What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

নকল টাকা ছাপিয়ে ব্রিটিশদের বোকা বানিয়েছিলেন যিনি (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
jojztWs.jpg


ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। কিন্তু বিপ্লবীদের কাছে তো পর্যাপ্ত তহবিল নেই। কিভাবে তাদের টাকার যোগাড় হবে! এমন সংকটে এক গায়ক নকল টাকার নোট ছাপিয়ে ব্রিটিশ সরকারকে বোকা বানিয়ে সাহায্য করতে থাকে সংগ্রামীদের। বলছি মহেন্দ্র মিশ্রর কথা। বেশিরভাগ ভারতীয়দের কাছে মহেন্দ্র মিশ্র বিহারের একজন লোকসংগীত শিল্পী হিসেবে পরিচিত, যার গান বিহার ছাড়াও পার্শ্ববর্তী উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তবে অনেকেই জানেনা ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসকদের কাছ থেকে ভারতকে স্বাধীন করার জন্য তার সাহসী ভূমিকার কথা।

১৮৮৬ সালের ১৬ মার্চ ছাপড়া জেলা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার (ছয় মাইল) দূরে মিশ্রাউলিয়া গ্রামে শিবশঙ্কর মিশ্র এবং গায়ত্রী দেবীর ঘরে মহেন্দ্র মিশ্রর জন্ম। সে গ্রামের অধিকাংশই তখন কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু তরুণ মহেন্দ্র মিশ্রর কৃষি কাজে আগ্রহ ছিল না। বরং খেলাধুলা, কুস্তি ও অশ্বারোহণের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ কাজ করত৷

সংগীতের প্রতি আগ্রহ

মহেন্দ্র মিশ্রর দিনের বেলা কাটতো কুস্তি খেলোয়াড়দের সাথে শরীরচর্চা করে আর রাতের বেলা কাটতো গায়কদের সাথে মন্দিরে হিন্দুধর্মের দেবতা শ্রী রামের ভক্তিগীতি গেয়ে৷ প্রচলিত শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহের কারণে মিশ্রকে পণ্ডিত নানহু মিশ্র কর্তৃক পরিচালিত সংস্কৃত ভাষার বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু এতেও তার শিক্ষা লাভের প্রতি কোন আগ্রহ জন্মায়না। বরং এক সময় তিনি স্কুলের যাওয়া বন্ধ করে দেন এবং পুরো সময়টা কবিতা লেখায় ব্যয় করতে শুরু করেন।

বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে পুরো সংসারের ভার মিশ্রর উপর এসে পড়ে। ভাগ্যের পরিহাসে মাঠে চাষাবাদ করলেও তার মন পড়ে থাকতো গানের সুর ও কথার মাঝে। কারণ বাবাকে হারানোর কিছুদিন আগেও তার দিন কাটতো প্রবীণ সংগীত শিল্পীদের সান্নিধ্যে। এমনকি তিনি নিজের সংগীত রচনাও শুরু করেছিলেন।

তিনি মূলত বছরের পর বছর ধরে চলে আসা "পূরবী " রীতিতে সংগীত রচনা করতেন। "ক্যায়সে দিন বিতি রাম" হলো তার গাওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় গান, যেটি এখনো গাওয়া হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে তার সংগীত প্রতিভার কথা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। একটা সময় তিনি উত্তর প্রদেশ, বেনারস, লখনৌ এবং কানপুরের মতো শহরে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ পেতে থাকেন৷

মহেন্দ্র মিশ্রর গান তার রাজ্যের অন্য গায়কদের অনুপ্রাণিত করতে থাকে। তেমনই একজন শিল্পী ছিলেন ভিক্ষারী ঠাকুর, যিনি মিশ্রর সব সংগীতানুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন৷ যদিও এই দুই শিল্পীর সামাজিক অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। মিশ্র ছিলেন "জমিনদার" পরিবারের আর ভিক্ষারী ছিল নাপিত সমাজের। তৎকালীন সমাজে নাপিতদের ছোট বর্ণের মনে করা হত৷ এই দুই বর্ণের বসবাস ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন জায়গায়। খুব কম অনুষ্ঠানে এই দুই বর্ণের মানুষকে একত্রিত হতে দেখা যেত। তবে গান মিশ্র এবং ঠাকুরকে একত্রিত করেছিল। মুম্বাই-ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা সিমিত ভগতের মতে, ঠাকুরকে "ভোজপুরি সংগীতের শেক্সপিয়র" হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো।

oLFgHaq.jpg


মহেন্দ্র মিশ্রের প্রতিকৃতি; Photo: Aljazeera

নকল টাকার নোট ছাপানো

ধীরে ধীরে মহেন্দ্র মিশ্র ভোজপুরী সংগীতের প্রধান শিল্পীদের মধ্যে একজন হয়ে উঠেন। তার সুখ্যাতি বিহার ছাড়িয়ে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার কাছে সংগীতানুষ্ঠানের আমন্ত্রণ আসতে থাকে। এমনই এক আয়োজন তাকে নিয়ে যায় কলকাতা মহানগরীতে৷

উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা সুরেশ কুমার মিশ্রের লেখা একটি বই থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, একজন ব্রিটিশ কর্মকর্তা মিশ্রর গানে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি গান শেষে নিজ থেকে মিশ্রর সাথে দেখা করেন। সে কর্মকর্তা মহেন্দ্র মিশ্রর আর্থিক অসচ্ছলতা ও সংগীতের প্রতি তার অপ্রতিরোধ্য আবেগ দেখে তাকে নকল টাকা মুদ্রণের যযন্ত্রপাতি দিয়ে পুরুষ্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেন।

আবার মহেন্দ্র মিশ্রর নাতি রামনাথ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিল, কলকাতায় তার পিতামহের সাথে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত তেমন কয়েকজন সংগ্রামীর পরিচয় হয়। সেই সব স্বাধীনতাকামী সংগ্রামীদের সহায়তার জন্য মিশ্রকে নকল টাকা মুদ্রণের মেশিন প্রদান করা হয়।

মিশ্রাউলিয়া ফিরে আসার পর বিহার ও কলকাতার বিপ্লবীদের তহবিল যোগাতে ও দেশকে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে মহেন্দ্র মিশ্র ১৯১৫ সাল থেকে নকল নোট মুদ্রণের মাধ্যমে সংগ্রামীদের সহায়তা করতে থাকে৷ সে সময় বিহার, কলকাতাসহ আরো অনেক রাজ্যে প্রচুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল। যদি বিপ্লবীরা খেতে না পারে, পরিধান করার পোশাক না পায় তবে তারা লড়াই করবে কি করে- এই চেতনা থেকে মহেন্দ্র মিশ্র নকল টাকা ছাপাতে রাজি হয়।

নকল টাকার মুদ্রণের দায়ে কারাবরণ

ব্রিটিশ সরকারের কাছে ধরা না পড়া অবধি মহেন্দ্র মিশ্র প্রায় ৪ বছর ধরে নকল টাকার নোট ছাপানো অব্যাহত রাখে। ফৌজদারি তদন্ত বিভাগের কর্মকর্তা সুরেন্দ্রলাল ঘোষ মহেন্দ্র মিশ্রর বাড়িতে গোপীচাঁদ ছদ্ম নাম নিয়ে একজন সহায়ক হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল। মিশ্রর নকল টাকা ছাপানো সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের সন্ধান পেতে সুরেন্দ্রলালের প্রায় ৩ বছর সময় লেগেছিল। তার তথ্যের ভিত্তিতে ১৯২৪ সালের ১৬ এপ্রিল পুলিশ বাহিনী তার বাড়ি ঘিরে ফেলে। যখন মিশ্রকে আদালতে হাজির করা হয় তখন তিনি ছদ্মবেশী গোপীচাঁদকে সেখানে দেখতে পান। পরবর্তীতে তাকে নিয়েও মিশ্র একটি গান রচনা করেন৷

আদালত মিশ্রকে ২০ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করলেও পাটনা হাইকোর্টে আপিলের পর তার সাজা কমে ১০ বছরে উপনীত হয়। বক্সার কারাগারে বন্দী থাকাকালীন সময়েও মিশ্র তার সংগীত চর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন। কথিত আছে, হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণকে কেন্দ্র করে তার সংগীত উপস্থাপনা কারা রক্ষীদের উপর গভীর ছাপ ফেলেছিল। কারাগারে তার জনপ্রিয়তা ও সভ্য আচরণের জন্য তার সাজা কমিয়ে তাকে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে মুক্তি প্রদান করা হয়েছিল। কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর মিশ্র মিশ্রাউলিয়াতে ফিরে আসেন ও ১৯৪৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পরলোকগমন করেন।


নাম না জানা অনেক শহীদের আত্মত্যাগের গল্প জড়িয়ে আছে আজকের স্বাধীন ভারতবর্ষে। মহেন্দ্র মিশ্ররা অজানায় পাড়ি দিলেও তাদের নাম লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়। আর একজন শিল্পী বেঁচে থাকে তার কর্মে। তেমনি মহেন্দ্র মিশ্র আজো বর্তমান আছেন তার গানের সুরে ও কথায়।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top