What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other মনোজ বাজপেয়ী: লম্বা রেসের ঘোড়া (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
tVOwxo9.jpg


গত শতকের আটানব্বইয়ে দুটি ছবি এঁকে দেয় বলিউডের পরবর্তী দশকগুলোর গ্রাফ- জুলাইয়ে রাম গোপাল ভার্মার 'সত্য' আর অক্টোবরে করণ জোহরের 'কুছ কুছ হোতা হ্যায়'।

জনপ্রিয় রোমান্টিকের তকমা গায়ে নিয়ে দুই দশক ভালোই বাজার মাত করে রাখলেও সম্প্রতি 'কুছ কুছ হোতা হ্যায়' এর উন্নাসিক ও আপত্তিকর গল্প নিয়ে সমালোচনাও চলছে পুরোদস্তুর।

কিন্তু 'সত্য' এর কী হলো? ক্লাসিক গ্যাংস্টার মুভি হিসেবে সদর্পে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রামুর এই ডার্ক- ক্রাইম। মুম্বাইয়ের অপরাধ জগত আর রাজনীতির ঘেরটোপে আটকে যাওয়া যুবক সত্যের সাথে সাথে দর্শকও মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ে সেসময়। এরপর যতগুলো থ্রিলার, গ্যাংস্টার ছবি নির্মিত হয়েছে বলিউডে, নির্বিবাদে সবাই একেই মেনেছে গুরু।

তবে 'সত্য'র মাধ্যমে ভারতের সিনেমাজগত পেয়েছে অনন্য, অতুল এক অভিনেতার খোঁজ, যাকে নাসিরুদ্দিন শাহ, ইরফান খান, ওম পুরিদের পরেই শুদ্ধ অভিনয়ের ধ্বজাধারী মানা হয়- তাঁর নাম মনোজ বাজপেয়ী।

সূচনার গল্প

বিহারের নারকাটিগঞ্জের কৃষক পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান মনোজ। ১৯৬৯ সালের ২৩ এপ্রিল জন্মের পরই তার নাম রাখা হয় বিখ্যাত অভিনেতা মনোজ কুমারের নামের সাথে মিল রেখে। সম্ভবত তখনই বলিউডের ভাগ্যরেখায় লেখা হয়ে যায় নক্ষত্রের ভবিষ্যৎ।

চার বছর বয়সেই অভিনয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করেন তিনি। পাঁচ ভাই বোনই গ্রামের ছাপড়া স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। পরে অবশ্য মহারানী জানাকি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। বছর নয়ে থাকতেই অভিনেতা হওয়ার অধ্যবসায় চেপে বসে মনোজের মাথায়। এর পেছনে গ্রামের যাত্রাদলের অবদানও ছিল। সাহিত্যানুরাগী ও আবৃত্তিতে নামও কুড়িয়েছিলেন তখন গ্রামে। তাই হাইস্কুলের মঞ্চ নাটকে নির্বাচিতও হন সহজে। কিন্তু বিধি বাম! কাপড় অপরিষ্কার থাকায় সেবারের মতো হাতছাড়া হয়ে যায় কিশোর মনোজের অভিনয়ের স্বপ্ন।

ভেবেছিলেন আত্মহত্যার কথাও

দরিদ্র পরিবারের জন্য অনেকটা ঘোড়া রোগই ছিল মনোজের ভাবনা। তাই প্রথমে সত্যবতী, রামজশ কলেজ এবং পরে দিল্লী ইউনিভার্সিটিই হল গন্তব্য। রামজশে থাকার সময়েই মঞ্চে নিয়মিত হন। দিল্লী ইউনিভার্সিটিতে প্রথম দর্শন পান বলিউডের অভিনয় মহীরুহ নাসিরুদ্দিন শাহ্‌র। ছবির প্রচারণায় ব্যস্ত নাসিরকে মনোজ চমকে দেন নিজের অভিনয় প্রতিভায়। তাঁর আশীর্বাদ আর বখশিশই মনোজের হৃদয়ে জ্বালিয়ে দেয় অনুপ্রেরণার আগুন।

তড়িঘড়ি করে নেমে পড়েন 'দিল্লী ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা'য় ভর্তির প্রস্তুতিতে। অকৃতকার্য হন প্রথম বারেই।আশাহত হলেও ফের চেষ্টা করেন। একে একে চারবার প্রত্যাখ্যাত হন লিখিত পরীক্ষায়। ব্যর্থ মনোরথে আত্মহত্যার কথাও ভাবতেন।

স্মৃতিচারণে তাই জানান,

'আমি সম্পূর্ণভাবে বহিরাগত ছিলাম। আগে শুধুমাত্র ভোজপুরিতে কথা বলতাম। ধীরে ধীরে হিন্দি ও ইংরেজি শিখলাম। তারপর ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় অ্যাপ্লাই করলাম। তিনবারই আমার অ্যাপ্লিকেশন খারিজ করে দেয়ায় আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে পরেছিলাম। তখন বন্ধুরাই আমায় আগলে রেখেছিল। আমার সঙ্গেই ঘুমোতো, এক মুহূর্তও আমাকে একা ছাড়ত না।'

রঘুবীর যাদবের পরামর্শে বিখ্যাত অভিনয় প্রশিক্ষক ব্যারি জনের কাছে যান মনোজ। সেই পরিচয়ই বদলে দেয় সব হিসেব নিকেশ। নাটকে সহযোগীর পদ পেয়ে যান দ্রুতই। তবে এখানেও মেধার দমটাই ছিল সর্বাগ্রে।

xUl9LTJ.jpg


পদ্মশ্রী, বিহার ফিল্ম রত্ন পদকও আছে ঝুলিতে; Photo: India Today

থিয়েটার অ্যাকশন গ্রুপ তখন 'বাগদাদের গোলাম' মঞ্চায়নে ব্যস্ত। মুখ্য ভূমিকায় রঘুবীর বাদে বাকি সবাইকে কর্মশালা থেকে বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলছিল। সেখানেই মাত করেন মনোজ। ১২০০ রূপী পারিশ্রমিকে বাধা পড়ে যান ব্যারির সাথে, আর মিলে যায় 'রহমতউল্লাহ'র রোলও!

ব্যারির সাথে কাজ করেন প্রায় বছর দুয়েক। শাহরুখ খানের সাথে পরিচিত হন তখনই। ভিন্ন মাত্রার দুই অভিনেতার রসায়ন জমে ওঠে শীঘ্রই। এর মাঝে আবারও আবেদন করেন 'ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা'য়। এখানেই ছিল আসল চমক। ছাত্র নয়, এবার তাঁকে মঞ্জুর করা হয় শিক্ষক হিসেবে।

পালাবদলের জীবন

অমিতাভ বচ্চনের পাড় ভক্ত, সুতরাং তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে রূপালি পর্দাই ছিল লক্ষ্য। সুঅভিনেতা হলে কী হবে, নায়কসুলভ মুখশ্রী বা তারকা সন্তান তো নন। তাই ভাগ্যকে অদৃষ্টের উপরই ছেড়ে দিয়েছিলেন।

হঠাৎ একদিন তিগমাংশু ঢুলিয়া উপস্থিত হলেন তাঁর কাছে, জানালেন শেখর কাপুর 'Bandit Queen' এর জন্য তাঁকে খুঁজছেন। কিন্তু এই ছবিতে ভালো অভিনয় করলেও তেমন পরিচিতি পাননি।

চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগের খোঁজে দিল্লি থেকে মুম্বাইয়ে পাড়ি দেয়ার সময়টা মোটেও মসৃণ ছিল না। এক ঘরে পাঁচ জনের সাথে থাকতেন, কাজ মিলতো কম। একবার এক সহ পরিচালক ছিঁড়েই ফেলেন তাঁর ছবি। খাবার টাকাও ছিল না হাতে। একদিনে তিনটি কাজও হারিয়েছেন। কিন্তু দমে যাননি। নিজের মেধা উপর ছিল প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস।

8YOs2Tv.jpg


রাম গোপাল ভারমাকে বিদ্রোহী পরিচালক মানেন মনোজ; Photo:IMDb

পরিচালকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা

'চার্ম' নিয়ে জন্মাননি, তাই প্রতিভাই ছিল সম্বল। কিন্তু রামু, অনুরাগ, হানসাল, শেখর কাপুরদের মত নির্মাতা ছাড়া কি জ্বলে উঠতে পারতেন?

এই প্রশ্নের উত্তরে অকপট মনোজ,

'না। ওদের সাহায্য ছাড়া প্রমাণ করতে পারতাম না নিজেকে। আমার সৌভাগ্য যে একসময়ে ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি।'

প্রথম বড় ব্রেক পান 'সত্য'তেই। তার সুবাদেই কাজ পেতে থাকেন, প্রমাণ করে ঘরে নিয়ে আসেন পুরস্কারও। এর আগে গোবিন্দ নিহালানির 'দ্রোহকাল' (১৯৯৪) এ মাত্র এক মিনিট দেখা যায় তাঁকে। ব্যান্ডিট কুইনেও ছোট চরিত্র করেছিলেন। স্বভাবতই নজরে আসেননি।

ফুলন দেবীর বায়োপিকে মান সিং চরিত্র পর্দায় না কাঁপালেও হানসাল মেহতার সাথে কাজের সুযোগ তৈরি করে। মাঝে টেলিভিশনে 'কলাকার' ও 'ইমতিহান' নামক দুটি সিরিজে অভিনয় করেন। এরপর মহেশ ভাটের নির্মাণ সংস্থা থেকে টিভি সিরিজ 'স্বঅভিমান', ছবি 'দাস্তাক' ও 'তামান্না'য় নামেমাত্র পারিশ্রমিকে শ্রম দেন।

'সত্য'র পরিচালক রাম গোপাল ভার্মার সাথে মনোজের প্রথম দেখা 'দাউদ' ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জের ধরে। মনোজের চেহারা মনে না থাকলেও ব্যান্ডিট কুইনে মনোজের অভিনীত চরিত্রটি রামুর মনে দাগ কেটেছিল। রামু প্রথম দেখাতে বিশ্বাসই করতে চাননি যে ব্যান্ডেট কুইনের সেই চরিত্রটি মনোজের করা। কারণ সেই চরিত্রের সাথে মনোজের আসল চেহারার কোন মিলই ছিল না। খেয়ালি রামু সরাসরি মনোজকে বলে বসেন, তোমাকে আমি অনেক দিন ধরেই খুঁজছি। সামনে তোমাকে নিয়ে একটি বড় পরিধির ছবি করবো। "দাউদ" এর কথা ভুলে যাও।

এত বড় পরিচালক মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছেন কিনা এই ভয়ে অর্থের অভাবে থাকা মনোজ রামুকে বলেন, আগে দাউদ শেষ করি তারপরে না হয় পরের ছবিটি করা যাবে। রামু মনোজকে দেয়া তার কথা রেখেছিলেন। রামুর 'দাউদ' (১৯৯৭) এ পার্শ্বচরিত্রই তারকা হওয়ার বীজ বুনে দেয় মানোজের মনে।

এরপর শুরু হয় 'সত্য' নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ। মনোজের মাধ্যমেই রামুর দলে লেখক হিসেবে নাম লেখান আরেক বিখ্যাত নির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপ। জমে উঠে রামু-মনোজ-অনুরাগের রসায়ন। অনুরাগ কাশ্যপের কলমের কালিতেই উঠে আসে 'সত্য'র ভিকু মাহাত্রে। এই চরিত্রে মনোজ ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে ভাবার অবকাশই পাননি রামু-অনুরাগ।

সত্য'র বিধ্বংসী এই ভূমিকাই মনোজকে এনে দেয় জাতীয় পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার সহ বহু সম্মাননা। পরের বছর রামু তাঁকে নিয়ে আসেন আরও ভিন্ন দুটি চরিত্রে- 'শূল' এ সৎ ও নির্যাতিত পুলিশ অফিসার এবং 'কৌন' এ আপাত বিরক্তিকর ব্যক্তি। দ্বিতীয়টি বক্স অফিসে আলোড়ন না তুললেও 'শূল' এর সমর প্রতাপ সিং জয় করে কোটি দর্শকের হৃদয়। পাশাপাশি রাভিনা ট্যান্ডনের সাথে তার রসায়নও দর্শকদের বিস্মিত করে।

এটি উল্লেখ করা যেতে পারে, 'শূল' এবং 'কৌন' দুটি ছবিই অনুরাগের লেখা। রামু-অনুরাগ-মনোজের টানা সাফল্যের একটি ঐতিহাসিক মূল্য আছে। নাচ-গান আর ফাইট ভিত্তিক বলিউডের ফর্মুলা ছবির বাইরে গিয়ে তাদের এই সফলতা অনেকের কাছে ধাক্কার মতো ছিল। উল্টো দিকে কে কে মেনন, নওয়াজউদ্দিন, পঙ্কজ ত্রিপাঠির মতো চরিত্রাভিনেতারা মনোজের সফতায় হয়েছিলেন অনুপ্রাণিত। আজ বলিউডে 'ব্যতিক্রমধর্মী' ভালো গল্প আর অভিনয়ের যে জোয়ার বইছে তার শুরুটা যে এই ত্রয়ীর হাত ধরেই হয়েছিল এটি অনেকেই বিনা তর্কে মেনে নেন।

kn2k9fI.jpg


ভিকু মাহাত্রে আর মনোজ যেন সমার্থক; Photo:U me and films

সাফল্যের খিদেটা আগেই ছিল, মুম্বাইয়ে নিজের বাড়ি কেনার পরই বুঝলেন ফেরার পথ একেবারে বন্ধ। নিয়তি এখানেই।

তেলেগু ইন্ডাস্ট্রিতেও যাত্রা শুরু করেন 'প্রেম কথা' (১৯৯৯) দিয়ে। মিলেনিয়ামের শুরুতে টাবুর বিপরীতে 'দিল মে মাত লে ইয়ার', 'ঘাট' তেমন আলোচনায় আসেনি। তবে রাকেশ ওম প্রকাশ মেহরার 'আকস' (২০০১) ফের পথে নিয়ে আসে তাঁকে। অমিতাভের সাথে তাল মিলিয়ে চমকে দেন বলিউডকে। মহারাজা বিজেন্দ্র সিং রূপে 'জুবাইদা'তেও ছিলেন সফল।

রাম গোপালের 'রোড' (২০০২) এ সিরিয়াল কিলার, 'পিঞ্জর'(২০০৩) এ রশিদ, জেপি দত্তের 'এলওসি' ক্রমাগতই তাঁর মেধার প্রমাণ সামনে আনে। পিঞ্জরের কল্যাণে মেলে দ্বিতীয় জাতীয় পুরস্কারও।

এরপরের কয়েক বছর সুঅভিনয় করলেও আয়ের দিকে পিছিয়ে থাকে তাঁর ছবিগুলো। 'জাগো', 'হানান', 'ইন্তেকাম', 'বেওয়াফা', 'ফারেব', 'স্বামী', 'জুগাড়' ছিল অক্স অফিস ব্যর্থ। তবে শাহরুখ-প্রীতির 'বীর জারা' (২০০৪) তে রাজা সারাজি অল্প সুবাতাস নিয়ে আসে।

মাঝে 'দাস কাহানিয়া' (২০০৭), '১৯৭১' (২০০৭) এ নন্দিত হলেও লাভ হয়নি। তবে ২০১০ সালে প্রকাশ ঝার 'রাজনীতি' আরও একবার উজ্জ্বল আলো ফেলে তাঁর প্রতিভায়। স্বার্থান্বেষী রাজনীতিক প্রতাপের উত্তাপ ফের টের পায় বলিউড। প্রকাশের সাথে পরে 'চক্রব্যূহ' (২০১২), 'অরক্ষণ' (২০১১), 'সত্যাগ্রহ' (২০১৩) তেও কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন।

ওয়াসিপুরের দুর্ধর্ষ গ্যাংস্টার

মনোজের কোন চরিত্রটা দর্শকের মনে গেঁথে থাকবে? ভিকু, সমর প্রতাপ, রামচন্দ্র নাকি সর্দার খান?

হিসেবটা ভারি গোলমেলে! কিন্তু 'গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর' এ কাজ করাটা আকস্মিকই ছিল তাঁর জন্য। এর আগে রামুর ছায়াতলে অনুরাগের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলেও বন্ধুত্বটা গভীর হয়নি। মাঝের সময়টায় ভুল বোঝাবোঝির কারণে অনুরাগের সাথে বেড়ে যায় দুরত্ব।

'গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর' এর চিত্রনাট্য গুছিয়ে যখন কাশ্যপ প্রস্তাব দিলেন, ফিরিয়ে দেবার কথা ভাবেননি একটুও। সর্দার খানের চরিত্রের জন্য খেটেছেন প্রচুর। আপাদমস্তক নেতিবাচকে মোড়া চরিত্রকে পছন্দসই করা কঠিনই বটে। টানা ১০ দিনের কর্মশালার পর ১৫ দিন স্বেচ্ছাবন্দিও ছিলেন এর জন্য।

ঝাড়খণ্ডের রক্ত জল করা সেই গ্যাংস্টার রাতারাতি আবার প্রাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসে মনোজকে। বোদ্ধা মহল থেকে শুরু করে একদম সাধারণ দর্শক পর্যন্ত মনোজের অভিনয় প্রতিভায় মোহাচ্ছন্ন হন। প্রত্যাশার পারদও বেড়ে যায়।

ceUieoT.jpg


কন্যা আভা নায়লা বাজপাই আর স্ত্রী শাবানা রাজা নেহাকে নিয়েই সুখী এই তারকা; Photo:hamara photos

এরপর 'স্পেশাল ২৬', 'শুটআউট এট ওয়াডালা', 'তেভার', 'বাঘি ২', 'সত্যমেভ জয়তে', 'আইয়ারি', 'নাম শাবানা' প্রভৃতি বাণিজ্যিক ছবিতেও জনপ্রিয়তা পান স্বল্প দিনেই।

'বুধিয়া সিং: বর্ণ টু রান' (২০১৬) এ বিরচা সিং রূপে, 'লাভ সোনিয়া'য় (২০১৮) পতিতালয় মালিক হিসেবে স্বল্প ক্ষণের জন্য দর্শন মেলে তাঁর। নতুন করে স্বজাত চেনান অ্যামাজন প্রাইম সিরিজ 'দ্য ফ্যামিলি ম্যান' দিয়ে। তবে মনোজ স্বীকার করেন জীবনের প্রয়োজনে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও অভিনয়ের আসল তৃপ্তি পেয়েছেন 'আলীগড়', 'গালি গুলিয়া' আর 'ভোসলে' দিয়েই।

অনুপম মনোজ

'আলীগড়' এ ৬৪ বছর বয়সী বিষণ্ণ মারাঠি অধ্যাপক রামচন্দ্র সিরাজ কিংবা 'গালি গুলিয়া'র আপন গোলকধাঁধায় আটকে পড়া কুদ্দুস- প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকে। শুটিংয়ের পরে অবশ্য কিছুই মনে রাখেন না। তাই দুর্ধর্ষ ভিকু অথবা তোয়ালে জড়ানো সর্দার খানকে দেখলে বিস্মিত হন নিজেই।

ক্যারিয়ারের প্রথম ভাগে নেতিবাচক অথবা ভীষণ ডার্ক চরিত্রে কাজ করতেন। গায়ে সিলমোহর চেপেও যেতো প্রায়। ব্যক্তি আর পেশাদারি জীবনকে আলাদা করতে শিখেছেন 'শূল' এর পর। বিষণ্ণতার শিকারও হয়েছিলেন সমর প্রতাপ সিং চরিত্রে কাজ করে।

সিরাসকে অনুভবের জন্য রাতদিন মারাঠি শিখেছেন, চর্চা করেছেন সাহিত্য। 'জুবেইদা'র স্বার্থে শিখেছেন ঘোড়ায় আরোহণ, পোলো; মহারাজা বিজেন্দ্র সিংয়ের আত্মম্ভর ব্যক্তিত্বর জন্য বিস্তর প্রস্তুতিও নিয়েছেন।

iK9em5L.jpg


সর্দার খান ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের মাইলফলক; Photo: IMDb

স্বজনপোষণে মত

'ইন্ডাস্ট্রিতে একজন মনোজ বাজপেয়ীর উত্থানই সিস্টেমকে চ্যালেঞ্জ করে।' বলিউডের নেপোটিজম বিতর্কে বিক্ষিপ্ত রাগকে পাত্তা দেননা সময়ের অন্যতম সেরা এই অভিনেতা। জানান, 'স্টারকিডদের সাথে আমার প্রতিযোগিতা নেই। আমার প্রতিযোগী ইরফান, নওয়াজউদ্দিন, রাজকুমার এরা। রণবীর সিং বা কাপুর নয়।'

'বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় বাদ দিয়ে বাকি বিষয়গুলোর উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সুদর্শন নায়কদের নিয়ে যেই ক্রেজ সেটা আমাদের মতো অভিনেতাকে নিয়ে হবে না।'' পরিবর্তনের এজেন্ট হিসেবে দাবি করেন, তাই অর্থের প্রতি লোভটাও কম।

'সোনচিড়িয়া' (২০১৯) তে সহ অভিনেতা হিসেবে পেয়েছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুতকে। তাঁর মৃত্যুতে শোকার্ত মনোজ ক্ষোভটা উগড়ে দেন এভাবে,

'বিশ বছর ধরেই আমি বলে আসছি, বলিউডের চিন্তাধারা কীরকম একটা মাঝারি গোছের। আসলে গোটা দেশই এই ধারণা পোষণ করে। আমাদের মূল্যবোধ আর চিন্তাধারাতেই কোথাও একটা বিরাট ফাঁকি রয়েছে! প্রতিভা দেখলেই আমরা হয় তা অবজ্ঞা করি কিংবা পিষে ফেলি। এই ঘৃণ্য চিন্তার জন্য আমরা এগোই না।'

তাহলে বলিউডে টিকতে গেলে কী প্রয়োজন? প্রতিভা, ভাগ্য না লবিং? হতাশ সুরে জানান,

'গণ্ডারের চামড়া বলে টিকে রয়েছি ইন্ডাস্ট্রিতে। ছোট বাজেটের সিনেমাগুলির সেভাবে প্রচারই করা হয় না বলিউডে। আর কন্টেন্টের জন্য যদিও বা হলে ভালো চলতে শুরু করে, তাহলে পরক্ষণেই সিনেমা হল থেকে সেগুলো তুলে দেওয়া হয়।'

wjLj16S.jpg


'দ্য ফ্যামিলি ম্যান' দিয়ে ওয়েব দুনিয়ায় অভিষেক ঘটে ২০১৯ এ; Photo: India West

প্রসঙ্গ সূত্রে 'ভোসলে', 'আলীগড়', 'গালি গুলিয়া'র মতো আন্তর্জাতিক পুরস্কার জয়ী ছবির কথাই তুলে ধরেন।

'দর্শক উন্নত হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় বিপণনের লোকগুলো উদার না। তাদের কাছে একটা ভালো সিনেমা বিক্রি করা খুব কঠিন।' নিরাশ সুরেই বলেন রিলের সর্দার।

অভিনেতাই তাঁর আসল পরিচয়। তবে এর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলের দাবিও আছে। অভিনয়কে জলভাত বলে মনে করা হয় এখানে, এ তাঁর চিরন্তন আক্ষেপ। বলিউড এখনও তাঁর বিশ শতাংশও ব্যবহার করতে পারেনি বলেই দাবি করেন।

guzszQ8.jpg


সিরাসের চরিত্রের জন্য মারাঠি সাহিত্য চর্চাও করেন দীর্ঘদিন; Photos: Reddit

অগ্রজদের সাধনা

নাসিরউদ্দিন শাহ, ওম পুরিকে নমস্য মেনেই ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। ব্যক্তি জীবনেও তাঁদেরকেই অনুসরণ করেন। প্রথাগত অভিনেতার বাইরের জীবন নিয়ে আফসোস ছিল নাসিরউদ্দিনের, প্রাপ্য মর্যাদা পাননি বলেও অভিমান আছে তাঁর। সেখান থেকেই শিক্ষাটা পেয়েছেন ধ্যানী মনোজ। সামলাতে শিখেছেন আত্মক্ষোভ আর রাগকে।

ভারসেটাইল অভিনেতা হিসেবে নাম করেছেন। এর পেছনের কারণ একটাই, এক স্বাদে অভ্যস্ত হতে চান না। মনোজের বলিউড আরাধনায় আনন্দ জুগিয়েছে দিলিপ কুমারের 'দেবদাস' এবং 'মুঘল-ই-আজম' ।

পরিশ্রমী হিসেবে সুনাম থাকলেও সলাজ হেসে নিজেকে অলস দাবি করেন মনোজ। ড্রাইভিং পছন্দ করেন না মোটেই, মিতব্যয়ী জীবনেই অভ্যস্ত। এর পেছনে পারিবারিক শিক্ষা আর সংগ্রামের ইতিহাসই প্রেরণা জাগায়।

পড়ুয়া হিসেবে নাম আছে তাঁর। সামাজিক মাধ্যম আর ডিজিটাল গেজেটে একদমই অভ্যস্ত নন এই সাহিত্যপ্রেমী। দৈনিক শত শত ইমেইল কিন্তু প্রিন্ট করেই পড়েন তিনি।

A0jDBpE.jpg


থিয়েটার আর বেতারে একত্রে কাজ করেছেন; Photo: Instagram

বাস্তবতাও মানেন মনোজ

বিহারে ইংরেজির চল একেবারেই ছিল না। ভোজপুরি অথবা হিন্দিতেই দৈনন্দিন কথা চলতো। দিল্লী ইউনিভার্সিটিতে পড়তে এসে তাই নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে হলো এই অভিনেতাকে। ইংলিশ শেখার তাগিদে পরীক্ষার খাতা ভরলেন সদ্য জানা ভাষায়, বন্ধুত্ব করলেন কেনিয়া, নাইজেরিয়া থেকে আগত শিক্ষার্থীদের সাথে। গ্রেডের চাইতে নতুন ভাষার দুনিয়াকে জানতেই তৎপর ছিলেন তখন।

বাস্তব জীবনেও সম্পূর্ণ 'ফ্যামিলি ম্যান' তিনি। ২০০৬ সালে বিয়ে করেন 'কারিব' অভিনেত্রী নেহা শাবানা রাজাকে। শুটিংয়ের পর ঘরে ফিরে শরীরচর্চা, পূজা আর পরিবারকে সময় দিতেই ভালোবাসেন। ইন্ডাস্ট্রি পার্টির প্রতি বড্ড অনীহা তাঁর। অন্যদিকে ঘরের ছোট বড় কাজেও নেই ক্লান্তি। বাজার করা, স্ত্রী- সন্তানকে নিয়ে কেনাকাটা করতেই ভালোবাসেন।

Zq8P933.jpg


নিজ সংস্থার 'ভোসলে' হয়েছে সমালোচক নন্দিত ; Photo:Hollywood Reporter

স্ত্রী শাবানা সবসময়ই সাহস যোগান তাঁকে। তাঁর উদারতা, সমালোচক দৃষ্টিকোণ বরাবরই নিজেকে আবিস্কারে সাহায্য করে। তাঁর কল্যাণেই দায়িত্বশীল হতে শিখেছেন, কন্যা নায়লাও শিখিয়েছে ধৈর্য।

বলিউড সংস্কৃতি পরিবর্তনের তাগাদা দেন দুই দশকের সেরা এই অভিনেতা

'বলিউড এমন সব প্রতিভাকে পিষে নষ্ট করেছে যারা আজ অন্য দেশে জন্মালে নিঃসন্দেহে খ্যাতনামা অভিনেতা হতে পারতেন! বলিউড এই অভ্যাস ত্যাগ না করলে, খুব শিগগিরই মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা হারিয়ে ফেলবে।'
 

Users who are viewing this thread

Back
Top