What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other ফজলুর রহমান বাবু: তারকা নন, অভিনেতা (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
QGZ31ze.jpg


'আমার সোনাজাদুর মুখ, জগতের সবচেয়ে সুন্দর, আমার সোনাজাদুর ছোঁয়া সবচেয়ে নরম…।'

আকাশে ভোরের আভাস, নৌকায় লাশবন্দি কফিন। আবহ সঙ্গীতে নরম সুরে বাজছে পিতার হাহাকার বিজড়িত গান।

দৃশ্যটি 'অজ্ঞাতনামা'র। সিনেমার এই পর্যায়ে সম্ভবত বাস্তব আর রিল এক হয়ে যায়, দর্শক হতবিহবল কেফায়েত প্রামাণিকের সাথে গুলিয়ে ফেলে নিজেকে। গম্ভীর হৃদয়গ্রাহী সুরায়োজন অথবা চার বাই তিনের ফ্রেমে সবকিছু ছাপিয়ে অশ্রুসজল নয়নে মিশে যায় একজন পিতার আর্তনাদ।

বাংলা সিনেমায় সেরা পারফরম্যান্সের খাতা খুললে প্রথমেই যে কজনের নাম আসে তাঁর মাঝে নিঃসন্দেহে উপর তলায় থাকবে এই দৃশ্যের নাম।

সাধনায় অভিনয়

ফরিদপুরের নুরজাহান বেগম ও মোখলেসুর রহমান দম্পতি; তাঁদের আধ ডজন সন্তানের মাঝে চতুর্থজন বেশ ডানপিটেই ছিল। দুষ্টুমিতে পাড়া মাতিয়ে রাখলেও সিনেমা নিয়ে আগ্রহ ছিল অন্যদের চেয়ে বেশি। বাড়ির পাশেই সিনেমা হল, তাই যেন সোনায় সোহাগা। হাতখরচের পয়সা আর বন্ধুর দল বগলদাবা করে ছুটে যেতেন ম্যাটিনিতে।

সেই ১৯৬০ সালের ১৪ জুলাই জন্ম নেয়া ফিল্মমুখর মানুষটি এখন দেশসেরা অভিনেতা হিসেবে পরিচিত। নাম ফজলুর রহমান বাবু।

উচ্চমাধ্যমিকের পরেই আর চাপা পড়ে থাকেনি প্রতিভা। ফরিদপুরের বৈশাখি নাট্যগোষ্ঠীর হয়ে মঞ্চে হাতেখড়ি নিয়ে ফেলেন ১৯৭৮ সালে। তবে আরণ্যক নাট্যদলের সাথে যুক্ত হওয়ার গল্পটি বেশ মজার। ফজলুর রহমান বাবু অবশ্য একে দৈবও মানেন। চাকরিসূত্রেই ঢাকায় এসেছিলেন তিরাশিতে। বসতেন মহাখালী শাখায়। সেখানেই প্রথম চোখে পড়ে আব্দুল্লাহেল মাহমুদের 'নাটক' পত্রিকা। নিমেষেই আপাদমস্তক গোগ্রাসে গিলে ফেলেন পত্রিকার খুঁটিনাটি।

স্রেফ সম্পাদককে ধন্যবাদ দেয়ার উদ্দীপনায় ফোনও করে বসেন পত্রিকায় লেখা নাম্বারে। আর সেভাবেই পরিচয় ঘটে 'নাটক' এর তৎকালীন আলোকচিত্রী বাবুল হাকিমের সাথে। আরেকটু ঝেড়ে কাশলেই তাকে চিনে ফেলবেন পাঠক- ইনিই দাপুটে অভিনেতা আজিজুল হাকিম।

দুদিনের মাথায় হাকিমের সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলেন বাবু। পরের সপ্তাহেই 'সাত পুরুষের ঋণ' এর শো দেখলেন টিকেট কেটে। নাটকে আসক্তি তো শৈশবের সম্পদ, এবার পরিপূর্ণ ডানা মেললো আরণ্যকের পরিবেশে।

পরের শোতেই মঞ্চে উঠলেন। আরম্ভের গল্প এটাই। ধীরে ধীরে দলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হলেন। একের পর এক সংলাপের মাঝে খুঁজে পেলেন আজন্ম লালিত স্বপ্নের স্বাদ। নানকার পালা, পাথার, লেবেদেফ, মানুষ আদিম, ময়ূর সিংহাসনের মাধ্যমে রাখলেন মেধার সাক্ষর। মামুনুর রশীদের সাথে পরিচয় ঘটে সেখানেই।

১৯৮৪ সালে জার্মান কালচার সেন্টারে অভিনয় করে প্রথম দুইশ' টাকা পেয়েছিলেন। প্রথম আয় খরচ করেছিলেন মায়ের জন্য শাড়ি কিনে। তখন থেকেই সংকল্প- যদি কোনদিন অভিনয় থেকে নিয়মিত উপার্জনের সন্ধান মেলে, তবে সেখানেই ধ্যানজ্ঞান অর্পণ করবেন।

631ZBEn.png


পিতার কাঁধে সবচেয়ে ভারি সন্তানের লাশ- অজ্ঞাতনামা; Photo: IMDb

বিবর্তনের সাক্ষী

নব্বই ছিল টিভি নাটকের স্বর্ণযুগ। সেসময়েই পদার্পণ ঘটে কাজী নজরুল ইসলামের 'মৃত্যুক্ষুধা' অবলম্বনে নির্মিত নাটক দিয়ে। আবু জাফর সিদ্দিকের পরিচালনায় এই নাটক অবধারিতভাবেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার করা হয়।

বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হলেও নিজেকে গণ্ডির মাঝে আটকে রাখেননি। 'পানি', 'ফটক', 'পাপপুণ্য', 'সুন্দরী ও দানব', 'ইতিকথা' র মতো নাটকে নজর কাড়েন আটপৌরে দর্শকদের।

ক্রমেই টেলিভিশনে ব্যস্ততা বাড়ছিল। কাজ শেষে হাতে মোটে পাঁচদিন পেতেন মাসে। সেকারণেই মঞ্চকে আপাতত দূরে রাখতে বাধ্য হন। তবে ২০০০ সালটা বিশেষ কারণে মনে রাখবেন তিনি। অগ্রজ আব্দুল্লাহ আল মামুনের 'বিহঙ্গ' চলচ্চিত্রে কাজ করেন।

পূর্ণাঙ্গ ফিল্মি আত্মপ্রকাশ ঘটে আবু সাইয়িদের 'শঙ্খনাদ' (২০০৪) এর বরাতে। ২০০৬ সালে 'না বোলো না', ২০০৭ সালে এনামুল করিম নির্ঝরের 'আহা', তৌকিরের 'দারুচিনি দ্বীপ' ও গোলাম রাব্বানির 'স্বপ্নডানা'য় দেখা যায় তাঁকে।

তবে হিসেব নিকেশের পাল্লাটা ষোলআনা ভরে দেয় গিয়াসউদ্দিন সেলিমের 'মনপুরা'। সোনাই-পরীর নিটোল প্রেমের অগ্নিসাক্ষী হয়ে ছিলেন পরীর অসহায় পিতা। শুধু সিনেমায় নয়, গানের চৌহদ্দিতেও যে তিনি তুখোড় তা প্রমাণ করে দেন 'নিথুয়া পাথারে' গানটি গেয়ে।

২০০৯ সালের অন্যতম সেরা ও লোকপ্রিয় গান ছিল এটি। গায়ক হিসেবেও তড়তড়িয়ে সুনাম বেড়ে যায় তাঁর। এ প্রসঙ্গে হেসে বলেন, 'আমি আসলেই সৌভাগ্যবান। নাহলে একেবারে বৃদ্ধ থেকে দুবছরের বাচ্চার মুখেও একটা গান কীভাবে জনপ্রিয় হতে পারে!'

মাঝে বিরতি দিয়ে ফের চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেন ২০১৬ সালে 'অজ্ঞাতনামা' দিয়ে। সেবছরেই 'মেয়েটি এখন কোথায় যাবে' মুক্তি পায়। পরের বছর গুলোয় নিয়মতভাবে কাজ করে যান তৌকিরের 'হালদা', 'ফাগুন হাওয়া', সেলিমের 'স্বপ্নজাল', মিজানুর রহমানের 'নুরু মিয়া ও তার বিউটি ড্রাইভার', নুহাশ হুমায়ূনের 'ইতি তোমারই ঢাকা' প্রভৃতিতে।

হাতে বেশ কিছু কাজ জমে আছে এখনো। মুক্তির প্রতীক্ষায় আছে 'জ্যাম' ও চয়নিকা চৌধুরীর 'বিশ্বসুন্দরী'। এছাড়াও শিশু একাডেমীর 'উড়াল' এবং আরেকটি ছবি 'রাত জাগা ফুলে' কাজ করার কথা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি শর্টফিল্মেও পাওয়া যাবে তাঁর গান।

TahXNar.jpg


সুযোগ পেলেই ডুবে যান বইয়ের জগতে, প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ; Photo:Facebook

পেশাদার অভিনেতা

পেশার নাম ব্যাংকার, রুটি রুজি চলতো ও দিয়েই। কিন্তু প্রাণের ক্ষুধা বাঁধা ছিল মঞ্চেই, তাই বেলাশেষে ছুটতেন থিয়েটার গ্রুপে।

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ব্যাংকেও চাকরি করেন প্রায় তেইশ বছর। অগ্রণী ব্যাংকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় ক্যাশিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে সমূলে অভিনয়েই নিজেকে নিবেদন করেন।

২০ বছরের ফিল্মি ক্যারিয়ারে মাত্র ১৩ টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। স্বল্প সময়েই জিতেছেন দুটি জাতীয় সম্মাননা। 'শঙ্খনাদ' ছবিতে অভিনয় করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এরপর 'মেয়েটি এখন কোথায় যাবে' ছবিতে অভিনয় করে একই সম্মাননা লাভ করেন।

এক্সট্রা আর্টিস্টের মনোয়ার, নাকি অজ্ঞাতনামার কেফায়েত। অথবা শঙ্খনাদের কাফন-চোর, শেষ বিকেলের পাখি'র দুঃস্থ পিতা, 'আহা'র সপ্রতিভ সোলেমান অথবা 'ফাগুন হাওয়া'র হরিজন- প্রত্যেক চরিত্রেই যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

চলচ্চিত্রে নিয়মিত না হওয়ার জন্য অনেকেই হুমায়ূন ফরিদীর প্রসঙ্গ টানেন। ফরিদীর অভিনয়- ক্ষমতা শতভাগ ব্যবহার করতে পারেনি বাংলা সিনেমা। দুজনের সম্পর্কও ছিল নিবিড়। 'জয়যাত্রা'য় হুমায়ূন ফরিদীর স্থলে প্রথমে বাবুরই কাজ করার কথা ছিল।

খুব সাধারণ লোক

'আমাদের দেশটা ছোট। দেশের প্রায় সব মানুষই আমাকে চেনে। এই তৃপ্তিটা অনেক। এর বেশি কিছু চাই না।'

নিজেকে তারকা কেন ,সামান্য শিল্পীও মানতে নারাজ। আর দশটা সাধারণ মানুষের মতোই চাকচিক্যহীন জীবনযাপন তাঁর। স্বপ্ন আর মোহে এখনও মঞ্চ জড়িত। সুযোগ পেলে কিং লিয়ার অথবা হ্যামলেটের চরিত্রে মঞ্চ প্রকম্পিত করবার শখ এখনো আবেগতাড়িত করে। সিনেমা, নাটকে ব্যস্তমুখ হলেও আত্মার সন্ধান পান থিয়েটারেই। তাঁর মতে পারফর্মিং আর্টসের আসল স্বাদ পেতে হলে প্রত্যেক শিল্পীকে নাট্যমঞ্চেই ফিরতে হবে।

অভিনয়ের পাশাপাশি গানের জগতেও বাবু নিজেকে মেলে ধরেছেন সুযোগ পাওয়া মাত্রই। ২০০৯ সালে 'ইন্দুবালা' নামে প্রথম একক এ্যালবাম রিলিজ পায়। 'ইন্দুবালা ২'ও সামনে মুক্তির প্রতীক্ষারত। এছাড়াও 'মাটির সুর', 'আসমান সাক্ষী', 'মনচোর' নামক মিক্সড এ্যালবামে কাজ করেছেন। প্রয়াত বারী সিদ্দিকীর সাথে 'চন্দ্রদেবী', 'ভরাডুবি'তে দ্বৈত এ্যালবামও রয়েছে।

তৌকির আহমেদ একবার বলেছিলেন, 'বেছে বেছে পেশাদার অভিনেতাদের দলে নেই আমি, এতে শতকরা ষাট ভাগ কাজ আপনাআপনিই হয়ে যায়।' সেই সুর মেলে বাবুর কণ্ঠেও। দলগত কাজেই ভরসা তাঁর। কেননা, গানের মতো 'একলা চলো রে' নীতি খাটে না অভিনয়ের বেলায়।

সদাহাস্য বাবু বলেন, 'আমি টিমওয়ার্কে বিশ্বাস করি। টিমের একটা অংশ হিসেবে আমার অংশগ্রহণ থাকবে সেটাই প্রত্যাশা করি সর্বদা। অজ্ঞাতনামা'য় আমি যে চরিত্রটি প্লে করেছি ওটা কেন্দ্রীয় চরিত্রই ছিল কিংবা 'স্বপ্নজাল'-এর চরিত্রটি গল্পে অন্যতম প্রধান ছিলো। পরিচালক আমাকে যে চরিত্রটি দিয়েছেন, আমার জায়গা থেকে আমি সেটা সফল করার চেষ্টা করি সবসময়।'

বাংলা চলচ্চিত্র বাস্তবিকই যোজন যোজন পিছিয়ে আছে। অভিনয়ের মানুষ বাবু এনিয়ে আশাবাদীই। তিনি বলেন,'মাঝে কিছু সময় চলচ্চিত্রের দশা খারাপ ছিল। এখন পরিবর্তন হচ্ছে। অনেক তরুণ নির্মাতারা আসছেন, তাদের ভাবনা চিন্তা একদমই আলাদা। আমি এ ব্যাপারে আশাবাদী।'

ClbDlYx.jpg


স্পষ্টবাদী হিসেবে মিডিয়ায় পরিচিত বাবু; Photo: Facebook

তৌকীর আহমেদ, সালাউদ্দিন লাভলু, আফজাল হোসেন, মামুনুর রশিদ, আফসানা মিমি –বিস্তর উদাহরণ আছে যারা পর্দা আর নির্মাণে সমান মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। তাঁদের পথেই কি হাঁটবেন একসময়?

উত্তরে নেতিবাচক কুমারী পাড়ের তরুণের, 'আমি নির্মাণে যাবো না। অভিনয় করে যেতে চাই। আজীবন খেলোয়াড়ের মতো খেলে যেতে চাই। তবে নতুনদের সঙ্গে অনেক অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, তারাও করে। হয়তো এভাবেই তারা কোনো না কোনো অনুপ্রেরণা পাবে, যেটা তাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।'

বয়স ষাটের কোঠা ছুঁইছুঁই, কিন্তু মনের দিক দিয়ে এখনও তরুণ। গোঁড়ামির বিন্দুমাত্র আভাস নেই তাঁর ভাবনায়। আশাবাদ ব্যক্ত করেন মিডিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়েও। মঞ্চ থেকে টিভি, সেখান থেকে সিনেমা, এরপর ওয়েব প্ল্যাটফর্ম, ইউটিউব– সকল মাধ্যমকেই শ্রদ্ধা চোখে দেখেন তিনি।

'নাহ, তোকে দিয়ে আর যাই হোক, অভিনয়টা হবে না। সেজন্য চেহারার প্রয়োজনটা বেশি।' বন্ধুর কথাটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন কৈশোরে। কালে কালে তিন দশক পাড়ি দিয়ে ফেলেছেন। মঞ্চে আর টিভি নাটকে অগণিত কাজ করলেও প্রথম প্রেম ফিল্মে অতটা জমিয়ে কাজ করেননি। অভিনয়ের প্রতি মমত্ববোধের জোর বোধয় জাত অভিনেতাদের স্বভাবজাত। সেই প্রেম থেকেই নয়টা- পাঁচটা চাকরির মোহও ছেড়েছেন। নবীন অভিনেতাদের প্রতি টুকরো পরামর্শ পর্দার তুখোড় এই শিল্পীর, 'শিক্ষা, অনুশীলন, অধ্যবসায় আর ধৈর্য- এই চারটে জিনিস থাকলেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।'
 

Users who are viewing this thread

Back
Top