বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফাহিম সালেহ একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে লাখো তরুণের জন্য আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সফলতাকে কি করে নিজের মুঠোর মধ্যে পুরে নিতে হয়, সেটি অল্প বয়সেই ভালো করে জানতেন তিনি। সামনে আরও অনেক কিছুই করতে পারতেন। কিন্তু তেত্রিশ বছর বয়সেই মাত্র নব্বই হাজার ডলারের জন্য লাগাম টেনে ধরা হল তার জীবনীশক্তির, চির অধরাই রয়ে গেল আরো হাজারো সফলতার নতুন সোপান।
গত ১৪ জুলাই নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে ফাহিমের ২.২ মিলিয়ন ডলারের বিলাসবহুল বাসায় তার খণ্ড -বিখন্ড লাশ উদ্ধার করে নিউ ইউর্ক পুলিশ। কোনভাবেই ফাহিমের সাথে যোগাযোগ না করতে পেরে তার ছোট বোন আতঙ্কিত হয়ে ছুটে যান ফাহিমের বাসায়। দেখতে পান ভাইয়ের বিচ্ছিন্ন মরহেদ। এরপর তার কল পেয়েই ঘটনাস্থলে যায় নিউ ইয়র্ক পুলিশ।
নিউ ইয়র্কের গোয়েন্দা সংস্থা এবং গণমাধ্যম হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার সূত্রপাত কিছুদিন আগেই হয়েছিল। ফাহিমের ব্যক্তিগত সহকারী ২১ বছর বয়সী টাইরেস হ্যাসপিল বিগত বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্নভাবে গোপনে ফাহিমের টাকা চুরি করছিলেন। পরবর্তীতে ফাহিম চুরির ঘটনাটি বুঝতে পারলে হ্যাসপিলকে বহিষ্কার করেন। তবে ফাহিম তাকে সাথে সাথে পুলিশের হাতে তুলে দেন নি, তিনি তাকে সুযোগ দিয়েছিলেন ভালো হয়ে যাওয়ার। ধীরে ধীরে তার চুরি করা টাকা ফেরত দিয়ে দেয়ার জন্য হ্যাসপিলকে বেশ কিছুদিন সময় নির্ধারণ করে দেন তিনি। কিন্তু এই মহানুভবতাই যে তার কাল হয়ে দাঁড়াবে সে কথা তখন কি ভাবতে পেরেছিলেন এই তরুণ উদ্যোক্তা?
সিসি টিভি ক্যামেরা হতে পাওয়া ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকারী ফাহিমের পিছু নিয়ে তার এপার্টমেন্টের লিফটে উঠেছিল। তখন খুনির পরনে ছিল কালো স্যুট আর তার মুখেও ছিল কালো মাস্ক। এমনকি হাতে ছিল একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, হয়ত এই ক্লিনার দিয়েই নিজের চিহ্ন মুছে দিয়ে চেয়েছিল খুনি। জানা যায়, স্ট্যান গান ব্যবহার করে ফাহিমকে প্রাথমিকভাবে অচেতন করে দিয়েছিল খুনি। অতঃপর চাকু দিয়ে হাতে হত্যা করার পর ইলেকট্রিক করাত দিয়ে লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল।
তদন্তকারী পুলিশ প্রাথমিক সন্দেহে টাইরেস হ্যাসপিলের ক্রেডিট কার্ডের বিলের সূত্র ধরেই তাকে হত্যাকারী হিসেবে শনাক্ত করে। কেননা ঘটনার কয়েকদিন আগেই নিজের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে একটি ইলেকট্রিক করাত ক্রয় করে হ্যাসপিল। আর সেই করাতটিই ফাহিমের বাসা থেকে জব্দ করে পুলিশ। খুন করার দিন সে একই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া করেছিল এবং ম্যানহাটনের একটি দোকান থেকে এপার্টমেন্ট পরিষ্কার করার জন্য বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল পুরো এপার্টমেন্ট পরিষ্কার করে হত্যার যাবতীয় আলামত মুছে ফেলার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার পরদিন হ্যাসপিল সবকিছু নিয়ে পুনরায় গিয়েছিলেন ফাহিমের বাসায়। কিন্তু সেদিন ঘটনাক্রমে ফাহিমের বোন ফাহিমের কোন খোঁজ না পেয়ে সেই ফ্লাটে গিয়ে উপস্থিত হলে পালিয়ে যায় সে।
পুলিশ প্রথমে ফাহিমের হত্যাকান্ডে পেশাদার খুনি জড়িত আছে বলে সন্দেহ করলেও পরবর্তীতে এই সব আলামত ও ক্রেডিট কার্ড বিলের প্রমাণ পেয়ে এই ২১ বছর বয়সী টাইরেস হ্যাসপিলকে গ্রেফতার করে।