জামান সাহেব বাজারে যাচ্ছেন। স্ত্রীর সাথে কথা বলে লিস্ট করলেন। যাবার আগে কন্যাদের জিজ্ঞাসা করলেন, 'তোমাদের কি কিছু লাগবে মা ?' ছোট মেয়ে বললো, 'বাবা, আমার জন্য ওরিও বিস্কুট আর ২টা ক্যাডবেরী ডেয়ারী মিল্ক আনবে।' তথাস্তু। মেয়ের আবদার বলে কথা।
ঘন্টাখানেক পর জামান সাহেব বাজার থেকে ফিরলেন। সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস প্রায় সবই এনেছেন। সাথে মেয়ের আবদারটুকু। স্ত্রীকে সদাইপত্র বুঝিয়ে দিয়ে মেয়েকে ডাকলেন, 'ছোটন'। সাড়া মিলল না। তার আদরের মেয়ে ঘুমাচ্ছে।
বিকালে ঘুম থেকে উঠে নোভা এসে বললো, 'বাবা তুমি আমার বিস্কুট আর ডেয়ারী মিল্ক এনেছো ?'
জামান মোবাইলে কিছু একটা করছিলেন, মুখ তুলে ভুল হয়ে গেছে ভাব করে বললেন, 'ওহ হো'। মেয়ে কিছুক্ষন অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। অভিমানে ওর চোখ দুটি বড় বড় হয়ে উঠেছে, ঠোট দুটি কেমন বাকানো। কিছুক্ষন পর জামান বললেন, 'আরে ডাইনিং কেবিনেটে ছোট প্লেটের ওপর ওগুলো কি ? বিস্কুট আর ডেয়ারী মিল্কইতো মনে হচ্ছে, কে এনেছে ?'
ছোট মেয়ে ছুটে এসে বাবার গলা ধরে ঝুলে পড়লো। 'আমি জানি ঐগুলি তুমি এনেছো। মাঝে মাঝে তুমি খুব দুষ্টুমি কর।' মেয়ের সারা চোখে মুখে খুশীর ঝিলিক দেখে জামান সাহেবের মনটা অদ্ভুত ভালোবাসায় ভরে গেলো।
মাগরিবের নামাজের পর ।
জামান সাহেব একটা বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছেন। গত দশ-বারো দিন বইটা শেষ করতে চাচ্ছেন, হয়ে উঠছে না। হয় ঝিমুনী আসে, নয়তো কারো ফোন। পড়ার অভ্যাসটা কি তাকে ছেড়ে গেছে? তিনি কিঞ্চিৎ বিরক্ত।
মেজো মেয়ে একটা প্লেট হাতে রুমে ঢুকলো। পিছনে স্ত্রী ও দুই মেয়ে। লায়লা বললেন, 'নুশী আজ পিজ্জা বানিয়েছে, খেয়ে দেখোতো কেমন হয়েছে ?' জামান অবাক চোখে তাকালেন, 'তুই পিজ্জা বানানো শিখে গেছিস ?' আদরের মেয়ে ঠোট উল্টে বললো, 'মনে হয় ভালো হয় নাই।' স্ত্রী আর কন্যাদের আগে খাওয়ানোর চেস্টা করে তিনি হার মানলেন। পিজ্জা খেলেন। 'খুব ভালো হয়েছে মা, দারুন।' মেয়ের সলাজ মুখে খুশীর উপচে পড়ছে, 'আম্মু আর আপুই তো সব করে দিয়েছে, ময়দার ডো তৈরী করাই বেশী ঝামেলা'। খানিক পরে মেয়ে বললো, 'তুমি আরো মোজারেলা চীজ আর সসেজ এনে দিয়ো, আবার বানাবো'।
রাত প্রায় নয়টা।
লায়লা এসে বললেন, 'খাবার দিয়েছি, টেবিলে এসে বসো'। জামান বললেন, 'একটুখানি। আড্ডার থ্রেডে দুটা পোস্ট করেই আসছি।' 'দেরী করো না, ঠান্ডা হয়ে যাবে।'
ডাইনিং টেবিলে বসতে বসতে জামান বললেন, 'বাচ্চাদের ডাকো। ওরা খেতে বসল নাযে'। লায়লা ভাত তরকারী তুলে দিতে দিতে বললেন, 'ওরা খাবে না, পিজ্জা খেয়ে নাকি ক্ষুধা নেই।' তিনি স্ত্রীর প্লেটে দেখলেন তিনটা পাতলা রুটি ও খানিকটা সবজী। 'তুমিও আমার সাথে একটু ভাত খাও।' 'নাহ, শরীরটা ভারি হয়ে যাচ্ছে, রুটিই ভালো।'
কিছুক্ষন পর বড় মেয়ে এসে পাশে বসলো। 'বাবা, এই পিসটা খাও' বলে এক টুকরা মাছ তুলে দিল । বেশী খাওয়া হয়ে যাবে, তবুও জামান মেয়ের ভালোবাসা উপেক্ষা করতে পারলেন না। 'মা তোমাকে একটা মাছ তুলে দেই ?' 'না, তুই খাবি ?' মেয়ে মাথা নাড়লো।
২১ জুন রবিবার, রাত ০০: ২২ মিনিট।
ঘন্টাখানেক যাবৎ লায়লা পুরানো বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়দের নিয়ে গল্প জুড়ে দিয়েছেন। জামান ফ্রেস হয়ে ঘুমাতে যাবেন ভাবছেন। মেয়েরা বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে। মা-বাবাকে অবশ্য গুডনাইট বলে যায়নি।
দরজায় টক, টক, টক। লায়লা বললেন, 'আয় ভেতরে আয়।' একসাথে তিন মেয়ে ঘরে ঢুকলো। সবার আগে নোভা, হাতে প্লেটের উপর ছোট্ট একটা কেক। "HAPPY FATHER's DAY বাবা।" বড় মেয়ে বললো, 'এই, বাংলায় বল', তারপর নিজেই বললো 'শুভ বাবা দিবস, বাবা'। বাকি দু'জনও বড় বোনের কথার প্রতিধবনি করলো। তার দুমেয়ের হাতে 'হাতে বানানো কার্ড, একটা ছোট গিফট বক্স।'
জামান অবাক হলেন, 'আরে আজ বাবা দিবস নাকি ? মনে ছিল নাতো।' তিন মেয়ে উপহার গুলি তার হাত দিয়ে পরম মমতায় বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। 'বাবা তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।' লায়লা পাশ থেকে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে বললেন 'কেকটা ওরিও বিস্কুট আর ডেয়ারী মিল্ক দিয়ে নোভা বানিয়েছে।'
ভালোবাসার এই বন্ধনই তো জীবনের পরম পাওয়া। এক জীবনে এর চেয়ে বেশী কি চাওয়ার আছে ? 'আহ চোখ ভিজে আসে কেন ?'
ঘন্টাখানেক পর জামান সাহেব বাজার থেকে ফিরলেন। সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস প্রায় সবই এনেছেন। সাথে মেয়ের আবদারটুকু। স্ত্রীকে সদাইপত্র বুঝিয়ে দিয়ে মেয়েকে ডাকলেন, 'ছোটন'। সাড়া মিলল না। তার আদরের মেয়ে ঘুমাচ্ছে।
বিকালে ঘুম থেকে উঠে নোভা এসে বললো, 'বাবা তুমি আমার বিস্কুট আর ডেয়ারী মিল্ক এনেছো ?'
জামান মোবাইলে কিছু একটা করছিলেন, মুখ তুলে ভুল হয়ে গেছে ভাব করে বললেন, 'ওহ হো'। মেয়ে কিছুক্ষন অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। অভিমানে ওর চোখ দুটি বড় বড় হয়ে উঠেছে, ঠোট দুটি কেমন বাকানো। কিছুক্ষন পর জামান বললেন, 'আরে ডাইনিং কেবিনেটে ছোট প্লেটের ওপর ওগুলো কি ? বিস্কুট আর ডেয়ারী মিল্কইতো মনে হচ্ছে, কে এনেছে ?'
ছোট মেয়ে ছুটে এসে বাবার গলা ধরে ঝুলে পড়লো। 'আমি জানি ঐগুলি তুমি এনেছো। মাঝে মাঝে তুমি খুব দুষ্টুমি কর।' মেয়ের সারা চোখে মুখে খুশীর ঝিলিক দেখে জামান সাহেবের মনটা অদ্ভুত ভালোবাসায় ভরে গেলো।
মাগরিবের নামাজের পর ।
জামান সাহেব একটা বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছেন। গত দশ-বারো দিন বইটা শেষ করতে চাচ্ছেন, হয়ে উঠছে না। হয় ঝিমুনী আসে, নয়তো কারো ফোন। পড়ার অভ্যাসটা কি তাকে ছেড়ে গেছে? তিনি কিঞ্চিৎ বিরক্ত।
মেজো মেয়ে একটা প্লেট হাতে রুমে ঢুকলো। পিছনে স্ত্রী ও দুই মেয়ে। লায়লা বললেন, 'নুশী আজ পিজ্জা বানিয়েছে, খেয়ে দেখোতো কেমন হয়েছে ?' জামান অবাক চোখে তাকালেন, 'তুই পিজ্জা বানানো শিখে গেছিস ?' আদরের মেয়ে ঠোট উল্টে বললো, 'মনে হয় ভালো হয় নাই।' স্ত্রী আর কন্যাদের আগে খাওয়ানোর চেস্টা করে তিনি হার মানলেন। পিজ্জা খেলেন। 'খুব ভালো হয়েছে মা, দারুন।' মেয়ের সলাজ মুখে খুশীর উপচে পড়ছে, 'আম্মু আর আপুই তো সব করে দিয়েছে, ময়দার ডো তৈরী করাই বেশী ঝামেলা'। খানিক পরে মেয়ে বললো, 'তুমি আরো মোজারেলা চীজ আর সসেজ এনে দিয়ো, আবার বানাবো'।
রাত প্রায় নয়টা।
লায়লা এসে বললেন, 'খাবার দিয়েছি, টেবিলে এসে বসো'। জামান বললেন, 'একটুখানি। আড্ডার থ্রেডে দুটা পোস্ট করেই আসছি।' 'দেরী করো না, ঠান্ডা হয়ে যাবে।'
ডাইনিং টেবিলে বসতে বসতে জামান বললেন, 'বাচ্চাদের ডাকো। ওরা খেতে বসল নাযে'। লায়লা ভাত তরকারী তুলে দিতে দিতে বললেন, 'ওরা খাবে না, পিজ্জা খেয়ে নাকি ক্ষুধা নেই।' তিনি স্ত্রীর প্লেটে দেখলেন তিনটা পাতলা রুটি ও খানিকটা সবজী। 'তুমিও আমার সাথে একটু ভাত খাও।' 'নাহ, শরীরটা ভারি হয়ে যাচ্ছে, রুটিই ভালো।'
কিছুক্ষন পর বড় মেয়ে এসে পাশে বসলো। 'বাবা, এই পিসটা খাও' বলে এক টুকরা মাছ তুলে দিল । বেশী খাওয়া হয়ে যাবে, তবুও জামান মেয়ের ভালোবাসা উপেক্ষা করতে পারলেন না। 'মা তোমাকে একটা মাছ তুলে দেই ?' 'না, তুই খাবি ?' মেয়ে মাথা নাড়লো।
২১ জুন রবিবার, রাত ০০: ২২ মিনিট।
ঘন্টাখানেক যাবৎ লায়লা পুরানো বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়দের নিয়ে গল্প জুড়ে দিয়েছেন। জামান ফ্রেস হয়ে ঘুমাতে যাবেন ভাবছেন। মেয়েরা বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে। মা-বাবাকে অবশ্য গুডনাইট বলে যায়নি।
দরজায় টক, টক, টক। লায়লা বললেন, 'আয় ভেতরে আয়।' একসাথে তিন মেয়ে ঘরে ঢুকলো। সবার আগে নোভা, হাতে প্লেটের উপর ছোট্ট একটা কেক। "HAPPY FATHER's DAY বাবা।" বড় মেয়ে বললো, 'এই, বাংলায় বল', তারপর নিজেই বললো 'শুভ বাবা দিবস, বাবা'। বাকি দু'জনও বড় বোনের কথার প্রতিধবনি করলো। তার দুমেয়ের হাতে 'হাতে বানানো কার্ড, একটা ছোট গিফট বক্স।'
জামান অবাক হলেন, 'আরে আজ বাবা দিবস নাকি ? মনে ছিল নাতো।' তিন মেয়ে উপহার গুলি তার হাত দিয়ে পরম মমতায় বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। 'বাবা তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।' লায়লা পাশ থেকে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে বললেন 'কেকটা ওরিও বিস্কুট আর ডেয়ারী মিল্ক দিয়ে নোভা বানিয়েছে।'
ভালোবাসার এই বন্ধনই তো জীবনের পরম পাওয়া। এক জীবনে এর চেয়ে বেশী কি চাওয়ার আছে ? 'আহ চোখ ভিজে আসে কেন ?'