What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

জ্ঞান-গবেষণা-অধ্যাপনায় অদ্বিতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
arNXBv0.jpg


২০২০ সালটি যেন মানব জাতির জন্য এক দুঃস্বপ্ন। একের পর মৃত্যুর সংবাদে কেঁপে উঠছে সবার অন্তরাত্মা। বেশিদিন না গত ২৮ এপ্রিল আমরা হারিয়েছি বাংলাদেশের প্রকৌশল জগতের অভিভাবক তুল্য জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে। কে জানতো মাত্র দুই সপ্তাহ পর দেশ তার আরেক সূর্যসন্তানকে হারাবে! গত ১৪ মে শেষ বিকেলের আলোটুকু নেভার আগেই ৮৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন জাতীয় অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক ড. আনিসুজ্জামান।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন একজন সফল শিক্ষক, গবেষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকজন গুটি কয়েক শিক্ষক মৌলিক গবেষণায় উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন তিনি তাদের একজন। তবে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শুধু মাত্র শিক্ষকতার বলয়ে নিজেকে আবদ্ধ রাখেন নি। বাংলাদেশের ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে তিনি নিজের নাম প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি, পল্টন ময়দানে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করে বসেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এর প্রতিবাদে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। যদিও ১৯৪৮ সালেই রাষ্ট্রভাষা নিয়ে জিন্নাহর বক্তব্যে প্রথম ফুঁসে উঠেছিল জনতা। সে বছরেই গঠিত হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। একই বছরের জানুয়ারিতেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ঠিক করেছিল সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে একটি পুস্তিকা বের করা হবে। এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় সে সময়ের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত বিপ্লবী নেতা মোহাম্মদ তোয়াহার ওপর। কিন্তু সময়ের অভাবে তা তিনি করতে পারছিলেন না।

তখন পূর্ব পাকিস্তানের যুবলীগের পক্ষ থেকে একটি প্রচারপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং এর দায়িত্ব দেওয়া হয় এক কিশোরকে। ১৫ বছর বয়েসী সে কিশোর সবে ম্যাট্রিক পাশ করে জগন্নাথ কলেজে আইএ-তে ভর্তি হয়েছেন। যুবলীগের সম্পাদক অলি আহাদের কাছ থেকে লেখার প্রস্তাবে সে কিশোর রীতিমতো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল এ নিয়ে সে কি বা লিখবে। অলি আহাদ তাকে ভাষা আন্দোলন বিষয়ে মনে যা আসে তাই লিখতে বললেন। শেষ পর্যন্ত ১৫ বছরের সে কিশোরই ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বিষয়ে প্রথম পুস্তিকাটি প্রকাশ করেন। পুস্তিকার নাম দেওয়া হয়েছিল 'রাষ্ট্রভাষা কী ও কেন?'

মজার ব্যাপার হল ১৯৪৮ সালে সে কিশোর প্রথম ভাষা আন্দোলনের কথা শুনেছিলেন অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে। মাত্র মাস ছয়েক আগে কলকাতা ছেড়ে দেশভাগের কারণে এদেশে এসে প্রথমে এই আন্দোলন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা ছিল না তার। পরের দুই বছর অনেক জেনেছিলেন এই আন্দোলন নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মামাতো ভাই সৈয়দ কামরুজ্জামান তাকে ভাষা আন্দোলনের যৌক্তিকতা শোনান। ফলে তাঁর মধ্যে জন্মায় ভাষার প্রতি ভালোবাসা, ভাষা আন্দোলন নিয়ে চেতনা। আর সে আবেগটুকু সঞ্চয় করেই তিনি লিখেছিলেন সেই পুস্তিকাটি।

সেদিনের সে কিশোরই আমাদের আজকের জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান । না চাইলেও যিনি আমাদের নিকট এখন কেবলই স্মৃতি।

১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্ম নিয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। পুরো নাম আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান। বাবা এটিএম মোয়াজ্জম ছিলেন পেশায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। মা সৈয়দা খাতুন ছিলেন গৃহিনী। তবে তাদের ছিল লেখালিখির অভ্যেস। পিতামহ শেখ আবদুর রহিম ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক। ১৯৮৮ সালেই তিনি হযরত মোহাম্মদ(সঃ) এর জীবনী লিখেছিলেন। যা ছিল প্রথম কোনো বাঙালি মুসলমানের লেখা হযরত মোহাম্মদ(সঃ) এর জীবনী।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন আনিসুজ্জামান। বড়বোন টুকটাক লিখতেন। মোটকথা শিল্প-সাহিত্য আর সাংস্কৃতিক আবহেই বেড়ে উথেছিলেন তিনি। জন্মের পর শিক্ষাজীবনের প্রথমভাগ তার কলকাতাতে কাটে। দেশভাগের উত্তাল সময়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া আনিসুজ্জামান সপরিবারে বাংলাদেশে চলে আসেন। ঢাকার প্রিয়নাথ হাই স্কুল থেকে ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিক ও জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৫৩ সালে আইএ পাশ করেন তিনি।

9rKhodn.jpg


এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৫৬ সালে স্নাতকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন তিনি। উল্লেখ্য, স্নাতকে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার কৃতিত্বস্বরূপ আনিসুজ্জামান পেয়েছিলেন 'নীলকান্ত সরকার স্বর্ণপদক'। ১৯৫৭ সালে শেষ করেন স্নাতকোত্তরের পাঠ।

১৯৫৮ সালে অর্থাৎ স্নাতকোত্তরের পরের বছরই বাংলা একাডেমীর গবেষণা বৃত্তি পেয়ে যান তিনি। কিন্তু একবছর যেতে না যেতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক পদের শূন্যতায় শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পন করেন তিনি। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর।

১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সমাপ্ত করেন পিএইচডি। এরপর ১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি পান। এ সময় তার গবেষণার বিষয় ছিল 'উনিশ শতকে বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসঃ ইয়ং বেঙ্গল ও সমকাল'।

১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী জাতীয় পরিষদে রবীন্দ্রনাথের গানকে পাকিস্তানের জাতীয় আদর্শের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে বেতার ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রনাথের গান প্রচার হ্রাস করতে বলেন। এটা ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করার একটি পাঁয়তারা। এর প্রতিবাদে বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে একটি বিবৃতিতে আনিসুজ্জামান স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন এবং পত্রপত্রিকায় ছাপতে দেন। এরপর ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানের উত্তাল সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে আন্দোলনে তিনি পালন করেন সক্রিয় ভূমিকা। সে বছরই তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন তিনি ।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতে শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন 'বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি'র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে যেমন তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন তেমনি এদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে একজন নির্ভীক সৈনিক হিসেবেও অবদান রেখেছিলেন ড আনিসুজ্জামান।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ড. কুদরত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত হওয়া জাতীয় শিক্ষা কমিশনের একজন সদস্য ছিলেন আনিসুজ্জামান। ১৯৭৪-৭৫ সালে কমনওয়েলথ একাডেমী স্টাফ ফেলো হিসেবে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করেন তিনি। ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম ছেড়ে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। দীর্ঘ সময়ের শিক্ষকতা জীবনের অবসান ঘটিয়ে ২০০৩ সালে অবসর নেন তিনি। কিন্তু ২০০৫ সালে আবার সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে বছর দুয়েকের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন। এছাড়া তিনি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ইন্সটিটিউট অব অব এশিয়ান স্টাডিজ(কলকাতা), প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ ক্যারোলিন স্টেট ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং ফেলো ছিলেন।

অনেক গবেষণার কাজ করলেও লেখালিখি ও সাংগঠনিক কাজেও পারদর্শী ছিলেন আনিসুজ্জমান। তার রচনা ও সম্পাদনায় আমরা পেয়েছি অনন্য সাধারণ সব বাংলা ও ইংরেজি বই। শিল্প সংস্কৃতি আর ইতিহাসের বিবেচনায় সেগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য, মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র,মুনীর চৌধুরী, স্বরূপের সন্ধানে, আঠারো শতকের বাংলা চিঠি, মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর, বাঙালি নারীঃ সাহিত্যে ও সমাজে, মধুদা ফতোয়া, আইন শব্দকোষ ইত্যাদি ছিল তার রচিত ও সম্পাদিত উল্লেখযোগ্য বই। এছাড়া বিখ্যাত সাহিত্যিক অস্কার ওয়াইল্ডের "এন আইডিয়াল হাজবেন্ড" এর বাংলা নাট্যরূপ 'আদর্শ স্বামী', এলেক্সেই আরবুঝুভের "এন ওল্ড ওয়াল্ড কমেডি" এর নাট্যরূপ 'পুরোনো পালা" ছাড়াও অসংখ্য গ্রন্থ একক ও যৌথ সম্পাদনা করেছেন তিনি ।

দীর্ঘ কর্মজীবনে শিক্ষকতা, গবেষণা ও মৌলিক সাহিত্য রচনার পাশাপাশি একক ও যৌথভাবে অসংখ্য গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন আনিসুজ্জামান। তাই ভাষা ও শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা।বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরষ্কার, একুশে পদক পুরষ্কার, আলাওল সাহিত্য পুরষ্কার সহ নানা পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি। এছাড়া রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মান সূচক ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে দিয়েছে জগত্তারিনী পদক। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা 'পদ্মভূষণ' এ সন্মানিত হয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ সরকার তাকে সম্মানিত করেছে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পদক দিয়ে।

২০১৮ সালে তিনি জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এক সময় নজরুল ইনস্টিটিউট এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করা এই মানুষটি ২০১২ সাল থেকে ছিলেন আমৃত্যু বাংলা একাডেমীর সভাপতি। জীবনসঙ্গী সিদ্দিকা জামানের সাথে তার পরিণয় ১৯৬১ সালে । ব্যক্তিগত জীবনে দুই কন্যা ও একপুত্রের জনক ছিলেন ড আনিসুজ্জামান।

জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে পেশা হিসেবে দীর্ঘকাল করে গেছেন শিক্ষকতা। আর লেখালিখির মাধ্যমে নিজের চিন্তা,দর্শন ও সৃজনশীলতাকে অব্যাহত রেখেছিলেন জীবনের শেষ সময়টাতে এসেও। হেনরী এডামস বলে গেছেন "শিক্ষকের প্রভাব অনন্তকালেও গিয়ে শেষ হয়না"। একজন আনিসুজ্জামানের প্রভাব যে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে দীর্ঘকাল থাকবে সে কথা বলাই বাহুল্য।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top