What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

গাছ যেভাবে নিজেদের খাদ্য তৈরি করে (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
H4Zv0ng.jpg


বাড়ির উঠানে থাকা গাছটা নিয়ে ভাবার সময় শেষ কবে হয়েছিল? যে গাছ বা উদ্ভিদ ক্রমাগত আমাদের খাদ্যের যোগান দিয়ে যাচ্ছে, সেই উদ্ভিদের নিজস্ব খাদ্য ব্যবস্থা নিয়েও যে রীতিমতো দক্ষযজ্ঞ চলে তা হয়ত অনেকেরই অজানা। খাদ্য তৈরির বিষয়টিকে যদি রোজকার জীবনের রান্নার সাথে তুলনায় আনা যায়, তবে প্রতিটি উদ্ভিদেরই রয়েছে নিজস্ব রান্নাঘর। যেখানে তারা খাদ্য উৎপাদন করে নিজস্ব পদ্ধতিতে। সে রান্নায়ও প্রয়োজন হয় নানা উপাদানের। উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির বিশাল এই দক্ষযজ্ঞে তাপের প্রয়োজন হয়, প্রয়োজন হয় জ্বালানীরও।

উদ্ভিদের খাদ্য প্রস্তুতির ঘর বলা চলে তার পাতাকে। আর খাদ্য তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে উদ্ভিদের শেকড়। উদ্ভিদের বিভিন্ন কোষ-কলা এসব উপাদান পৌঁছে দেয় রান্নাঘরে অর্থাৎ পাতায়। সেখানে সূর্যের তাপে চলে বাদবাকি কার্যক্রম। সেই রান্নায় জ্বালানীর মতো প্রয়োজন হয় কার্বন ডাই অক্সাইড। উদ্ভিদের নিজস্ব এইসব খাদ্য তৈরির পদ্ধতি শেষে উপজাত হিসেবে বেরিয়ে আসে অক্সিজেন।

জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যু: পরিবহনের দায়িত্বে যারা

উদ্ভিদকে খাদ্য তৈরির বিভিন্ন উপাদান যেমন পাতায় পৌঁছে দিতে হয়, তেমনি পাতায় উৎপাদিত খাদ্য সরবরাহ করতে হয় পুরো উদ্ভিদের দেহে। এই কাজটি সম্পন্ন করে জাইলেম ও ফ্লোয়েম নামক দুই টিস্যু। জাইলেম টিস্যুগুলো নির্দিষ্ট কোনো কাজ নিয়ে বসে থাকে না, বরং একাধিক কাজ করে থাকে। তাই তাকে বলা হয় জটিল টিস্যু। গ্রিক Xylos থেকে এসেছে জাইলেম শব্দটি, যাকে বাংলায় বলে 'কাঠ'। উদ্ভিদের কাণ্ডকে দৃঢ়তা দেওয়া এই টিস্যুর অন্যতম কাজ। জাইলেম টিস্যু মাটি থেকে শেকড়ের সংগ্রহ করা পানি ও খনিজ পাতায় বহন করে নিয়ে আসে।

জাইলেম যেমন খাদ্য তৈরির কাঁচামাল পানি সরবরাহ করে তেমনি ফ্লোয়েম পাতায় প্রস্তুত হওয়া খাদ্য উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করে। উদ্ভিদ কাণ্ডে ফ্লোয়েম জাইলেমের সাথে একত্রে পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ গঠন করে। সিভনল, সঙ্গীকোষ, ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা ও ফ্লোয়েম তন্তু নিয়ে ফ্লোয়েম টিস্যু গঠিত হয়।

জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যুুকে একত্রে বলা হয় ভাস্কুলার বান্ডল বা সংবহনতন্ত্র। আর এই সংবহনতন্ত্র যে পদ্ধতিতে খাবার পৌঁছে দেয়, সে পদ্ধতিকে বলা হয় অসমোসিস বা অভিস্রবণ পদ্ধতি।

স্টোম্যাটা: পাতার প্রবেশদ্বার

বাংলায় যা পত্ররন্ধ, ইংরজিতে তা-ই স্টোম্যাটা (একবচনে স্টোমা) । পাতার উপরে এবং নিচের ত্বকে অবস্থিত সূক্ষ্ম দুয়ার এটি। এই পত্ররন্ধ দুইটি রক্ষীকোষ দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে।

স্টোম্যাটার নিচে একটি বড় বায়ুকুঠুরী থাকে। এ বায়ুকুঠুরীকে সাব-স্টোম্যাটাল বায়ুকুঠুরী বা শ্বাসকুঠুরী বলা হয়। পত্ররন্ধ্র খোলা ও বন্ধকরণ রক্ষীকোষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। সাধারণত দিনের বেলায় পত্ররন্ধ্র খোলা থাকে এবং রাত্রে বন্ধ থাকে। তবে পাথরকুচি গোত্রের উদ্ভিদের ক্ষেত্রে তা ঠিক উল্টো।

উদ্ভিদের বেশ কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যেমন- প্রস্বেদন ও সালোকসংশ্লেষণ সমাধা হওয়ার পেছনে এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। স্টোম্যাটার মাধ্যমেই উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড ভেতরে নেয় এবং উৎপাদিত অক্সিজেন বায়ুমণ্ডলে পাঠায়। আবার এর মাধ্যমেই উদ্ভিদের শ্বসন বা প্রস্বেদন প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়।

5QCH3jm.jpg


সালোকসংশ্লেষণ বা ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়া

সালোকসংশ্লেষণ: উদ্ভিদের রান্নার রেসিপি

সূর্যালোকের উপস্থিতিতে রাসায়নিক সংশ্লেষ করাকেই বলে সালোকসংশ্লেষণ বা ফটোসিনথেসিস। এককথায় উদ্ভিদের খাবার তৈরির পদ্ধতিকেই বলা হয় সালোকসংশ্লেষণ। সালোকসংশ্লেষণের দু'টি পদ্ধতি আছে, অক্সিজেনিক ও অ্যানোক্সিজেনিক। তবে অ্যানোক্সিজেনিক পদ্ধতির ব্যবহার নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়া ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না। এবার তাহলে জানা যাক অক্সিজেনিক সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের খাবার তৈরির কথা।

সালোকসংশ্লেষণে যা যা প্রয়োজনীয়

১) কার্বন ডাই অক্সাইড

২) পানি

৩) সূর্যের আলো

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ছয় অণু কার্বন ডাই অক্সাইড ও বারো অণু পানির সাথে সূর্যালোকের সংশ্লেষণের পর উৎপন্ন হয় এক অণু কার্বোহাইড্রেট বা গ্লুকোজ, ছয় অণু পানি ও ছয় অণু অক্সিজেন। বিক্রিয়াটি হচ্ছে-

6CO2 + 12H2O + Light Energy → C6H12O6 + 6O2 + 6H2O

উদ্ভিদ যে কয়টি কার্বন ডাই অক্সাইড অণু গ্রহণ করেছে, তার সমপরিমাণ অক্সিজেনে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পেছনে অন্যতম প্রভাবক হলো ক্লোরোফিল। এর অবস্থান ক্লোরোপ্লাস্ট নামক সবুজ প্লাস্টিডের অভ্যন্তরে।

সালোকসংশ্লেষণ আবার দুই ভাগে বিভক্ত। আলোক পর্যায় এবং অন্ধকার পর্যায়। অন্ধকার পর্যায়ে আলো না থাকলেও উদ্ভিদ তার কাজ চালিয়ে যেতে পারে তবে তার জন্য আলোক পর্যায়ের কাজ সমাধা হওয়া দরকার।

ক্লোরোপ্লাস্ট

ক্লোরোপ্লাস্টকে বলা হয় উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদনের সুপরিকল্পিত কাঠামো, যেখানে উদ্ভিদের খাবার উৎপাদনের মূল কার্যটি সমাধা হয়। ক্লোরোপ্লাস্টের অবস্থান পাতার মেসোফিল টিস্যুর ভেতরে। মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন প্রায় একই রকম। এর রয়েছে তিনটি মেমব্রেন সিস্টেম- আউটার মেমব্রেন, ইনার মেমব্রেন ও থাইলাকোয়েড মেমব্রেন। আউটার মেমব্রেন ও ইনার মেমব্রেনের মধ্য সামান্য ফাঁকা জায়গা থাকে, যাকে বলা হয় ইন্টারমেমব্রেন স্পেস। আর থাইলাকোয়েড মেমব্রেনটি জটিল আকারে ভাঁজ হয়ে ছোট ছোট কক্ষ তৈরি করে, যাকে বলা হয় থাইলাকোয়েড। বেশকিছু থাইলাকোয়েড স্তুপাকারে টেবিলে সাজিয়ে রাখা বইয়ের আকার ধারণ করে, একে একত্রে বলা হয় গ্রানাম।

ক্লোরোপ্লাস্টের এই থাইলাকোয়েডগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোফিল নামক রঞ্জক পদার্থ অবস্থান করে। এই ক্লোরোফিলের সবুজ রঙের কারণেই ক্লোরোপ্লাস্ট এবং গাছের পাতার রং সবুজ দেখায়।

ক্লোরোফিল

উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির আয়োজনে ক্লোরোফিলের ভূমিকা মুখ্য। ক্লোরোফিলের প্রধান কাজ হচ্ছে সূর্যের আলো থেকে ফোটন শোষণ। ক্লোরোফিলের ইলেকট্রনগুলো যখন ফোটন শোষণ করে, তখন সেগুলোর শক্তিস্তরে পরিবর্তন আসে এবং ইলেকট্রন উচ্চ শক্তিস্তরে উন্নীত হয়।

এসময় উচ্চ শক্তিস্তরে থাকা ইলেকট্রনগুলো তাদের অতিরিক্ত শক্তি ফোটন আকারে বের করে দেয় এবং পাশের ক্লোরোফিলগুলো সেই ফোটন গ্রহণ করে। এই গ্রহণকৃত ফোটন আবার তারাও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আরেকটি ক্লোরোফিলের দিকে ‍ছুঁড়ে দেয়। ছোঁড়াছুঁড়ির এক পর্যায়ে তা এসে পৌঁছায় ফটোসিস্টেমের বিক্রিয়া কেন্দ্রে, যেখানে রয়েছে বিশেষ ধরনের রঙ্গক অণু প্রাথমিক ইলেকট্রন গ্রাহক (Primary electron acceptor)। এখানে ফোটন পৌঁছার সাথে সাথে বিজারণ বিক্রিয়া শুরু হয়। এই বিক্রিয়ার ফলে বিক্রিয়া কেন্দ্রের ক্লোরোফিলগুলো প্রাইমারি ইলেকট্রন গ্রাহকের দিকে ফোটনের বদলে ইলেকট্রন ছুঁড়ে দেয়। যার ফলে সূর্যের আলোর বিপরীতে পাওয়া যায় ইলেকট্রন।

এভাবেই এগিয়ে চলে খাদ্য উৎপাদনের প্রথম ধাপের কাজ। এই ধাপকে বলা হয় লাইট রিঅ্যাকশন (Light reaction), এ ধাপে উদ্ভিদ সূর্যালোকের ফোটন থেকে শক্তি উৎপাদন করে। তারপরের ধাপের নাম ডার্ক রিঅ্যাকশন যা কেলভিন চক্র (Calvin cycle)। এই ধাপে সূর্যালোক থেকে পাওয়া শক্তি কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে জটিল প্রক্রিয়ায় জি৩পিতে (Glyceraldehyde 3-phosphate) রূপান্তরিত করা হয়। তারপর কেলভিন চক্রের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে উৎপন্ন হয় উদ্ভিদের খাবার গ্লুকোজ (C6H12O6)। সেই সাথে উপজাত হিসেবে উৎপন্ন হয় অক্সিজেন।

উদ্ভিদের খাদ্য প্রস্তুতি এবং আমাদের অস্তিত্ব

এই পুরো প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করে সূর্যই। কারণ গ্লুকোজ উৎপাদনে উদ্ভিদ যে শক্তি ব্যয় করে, তা উৎপাদিত গ্লুকোজের শক্তির থেকেও বেশি।

উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদনের কারণেই পৃথিবী এখনও টিকে আছে। কারণ উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদন যদি বন্ধ হয়ে যায়, তবে প্রথমত উদ্ভিদ নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, উদ্ভিদ ধ্বংস হয়ে গেলে মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণীদেরও ধ্বংসের পরিণতি নেমে আসবে, কারণ জীবজগৎ শ্বাসকার্য পরিচালনার জন্য উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। সবচেয়ে বড় কথা, পুরো প্রাণীজগতের প্রায় সব প্রাণীই পরভোজী। নিজস্ব খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতি প্রাণীর পক্ষে সম্ভব নয়। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, খাদ্য ব্যবস্থার সবটুকুই টিকে আছে এই এক জটিল কর্মযজ্ঞের ভিত্তিতে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top