয়ের জন্য। কলিঙ্গের সব সক্ষম পুরুষরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে যে যার মতো ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

যুদ্ধ এক সময় আর ধৌলি পাহাড় ময়দানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, ছড়িয়ে পড়ে পুরো কলিঙ্গ জুড়ে৷ কলিঙ্গ যুদ্ধের স্থায়িত্বকাল ছিল প্রায় এক বছর। প্রায় ১ লক্ষ মৌর্য সৈনিক ও ১ লক্ষ ৫০ হাজার কলিঙ্গ সেনার প্রাণের বিনিময়ে জয় অবশেষে সম্রাট অশোকের ঝুলিতে ধরা দেয়৷ কথিত আছে, কলিঙ্গ যুদ্ধে এত লোকের প্রাণহানি হয়েছিল যে লাশের স্তূপ পরিষ্কার করার জন্য একজন শ্রমিকও খুঁজে পাওয়া যায় নি৷

সম্রাট অশোকের জীবনে কলিঙ্গ যুদ্ধের প্রভাব

যে রাজ্য জয়ের জন্য সম্রাট অশোক এতদিন অপেক্ষা করেছিলেন সে রাজ্য জয় করেও তিনি খুশি হতে পারেন নি। যুদ্ধের পর চারপাশের লাশের গন্ধ, স্বজন হারানোর আর্তনাদ তার মনকে ভারী করে তুলে। সম্রাট অশোক শুধুমাত্র রাজ্য চেয়েছিলেন, মৃত্যুপুরী নয়। এরপর সম্রাট বৈদিক ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন ও প্রতিজ্ঞা করেন আর কখনো অস্ত্র স্পর্শ করবেন না ও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন না৷ সেই সাথে তিনি মৌর্য সাম্রাজ্যের যুদ্ধ নীতি রদ করেন ও অহিংসার বাণী প্রচারে মনোনিবেশ করেন৷ তিনি হাজার হাজার স্তম্ভ নির্মাণ করেন শুধুমাত্র অহিংসার বাণী খোদাইয়ের জন্য। ভারতের জাতীয় প্রতীক বিখ্যাত 'অশোক স্তম্ভ' সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে খোদাই করা হয়েছিল।

প্রত্যেক যুদ্ধে একপক্ষের ঝুলিতে থাকে জয় আর অন্য পক্ষের ঝুলিতে পরাজয়। কলিঙ্গের মত এক নিষ্ঠুরতম যুদ্ধের পরিণাম যেমন ছিল ভয়ানক তেমন ছিল মোড় পরিবর্তনকারী৷ এই যুদ্ধ এক সাম্রাজ্যবাদী সম্রাটকে পুরোপুরি বদলে দিয়ে ভারতবর্ষকে উপহার দিয়েছিল অহিংস সম্রাট "অশোককে "।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top