What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পার্ল হারবার আক্রমণ এবং ফলাফল (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
mX0lotp.jpg


পার্ল হারবার! নামটি শুনলেই ইতিহাসপ্রেমী মানুষরা খানিকটা শিউরে উঠবেন। চোখ বুজে কল্পনায় একটা যুদ্ধক্ষেত্র দেখতে পাবেন। কল্পনায় শুনতে পাবেন যুদ্ধ বিমানের কান ফাটানো সাইরেন! ক্ষণেক্ষনে চোখের সামনে ভেসে উঠবে আগুনে জ্বলসে যাওয়া একটা দ্বীপের ছবি।

সিনেমাপ্রেমীরাও এই নামটির সাথে পরিচিত। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত নির্মাণ হওয়া যতো সিনেমা রয়েছে তার মধ্যে এই ঘটনাকে উপজীব্য করে বানানো "পার্ল হারবার" নামক সিনেমাটিতেই ব্যবহার করা হয়েছে সবচাইতে বেশি পরিমান বিস্ফোরক দ্রব্য!

কিন্তু কেন? পার্ল হারবার নামটির সাথে এতো এতো কঠিন উপমা কেন? জানতে হলে পিছন ফিরে তাকাতে হবে অনেকটা।

কি ঘটেছিলো সেদিন?

সাল ১৯৪১। ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখ, রবিবার। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারের সৈন্যদের জন্য সেদিন কোনো যুদ্ধ প্রস্তুতির দিন ছিলোনা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গা এলিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলো তারা। কেউই জানতোনা আর খানিককাল পরেই ঘটে যাবে ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য হৃদয়বিদারক আক্রমনের ঘটনা, আর কিছুক্ষন বাদেই ঘোষনা ছাড়াই বেজে উঠবে যুদ্ধের দামামা।

৩৫৩টি জাপানী যুদ্ধবিমান, বোমারু বিমান, টর্পেডো বিমানকে একযোগে আক্রমনের নির্দেশ দেয়া হয়। জাপানী নেভির প্রধান সেনাপতি এডমিরাল এসোরোকু ইয়ামামোতো এর পরিকল্পনা অনুযায়ী ছয়টি বিমানবাহিনী জাহাজ থেকে চালানো হয় এই আকস্মিক আক্রমন। আক্রমনের আকস্মিকতায় শুরুতেই হতভম্ব হয়ে পড়ে মার্কিন সেনারা। পাল্টা আক্রমনের জন্য নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার আগেই ডুবে যায় তাদের চার চারটি যুদ্ধজাহাজ। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাকি চারটি।

জাপানীদের এমন বুদ্ধিদীপ্ত আকস্মিক হামলায় মার্কিনদের ১৮৮টি বিমান ধ্বংস হয়ে যায় পুরোপুরিভাবে। আক্রমনটি মার্কিনদের অহমিকায় গভীর দাগ কেটে যায়। পার্ল হারবার আক্রমনের পরের দিনই আমেরিকা প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষনা করে জাপানের বিরুদ্ধে।

5kyY0YK.jpg


যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের প্রায় মাঝামাঝি জায়গায় প্যাসিফিক ওশেনে পার্ল হারবার অবস্থিত; Photo: Pearlharboroahu

ক্ষয়ক্ষতি

অপ্রস্তুত মার্কিন বাহিনীর ওপর জাপানীদের পরিকল্পিত আক্রমনে মার্কিনরাই যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটা বলাই বাহুল্য। পার্ল হারবারে সেদিনের আক্রমণে ক্ষণিকেই নিভে যায় ২৪০২জন মার্কিনীর জীবন প্রদীপ। এদের মধ্যে ৫৭ জন ছিলো বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া আহত হয় আরও ১২৪৭ জন মার্কিন নাগরিক।

চারটি যুদ্ধ জাহাজ, ১৮৮ টি বিমান ছাড়াও সেদিন আরো ধ্বংস হয় তিনটি ক্রুইজার, দুইটি ডেস্ট্রোয়ার এবং একটি সাধারন জাহাজ। অপরদিকে মার্কিনদের ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় জাপানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ছিলো যৎসামান্য। চারটি ছোট ডুবোজাহাজ এবং ২৯ টি বিমান ধ্বংস হয় তাদের। এবং ৬৪টি জন জাপানি সেনার মৃত্যু হয়।

বস্তুগত ক্ষয়ক্ষতির হিসেব আলাদা করে রেখে মানসিক ক্ষতির হিসেব কষলে দেখা যায় সেদিন মার্কিনদের মনোবলকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে জাপান। নিজেরা লুটে নিয়েছে যুদ্ধ জয়ের প্রশান্তি।

8LsKUtN.jpg


পত্রিকায় শিরোনামে এই হামলা

আক্রমনের কারণ

পার্ল হারবার আক্রমনের অন্যতম কারণ ছিলো আধিপত্য বিস্তার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৩০ সালে যখন ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের ওপর অর্থনৈতিক মন্দার থাবা পড়ে, ঠিক তখনই জাপান এই মন্দা থেকে বেঁচে উঠতে নিজেদের আধিপত্য প্রসারের ফন্দি আঁটে। সে সময়ে ভীষন রকম হিংস্র হয়ে ওঠে জাপান নামের বর্তমান এই শান্তশিষ্ট দেশটি। ১৯৩১ সালে মাঞ্চুরিয়া আক্রমনের মাধ্যমে জাপান তাদের আধিপত্য বিস্তারের রাস্তা বানানো শুরু করে। এরপর ১৯৩৭ সালে জাপান চীনের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করে। জাপানীদের এমন হিংস্র মনোভাবের কারণে আমেরিকার সাথে তাদের মতবিরোধ হয়, আমেরিকা সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের সাথে। আর সাথে নানা রকম অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে জাপানের উপর। এমন নানা দ্বেষ-বিদ্বেষের মাধ্যমে জাপান ফুসে ওঠে মার্কিনদের প্রতি। ফলশ্রুতিতে আক্রমণাত্মক জাপান বাহিনী পার্ল হারবার আক্রমনের মাধ্যমে কেড়ে নেয় ২৪০২ টি মার্কিন প্রাণ।

এছাড়াও মার্কিনদের সুসজ্জিত যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনেরও ইচ্ছা ছিলো জাপানীদের। তারা ভেবেছিলো পার্ল হারবার আক্রমনের ফলে তাদের সামরিক অবস্থান আরো মজবুত হবে, পর্যাপ্ত সময় পাবে নৌ শক্তি বাড়িয়ে নেয়ার।

সর্বোপরি, পূর্ব শত্রুতার রেষ ধরে মার্কিনবাহিনীদের নিকট নিজেদের ক্ষমতা দেখানো, আধিপত্য বিস্তার করা এবং মার্কিন বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দেওয়াই ছিলো পার্ল হারবার আক্রমনের মূল উদ্দেশ্য।

W73rKZ5.jpg


১৯৪১ সালেই ৭ ডিসেম্বর জাপানি যুদ্ধ বিমান এভাবেই বিধ্বস্ত করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ঘাটি হিসেবে পরিচিত পার্ল হারবারকে; Photo: AP

ফলাফল

পার্ল হারবার আক্রমনের ফলে জাপানীরা তাদের অর্জনের ঝুলিতে একটি তাৎক্ষনিক বিজয় তুলে নিলেও পরবর্তীতে এর প্রতিদান হিসেবে কড়া মাশুল গুনতে হয়েছে তাদের। ১৯৪১ সালের পার্ল হারবার আক্রমনের আগে পর্যন্ত ২য় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে উদাসীন ছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই হামলার পর তারা সরাসরি ২য় বিশ্ব যুদ্ধে যোগ দেয়। সাময়িকভাবে জয়লাভ করা জাপানীরা কল্পনাও করেনি এই আক্রমনের মাধ্যমে তারা মার্কিনদের মনে যে বিষবৃক্ষ রোপন করেছে তার শিকড় কতোটা সুদূরপ্রসারী হতে পারে।

নিজদের এলাকায় জাপানের আক্রমণের ক্ষত ধীরেধীরে ক্ষোভে রুপান্তরিত হয় মার্কিন বাহিনীর মনে। এই ক্ষোভের তাড়নায় ১৯৪৫ সালের ৬ এবং ৯ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকির বুকে তারা গেঁথে দেয় বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী দুটি পারমানবিক বোমা। নিমিষেই প্রাণ হারায় প্রায় দুই লাখ চৌদ্দ হাজার জন মানুষ। যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক, যাদের বেশিরভাগেরই প্রার্থনাতে যুদ্ধ থাকতোনা, থাকতো শান্তি।

লেখার শুরুতে মুভির কথা দিয়ে শুরু করেছি তাই শেষটাও তাই দিয়েই হোক। পার্ল হারবার আক্রমনের কাহিনীকে পূঁজি করে ২০০১ এক সালে বিখ্যাত মার্কিন পরিচালক মাইকেল বে নির্মান করেন একই নামের একটি ফ্যান্টাসি মুভি!

সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাকে ফ্যান্টাসি মুভি বলাতে খানিকটা অন্যরকম লাগছে, তাইতো? আসলে সত্যি এটাই। সিনেমাটিতে ইতিহাস বিকৃতিকে একপ্রকার শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন পরিচালক সাহেব। আসল ঘটনা থেকে সরে এসে প্রেম ভালোবাসা ঢুকিয়ে একপ্রকার জগাখিচুড়ি তৈরী করেছেন তিনি। অবশ্য এর জন্য মাশুল ও দিয়েছেন তখন। সিনেমাবোদ্ধাদের একরাশ কটু কথা হজম করতে হয়েছে নির্বিকারভাবে।

সর্বোপরি পার্ল হারবার আক্রমন ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়। ইতিহাস কখনোই চায়না তার বুকে এতো রক্তারক্তি হোক, খুনোখুনি হোক, ধ্বংসযজ্ঞ চলুক। তবুও তাকে বুক পেতে নিতে হয় উষ্ণ রক্তের অনুভূতি। প্রতিটি যুদ্ধেই প্রাণ যায় হাজারো লাখো মানুষের। সবাই চায় পৃথিবীর বুকে প্রতিটা দিন নি:সংকোচে কাটাবে, কখনোই যুদ্ধের দামামা বাজবেনা। আচমকা যমদূতের মতো একটা দুটো বোমা খসে পড়ে নিমিষেই নিয়ে যাবেনা লাখো মানুষের প্রাণ! পৃথিবীর বুকে কোনো যুদ্ধবিমান সাইরেন বাজিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে উড়ে বেড়াবেনা আর। উড়বে শুধু শান্তির শফেদ পতাকা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top