What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সমকামিতা: বিশ্বাস, বাস্তবতা ও বোঝার জায়গা (১ম পর্ব) (1 Viewer)

smsh32

Banned
Joined
Jul 4, 2018
Threads
12
Messages
108
Credits
2,246
ইসলামে আমাদের বিশ্বাসের জায়গাটা কোথায়? আমরা প্রথমত এক আল্লাহ্‌তে বিশ্বাস করি। অতঃপর এই বিশ্বাস রাখি যে মুহাম্মাদ (সা.) হলেন আল্লাহ্‌র পাঠানো শেষ নবী ও রাসূল এবং কুরআন হোলো আল্লাহ্‌র কালাম বা বাণী। অতএব কুরআন ও আল্লাহ্‌র রাসূল (সা.) যা বলে গেছেন - যা হাদীসে সংকলিত হয়েছে - সেসবে আল্লাহ্‌র দেয়া জ্ঞান মানুষের কাছে এসেছে। কিছু মানুষ হাদীসকে বিভিন্ন পরিসরে বাদ দিতে চান - সেই আলোচনায় আপাতত যাওয়া সম্ভব নয়। সুন্নী মুসলিম হিসেবে আমি হাদীস - যদি তা অথেনটিক হয় - তাহলে সেটিকে জ্ঞানের উৎস বলে বিশ্বাস করি। কেন সেটি জ্ঞানের উৎস এবং হাদীসের অথেন্টিসিটি কীভাবে নির্ণীত হয় সেটি অনেক বড় আলোচনা - আলাদা ভাবে করতে হবে - এখানে নয়।



কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন টেক্সট দিয়ে এটা স্পষ্টতই বোঝা যায় যে আল্লাহ্‌ সমকামিতাকে নিষিদ্ধ করেছেন। ইন ফ্যাক্ট স্বামী স্ত্রীর হেটারোজেনাস সম্পর্কেও অ্যানাল সেক্সকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে - যা সমকামী এবং বিশেষ করে গে সম্পর্কের একটি প্রধান যৌনাচরণ। সুনান আবু দাউদের একটি হাদীসে বলা হয়েছে আল্লাহ্‌ এমন ব্যক্তির দিকে তাকাবেন না যে কোনও পুরুষ বা নারীর সাথে অ্যানাল সেক্স করে। বহু সুন্নী 'আলেম মনে করেন যে কোনো স্বামী যদি জোরপূর্বক তার স্ত্রীর সাথে অ্যানাল সেক্স করতে চান এবং এই আচরণ থেকে বিরত না হন তাহলে সেই স্ত্রী ডিভোর্স চাইতে পারবেন কোর্টে। ইবন তাইমিয়্যাহ - পূর্বেকার একজন বিখ্যাত সুন্নী স্কলার - তার ফাতওয়াতেও এরকম ইঙ্গিত দিয়েছেন।



যৌনাচরণের ব্যাপারগুলোতে ইসলাম কী বলে সে ব্যাপারে ভালো আলোচনা ও অনুধাবন থাকা জরুরি কেননা তা একটি সত্যিকারের আলোচনার পরিবেশ তৈরি করবে এবং ব্যাপারগুলোকে বুঝতেও সাহায্য করবে। যেমন এটা চিন্তার স্কোপ রয়েছে যে অ্যানাল সেক্সকে নিষিদ্ধ করার কারণ কি ইন্টারকোর্সের অস্বাভাবিকতাকে ঠেকানো নাকি সমকামিতামূলক আচরণকেই পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার একটি সাধারণ প্রিভেন্টিভ পদক্ষেপ? ইন্টারকোর্সের অস্বাভাবিকতা বলতে বোঝাচ্ছি সেটি - যে ইন্টারকোর্স প্রজননের জন্য স্বাভাবিক নয় - প্রজননের জন্য স্বাভাবিক আচরণ হোলো অবশ্যই ভ্যাজাইনাতে পিনাসের ইনসারশন। যদি প্রজননে সাহায্য করে না এমন ইন্টারকোর্সকেই ইসলাম নিষিদ্ধ করে থাকে তাহলে ইন্টরেস্টিংলি ইসলাম যেন এখানে বিবর্তনবাদ বা ইভল্যুশনের একটি নীতিকে ধারণ করে রেখেছে - জৈবিক কার্যকলাপের মূল কারণ হোলো প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষা করে চলা - প্রজননের মাধ্যমে।



ইন্টারকোর্সের ব্যাপারে ইসলাম যে বিধিনিষেধ দিয়েছে তার কারণ এটা হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে - যে কারণে বহু 'আলেম রয়েছেন যারা মাস্টারবেশন বা ওরাল সেক্সকে অ্যালাউ করেন না। তবে এ দুটি যৌনাচরণের ব্যাপারে আলেমরা ততটা একমত নন। এমন আলেম অনেকেই রয়েছেন যারা এদের কোনো একটিকে অথবা দুটিকেই অ্যালাউ করেছেন। ওরাল সেক্সের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার প্রধান টেক্সচুয়াল এভিডেন্স হিসেবে দেখানো হয় সেসব হাদীসকে যেগুলোতে আল্লাহ্‌র রাসূল (সা.) ও তার স্ত্রীরা একে অপরের যৌনাঙ্গের দিকে তাকাতেন না সেরকম ইঙ্গিত দেয়া আছে। আবার যারা ওরাল সেক্সকে বৈধ মনে করেন তারা এ হাদীসকে ব্যাখ্যা করেন নবীর (সা.) নবীসুলভ উচ্চাবস্থানকে - এটিকে সাধারণ কোনো আইন মনে করেন না তারা। মাস্টারবেশন বা হস্তমৈথুনকে বহু স্কলার প্রয়োজনে বৈধতা দিয়েছেন কেননা তারা মনে করেন সেটা না করা হলে বহু মানুষ এমন রয়েছে যারা - নিজেদের যৌন চাহিদার কারণে ও পরিস্থিতির তাগিদে - আরও গর্হিত যৌন অপরাধে জড়িয়ে যাবে।



লক্ষ্যণীয় আমার আলোচনা এটা না যে অ্যানাল সেক্স, ওরাল সেক্স বা মাস্টারবেশন বৈধ কীনা - এরকম কোনো সিদ্ধান্ত আমি দিচ্ছি না। আমি কেবল ইসলামের আলোচনার পরিসর নিয়ে আইডিয়া দিচ্ছি এবং বোঝানোর চেষ্টা করছি যৌনাচরণগত সকল বিষয়েই আলোচনাগুলো এই আঙ্গিক ও চিন্তার সাপেক্ষে ব্যাখ্যা হওয়া দরকার।



ব্যাখ্যার কথা আসাতে এবার দ্বিতীয় পয়েন্টে যাওয়া যাক। সমকামিতা ইসলামে হারাম করা হয়েছে এটা আমি মনে করি এবং যেহেতু আমি মুসলিম তাই আমি নিজেও একে হারাম হিসেবেই দেখি - নিজের জন্য, অন্যের জন্য, সবার জন্য। এটা মাথায় রাখা জরুরি। কেননা ব্যক্তি আমার কোনো সমকামী আকর্ষণ নেই পুরুষের প্রতি। সুতরাং যার আছে এই বিষয়ে তার স্ট্রাগলটা আমার পক্ষে বোঝা কষ্টকর। অবশ্যই আমি ব্যাপারটা তার জন্য হালাল করে দিতে পারছি না, অন্তত আমার জ্ঞানে তো নয়। কিন্তু তার জন্য এটি যে একটি কষ্ট সেটি তো আমি ফেলে দিতে পারি না। আলোচনাটা বিশ্রী হয়ে যায় যখন এই সম্ভাবনাটাকে আমি মাথায় না রেখে বিভিন্ন রকম কুতর্ক দিয়ে আমার বিশ্বাসকে ব্যক্তিগত ভাবে বা সামষ্টিক ভাবে জাস্টিফাই করতে যাই। কারণ এক্ষেত্রে আমি দুটো ভুল করছি। এক, আমার বিশ্বাসকে দুর্বল দেখাচ্ছি - নিজের ও অন্যের কাছে - যেন আমি মনে করছি শুধু বিশ্বাস হিসেবে এটা যথেষ্ট নয়, আমার কিছু বিতার্কিক শক্ত যুক্তি দরকার একে শক্তি দিতে। দুই, আমার আলোচনা বাস্তবতা ও জ্ঞান বিবর্জিত হয়ে অনেক সময়ই শিশুতোষ হয়ে যাচ্ছে।



একটা উদাহরণ দেয়া যাক। যারা সমকামিতা ও সমকামীদের বিষোদগার করার মাধ্যমে সমকামিতা হারাম হওয়ার ব্যাপারটাকে প্রমাণ করতে চাচ্ছেন তারা প্রায়ই একটি ইংলিশ নিউজ আউটলেটের একটি নিউজ খুব শেয়ার দিচ্ছেন যেটাতে বলা হচ্ছে যে গবেষণায় পাওয়া গেছে যে গে জিন বলে কিছু নেই - অর্থাৎ সমকামিতা মানুষের জন্মগত নয়, বরং একে মানুষ পরে অ্যাকোয়ার করে। এটাকে এখন যারা সমকামিতার বিরোধিতা করছেন তারা এই প্রমাণ হিসেবে দেখাচ্ছেন যে সমকামিতা মানুষের একটি 'মানসিক যৌন বিকৃতি' যা সে স্বাভাবিক যৌনতাকে উপেক্ষা করে বেছে নিয়েছে। এখানে ঠিক আগের প্যারায় বর্ণিত দুটো ভুল করা হচ্ছে। প্রথমত, ইসলামিক একটি বিশ্বাসকে অ-ইসলামীয় একটি উৎস থেকে জাস্টিফাই করা হচ্ছে। এখন এই অ-ইসলামীয় উৎসই যদি আপনার উৎস হয় সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনাকে এই স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখতে হবে। এই উৎস থেকে যদি পরে এই ব্যাপারে সংশোধনী আসে বা অন্য কোনো ব্যাপারে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য দেয়া হয় যা ইসলামের কোনো শিক্ষার বিরুদ্ধে যায় তাহলে কি আপনি আপনার ইসলামিক বিশ্বাসকে সেই উৎস অনুযায়ী বদলে নেবেন? না করলে আপনি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড করছেন আর করলে আপনি ইসলামের শিক্ষাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছেন। কোনোটিই জরুরি নয় যদি আপনি আপনার ফেইথের ব্যাপারে সত্যিই অতটা সৎ এবং দৃঢ় হয়ে থাকেন। একবার যখন আপনি আল্লাহ্‌ ও তার নবীর শিক্ষার ওপর বিশ্বাস বা ঈমান আনলেন তখন আপনি এসব সোর্সকে কেন আপনার পক্ষে বা বিপক্ষে মূল উৎস হিসেবে কাজ করতে দেবেন?



তার মানে এই না যে আপনি এই সোর্সগুলোর আলোকে এই আলোচনাটাকে হেল্প করতে পারেন না। এবং এখানেই দ্বিতীয় ভুলের জায়গাটা। আপনি এরকম একটি নিউজ আউটলেটের নিউজকে ব্যবহার করে আলোচনাটাকে খুবই অবৈজ্ঞানিকসুলভ ভাবে অ্যাপ্রোচ করছেন এবং আপনার এই বিজ্ঞান ব্যর্থতাকে মানুষ আপনার ধর্মের ব্যর্থতা এবং অন্যের প্রতি আপনার ইনসেনসিটিভিটি হিসেবেই দেখবে। বিজ্ঞানের কোনো বিষয়কে এভাবে কেবল একটি নিউজ দিয়ে প্রমাণ করা যায় না। পৃথিবীর সকল ভালো বিজ্ঞান বোঝা মানুষ আপনার এই কাজকে শিশুতোষ মনে করবে - হোক সে বিজ্ঞান বোঝা মানুষ মুসলিম বা অমুসলিম। কেননা ধর্ম যেটাই হোক না কেন যারা বিজ্ঞানকে ভালো করে বোঝে এবং এর গতিপ্রকৃতিকে বোঝে তারা জানে যে আপনি আপনার একটি ইথিকাল ইস্যুকে যদি বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করতে চান তাহলে এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক পরিমন্ডলে যত আলোচনা হয়েছে তার সবগুলোকে আপনার জ্ঞানগত দক্ষতা দিয়ে বুঝতে হবে এবং আপনার আলোচনায় সেই সার্বিক জ্ঞানের ইনসাফ থাকা লাগবে। যে বিষয়ে আপনার পড়াশোনা নেই সেই বিষয়ের একটি গবেষণার নিউজ ব্যবহার করে আপনি যে আপনার পয়েন্টকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন সেটা খুবই অবৈজ্ঞানিক কাঁচা কাজ।



একটি উদাহরণ দিই। কদিন আগে আমি একটি বিতর্ক দেখলাম। বিতর্কটির বিষয় ছিলো এই যে মহিলাদের আলাদা ধরণের কোনো মস্তিষ্ক নেই (There's no female brain)। এই প্রস্তাবের পক্ষে ছিলেন দুজন এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ - দুজন নিউরোসায়েন্টিস্ট। অপর পক্ষে ছিলেন - হ্যাঁ - আরও দুজন নিউরোসায়েন্টিস্ট। খেয়াল করুন যে চারজনই একই ফিল্ডের গবেষক পর্যায়ের মানুষ হওয়ার পরও তারা এ বিষয়ে বিতর্কে পক্ষে ও বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।



আপনি যদি ইতোমধ্যে চিন্তা করে থাকেন তাহলে বুঝবেন যে পক্ষের দুজন নিউরোসায়েন্টিস্ট ছিলেন দুজন ফেমিনিস্ট। তারা ফিমেইল ব্রেইন নেই এ কথাটা নিউরোসায়েন্স ব্যবহার করে একারণেই প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর যে এর ইমপ্লিকেশন হোলো যে পুরুষ ও নারীকে আলাদা করে দেখার ও সে অনুযায়ী নারীর সাথে বৈষম্য করার যে ভিত্তি সেটাকে এই আলোচনা দিয়ে ভেঙে ফেলা যাবে। যারা এই বক্তব্যের বিপক্ষে ছিলেন তারা কিন্তু আবার অ্যান্টি-ফেমিনিস্ট নন। তাদের বক্তব্যের মূল কথা হোলো যে স্পষ্টতই মহিলাদের আলাদা ধরণের ব্রেইন রয়েছে এবং সেই আলাদা ধরণের ব্রেইন মহিলাদের প্রজনন ও শিশু লালন পালনের যে বৈশিষ্ট্য সেটাকে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এবং মহিলাদের ব্রেইনের আলাদা হওয়ার এই ব্যাপারটাকে অস্বীকার করা হলে মহিলাদেরই বহু মনোদৈহিক সমস্যাকে অস্বীকার করা হবে যা কাজ করবে বুমেরাঙের মতো। এর মানে এই নয় যে তারা অস্বীকার করেন যে নারীদের সাথে বৈষম্য হয় এবং এই বৈষম্য দূর করা উচিৎ।



আপনাদের মনে হতে পারে আমি এ দুদলের প্রস্তাব আপনাদের কাছে সুন্দর করে বলতে পারলাম অতএব আমি বিতর্কটা খুব ভালো বুঝেছি। না, তা নয়। আমি প্রস্তাবগুলোই মূলত বুঝেছি কিন্তু নিউরোসায়েন্সের যে টেকনিকাল জ্ঞান নিয়ে তারা মূল আলোচনাটা সেরেছেন তার আমি খুব অল্পই ধরতে পেরেছি - কারণ খুবই সহজ - আমার নিউরোসায়েন্সের কোনো জ্ঞান নেই।



কিন্তু আমাদের বর্তমান সময়ের ক্রাইসিসটা খেয়াল করুন। বহু ইসলামিস্ট আছেন যারা ফেমিনিজমের বিরোধিতা করেন কেননা কোনো কারণে তাদের ধারণা হয়েছে ফেমিনিজম মাত্রই ইসলামিক মৌলিক চিন্তাধারণাকে প্রতিহত করার একটি পশ্চিমা অপকৌশলমাত্র। তারা যদি এই বিতর্ককে নিউজ আকারে পেতেন - তারা কী করতেন? তারা এই টপিকের বিরুদ্ধে যারা রয়েছেন তাদের মূল বক্তব্যকে তাদের রেফারেন্স দিয়ে মোটা দাগে উপস্থাপন করতেন - যেন বিজ্ঞান শুধু এটুকুই বলছে। কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিজ্ঞান শুধু এটুকুই বলছে না আর ঐ দুজনও তাদের কনক্লুশন ইসলামিস্টদের জন্য তৈরি করেননি বা ফেমিনিজমের বিরোধিতা করার জন্যও করেননি। সুতরাং তাদের বৈজ্ঞানিক কথাকে আপনি এমনভাবে ব্যবহার করছেন যা তারা সেভাবে বলেননি। তেমনটি করলে আপনি বিজ্ঞানকে ব্যবহারের একটি স্থূল স্ট্যান্ডার্ড ও অপকৌশল অবলম্বন করলেন মাত্র।



এই ভুল আপনি কয়েকটি লেয়ারে বা স্তরে করছেন। আপনি বিজ্ঞানকে যেমন ভুল বুঝছেন - যেমনটা আমি আগের প্যারায় বোঝালাম - ঠিক তেমনি আপনি ফেমিনিজম এমনকি ইসলামকেও ভুল বুঝছেন। এই বিভিন্ন স্তরের যে ভুল বোঝাবুঝি তা থেকে যে সংকীর্ণতা আপনি দেখাচ্ছেন তা শেষমেষ ইসলামের গায়ে এসে লাগছে।



আপনার মৌলিক ভুলটা হোলো যে আপনি আপনার বিশ্বাসের ব্যাপারে জ্ঞানগত ভাবে কনফিডেন্ট না। এই কনফিডেন্সের অভাব থেকে ধর্মকে টিকিয়ে রাখার জন্য আপনি প্রতিটি ইজমকে আপনার সাক্ষাৎ শত্রু হিসেবে দেখছেন। আপনি মনে করছেন প্রতিটি চিন্তাই একেকটি ধর্ম এবং সে ধর্মগুলো আপনার ধর্মকে ছোট করতে উঠে পড়ে লেগেছে। যেহেতু আপনার বিরুদ্ধপক্ষেও এরকম সংকীর্ণতাওয়ালা মানুষ আছে - আপনি তাদের উপস্থিতিকে আপনার এই চিন্তার সমর্থন হিসেবে দেখছেন। অর্থাৎ দুদল জ্ঞানহীন মানুষ সংকীর্ণ চিন্তা থেকে একে অপরের বিরোধিতা করার স্বার্থে জ্ঞানকাঠামোকে বোঝার ও একে সঠিকভাবে ব্যবহার করার কাজটাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে যাচ্ছে। আপনি ফেমিনিজমকে একটি জ্ঞানপ্রস্তাব হিসেবে না দেখে প্রথমেই একে একটি বিরুদ্ধপক্ষ হিসেবে দেখে একে না জেনেই এর ইমেজ নষ্ট করার কৌশল করছেন। অথচ আপনার উচিৎ ছিলো প্রথমত ফেমিনিজম জিনিসটাকে এর পূর্ণ দার্শনিক কাঠামো ও ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় নিয়ে জিনিসটা কী সেটা বোঝা। এরপর এর কোন জায়গাগুলোকে সমর্থন করা যায় আর কোন জায়গা অসমর্থনীয় সেটাকে ইনসাফপূর্ণ ভাবে চিন্তা করে সে অনুযায়ী আলোচনা করা এবং এর মূল যে প্রস্তাব অর্থাৎ নারীদের সাথে অন্যায় বৈষম্য সেটার সঠিক ক্ষেত্রগুলোতে সংহতি জানানো এবং নারী পুরুষের যে মৌলিক সমতার জায়গাগুলো সেগুলোতে একতা পোষণ করা। ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব - বা কোনোকিছুরই শ্রেষ্ঠত্ব - এই থেকে আসে না যে তার সামনে যা কিছু আসে তাকে যেভাবেই হোক সে কুস্তি করে দমন করবে। বরং ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব - সকল ইজমের উর্দ্ধে উঠে খোদার ঐশী শিক্ষা হওয়ার যে মূল প্রস্তাবনা - সেটার ভিত্তিটা এখানেই যে সে সবার কথা শুনবে এবং ঠিকটার সাথে সম্মতি দেবে এবং ভুলটাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করবে।



তাহলে আবার যদি সমকামিতার আলোচনায় ফেরত আসি তাহলে আমাদের করণীয় কী? প্রথমত আমাদের ইসলামিক যে বিশ্বাস সেটিকে কম্প্রোমাইজ করার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু সমকামিতাকে নিয়ে বৈশ্বিক যে জ্ঞানগত আলোচনা শুরু হয়েছে সেটাকে কি আমরা মুর্খের মতো আবেগ দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করবো নাকি বর্তমান সময়ের জ্ঞানকাঠামোর মূল স্রোতটাকে বুঝে নিয়ে তারপর সে অনুযায়ী প্রতিটি বিষয়ের - যার মাঝে সমকামিতাও থাকবে - ব্যাপারে মানুষ কীভাবে চিন্তা করছে সেটাকে জেনে তারপর সে ব্যাপারে ইসলামের আলোচনাটাকে প্রাসঙ্গিক করবো? অবশ্যই দ্বিতীয়টিই হওয়া উচিৎ।



এ ব্যাপারে আরেক বিখ্যাত সুন্নী আলেম ইবনুল কায়্যিম আমাদের ইসলামিক বিষয়ে চিন্তা ও কাজ করার যে মৌলিক নীতিটি দিয়ে গেছেন সেটাকে আমাদের বুঝতে হবে - এটা আমি আগেও বলেছি - দরকার হলে আরো বলবো। ইবনুল কায়্যি্মের মত অনুযায়ী পার্থিব বাস্তবতায় ইসলামের জ্ঞানকে প্রাসঙ্গিক করতে আপনার প্রথম যেটা দরকার সেটা হোলো - ফিকহুল ওয়াকি' - বাস্তবতার পূর্ণ জ্ঞান বা আন্ডারস্ট্যান্ডিং। অতঃপর দরকার ফাহ্‌ম ফিকহিল ওয়াকি' - যা দিয়ে ইবনুল কায়্যিম বোঝাতে চাচ্ছেন যে বাস্তবতার ঐ সম্যক ধারণার ওপর বা সেই ধারণা অনুযায়ী আপনাকে ইসলামিক জ্ঞানকে বোঝার ও প্রয়োগ করার কর্মকৌশল তৈরি করতে হবে। যখন আপনি কেবল সমকামিতা বা এলজিবিটি মুভমেন্টের বর্তমান যে ধারণা তাকে তার বর্তমান সেক্যুলার লিবারেলিজমের সেটে নিয়ে বোঝার চেষ্টা না করছেন ততক্ষণ আপনি ফিকহুল-ওয়াকি' করছেন না - যেটা ইবনুল কায়্যিমের মত অনুযায়ী আপনার প্রথম কাজ। এটা করে তবেই আপনাকে ইসলামের মূল শিক্ষাকে আপনি কীভাবে মানুষের কাছে নিয়ে আসবেন সেটার পদ্ধতি ঠিক করতে হবে।

আপনাকে মনে রাখতে হবে যে ইসলামি দাওয়াতের মূল কাজ এটা নয় যে ইসলামকে রক্ষা করা বা মুসলিম জনগোষ্ঠিকে যেনতেন প্রকারে ইসলামের ব্যাপারে কনফিডেন্ট রাখা - বিশেষ করে সেই ইসলাম যদি আপনি চিন্তাই করে থাকেন আপনার ব্যক্তিগত সংকীর্ণতা থে্কে। ইসলামি দাওয়াতের মূল কাজ হোলো মানুষকে ইসলামের কাছে আসতে উদবুদ্ধ করা। ইসলাম কিন্তু কেবল পূণ্যবান মানুষের জন্য নয়, অপূণ্যবান মানুষের জন্যও। ইসলাম কেবল অসমকামী ব্যক্তিদের জন্য নয়, সমকামী ব্যক্তিরও। ইন ফ্যাক্ট ইসলাম কেবল মুসলিমদের জন্য নয়, অমুসলিমদের জন্যও। যে কারণে আল্লাহ্‌ সূরা বাকারাতে সমগ্র মানবজাতিকেই আহ্বান করেছেন এক আল্লাহ্‌র বা রবের ইবাদাতে ফিরে আসতে - যে রব‌ তাদের সৃষ্টি করেছেন।



তাই আমরা যারা মুসলিম এবং ইসলামকে ভালোবাসি তাদের মূল কাজ হোলো ইসলামকে সবার জন্য রেলেভেন্ট রাখা। এর মানে এই নয় যে হারামকে আমরা হারাম ভাবা ছেড়ে দেব বা হারামকে হারাম বলা ছেড়ে দেব। কিন্তু সেটা করবো এবং সে ব্যাপারে আমাদের দাওয়াতকে আমরা সাজাবো সর্বস্তরের মানুষের জন্য ইসলামকে প্রাসঙ্গিক রেখে এবং ইসলামের সাধারণ গ্রহণযোগ্যতাকে বজিয়ে রেখে। এ দুটো কাজ কি মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ বা একে অপরের সাথে সাংঘর্ষিক? আমি মনে করি মোটেই নয়। বরং করা সম্ভব কিন্তু করতে হবে সে মানুষদের যারা বাস্তবতার প্রেক্ষিতে ইসলামের সম্যক জ্ঞানকে কাজে লাগানোর মত জ্ঞান ও মণীষা অর্জন করেছেন।



আমি এ লেখাটা এখানে থামাচ্ছি - ইতোমধ্যে বহু কথা হয়ে গেছে। দ্বিতীয় পর্বে এই ধারণাটাকে আরও বাড়িয়ে নিয়ে যাবো। আপাতত বুখারি ও মুসলিমে আসা এ হাদীসটা নিয়ে আপনারা চিন্তা করুন এবং ভাবুন - প্লিজ ভাবুন - আমরা এই হাদীসটাকে সামষ্টিক ভাবে আমাদের আচরণ দিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারছি কিনা।



আল্লাহ্‌র রাসূল (সা.) বলেছেন: "সহজ করে দাও, কঠিন করে দিও না। (মানুষকে) সুসংবাদ দাও, তাড়িয়ে দিও না।"

আশা করছি সময় করে সবাই পড়বেন
 

Users who are viewing this thread

Back
Top