What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ফরাসি কন্যা জোয়ান অব আর্কের বীরত্বগাঁথা (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
Ga6VTor.jpg


জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত পঙক্তির কথা তো আমাদের সবারই জানা ।

"যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর"

মানব জাতির কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে যুগে যুগে নানা কাজে, জ্ঞান-গরিমা-বীরত্বে নারীরাও যে পুরুষের চাইতে কোনো অংশে কম নয় সেটা অনেকবার বুঝিয়ে গেছেন। রেখে গেছেন উজ্জ্বল সব দৃষ্টান্ত। কিন্তু সে বীরত্ব সূচক অবদানের পরও কারো কারো কপালে জোটেনি এতটুকু সম্মান।

প্রায় ৬০০ বছর আগে কথা। সুদূর ফরাসি দেশে স্বজাতির কল্যাণে শতবর্ষী যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েও এক উনিশ বছরের তরুণীকে দিতে হয়েছিল আত্মাহুতি! সে নারীর নাম জোয়ান অব আর্ক। আজ চলুন জেনে নেই কি ঘটেছিল তার ক্ষুদ্র অথচ দারুণ তাৎপর্যময় জীবনে।

ফ্রান্সের উত্তর পূর্বে মিউজ নদীর তীরে ছোট্ট এক গ্রাম ডমরেমি। সেই গ্রামের এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম নেন জোয়ান অব আর্ক। বাবা জ্যাক দি আর্ক ছিলেন কৃষক ও মা ইসাবেল রোমিই ছিলেন গৃহিণী। খুব ধার্মিকভাবে কেটেছে জোয়ানের বাল্যকাল। বাবার খামারের গবাদিপশু দেখাশোনা আর সুইসুতার খেলাতেই কাটতো জোয়ানের দিনকাল।

DxpI6ds.jpg


জোয়ানের মহিমা বুঝতে তার জন্মের আগে-পরে ফ্রান্সের অবস্থা জানা দরকার। ১৩৩৭ সালে ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড অবৈধভাবে ফ্রান্সের সিংহাসন দাবী করে বসে। এতে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মাঝে যুদ্ধ লেগে যায়। এ যুদ্ধে বারবার ফরাসিরা ইংরেজদের হাতে নাস্তানাবুদ হতে থাকে। ১৪১৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম হেনরী এক যুদ্ধে ফরাসীদের পরাজিত করে ফ্রান্স দখল করে নেন। এর ফলে ১৪২৮ সাল নাগাদ ফ্রান্স অসংখ্য খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সে সময়টায় ফ্রান্সে জাতীয় ঐক্য বলে কিছু ছিলনা। ছিল শক্তিশালী নেতৃত্বের অভাব। সে সময় নামেমাত্র ফ্রান্সের সিংহাসনে থাকা রাজা চার্লসের শাসনব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত দূর্বল।

কথিত আছে, মাত্র তের বছর বয়সে মাঠে ভেড়ার পাল চরাবার সময় জোয়ান দৈববাণী শুনতে পান যে, তাকে মাতৃভূমির স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার ও ফ্রান্সের প্রকৃত রাজাকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করার জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। এই দৈববাণী আমূল পালটে দেয় বালিকা জোয়ানের জীবন। অদ্ভুত ব্যপার হচ্ছে তখন গোটা ফ্রান্সজুড়ে একটি প্রচলিত ভবিষ্যৎবাণী ছিল। সবাই বিশ্বাস করত, এক কুমারী মেয়ে এসে ফ্রান্সকে রক্ষা করবে।

১৪২৮ সালের ঘটনা। জোয়ান গেলেন রাজা চার্লসের সেনা কমান্ডার রবার্ট রড্রিকটের কাছে। জানালেন তিনি যুদ্ধ করতে চান। এতে কমান্ডার রবার্ট ক্ষিপ্ত হন। কারণ তখন মেয়েদের জন্য যুদ্ধে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। তাই সামন্ত ডেকে সে সময় জোয়ানকে বাড়ি পাঠান তিনি।

নিরাশ হয়ে বাড়ি ফেরে জোয়ান কিন্তু সে ভবিষ্যৎবাণী করে, অরলিন্সের যুদ্ধে হেরে যাবে ফ্রান্স। এবং সত্যি সত্যি তাই-ই ঘটে। ততদিনে দৈববাণী আর জোয়ানের তীব্র আত্মবিশ্বাস ছাপ ফেলে দিয়েছে রবার্টের মনে। ফলে রবার্ট জোয়ানকে নিয়ে যান ভবিষ্যৎ রাজা চার্লসের কাছে। অবশ্য রাজার কাছে যাওয়ার আগে জোয়ানের চুল ছেঁটে ফেলা হয় আর পরানো হয় ছেলেদের পোষাক। জোয়ানকে হাজির করা হয় নাইটের বেশে।

দেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করার জন্য রাজার নিকট সৈন্য প্রার্থনা করেন জোয়ান। খুব স্বাভাবিকভাবেই জোয়ানকে অবজ্ঞা করেন রাজা। পরে যাজক সম্প্রদায়ের পরামর্শে রাজা তাকে সৈন্য দিতে সম্মত হন। অনুমতি পেয়ে সাদা ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধে যান জোয়ান, সাথে সঙ্গী চার হাজার সৈন্য। সে সময় মাত্র ১৬ বছরের কিশোরী জোয়ান অব আর্ক!

১৪২৯ সালের ২৮ এপ্রিল অবরুদ্ধ নগরী অরল্যান্ডে প্রবেশ করেন জোয়ান আর তাঁর সৈন্যবাহিনী। পুরোনো রক্ষণাত্মক কৌশল বদলে আক্রমণাত্বক কৌশল অবলম্বন করেন জোয়ান আর এতে করে লাভ করেন কাঙ্ক্ষিত বিজয়। অরল্যান্ডকে মুক্ত করার পর একের পর এক সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেন জোয়ান। আর খুব দ্রুতই তার বিজয়গাঁথা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

মে মাসের দিকে ইংল্যান্ডের দখল করা লে তুরেলে দুর্গ অবরোধ করে ফ্রেঞ্চ বাহিনী। সে যুদ্ধে একটি তীর এসে বিঁধে জোয়ানের কাঁধে। আহত হলেও তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যান। এ দৃশ্য দেখে ফরাসী বাহিনী নব উদ্যমে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ইংল্যান্ড যুদ্ধে হেরে যায়। দুর্গ চলে আসে ফ্রান্সের কাছে আর ইংরেজদের কবল থেকে তুরেল বুরুজ শহর মুক্ত হয়। এরপর পাতের যুদ্ধ ও রেইমস নগরী জোয়ানের নেতৃত্বে ফ্রান্সের দখলে আসে। ধীরে ধীরে গোটা ফ্রান্সই ইংরেজদের দখলমুক্ত হয়।

পরবর্তীতে রেইমস নগরীতেই ফ্রেঞ্চ রাজার অভিষেক অনুষ্ঠান হয়। যেদিন রেইমস নগরী ফ্রান্সের দখলে চলে আসে তার পরদিনই 'ভবিষ্যৎ রাজা' চার্লসের মাথায় মুকুট পরানো হয়। জোয়ানের অসামান্য সাহসিকতা আর বুদ্ধিমত্তার জন্য ফ্রান্সের রাজসভায় একটি বিশেষ সম্মানিত পদ দেওয়া হয় তাঁকে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও তার মেধা এবং অসাধারণ বীরত্ব তাঁকে করে তোলে আলাদা।

পরবর্তী সময়ে জোয়ান যখন জানতে পারেন ক্যাম্পিন শহর বার্গান্ডিয়ানদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে তখন তিনি আর বসে থাকেননি। ছোট একটি সৈন্যদল নিয়ে অভিযান চালান। কিন্তু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বার্গান্ডিয়ানদের হাতে আটক হন জোয়ান। এবং ইংরেজদের কাছে তারা জোয়ানকে বিক্রি করে দেন।

QMuGfN5.png


ফ্রান্সে এখনো শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয় জোয়ান অব আর্ককে

সে সময়ে লোকজন কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিল। জোয়ানের করা ভবিষ্যৎবাণী সত্য হয়েছে বলে অনেকেই প্রচার করতে শুরু করে জোয়ান আসলে ডাইনী। সবাই ভাবে জোয়ান নিশ্চয়ই কালো জাদুকর! এ জন্য চার্চের প্রতিনিধিদের সামনে পরীক্ষাও দিতে হয় তাঁকে। বলে রাখা ভাল জোয়ানের সব যুদ্ধের পেছনেই ছিল ধর্মীয় চেতনা।

ফরাসী রাজসভায় ধর্ম ব্যবসায়ী যাজকরা রাজাকে বোঝান যে, জোয়ানের এই ধর্মযুদ্ধ রাজাকে ফরাসীদের নিকট 'শয়তান' এ পরিণত করবে। তৎক্ষণাৎ রাজা জোয়ানকে ডেকে যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ দিলেও ভীষণ জেদী জোয়ান রাজার আদেশ অমান্য করেই যুদ্ধ চালিয়ে যান। ইংরেজরা যখন জানতে পারে রাজার কথা অমান্য করে জোয়ান যুদ্ধে নেমেছে তখন রাজসভার অন্য সদস্যদের সাথে হাত মিলিয়ে তারা জোয়ানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। মূলত এই ষড়যন্ত্রের কারণেই বার্গান্ডিয়ানদের হাতে আটক হন জোয়ান।

এরপরই সরাসরি চলে যান ইংরেজদের খাঁচায়। দুর্ভাগ্যক্রমে জীবন বাজি রেখে যে রাজাকে তিনি ফ্রান্সের সিংহাসনে বসিয়েছিলেন সেই রাজা চার্লস একটিবারের জন্যও তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন নি। ইংরেজদের কাছে আটক অবস্থায় জোয়ান কয়েকবার পালানোর চেষ্টা করেন। একবার তিনি ৭০ ফুট উঁচু টাওয়ার থেকে লাফিয়ে পড়েন। নরম মাটি থাকায় তিনি বেঁচে যান এবং বার্গান্ডিয়ান শহর আরাসে পালিয়ে যান। কিন্তু তার শেষতক রক্ষা হয়নি। ব্রিটিশরা তাকে বার্গান্ডিয়ান ডিউক ফিলিপের কাছ থেকে ১০ হাজার পাউন্ডে কিনে নেয়।

ইংরেজরা জোয়ানকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার মতো কোনো অপরাধ খুঁজে পাচ্ছিলনা । অবশেষে তারা জানতে পারে জোয়ান কিশোরী হয়েও একজন পুরুষের ছদ্মবেশ ধরেছিলেন। এ বিষয়টি কেন্দ্র করে তারা তাকে ধর্মদ্রোহী হিসেবে সাব্যস্ত করে। সেই সাথে ডাইনিবিদ্যা চর্চার অভিযোগও ছিল। সে সময়ে ধর্মের বিরুদ্ধে যাওয়ার শাস্তি ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদন্ড। আর ডাইনি অপবাদের দায়ে পুড়িয়ে মারা হতো। হতভাগ্য জোয়ানের কপালেও তাই জুটলো ।

4dvE6wj.jpg


মাত্র ১৯ বছর বয়সে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় জোয়ান অব আর্ককে

১৪৩১ সালের ৩০ মে একটি শূলে বেঁধে জীবন্ত অবস্থায় ১৯ বছরের জোয়ানকে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। মৃত্যুর পূর্বে একটি ক্রুশ হাতে নেন জোয়ান। তিনি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের ক্ষমা করে দেন এবং তার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে বলেন। জোয়ানের মৃত্যুর পর ইংরেজরা তার কয়লা হয়ে যাওয়া শরীরকে আরো দুবার পোড়ায়। ফলে তার দেহাবশেষের ছাইগুলো আরো মিহি হয়ে পড়ে। তা সংগ্রহের অবকাশটুকু আর পাওয়া যায়নি।

জোয়ানের মৃত্যুর ২৫ বছর পর পপ ক্যালিক্সটাস-৩ এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নতুনভাবে প্রমাণ করেন । সেই বিচারে জোয়ান নিষ্পাপ প্রমাণিত হয়। চার্চের মিথ্যা রায়ের কথা বেরিয়ে আসে আর জোয়ানকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়। এর ৫০০ বছর পর ক্যাথলিক চার্চ জোয়ানকে একজন 'সেইন্ট' হিসেবে ঘোষণা দেন। তার মৃত্যুদিবস ৩০ মে ক্যাথলিকরা শ্রদ্ধাভরে উদযাপন করে ।

এক সময় ডাইনি অপবাদে পুড়িয়ে মারা উনিশ বছরের অসীম সাহসী তরুণীকে গোটা ফ্রান্সে জাতীয় বীর হিসেবে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করা হয়। জোয়ানের অসামান্য অবদানের কীর্তি গাঁথা নিয়ে রচিত হয়েছে গান, নির্মিত হয়েছে নাটক ও সিনেমা। এরমধ্যে ১৯২৮ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা 'প্যাশন অফ জোয়ান অব আর্ক' আগ্রহী পাঠক দেখে নিতে পারেন। 'মেইড অব অরলিন্স' হিসেবে পরিচিত জোয়ান অব আর্কের এই অবিস্মরণীয় অবদান আমাদের আরেকবার মনে করিয়ে দেয় ,

'নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান

ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই'।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top